‘ইমান’ হলো ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের প্রথম স্তম্ভ। ইমান বা বিশ্বাস ইসলামের প্রাণশক্তি। ইমান মানবজীবনে মূল চালিকা শক্তি। রমজানের সঙ্গে ইমানের সুদৃঢ় যোগসূত্র বিদ্যমান।
ইমানের ভিত্তি হলো ওহি। ওহি তথা আসমানি কিতাবগুলো অবতীর্ণ হয়েছে রমজান মাসে। কোরআন মাজিদও রমজান মাসে শবে কদরে অবতীর্ণ হয়েছে।
ইমান যেমন মানুষকে কুফর ও শিরক থেকে মুক্ত করে, তেমনি রমজান মানুষকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করে।
‘সলাত’ বা নামাজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ—ইমানের পরেই হলো নামাজ। রমজান মাস হলো নামাজের মাস। যেমন তারাবিহ বা প্রশান্তির বিশ্রামের নামাজ ও কিয়ামুল্লাইল বা রাত জাগরণের নামাজের পাশাপাশি রমজানে সাহ্রির বদৌলতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া সহজ হয়; এশার নামাজ ও ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার সুযোগ বৃদ্ধি হয়, যাতে সম্পূর্ণ রাত্রি জাগরণের সওয়াব পাওয়া যায়।
এই মাসে নফল নামাজ পড়ার সুযোগও বেশি পাওয়া যায়।
‘জাকাত’ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের তৃতীয় স্তম্ভ। সাহাবায়ে কিরাম রমজানেই জাকাত প্রদান করতেন। চান্দ্রবর্ষের হিসাব ও তারিখ অনুযায়ী সঠিকভাবে জাকাত দেওয়া রমজান মাসে সহজ হয়। এতে গরিবদেরও সুবিধা হয়।
‘হজ’ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের চতুর্থ স্তম্ভ। রমজানে ওমরাহ পালন করলে নবীজি (সা.)–এর সঙ্গে হজ করার সওয়াব পাওয়া যায়।
‘সওম’ বা রোজা হলো ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের পঞ্চম স্তম্ভ। সিয়াম বা রোজা হলো রমজানের সেরা অনুষঙ্গ। আগুন যেমন সোনাকে জ্বালিয়ে খাদমুক্ত করে দেয়, রোজা তেমন ইমানদারের ষড়্রিপুর কামনা–বাসনাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে রোজাদারকে খাঁটি বান্দায় পরিণত করে। তাই মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন রোজার জন্য রমজান মাসকেই নির্ধারণ করেছেন।
‘শবে কদর’ রমজানের অনন্য উপহার। এ মাসে রয়েছে শবে কদর বা এমন একটি রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যা লাইলাতুল কদর বা শবে কদর নামে পরিচিত। হাজার মাস মানে সোয়া তিরাশি বছর। অর্থাৎ একটি মানবজীবনের ব্যাপ্তিকালের সমান। সুতরাং রমজানের সুফল জীবনব্যাপী।
‘রোজার ফিদইয়া’ রমজানের একটি শ্রেষ্ঠ মাহাত্ম্য। রোজা একটি শারীরিক ও মানসিক ইবাদত। কিন্তু অক্ষম ও দুর্বল ব্যক্তির জন্য এর কাজার পাশাপাশি অপারগতায় ফিদইয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে; যা আর্থিক ইবাদত। এতে রোজার পরিধির ব্যাপকতা বোঝা যায়।
রোজা শারীরিক ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও দুর্বল ব্যক্তি যদি রোজা ভঙ্গ করেন; তার জন্য আল্লাহ তাআলা কাফফারা বিধান দিয়েছেন। যার মাধ্যমগুলো হলো দাসমুক্ত করা বা ৬০ জন গরিবকে দুই বেলা তৃপ্তিসহকারে খাওয়ানো অথবা একাধারে ৬০টি রোজা রাখা। যিনি ৩০ দিবসের মধ্যেই রোজা ভাঙেন, তিনি ৬০ দিবস কীভাবে তা পালন করবেন? মানে আবারও ভাঙলে আবারও ভাঙার জন্য দাস মুক্তি বা ৬০ জন মিসকিন খাওয়ানো। মানে হলো দানখয়রাত–সদাকাত তথা গরিবের সেবা ও সমাজের কল্যাণই রমজানের মুখ্য উদ্দেশ্য।
‘সদকাতুল ফিতর’ রোজার সেরা সৌন্দর্য। রোজা শেষে ঈদুল ফিতরের দিন সকালবেলা ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। দাতা ও গ্রহীতার সুবিধার্থে রমজানেও প্রদান করা যায়। এই ঈদের সঙ্গে ফিতরার সম্পৃক্ততার কারণে এর নাম ঈদুল ফিতর। সদকাতুল ফিতর বা ‘ফিতরা’ হলো ঈদের আনন্দকে সর্বজনীন করার উপায়। ধনী–গরিব সবাই যেন ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারেন, তাই এ ব্যবস্থা। মানুষ সামাজিক জীব, মানুষ অন্যের আনন্দ ও বেদনায় প্রভাবিত হয়। তাই এ আনন্দের দিনে পাড়া–প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন যদি আনন্দে শামিল হতে না পারে, তবে আনন্দ পূর্ণতা পাবে না। তাই নিজের আনন্দ সবার মধ্যে বিলিয়ে দিতে ও ছড়িয়ে দিতে এ ব্যবস্থা। ফিতরা বা সদকাতুল ফিতর হলো রমজানে রোজা পালনের শুকরিয়া স্বরূপ। এটি রোজার অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দেয়।
‘ইতিকাফ’ রমজানের বিশেষ তুহফা। আল্লাহর সান্নিধ্য মানবজীবনে আরাধ্য। এর অন্যতম মাধ্যম হলো ইতিকাফ।
‘শবে কদর’ রমজানের অনন্য উপহার। এ মাসে রয়েছে শবে কদর বা এমন একটি রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যা লাইলাতুল কদর বা শবে কদর নামে পরিচিত। হাজার মাস মানে সোয়া তিরাশি বছর। অর্থাৎ একটি মানবজীবনের ব্যাপ্তিকালের সমান। সুতরাং রমজানের সুফল জীবনব্যাপী।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি
সহকারী অধ্যাপক: আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
smusmangonee@gmail.com