ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনার দাবি রাখে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৭ অনুযায়ী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত পদত্যাগী সরকার দায়িত্ব চালিয়ে নেয়। গণ-আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই ধারাবাহিকতা সম্ভব নয়।
৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। আন্দোলনকারী ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী, শিগগিরই একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার কথা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তির পর বর্তমান সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রত্যক্ষ কোনো বিধান নেই। তবে একটি সফল আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের অধীন রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়োগ দিতে পারেন।
অনুচ্ছেদ ৪৮ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রধান। তিনি সংবিধান ও দেশের আইন প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রীর সরকার যেহেতু দায়িত্ব পালনের জন্য অনুপস্থিত, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য সর্বজনগ্রাহ্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে পারেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নবগঠিত সরকার সংসদীয় সরকারের আদলে রাষ্ট্রক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। রাষ্ট্রপতি ও নবগঠিত সরকারের প্রধানের (বা প্রধান উপদেষ্টা) পরামর্শক্রমে তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। নতুন নির্বাচনের পর সংসদ গঠিত হলে যে সংসদ উপরিউক্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমকে বৈধতা দিয়ে অনুমোদন ও সমর্থন প্রদান করতে পারবে।
একটি বিকল্প পন্থা হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন করা যেতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে শুনানি করা হলে আপিল বিভাগ রায়টি বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে। তারপর সংবিধান অনুযায়ী একটি সর্বজনগ্রাহ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
যে পন্থাই গ্রহণ করা হোক না কেন, প্রবর্তিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। রাষ্ট্রপতির আদেশে সংবিধানের ওপরে বর্ণিত বিধানগুলোর উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। জনগণই সব ক্ষমতার উৎস এবং তাদের ইচ্ছার প্রতিফলনরূপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
এই সরকারে স্থান পাওয়া ব্যক্তিরা রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন—এমন ব্যক্তি হবেন। প্রশাসন, আইন, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি ও শিক্ষা বিষয়ে অভিজ্ঞ, দৃঢ়চেতা ও অবিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে সরকার গ্রহণ করতে হবে। ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দেশের জনগণ এই সরকারকে সহযোগিতা করলে তারা দেশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে সফল হবেন—এমনটা প্রত্যাশা করছি।
ড. রিদওয়ানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক