সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সিএমএম আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঢাকা, ১৮ মে
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সিএমএম আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঢাকা, ১৮ মে

সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধ, নাগরিক সমাজ একাত্ম

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এক আকস্মিক, অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এরপর মামলা দিয়ে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। মাননীয় আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করলেও এ মুহূর্তে রোজিনা ইসলাম কারান্তরালে। এটা রোজিনা ইসলাম, তাঁর পরিবার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং দুর্নীতিবিরোধী নীতি ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে এক বিশাল আঘাত।

রোজিনা ইসলাম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য কানাডিয়ান অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সিলেন্স ইন বাংলাদেশি জার্নালিজম (২০১১), টিআইবির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার (২০১৫), পিআইবি ও দুদকের উদ্যোগে দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম পুরস্কার বাংলাদেশসহ (২০১৪) অনেকগুলো স্বীকৃতি পেয়েছেন, পেয়েছেন দেশের মানুষ, পাঠক, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভালোবাসা ও সম্মান।

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে রোজিনা ইসলাম তথা সংবাদমাধ্যমের ওপরে নেমে আসা এই অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এবং প্রতিবিধান দাবি করে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মহল যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে, স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি সংহতি জানাচ্ছে, তা আমাদের প্রেরণা ও সাহস জোগাচ্ছে।

সম্পাদক পরিষদ, এডিটরস গিল্ড, জাতীয় প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন, রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন, গণমাধ্যমকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতা, নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন, বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজ, মানবাধিকারকর্মী, শিল্পী-সাহিত্যিক-সংস্কৃতিকর্মী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ নাগরিকেরা স্বাধীন সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়িয়েছেন; সোচ্চার হয়েছেন ন্যায় প্রতিষ্ঠায়, অন্যায়ের প্রতিবাদে। তাঁদের সবার প্রতি প্রথম আলো পরিবারের কৃতজ্ঞতা।

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক (জিআইজেএন), পিইএন বাংলাদেশ ও সাউথ এশিয়ান উইমেন ইন মিডিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন সংগঠন ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং রোজিনা ইসলামের মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মুক্ত সাংবাদিকতা সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সম্মিলিত ও ব্যক্তিগত এসব সক্রিয় ও সোচ্চার ভূমিকা আমাদের জন্য প্রেরণাদায়ক।

প্রথম আলো আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। আদালতের মাধ্যমে রোজিনা ইসলাম ন্যায়বিচার পাবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। রোজিনা ইসলাম এবং তাঁর পরিবারের পাশে প্রথম আলো সব সময়ই থাকবে। ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের প্রতিবিধানে প্রথম আলো তার কর্তব্য ও ভূমিকা থেকে বিরত হবে না।

আমরা রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে তাঁকে হেনস্তাকারীদের বিচার ও শাস্তি দাবি করছি।