বাংলাদেশে সাংবাদিকতা শিক্ষার পথিকৃৎদের অন্যতম অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খান। আমার প্রিয় এই শিক্ষকের আজ ৮০তম জন্মদিন। শিক্ষক হিসেবে তিনি অনন্য। অসম্ভব যুক্তিবাদী একজন মানুষ। যুক্তির নিরিখে যদি কিছু টেকে তো টিকবে, নইলে বাতিল—এটাই তাঁর জীবনদর্শন। তিনি যৌবনে এবং এখন এই আশিতে সমান যুক্তিবাদী।
মনে আছে, ক্লাসে একবার আমাদের এক বন্ধু বলেছিল, ‘স্যার “যদি” এটা হয়’—স্যার উত্তরে বলেছিলেন, ‘যদি’র কথা ‘নদী’তে ফেলো, কোনো ‘যদি’ চলবে না, যুক্তি দাও। তিনি চাইতেন শিক্ষার্থীরা নিজেরা চিন্তা করতে শিখুক—চিন্তা ও লেখায় নিজস্ব সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটাক।
এই আমাদের প্রিয় সাখাওয়াত স্যার। কোনো ভড়ং নেই। আদি ও অকৃত্রিম। মেকিপনার ঘোর বিরোধী। ক্লাসে বলতেন, বাচ্চাভাব কাটিয়ে ওঠো, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ো, যথেষ্ট ম্যাচিউরড তোমরা, নিজেদের মতো ভাবতে শেখো। সাখাওয়াত স্যার আমার কাছে তাই সব সময়ই একজন উত্সাহব্যঞ্জক মানুষ। ভিন্নমত গ্রহণ করতে সদা প্রস্তুত এক উদার মানুষ। সংস্কারমুক্ত, খুবই বিজ্ঞানমনস্ক, অসম্ভব ভদ্র, সৎ আর বিনয়ী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্যার নিজের এলাকা নরসিংদীতে চলে যান। গেরিলা যোদ্ধাদের সংগঠক ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ প্রায় শিক্ষকশূন্য হয়ে পড়ে। অধ্যাপক নুরউদ্দিনের অনুরোধে এই বিভাগে শিক্ষকতা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তাঁর নেতৃত্বে সাংবাদিকতা বিষয়ে সম্মান কোর্স খোলা হয়। সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম, গবেষণা ও সমাজসেবামূলক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ড. সাখাওয়াত আলী খান। তিনি উনসত্তরের গণ–আন্দোলনে শহীদ আসাদের স্মৃতি রক্ষায় গঠিত আসাদ পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই। একজন সফল শিক্ষক, প্রশিক্ষকের পাশাপাশি গবেষক ও লেখক হিসেবেও সমান খ্যাতিমান তিনি। ১৯৭১ সালে গণহত্যা ও নির্যাতনের ওপর লেখা তাঁর দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস–এর অষ্টম খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়। জন্মদিনে স্যার আপনার শতায়ু কামনা করি। জয়তু সাখাওয়াত স্যার।
রোবায়েত ফেরদৌস অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়