রমজান তাকওয়ার মাস। তাকওয়া মানে আত্মসুরক্ষা। ষড়্রিপু—কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ, মাৎসর্য হলো মানুষের মানবীয় গুণাবলির শত্রু। যেসব গুণ বা বৈশিষ্ট্য মানুষের জ্ঞানকে বাধাগ্রস্ত করে, তাদের বলা হয় রিপু বা শত্রু।
এরা মূলত জ্ঞানের শত্রু। এগুলো মানবপ্রবৃত্তিরই অংশ। এসবের সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মানুষকে সুসভ্য ও উন্নততর করে। এগুলোর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মানুষকে পশুরও অধম করে দেয়। অধঃপতনের অতল তলে নিমজ্জিত করে ফেলে। রমজানে সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য হলো ষড়্রিপুর ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভে নৈতিক শক্তি অর্জন করা।
যাঁরা রমজান মাসেও নীতি–নৈতিকতার ধার ধারেন না; অনৈতিক কর্মকাল ও অসামাজিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা রমজানের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। কিছু মানুষ এমন আছেন, যাঁরা এই মাসকে ব্যবসার উপলক্ষ হিসেবে গ্রহণ করেন।
কিছু ব্যবসায়ী আছেন যাঁরা রমজানে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অন্যায় ও অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। আরও কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা রমজানের ঈদের রাতে কোথায় কোথায় ঘুরবেন এবং ঈদের দিন কোথায় কোথায় অযথা সময় কাটাবেন, সেই ছক কষতে থাকেন। ফলে পবিত্র ঈদের মহিমান্বিত ইবাদতের রজনীও মহামূল্যবান ঈদের রাতটিও অনর্থক হয়ে যায়। এ ধরনের কর্মকাল মহা অন্যায় এবং রোজা ও রমজানের শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
সব ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো হালাল ও বৈধ অর্থসম্পদ উপার্জন এবং হালাল খাদ্য গ্রহণ। হালাল উপার্জিত সম্পদের সঙ্গে হারাম বা অবৈধ সম্পদ যুক্ত হলে পুরো সম্পদই অপবিত্র বা হারাম হয়ে যায়। হিসাবমতো জাকাত প্রদান না করলে সম্পদ পবিত্র হয় না।
এ সম্পদ তার মালিকের জন্য হালাল থাকে না। যেসব ব্যবসায়ী রমজান মাসেও ব্যবসায় লেনদেনে মিথ্যার বা ছলচাতুরীর আশ্রয় নেন; খাদ্যে ভেজাল মেশান, ওজনে বা মাপে কম দেন; এক নম্বর জিনিস বলে দু–তিন নম্বর জিনিস ধরিয়ে দেন; কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করেন; তাঁদের আয়–উপার্জনও হালাল হবে না।
উপার্জন হালাল না হলে তাঁদের রোজা, নামাজ, হজ, জাকাতও কবুল হবে না; তাঁরা রমজানের শিক্ষা ও কল্যাণ থেকেও বঞ্চিত থাকবেন। মহানবী (সা.) বলেছেন: ‘যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মত নয়।’ (তিরমিজি: ১৩১৫)।
রমজানে রোজার মূল শিক্ষা হলো জীবনটাকে রোজার মতো সুনিয়ন্ত্রিত করা। ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতের খেলাফ যেকোনো কাজ সব সময়ই নিষেধ; বরং তা রমজানের ইবাদতের মাসে আরও বেশি ক্ষতির কারণ। তাই রমজানে রোজা অবস্থায় কোনো প্রকার ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতের বরখেলাপ কোনো কাজ অবশ্যই নিষিদ্ধ ও অধিক নিন্দনীয়।
অনেককে দেখা যায় রমজানে দিনের বেলায় যে গুনাহের কাজটি করছেন না, রাতের বেলায় অবলীলায় তা করছেন; এটি মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়। এটাও নৈতিকতাবিরোধী।
মানুষকে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন জ্ঞান দ্বারা সম্মানিত করেছেন। মানুষ জ্ঞান দ্বারাই পরিচালিত হয়। জ্ঞানের উৎস হলো তথ্য। তথ্য লাভের বা জ্ঞান প্রাপ্তির মাধ্যম হলো পঞ্চেন্দ্রিয়। পঞ্চেন্দ্রিয় তথা পাঁচটি অনুভূতি গ্রহণ যন্ত্র হলো চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক।
রমজানে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সঠিক সংযমী ব্যবহার নিশ্চিত করাই হলো নৈতিকতা। সঙ্গে সঙ্গে আজীবন এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার সক্ষমতা অর্জন করা হলো রোজার সফলতা।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি
সহকারী অধ্যাপক: আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
smusmangonee@gmail.com