সাম্প্রতিক একটি ঘটনা। বুকে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালে গেলেন ৫২ বছর বয়সী রাকিবুল ইসলাম। চিকিৎসকেরা প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, তাঁর বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। দ্রুত সেখানে ভর্তি করে তাঁকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইনজেকশন পুশ করা হয়। একপর্যায়ে রোগী কার্ডিও রেসপিরেটরি অ্যারেস্টে চলে গেলে চারবার ডিসি শক দেওয়া হয়। শেষে জীবন বাঁচাতে লাইফ সাপোর্ট বা ভেন্টিলেটর মেশিনে দেওয়া হয়। কিন্তু এ ধরনের রোগীর দ্রুত প্রাইমারি পিসিআই করার প্রয়োজন। এ জন্য অন্য হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করেন রোগীর স্বজনেরা।
সমস্যা হলো, এ অবস্থায় সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। তাঁরা দ্রুত আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও করে ফেলেন। এই অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন একজন আইসিইউ চিকিৎসক, একজন প্যারামেডিক ও চালক। চিকিৎসক লাইফ সাপোর্ট খুলে ইনকিউবেশন করে রোগীকে প্রথমে অ্যাম্বুলেন্সে রাখা পোর্টেবল ভেন্টিলেটরে দেন। কার্ডিয়াক মনিটরে পালস, বিপি, স্যাচুরেশন, টেম্পারেচার ইত্যাদি মনিটর করা, অ্যাম্বু দিয়ে অক্সিজেন দেওয়াসহ সিরিজ পাম্প দিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদান করা হয়। পথেই রোগীর হৃৎস্পন্দন ভেন্ট্রিকুলার টাকাইকার্ডিয়া (ভিটি) এবং ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন (ভিএফ) ডেভেলপ করে। এ অবস্থায় তাঁরা দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালের সিসিইউতে পৌঁছে রোগীকে ভর্তি করাতে সক্ষম হন।
পরদিন ভেন্টিলেটরে থাকা অবস্থায় রোগীর এনজিওগ্রাম এবং এনজিওপ্লাস্টিক করা হয়। এর ১২ ঘণ্টা পর ভেন্টিলেটর খুলে দেওয়া সম্ভব হয়। রোগীর অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যায়। একসময় রোগী অনেকটা সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যান। এই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার কৃতিত্ব হাসপাতালের হলেও সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব কিন্তু চিকিৎসকসহ সেই আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের। কারণ, ওই অ্যাম্বুলেন্সে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, ভেন্টিলেটর প্রদানের যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য ব্যবস্থা না থাকলে রোগী পথেই মারা যেতেন, যা বাংলাদেশে অহরহ হচ্ছে।
এ ধরনের পর্যাপ্ত সুবিধা-সংবলিত অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একটা মাইক্রোবাসকে কনভার্ট করে অ্যাম্বুলেন্স বানানো হয়, যেখানে যন্ত্রপাতিসহ দক্ষ জনবল থাকে না। অথচ সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসাকাজে এ ধরনের পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স থাকা জরুরি। জটিল রোগীর জীবন বাঁচাতে এ ধরনের অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সরকারি ব্যবস্থাপনায় অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আলাদা লেন করা দরকার।
আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে পোর্টেবল ভেন্টিলেটরসহ থাকে জরুরি ওষুধ, ইনকিউবেশন সেট, অক্সিজেন সিলিন্ডার, সাকশন মেশিন, নেবুলাইজার মেশিন, ক্যাথেটার, বিপি স্টেথো, পালস অক্সিমিটার ইত্যাদি সুবিধা। একজন অ্যাম্বুলেন্স মালিক জানিয়েছেন, এ ধরনের আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স সারা দেশে রয়েছে মাত্র ৩০ থেকে ৩২টি। আর ঢাকায় রয়েছে ১০ থেকে ১২টি। সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সের তুলনায় ভাড়া বেশি হলেও মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে এ ধরনের অ্যাম্বুলেন্সের বিকল্প নেই।
অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান ইউনাইটেড হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট।