ব্রিটিশ আমলে গঠিত পুলিশের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ব্রিটিশ শাসকদের শাসনকে পাকাপোক্ত করা। সেই থেকে প্রায় একই আইনি কাঠামোতে চলছে আমাদের পুলিশ। জনবান্ধব পুলিশের জন্য কেন স্থায়ী পুলিশ কমিশন অপরিহার্য, তা নিয়ে লিখেছেন ইশরাত জাকিয়া সুলতানা ও মো. রিজওয়ানুল ইসলাম
শিশুরা সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় পথে দায়িত্বরত পুলিশের সঙ্গে হাসি বিনিময় করছে। হারিয়ে যাওয়া, খুন হওয়া বা সন্দেহজনক কোনো একজন মানুষ সম্পর্কে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করলে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার পর্যন্ত পুরস্কারের ঘোষণা ওয়েবসাইট থেকে দেখে আগ্রহীরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। পুলিশের ওপর জনগণের ভরসা এতটাই প্রকাশ্য ও দীর্ঘস্থায়ী যে এ বিষয়টিই পুলিশের চাকরিকে বেছে নিতে অনেককে উদ্বুদ্ধ করে।
স্কুলের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে মাসের একটি দুপুরে স্কুলে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আসেন, যাঁদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেয় ও সাইবার বুলিংসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে। টানা কয়েক বছরের জরিপে দেখা গেছে, স্কুলশিক্ষক, রাজনীতিবিদ, এমনকি কখনো কখনো পরিবারের সদস্যদের চেয়েও পুলিশের ওপর মানুষের বেশি আস্থা।
এ চিত্রগুলো আমাদের দেশের জন্য এখনো বাস্তব না হলেও পৃথিবীর অনেক দেশের জন্যই এগুলো পরিচিত দৃশ্য। এই চমৎকার উদাহরণগুলো জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, কানাডা, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি দেশে পুলিশের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততার বাস্তব চিত্র। আমাদের দেশে তাহলে জনবান্ধব পুলিশের দেখা পাওয়া এবং পুলিশ ও জনগণের একই সঙ্গে কাজ করার ঘটনা কেন বিরল?
মূলত বঙ্গভঙ্গের সময় থেকে পুলিশভীতি ও পুলিশের সঙ্গে জনবিচ্ছিন্নতার শুরু। পরে এটা উপমহাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে গত ১০০ বছরের রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এবং বাংলাদেশে গত প্রায় দুই দশকের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মধ্য দিয়ে। ফলে শিশু থেকে বৃদ্ধ, কারও মনে পুলিশ শব্দটি কোনো নিরাপত্তা ও ভরসার অনুভূতি তৈরি করে না। পুলিশ সংস্কার তাই এখন সময়ের দাবি।
■ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো পুলিশ কমিশনকে একটি স্বাধীন কমিশন হতে হবে। এই কমিশনের প্রধান কাজ হবে পুলিশের নিয়োগ, পদোন্নতি এবং শৃঙ্খলা তদারকি করা। ■ পুলিশের জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর অন্যতম কার্যকর মাধ্যম হলো প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও দল-মত-শ্রেণিনির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে পুলিশের পেশাদার আচরণ করা। ■ পুলিশের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার বন্ধ করে এবং পদলেহনের সংস্কৃতি থেকে বের করে স্বাধীন একটি জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। কাজটি করার অন্যতম সহজ ও বাস্তবসম্মত পথ হলো পুলিশকে জনমুখী করা।
সরকার এটি উপলব্ধি করতে পেরেছে বলে ইতিমধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু পুলিশের টেকসই সংস্কারের জন্য একটি স্থায়ী পুলিশ কমিশন প্রয়োজন। সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্সের (এসআইপিজি) উদ্যোগে আয়োজিত একটি আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, পুলিশের প্রতিনিধি, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে এ দাবিই অনুরণিত হয়েছে।
এসআইপিজি পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ২০১৫ সাল থেকে পুলিশের প্রতি জনগণের বিশ্বাস তীব্রভাবে হ্রাস পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক জরিপ ন্যাশনাল সার্ভে অন দ্য সিটিজেনস এক্সপেকটেশনস ফ্রম দ্য ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট অব বাংলাদেশ ২০২৪ বলছে, পুলিশের ওপর মাত্র ১১ শতাংশ মানুষের আস্থা আছে।
নিঃসন্দেহে এ ফলাফল জনগণের কাছে যেমন কাম্য নয়, পুলিশের কাছেও স্বস্তিকর হওয়ার কথা নয়। স্থায়ী পুলিশ কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পুলিশকে জনমুখী করার আবশ্যকতা এখানেই। ব্রিটিশ আমলে গঠিত পুলিশের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ব্রিটিশ শাসকদের শাসনকে পাকাপোক্ত করা। সেই থেকে প্রায় একই আইনি কাঠামোতে চলছে আমাদের পুলিশ। ২০০৭ সালে একবার সংস্কারের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু এ সংস্কার বিভিন্ন রাজনৈতিক অসহযোগিতার কারণে আলোর মুখ দেখেনি।
পুলিশ কমিশনে কারা থাকবেন, কারা এর সদস্য হবেন—এগুলো নির্ধারণের জন্য একটি সার্চ কমিটি গঠন করা জরুরি। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে অন্যান্য সরকারি কমিশনের সদস্য কারা হবেন, তা নির্ধারণ করার জন্য সার্চ কমিটি গঠনের উদাহরণ রয়েছে।
জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো পুলিশ কমিশনকে একটি স্বাধীন কমিশন হতে হবে। এই কমিশনের প্রধান কাজ হবে পুলিশের নিয়োগ, পদোন্নতি এবং শৃঙ্খলা তদারকি করা। এই কমিশনে একজন কমিশনপ্রধান যিনি হতে পারেন সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি। তাঁর নেতৃত্বে যাঁরা থাকতে পারেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশিষ্ট সাংবাদিক, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি, মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের প্রতিনিধি, পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি।
বর্তমানে পুলিশের মধ্যে তিন স্তরে নিয়োগের ধারা দেখা যায়।
ক. কনস্টেবল
খ. এসআই/সার্জেন্ট
গ. বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে এএসপি
এটিকে দুই স্তরের কাঠামো করতে হবে, যেন দক্ষতা ও মেধার মাধ্যমে প্রত্যেকেরই কর্মস্থলে পদোন্নতি পেয়ে ওপরে যাওয়ার এক প্রকার সুযোগ তৈরি হয়। আমরা কেন এই প্রস্তাব করছি?
একজন নিচের পদের পুলিশের সদস্য যখন দেখবেন যে তাঁর সততার মাধ্যমে, দক্ষতার মাধ্যমে ওপরে যাওয়ার একটা সুযোগ আছে, তখন তাঁর মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা কমতে পারে। সেই সঙ্গে এই নিয়োগকাঠামো সরকারি কর্ম কমিশনের হাতে না রেখে পুলিশ কমিশনের হাতে থাকা জরুরি। কারণ, পুলিশের চাকরি একপ্রকার বিশেষায়িত চাকরি। সেখানে শারীরিক ও মানসিক কাঠামো সাধারণ ক্যাডার থেকে কিছুটা ভিন্ন। কমিশন তাদের বাস্তবতা এবং প্রয়োজনের আলোকে আলাদা নিয়োগ করবে।
এর পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের জন্য পৃথক অভিযোগ শাখা থাকতে হবে। এখন পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ হলে তা রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে যায়। প্রস্তাবিত অভিযোগ শাখার সদস্যরা এমন হবেন যেন তাঁদের বিরুদ্ধেই আবার কোনো অভিযোগ আসতে না পারে। এই শাখার সব সদস্যের অবশ্যই পূর্ণকালীন ভিত্তিতে নিয়োগ হওয়া উচিত।
বাস্তবতার নিরিখে সহজেই অনুমেয় যে এই কমিশন রাতারাতি গঠনের মাধ্যমে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে না। এই পরিবর্তন ধাপে ধাপে হবে। আমাদের পুলিশের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার বন্ধ করে এবং পদলেহনের সংস্কৃতি থেকে বের করে স্বাধীন একটি জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। কাজটি করার অন্যতম সহজ ও বাস্তবসম্মত পথ হলো পুলিশকে জনমুখী করা।
এ জন্য একাডেমিক গবেষণায় গুরুত্বারোপ করা, পুলিশ রেগুলেশনস অব বেঙ্গল (পিআরবি) ১৯৪৩ থেকে আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ধারাগুলোকে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা, পুলিশি ব্যবস্থাকে ডিজিটাইজেশন করা এবং তরুণদের সঙ্গে পুলিশের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা অপরিহার্য।
বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশবিজ্ঞান পড়ানো হয়। ২০০১ সালে শুরু হওয়া এই বিষয়ে এমন কোনো গবেষণা বাংলাদেশে হয়েছে কি, যার ফলাফল পুলিশকে প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে, বিশ্লেষণ করতে, বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে এবং আলোচনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পুলিশ বিভাগকে সাহায্য করেছে?
সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক সমস্যার ধরনও পরিবর্তিত হয়। এগুলো নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে গবেষকেরা শুধু জ্ঞান বিস্তারেই ভূমিকা রাখেন না, সমাজের সমস্যা সমাধানকারী কর্তৃপক্ষের কাছে তা তুলে ধরতে পারেন।
আরকানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনার অপরাধবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষকদের গবেষণায় ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক সূত্র হিসেবে ব্যবহৃত ৩৭০টি গবেষণা নিবন্ধের কথা জানা যায়। এ গবেষণা নিবন্ধগুলো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এ থেকে সহজেই অনুমেয়, পুলিশবিজ্ঞান নিয়ে কী ব্যাপক পরিসরে উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা করে।
পুলিশ রেগুলেশনস অব বেঙ্গল ১৯৪৩–এর কথা শুনে মনে হতে পারে ৮০ বছরের পুরোনো বিধিমালার কতটুকুই আজ গ্রহণযোগ্য? অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে ২৬টি অধ্যায়ে বিধৃত এর ১২৯০টি রেগুলেশনসের অনেক কিছুই ২০২৪ সালেও আমাদের জন্য প্রয়োজন। এটি বোঝার জন্য কেবল একটি উদাহরণই যথেষ্ট: ভিসিএনবির (ভিলেজ ক্রাইম নোট বুক) ব্যবহার।
এই নোটবুকে প্রতিটি থানার বিপজ্জনক মানুষের তথ্য সংক্ষিপ্ত আকারে তার মৃত্যু পর্যন্ত সেই থানার দায়িত্বরত পুলিশ লিপিবদ্ধ করতেন। ম্যাজিস্ট্রেটসহ যেকোনো সরকারি কর্মকর্তা সে থানায় বদলি হয়ে যাওয়ার পর ভিসিএনবি দেখে নিতেন। ফলে এলাকার সমস্যা জানার ক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনের ধারণা একই পর্যায়ে থাকত। জনবিচ্ছিন্ন পুলিশের পক্ষে ভিসিএনবি ব্যবহার অসম্ভব। একমাত্র এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশতে পারলেই ভিসিএনবির জন্য তথ্য সংগ্রহ সম্ভব।
বাংলাদেশে আশির দশকের শেষের দিকেও নিয়মিতভাবে ভিসিএনবির ব্যবহার ছিল। পুলিশ স্টাফ কলেজের নিউজলেটারের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর ২০১২ সংখ্যার ১১ পৃষ্ঠায় ‘প্রোঅ্যাকটিভ ক্রাইম কন্ট্রোল’ অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে, ‘ভিসিএনবি হার্ডলি এক্সিস্টস ইন টুডেজ পুলিশিং’ অর্থাৎ বর্তমানের পুলিশি কর্মকাণ্ডে ভিসিএনবি নেই বললেই চলে।
কাগজের নোটবুককে আজকের প্রযুক্তির যুগে হয়তো ডিজিটাল নোটবুকে রূপ দেওয়া যেতে পারত। এভাবে থানাভিত্তিক অপরাধীকে চিহ্নিত করা ও তাকে পর্যবেক্ষণে রাখার যে কার্যকর মাধ্যম ভিসিএনবি তা ব্যবহারের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণের যে চর্চা, সেটি কেন বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে গেল?
সাধারণ মানুষ যখন এই বিশ্বাস রাখতে পারবে যে সমাজের বিপজ্জনক মানুষের তথ্য পুলিশের কাছে রয়েছে, তখন পুলিশ খুব সহজেই সাধারণ মানুষের আস্থার পাত্রে পরিণত হবে। অবশ্য বর্তমান বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বিস্তৃত হয়েছে, তার প্রভাবে গ্রাম/ইউনিয়ন পর্যায়েও পৌঁছেছে। এর ফলে অসৎ উদ্দেশ্যে দেওয়া কারও বয়ান থেকে পুলিশ নিরাপদ ব্যক্তিকে বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করলে কিংবা পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের আর্থিক ভাগাভাগির বাণিজ্য শুরু হয়ে গেলে ভুল ব্যক্তির তথ্য লিপিবদ্ধ হবে। এতে ভিসিএনবির ব্যবহার অর্থহীন হয়ে পড়বে।
পুলিশের জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর অন্যতম কার্যকর মাধ্যম হলো প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও দল-মত-শ্রেণিনির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে পুলিশের পেশাদার আচরণ করা। কোন এলাকায় আজকে পুলিশের কী কী কাজ জনকল্যাণকর হয়েছে, কী কী কাজ জনকল্যাণের বিপরীতে গিয়েছে—এসব তথ্য ডিজিটাল ড্যাশবোর্ডে থাকতে হবে এবং দৈনিক হালনাগাদ করা হবে, যা সর্বসাধারণের দেখার সুযোগ থাকবে।
এটি একদিকে পুলিশের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে জনসংযোগ বাড়াবে। একজন রিকশাচালকও যেন জানেন বিপদে পড়লে ৯৯৯-এ কল করা যায় এবং করলে কার্যকর সাড়া পাওয়া যায়, ঠিক যেভাবে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সাড়া পান। সেই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, লাভজনক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতি এক বা দুই মাসে একবার পুলিশ সশরীর উপস্থিত হয়ে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনবে এবং প্রশ্নোত্তরে অংশ নেবে।
একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তরুণদের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক তৈরি করা। বাংলাদেশের চার ভাগের এক ভাগ জনসংখ্যার বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে, যাদের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ। এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পুলিশকে কাজ করতে হবে। যেমন বিএনসিসি (বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর) এবং স্কাউটের তরুণদের নিয়মিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান ও জনকল্যাণকর কাজে নিয়োজিত করার কর্মসূচি পুলিশের থাকতে হবে।
সেই সঙ্গে বিভিন্ন পেশার মানুষ এবং পুলিশ প্রতিনিধির সমন্বয়ে এলাকার সমস্যা সমাধানের জন্য কমিউনিটিভিত্তিক দল থাকবে, যার নেতৃত্বে থাকবে ওই এলাকার তরুণেরা। তারা সমস্যার সমাধান করবে। পুলিশ এ কাজে তদারকি করবে না, বরং থাকবে সহায়ক হিসেবে।
স্থায়ী পুলিশ কমিশনকে এমনভাবে পুলিশের সংস্কার করতে হবে যেন চলার পথে পুলিশকে দেখে একটি ছোট্ট শিশুও পুলিশের সঙ্গে হাসি বিনিময় করে; একজন পুলিশ সদস্যও যেন ভাবতে পারেন, এটা তাঁরও সমাজ।
●ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতানা সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম অধ্যাপক, আইন বিভাগ