আগামী এপ্রিল মাসে ভারতের জাতীয় (লোকসভা) নির্বাচন শুরু হবে। লোকসভা নির্বাচনে ভোট হবে সাত দফায়। ১৯ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গেও এই নির্বাচন শুরু হচ্ছে। গতবারের (২০১৯) লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ২২টি, বিজেপি ১৮টি এবং কংগ্রেস ২টি। নির্বাচন শুরুর তিন সপ্তাহ আগে এবারের নির্বাচনী দৌড়ে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে, সেটার পর্যালোচনা করেছেন শুভজিৎ বাগচী।
বুধবার সকালে উত্তর কলকাতায় বিজেপির রাজ্য দপ্তরে বিভিন্ন জেলা থেকে হাজির হন কয়েক শ দলীয় কর্মী। তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের ছবিতে আগুনও দেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ‘সেটিং’ (যোগসাজশ) করে নির্বাচন লড়ছে বিজেপি। জেলা স্তরে উপযুক্ত প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিয়ে নেতৃত্ব নিজেদের খেয়ালখুশিমতো প্রার্থী দিয়েছে। এর ব্যাখ্যা চান দলীয় কর্মীরা।
এ ধরনের ঘটনার পরেও পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভালো ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রধান কারণ ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ১৩ বছরের ক্ষমতাসীন-বিরোধিতার (অ্যান্টি-ইনকামবেন্সি) হাওয়া। শীর্ষ স্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে মধ্যনেতৃত্বের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
কিন্তু তৃণমূলের বড় সমস্যা পাড়া, গ্রাম, পঞ্চায়েত বা ব্লক পর্যায় স্থানীয় স্তরের নেতাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে উত্তর চব্বিশ পরগনার সন্দেশখালীতে। এ ঘটনা সম্পর্কে সম্প্রতি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের একটি নিরপেক্ষ রিপোর্ট বলছে, অভিযোগের যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে।
ওই দলের তরফে শুভপ্রতিম রায়চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘জমি লুট ও ব্যাপক নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধ আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত ছিল, বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি সেখানে মানুষের ক্ষোভকে পুঁজি করেছে এবং তার নীতি অনুযায়ী সাম্প্রদায়িক রং ও রূপ দিয়েছে।’
মাঠপর্যায়ে সাধারণ মানুষের ওপরে রাজনৈতিক দলের মদদপুষ্ট ‘দাদা’দের অত্যাচার দক্ষিণ এশিয়ার বড় সমস্যা। এতে মানুষের ক্ষোভ বাড়ে। ক্ষোভের এই সুবিধা বিজেপি এবার পশ্চিমবঙ্গে পাবে। এর জেরে গতবারের ১৮ আসন এবং ৪০ দশমিক ৭ শতাংশের রেকর্ড তারা ভাঙতে পারে কি না, সেটা বোঝা যাবে ৪ জুন যখন ফল ঘোষণা করা হবে।
রাজ্যের সব আসনের মধ্যে অন্তত অর্ধেক পেতে গেলে বিজেপিকে কিছু জিনিস করতে হবে, যা তারা এখনো করে উঠতে পারেনি। তাদের সেই অসুবিধার দিকগুলো খতিয়ে দেখার আগে সুবিধার দিকটা দেখা যাক।
■ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান সমস্যা মাঠপর্যায়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও দুর্নীতি।
■ অন্যবারের মতো এবারও হিন্দু ভোট টানতে বিজেপি ভরসা রাখছে ধর্মের ওপরে।
■ অন্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোটের হার বাড়ছে।
বিজেপির প্রথম সুবিধা হলো তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ, বিশেষত গ্রামের মানুষের ক্ষোভ। দ্বিতীয় কারণটা হতে পারে, গত ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর দেশজুড়ে একটা সার্বিক ধর্মীয় আবহাওয়া তৈরি করতে পারা। এই হাওয়াকে নির্বাচনের আগে বহু গুণে বাড়াতে সচেষ্ট হয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) যাতে তাদের রাজনৈতিক শাখা বিজেপি নির্বাচনে লাভবান হতে পারে।
আরএসএসের ধর্মীয় শাখা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বভারতীয় সহসম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিনহা এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, লাখ লাখ মানুষকে অযোধ্যায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে সেখানে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে, তা দেখাতে। তারা ফিরে সমাজকে বলবেন অযোধ্যায় দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, বাংলায়ও এই পরিবর্তন আনতে হবে।
রামমন্দির উদ্বোধনের আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিল আরএসএস। এ কর্মসূচির ফলে বিজেপির কী লাভ বা ক্ষতি হবে, সেই আলোচনায় যাননি সিনহা। কিন্তু এ অভিযানের কারণে যদি কোনো দল লাভবান হয়, তবে যে বিজেপিই হবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে তৃণমূল কংগ্রেস এর সঙ্গে একমত নয়। তাদের বক্তব্য, রামমন্দির নির্দেশিত ধর্মীয় আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব ফেলতে পারবে না। ইতিমধ্যেই মন্দির নিয়ে যে আবেগ তৈরি হয়েছিল, তার প্রায় পুরোই চলে গেছে বলেও তাঁরা মনে করেন।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর কোনো প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে পড়বে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প আমাদের হাতিয়ার। রাজনীতি হবে কর্মের ভিত্তিতে, ধর্মের ভিত্তিতে নয়।’
অন্যান্য বারের মতোই এ নির্বাচনে হিন্দু ভোট টানতে বিজেপি ভরসা রাখছে ধর্মের ওপরে। অন্যদিকে তৃণমূলের প্রধান হাতিয়ার মুখ্যমন্ত্রীর জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। তবে জনকল্যাণমূলক প্রকল্প ১০ বছর ধরে চলছে। নির্বাচনে তৃণমূলের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হিসেবে প্রকল্পের ভোট টানার ক্ষমতা কমছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
কানাডার লরেন্স কিনলিন বিজনেস স্কুলের অন্তর্গত ফ্যানশোয়ে কলেজের সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি তৃণমূলের কল্যাণমূলক প্রকল্প সম্পর্কে বলছিলেন, ‘প্রথম ১০-১৫ বছরের পরে সিপিআইএম দলেরও এ সমস্যা হয়েছিল। তারা আর বড় কোনো সাফল্যের কথা সেভাবে প্রচারে আনতে পারছিল না, আংশিক ভূমি সংস্কারের সাফল্য ছাড়া। মনে হচ্ছে তৃণমূলও কিছুটা সেই রকম একটা জায়গায় আটকে গেছে। এই নির্বাচন এবং ২০২৬-এর বিধানসভা থেকে বিষয়টা সম্পর্কে কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যাবে।’
তাঁর এ কথার অর্থ দাঁড়ায়, জনকল্যাণমূলক প্রকল্প আগামী দিনে তৃণমূলের শক্তি ও দুর্বলতা দুই–ই হতে পারে।
বিজেপির আরেকটি বড় সুবিধা রয়েছে। সেটি হলো ভোটের ‘প্যাটার্ন’। দেখা যাচ্ছে, অন্য অনেক রাজ্যের মতোই পশ্চিমবঙ্গেও বিধানসভা থেকে লোকসভায় বিজেপির ভোটের হার বাড়ছে। বরাবরই লোকসভায় কেন্দ্রীয় দলের সুবিধা থাকে। বিজেপি ২০১৪ সালের পরে এ সুবিধা পাচ্ছে। এ কারণে লোকসভায় বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ভোটের ফারাক কমছে, কিন্তু আবার বিধানসভায় বেড়ে যাচ্ছে।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৪ শতাংশ ভোট। বিজেপি ১৭। ২০১৬ সালের বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষেত্রে বেড়ে হলো ৪৫ এবং বিজেপির কমে হলো ১০ শতাংশ। অর্থাৎ ১৭ থেকে বিজেপি নেমে গেল দশে। এটাই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পর্যায়ে ৪০ দশমিক ৭ শতাংশে চলে গেল। কিন্তু আবার প্রায় ৩ শতাংশ কমে ৩৮ শতাংশে নেমে এল ২০২১ সালে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে। বিজেপির লোকসভা নির্বাচনে ভোট বাড়ার স্বাভাবিক কারণ হিসেবে যে বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়, তা হলো, ‘নরেন্দ্র মোদি ফ্যাক্টর’। সমীক্ষকদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর জন্যই ভোট বাড়ছে লোকসভায়।
রাজ্য বিজেপির অন্যতম উপদেষ্টা এবং আরএসএসের পুরোনো সদস্য ধনপতরাম আগরওয়ালের মতে, বিজেপির সুবিধা দুটি। তিনি বলেন, ‘একদিকে মোদি সামনে থেকে দল এবং দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমরা একের পর এক সমীক্ষায় দেখতে পাচ্ছি, তিনি বিরোধী নেতৃত্ব থেকে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ ১০ বছর ধরে মানুষ ভারতের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন দেখেছেন, বিশেষত কোভিড–পরবর্তী পর্যায়ে।’
এসব কথাবার্তা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, এবারও লোকসভায় ৩-৪ শতাংশ ভোট বাড়তে পারে বিজেপির। এটা তাদের আসনসংখ্যা গতবারের চেয়ে বাড়াতে পারে। বিষয়টি তৃণমূলের জন্য উদ্বেগের।
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান সমস্যা অবশ্যই মাঠপর্যায়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। তাদের দ্বিতীয় সমস্যা দুর্নীতি। তবে সেটা যতটা শহরাঞ্চলে, ততটা গ্রামে নয়। কারণ, গ্রামের মানুষের বড় অংশই মনে করেন, তৃণমূল দুর্নীতি করলেও প্রকল্পের টাকা মানুষের হাতে পৌঁছায়। কিন্তু এর বাইরেও একটা বড় সমস্যা রয়ে গেছে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের সাবেক এক সংসদ সদস্য। তাঁর পর্যবেক্ষণ হলো, প্রার্থী তালিকা দেখে অনেকেই মনে করছেন যে বেশ কিছু আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হুগলি আসনে বিজেপির এমপি এবং এবারের প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় যথেষ্ট চাপের মধ্যে ছিলেন। কিন্তু সেখানে দিদি কলকাতা থেকে অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। সেই কবে ক্রিকেট খেলেছিলেন কীর্তি আজাদ তাঁকে বর্ধমানে দাঁড় করানো হলো। এঁদের নিজেদের কেন্দ্র সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। এ রকম অন্তত ছয়-সাতটি উদাহরণ দেওয়া যায়, যেখানে অজ্ঞাত কারণে দুর্বল প্রার্থী দিয়ে বিজেপির সুবিধা করা হয়েছে।’
প্রায় এই একই অভিযোগ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলার দুই প্রার্থী মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে গুজরাটের ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান এবং মালদহের দক্ষিণে গবেষক শাহনওয়াজ আলী রায়হানকে নিয়ে। তাঁদের প্রার্থী করায় ওই দুই আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের মুসলমান সমর্থকদের একাংশ কংগ্রেসকে ভোট দেবে বলে কার্যত খোলাখুলি ঘোষণা করেছে। মুসলমানপ্রধান অঞ্চলে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে ভোট ভাগাভাগিতে লাভবান হতে পারে বিজেপি।
এসব কারণেই বলা হচ্ছে ‘সেটিং থিওরি’ বা যোগসাজশের নির্বাচন, যে অভিযোগে বিজেপি পার্টি অফিসে এসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন দলের কর্মীরা। বিজেপির বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। যেমন, উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাট আসনে বিজেপি প্রার্থী করেছে সন্দেশখালীর গৃহবধূ রেখা পাত্রকে। সন্দেশখালীতে তৃণমূলবিরোধী আন্দোলনের কারণেই রাজনীতিতে সম্পূর্ণ আনকোরা এই গৃহবধূকে প্রার্থী করা হয়েছে।
কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে অন্যান্য কেন্দ্রের মতোই সন্দেশখালী ছাড়াও আরও ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, তাঁদের প্রার্থীর সন্দেশখালী গ্রাম ছাড়া জেলার রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে কোনো ধারনাই নেই। সে কারণেই তাঁকে কলকাতায় বসে প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগে।
এ বিষয়ে বক্তব্য বসিরহাটের এক বিজেপি নেতার বক্তব্য হলো, ‘স্বাভাবিকভাবেই বসিরহাটের বিজেপি সমর্থকদের মনোবল তলানিতে পৌঁছেছে। প্রার্থীর বিরুদ্ধে পোস্টারও পড়েছে। মনে রাখতে হবে এ আসনে তৃণমূল প্রার্থী করেছে হাজী নুরুল ইসলামকে যে দীর্ঘদিনের পোড়–খাওয়া নেতা।’
বিজেপির নেতা-কর্মীদের একাংশ মনে করছেন, বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী মাত্র পাঁচ বছর আগে তৃণমূল থেকে এসে পুরোনো নেতাদের গুরুত্ব কমিয়ে বিজেপির ভেতরে নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পেরেছেন। প্রার্থী তালিকায় শুভেন্দুর পছন্দের লোকদের স্থান হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের ঘনিষ্ঠরা সুবিধা করতে পারেননি।
বিজেপির এক নেতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, দিলীপ ঘোষকে তাঁর জেতা আসন মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে ওই আসনে কলকাতা থেকে অগ্নিমিত্রা পালকে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি মেদিনীপুর সম্পর্কে বিশেষ জানেন না। দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পাশের বর্ধমানে, যেখানে তিনি নতুন। এভাবেই নানা আসনে কাউকে কেন প্রার্থী করা হয়েছে, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই।
বিজেপির আরও কিছু সমস্যা রয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গে সর্ববৃহৎ দল হওয়ার পথে বাধা হতে পারে। এর একটি হলো কর্মিসংখ্যা। পশ্চিমবঙ্গে ৮০ হাজারের কিছু বেশি নির্বাচনী বুথ রয়েছে। একেকটি বুথে নির্বাচনের অনেক আগে থেকে কাজ করার জন্য এবং নির্বাচনের দিনে বুথ পরিচালনার জন্য কমপক্ষে পাঁচজন কর্মী দরকার। এই কর্মীদের দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হওয়া প্রয়োজন। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কাও রয়েছে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের সব বুথে সমানে সমানে লড়তে গেলে চার থেকে পাঁচ লাখ নিবেদিত কর্মী চাই। ২০২১ সালের নির্বাচনে মোটামুটিভাবে এক-তৃতীয়াংশ বুথে কর্মী দিতে পেরেছিল বিজেপি।
এ নির্বাচন আরও অনেক কিছুর মতোই ইঙ্গিত দেবে গত তিন বছরে আরও বেশিসংখ্যক নিবেদিত কর্মী বিজেপি পেয়েছে কি না। জেতা-হারাও অনেকটাই নির্ভর করবে এর ওপরে।
২০২৪ সালের নির্বাচনে বামফ্রন্ট, বিশেষত সিপিআইএম (কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া, মার্ক্সিস্ট) ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করছে। সম্প্রতি ব্রিগেডে দলটির সমাবেশে বিরাট জমায়েতও হয়েছে। কিন্তু এরপরও সিপিআইএমের আসন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দুটি আসন পেয়েছিল। কংগ্রেস এবার দুটি আসনই ধরে রাখতে পারবে কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
●শুভজিৎ বাগচী প্রথম আলোর কলকাতার সংবাদদাতা