মতামত

আব্বাসের হুমকিকে কতটা পাত্তা দিচ্ছে ইসরায়েল

মাহমুদ আব্বাস
ছবি: রয়টার্স

গত মাসে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি ইসরায়েলকে এক বছরের মধ্যে ১৯৬৭ সালে দখল করা পূর্ব জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনের অধিকৃত সব ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে বলেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল তা না করলে ফিলিস্তিন ১৯৬৭ সালে আন্তর্জাতিকভাবে বেঁধে দেওয়া সীমানার ভিত্তিতে গঠিত ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না। এর বাইরে ইসরায়েলের এই দখলদারির বিষয়ে ফিলিস্তিন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) যাবে।

মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে শরণার্থী করে রাখা হচ্ছে। এ অবস্থা তাদের কোনো ভুলের জন্য হয়নি। এটি হয়েছে তাদের জন্য, যারা বলে শান্তি আলোচনার জন্য ফিলিস্তিনের সঙ্গে কোনো আলোচনারই দরকার নেই।

আব্বাস এই আলটিমেটামের মধ্য দিয়ে শান্তিপ্রক্রিয়াকে আবার সচল করতে চান। এর মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে, তথা বিশ্বকে একটা ঝাঁকুনি দিতে চান, যাতে আবার সবাই মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে

খেয়াল রাখা দরকার, ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় আরব নেতারা শপথ করে বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো শান্তি নয়, ইসরায়েলকে কোনো স্বীকৃতি নয় এবং ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়।’

কিন্তু আজকের বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো। ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ শতেহ্ যেমনটা বলেছেন, ইসরায়েল এখন উল্টো আব্বাসের সঙ্গে কথা বলতে চায় না, কোনো কিছু নিয়ে তারা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলাপেই বসতে চায় না, এমনকি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিও দিতে তারা নারাজ।

ঠিক এ পরিস্থিতিতে আব্বাস বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা জাতিসংঘের ঠিক করে দেওয়া সীমানা নিয়ে আগামী বছরের পুরো সময়জুড়ে আন্তর্জাতিক কার্টেটের (জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ার সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ পর্ষদ, যেটি ফিলিস্তিনি বিষয়গুলো দেখভাল করে থাকে) আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত আছে। তবে এক বছর পার হলেই ইসরায়েলকে দখল করা জায়গা ছেড়ে দিতে হবে।

নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ইসরায়েল দখল করা ভূখণ্ড ছেড়ে দেবে না এবং এ বিষয়ে তাদের মিত্র ও পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্রও তাদের খুব একটা চাপ দেবে বলে মনে হয় না।

ইতিমধ্যে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আলাপ–আলোচনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তাঁদের মধ্যে কূটনীতির স্থলে সহিংসতা হাজির হচ্ছে।

হামাস গাজা থেকে ইসরায়েলের দিকে রকেট ছুড়ে মারছে এবং ইসরায়েল নিষ্ঠুরভাবে তার জবাব দিচ্ছে। গুলি করে ও বিমান হামলা চালিয়ে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের তারা হত্যা করছে। পাশাপাশি গাজার ওপর তারা নতুন নতুন অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে যাচ্ছে।

দুই পক্ষই মারমুখী অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু এই সংকট সমাধানে জো বাইডেন তেমন কোনো পদক্ষেপ নেননি। বাইডেন প্রশাসন এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধানে কোনো পথরেখা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে ইসরায়েলের কড়া নজরদারি এলাকার গিলবোয়া জেলখানা থেকে ছয়জন ফিলিস্তিনি কয়েদি পালিয়েছে। যখন তাদের ইসরায়েল তাড়া করে ফের পাকড়াও করেছে, তখন গাজা থেকে রকেট ছোড়া শুরু হয়। ইসরায়েলও পাল্টা রকেট হামলা চালাতে থাকে।

হামাসের কারাগারে বর্তমানে দুজন ইসরায়েলি সেনা আটক আছে। এ ছাড়া ২০১৪ সালে গাজায় হামলা চালাতে গিয়ে নিহত হওয়া দুজন ইসরায়েলি সেনার মৃতদেহ ফিলিস্তিনিদের কাছে আছে। হামাস বলছে, ইসরায়েল ওই ছয়জন ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দিলে তারা ওই দুই ইসরায়েলি ও দুই ইসরায়েলি সেনার লাশ ফেরত দেবে।

দুই পক্ষই মারমুখী অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু এই সংকট সমাধানে জো বাইডেন তেমন কোনো পদক্ষেপ নেননি। বাইডেন প্রশাসন এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধানে কোনো পথরেখা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

তবে পূর্বসূরিদের মতো বাইডেন ইসরায়েলিদের ওপর টাকাকড়ি বর্ষণ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, আর্থিক সংকটে ফিলিস্তিন ধুঁকে চলেছে।

আব্বাস এই আলটিমেটামের মধ্য দিয়ে শান্তিপ্রক্রিয়াকে আবার সচল করতে চান। এর মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে, তথা বিশ্বকে একটা ঝাঁকুনি দিতে চান, যাতে আবার সবাই মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

দাউদ কাত্তাব মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও রামাল্লায় অবস্থিত আল কুদস ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব মডার্ন মিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা