সাক্ষাৎকার

আমার টেবিলে ফাইল আটকে থাকবে না: পরিকল্পনামন্ত্রী

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান
>
এম এ মান্নান ২০১৪-১৮ সাল পর্যন্ত অর্থ এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এবার তিনি পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। কর্মসংস্থান ও বাস্তবতা, উন্নয়ন প্রকল্প, সংস্কার কার্যক্রমসহ সামনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। গত রোববার তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহাঙ্গীর শাহ


প্রথম আলো: প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা কাটাতে সামনের ভাবনা কী?
এম এ মান্নান: আমার প্রথম কাজ হবে কাজের গতি বৃদ্ধি করা। ২৪ ঘণ্টার কাজ যাতে ২০ ঘণ্টায় হয়, সেই ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের শক্তিশালী প্রশাসনিক ব্যবস্থা আছে, সবাই অভিজ্ঞ। আমি যদি এক দিনেই ফাইল ছেড়ে দেই, তবে অন্য কর্মকর্তাদের কাছে বার্তা যাবে। তাঁরা ফাইল আটকে রাখবেন না। আমার টেবিলে কোনো ফাইল আটকে থাকবে না।

প্রথম আলো: আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে আগামী পাঁচ বছরে দেড় কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এত বিপুল কর্মসংস্থান কীভাবে সম্ভব?
এম এ মান্নান: আগামী পাঁচ বছরে দেড় কোটি লোকের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। প্রতিবছর গড়ে ৩০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। এখন বছরে দেশে–বিদেশে মিলিয়ে ২০-২২ লাখ কর্মসংস্থান হয়। বছরভিত্তিক কর্মসংস্থানে ১০ লাখের মতো ব্যবধান আছে। বিগত কয়েক বছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বেশ ইতিবাচক। যত বেশি প্রবৃদ্ধি হবে, তত বেশি কর্মসংস্থান হবে। আগামী পাঁচ বছরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে। এতে প্রবৃদ্ধিতে আরও গতি আসবে, কর্মসংস্থান বাড়বে। আমরা স্বীকার করি যে কর্মসংস্থানের শতভাগ লক্ষ্য হয়তো পূরণ করতে পারব না। বিশ্বের কেউই তা পারবে না।

এই বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। আমরা স্বীকার করি, প্রয়োজনের তুলনায় বিনিয়োগ কম। কিন্তু আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় বিবেচনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ বেশি। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য হন্যে না হয়ে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়া উচিত। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা কিংবা পরিবার পর্যায়ে ছোট উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে হবে। গ্রামের একজন লোক যদি দুটি গাভি লালনপালন করেন, এতে দুজন লোকের কর্মসংস্থান হয়। এভাবে সারা দেশে লাখ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়।

প্রথম আলো: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, প্রায় এক কোটি লোক পছন্দমতো কাজ পাচ্ছেন না। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
এম এ মান্নান: আমাদের সংস্কৃতিতে একটি ভয়ংকর ব্যাপার আছে। সেটি হলো, যারা শ্রমবাজারে নতুন আসছেন, তাঁরা বাছবিচার করে কাজ করতে চান। তাঁরা গ্রামে যাবেন না। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে। গ্রামের স্কুল-কলেজে শত শত ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান শিক্ষকের পদ খালি আছে। কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েরা ঢাকায় পড়ে থাকবে, টিউশনি করবে, কিন্তু গ্রামে যাবে না।

এটি সত্য যে আমাদের মতো অর্থনীতিতে পছন্দমতো কাজ পাওয়ার সুযোগ কম। আমাদের অর্থনীতি যখন পরিপক্ব, টেকসই হবে তখন তরুণ-তরুণীদের পছন্দমতো কাজ পাওয়ার স্বাধীনতা বাড়বে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পছন্দমতো কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে তরুণদের মধ্যে অসন্তুষ্টি থাকবে। যেসব দেশ আমাদের মতো অর্থনীতির পর্যায়গুলো পেরিয়ে উন্নত হয়েছে, তাদেরও একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে। আমরা হতাশ নই। আমরা তরুণ-তরুণীদের পছন্দের সঙ্গে বাজারের সমন্বয় করতে পারব।

প্রথম আলো: শোভন কাজের সুযোগ সৃষ্টির জন্য দক্ষ মানবসম্পদ কীভাবে তৈরি করবেন?
এম এ মান্নান: শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষার পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে। পাঠ্যক্রমে প্রযুক্তি ও বাজারনির্ভরতায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। আবার মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। ইউরোপ বা উন্নত দেশের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ কিছুটা কর্মবিমুখ।

এ ছাড়া দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। সেগুলো হলো অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ। হাতেকলমে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এতে প্রশিক্ষণও একসঙ্গে হয়ে যাবে। সরকার কর্মঠ ও দক্ষ কর্মী তৈরি করতে নানা কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় মানবসম্পদ গড়ে তোলার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।

প্রথম আলো: নির্বাচনের আগে বিপুলসংখ্যক নতুন প্রকল্প পাস হয়েছে। অর্থনীতিতে এর প্রভাব কী?
এম এ মান্নান: এবারই প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ অতিক্রম করবে। নতুন প্রকল্প নেওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো, এতে উৎপাদন বাড়বে, বাজার বাড়বে। যা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প নিই। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে অনেক পণ্ডিত সংশয় প্রকাশ করেন। কিন্তু আমরা পেরেছি, সব প্রকল্পই এগিয়ে চলেছে। ২০০৯ সালে সারা দেশে ৩০-৩৫ শতাংশ মানুষের বিদ্যুৎ সুবিধা ছিল। এখন ৯৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এর মানে, আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে।

প্রথম আলো: টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছেন। নতুন ‘ঝাঁকুনি’ দেবেন কি না?
এম এ মান্নান: অবশ্যই ঝাঁকুনি দেব। বড় বড় ঝাঁকুনি দেব, গাছ থেকে বরই পড়বে। আমরা সবাই বরই কুড়াব। এই বরই হলো প্রবৃদ্ধি, উৎপাদন।