সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে সামাজিক সম্প্রীতি

গত ১৯ মে ২০১৯, প্রথম আলোর আয়োজনে ও কিশোর আলো এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ‘সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে সামাজিক সম্প্রীতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশ হলো।

আলোচনায় সুপারিশ

  • সম্প্রীতিকে জীবনের একটি দর্শন হিসেবে নিতে হবে
  • অনে্যর মতের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে এবং সবার বিশ্বাস ও মত মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন 
  • তরুণদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেন তারা উগ্রবাদের দিকে না যায়
  • আমাদের মনেপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়া জরুরি
  • প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে সমাজে শান্তি আসবে
  • একটি নির্দিষ্ট বয়সের মানুষের কথা না ভেবে সব বয়সের মানুষের কথা ভাবতে হবে
  • সহিংস উগ্রবাদ রোধ করতে পরিবার থেকেই উদ্যোগ শুরু করা দরকার
  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন


আলোচনা 

আব্দুল কাইয়ুম

আমাদের সমাজে দিন দিন অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাচ্ছে। খুব ছোটখাটো ব্যাপারে মাঝেমধ্যে বড় রকমের সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। তরুণদের মধ্যে কিছুটা হতাশা ও বেকারত্ব কাজ করে। এ ছাড়া ছোটখাটো স্বার্থের দ্বন্দ্বও আছে। 

আমাদের সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সব সময় সম্প্রীতি ছিল। এটা স্বাধীনতার একটি মূল কথা। আজকে আমরা আলোচনা করব সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে সামাজিক সম্প্রীতি কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। এই বিষয়ে এখন আলোচনা করবেন শাহীন আনাম।

 

শাহীন আনাম

শাহীন আনাম

‘ভিন্নতা ও ভিন্নমত গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে। সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগাতে হবে।’
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন মানবাধিকার ও সুশাসন নিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে কাজ করছে। সমগ্র বাংলাদেশে আমাদের প্রায় ১৩০টি সহযোগী সংগঠন রয়েছে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের দুটি প্রকল্প সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে কাজ করছে।
আমাদের তরুণসমাজ অনেক সম্ভাবনাময়। তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিতে হবে। তরুণদের ইচ্ছে, স্বপ্ন, চিন্তা ও মতামত আমাদের জানতে হবে।
তাদের ইচ্ছে ও চাহিদার কথা শুনলে সহিংস উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে। আগে ধারণা করা হতো ধর্মীয় উগ্রবাদই সহিংস উগ্রবাদের কারণ। কিন্তু এ ধারণাটি আসলে সঠিক না।
হোলি আর্টিজান বেকারির ঘটনার পর থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনগুলো সহিংস উগ্রবাদকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে এবং তা প্রতিরোধে একযোগে কাজ করছে।

আমাদের দেশে বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও পেশার মানুষের বসবাস। সব মানুষের এই বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করে সম্প্রীতি বজায় রেখে একসঙ্গে বসবাস করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাচ্ছে। 

প্যারেন্টিংয়ের ধরনে আসছে পরিবর্তন। ছোটবেলা থেকে আমাদের সম্প্রীতি শেখানো হচ্ছে না। তাই আমাদের পরিবারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বোপরি চিন্তাচেতনার মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতির ধারণা তৈরি করতে হবে।

সহিংস উগ্রবাদ বিস্তারে তরুণসমাজকে টার্গেট করা হচ্ছে। আর সে জন্যই মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন বর্তমানে তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে বেশি কাজ করছে এবং এ ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছে।

ধর্ম আমাদের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

ধর্মীয় শিক্ষা হতে হবে অন্তর্ভুক্তমূলক (ইনক্লুসিভ) যেখানে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতি, সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি করতে হবে। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে ধর্ম এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে যে আমরা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিলে বিধর্মী বলে চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছি। 

ধর্ম ও সংস্কৃতির এই দ্বন্দ্ব এখনো বিদ্যমান। পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো ব্যবহার করে আমাদের এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ ছাড়া প্রযুক্তির ব্যবহার জীবনে নিয়ে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। তাই একে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে হবে।

ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে কতটা বড় ভূমিকা পালন করে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা সবাই একমত যে সহিংস উগ্রবাদের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। এর পেছনে অনেক কারণ জড়িত। এ জন্য আমাদের পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে সমস্যা সমাধান করতে হবে।

 

ইসফাক ইলাহী চৌধুরী

ইসফাক ইলাহী চৌধুরী

সহিংস উগ্রবাদ রোধে বাংলাদেশ সরকার হার্ড অপশনের পেছনে যত টাকা খরচ করেছে, সফট অপশনের ক্ষেত্রে তার সামান্য অংশও খরচ করেনি।
আমরা অনেক ক্ষেত্রে অপচয় করি। টাকা নষ্ট না করে বই কিনতে পারতাম। ল্যাবরেটরির জন্য রাসায়নিক দ্রব্য কিনতে পারতাম। আমাদের সামাজিক ব্যয়টা ঠিকভাবে হচ্ছে না।
সামাজিক সম্প্রীতি এখন খুব চ্যালেঞ্জের মুখে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার হচ্ছে। অনেক সময় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। ধর্মের একটা বিশাল ঐতিহ্য আছে। বিশাল জ্ঞান–বিজ্ঞানের ইতিহাস আছে। এটা কাজে লাগাতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ধর্ম থেকে সহিংস উগ্রবাদের সৃষ্টি হচ্ছে।
নিউজিল্যান্ডে যখন হামলা হলো, তখন আমরা সবাই হতাশ হয়ে পড়লাম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব হইচই হয়েছে। কিন্তু যখন শ্রীলঙ্কায় হামলা হলো তখন কেন দাঁড়িয়ে বললাম না, আমরা বাংলাদেশে চার্চকে পাহারা দেব! আমরা বাংলাদেশে এটা হতে দেব না। দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। তাহলেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। 

 

আনিসুল হক

আনিসুল হক
পরিবার আমাদের সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। পরিবার থেকেই সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধ শুরু করতে হবে। আমরা পঞ্চম শ্রেণি থেকে যে জিপিএ-৫ শুরু করি, এই ফলাফলটা অভিভাবকের দরকার। আমাদের শিশুদের এটা দরকার হয় না।
বাস্তবজীবনের সাফল্যের সঙ্গে স্কুলজীবনের ফলাফলের ভূমিকা খুব কম। জিপিএ-৫ না পেলে মা বড়মুখ করে বলতে পারেন না, আমার সন্তান গোল্ডেন ফাইভ পেয়েছে।
ভালোবাসার বন্ধনে শিশুদের আবদ্ধ করতে হবে। সে জন্য শিশুদের দৃষ্টিতে জগৎটাকে দেখা দরকার। বর্তমানের শিক্ষা অনেকটা ব্যবসা ও ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক। মানুষের সাফল্যের অর্থ দাঁড়িয়েছে সফল ক্যারিয়ার ও টাকাপয়সা।
বিসিএস খুব ভীষণ একটা চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৪ লাখ ছেলেমেয়ে পরীক্ষা দেয়। আসন থাকে মাত্র ২ হাজার। আপনি যেভাবেই পড়ুন না কেন, ৩ লাখ ৯৮ হাজার জন এই পরীক্ষায় পাস করবে না। সেই জন্য লেখাপড়ার মধ্যে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি থাকা দরকার।
শিশুদের বেশি খেলাধুলা করা দরকার। কারণ, খেলাধুলা শুধু জয়লাভ করা শেখায় না, পরাজয়টা মেনে নিতে শেখায়। এত সাফল্য এত বিজয় দরকার নেই। সুন্দরভাবে পরাজিত হতে শেখো, পরাজয় মেনে নিতে শেখো। এ জন্য ডিবেট করো। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করো। শুধু জয়লাভের জন্য না। সবকিছুকে সহজ–সুন্দরভাবে মেনে নেওয়া দরকার। আকাশে এত সুন্দর মেঘ, এত সুন্দর চাঁদের আলো, পাখির গান, ভাই–বোনের সম্পর্ক, মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক, দেশকে ভালোবাসা, পৃথিবীকে ভালোবাসা। এগুলো আমাদের শিশু–কিশোর–তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। 

সংগীত, নৃত্য, শিল্পকলা, সাহিত্য, বই পড়া, বেড়াতে যাওয়া, বনভোজন, বিজ্ঞান ক্লাব এগুলো কিশোরদের মধ্যে বিপুলভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। 

আমি শিশুদের বলি, অন্যের উপকার করে নিজেকে ধন্য করো। একজন মানুষের মুখেও যদি হাসি ফোটাতে পারো, সেটা অমূল্য ব্যাপার। কবিতায় আছে, গোপনে প্রেম রয় না ঘরে, আলোতে প্রেম ছড়িয়ে পড়ে। আমরা চাই বাংলাদেশের সব কিশোর ও তরুণদের মধ্যে ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক।

 

মো. তৌহিদুল ইসলাম

মো. তৌহিদুল ইসলাম

কোনো কোনো তরুণ জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। এর নির্দিষ্ট একটি কারণ নির্ধারণ করা যাবে না। সহিংস উগ্রবাদকে সাধারণভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টা আসলে খুবই জটিল। বাংলাদেশ একটি সামাজিক সম্প্রীতির দেশ। এখানে মানুষ সামাজিক সম্প্রীতির সঙ্গেই বসবাস করে। জঙ্গিবাদের কারণগুলো দেখতে হলে অনেক গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। শুধু যে সামাজিক সম্প্রীতির অভাবেই সহিংস উগ্রবাদের সৃষ্টি হয়, তা নয়।

সমাজের বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রীতি ফোরাম থাকতে পারে। যেখানে বিভিন্ন ধর্ম, গোষ্ঠী ও মতামতের মানুষ একসঙ্গে কাজ করতে পারে। দেশের প্রতিটা জায়গায় এই ছোট ছোট ফোরাম হওয়া দরকার। এটা হতে পারে মসজিদভিত্তিক বা স্কুলকেন্দ্রিক অথবা অন্য উপাসনালয়কেন্দ্রিক। তাঁরা যেন রাষ্টীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে পারেন, সেই সুযোগ তৈরি করা উচিত। 

 

কাজী মারুফুল ইসলাম

কাজী মারুফুল ইসলাম
সামাজিক সম্প্রীতি বাড়াতে পরিবার অবশ্যই বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পরিবারের একার পক্ষে এই ভূমিকা পালন করা সম্ভব নয়। এটা একটি বহুমাত্রিক সমস্যা। দেশে সংকট কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তা ভেবে দেখা দরকার।

আমরা শুধু তরুণদের নিয়েই ভাবছি। তারা নাটের গুরু না। তরুণদের ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু যারা এই তরুণদের চালাচ্ছে, তারা কেউ তরুণ নয়। কিন্তু আমরা তাদের বাদ দিয়ে শুধু তরুণদের নিয়েই ভেবে যাচ্ছি। এই সমস্যাটা একটি ভাইরাসের মতো। এটা তরুণ আর বয়স্ক বাছবিচার করে না। রাষ্ট্রের কাজ হবে মানুষের মতপ্রকাশের জায়গাটা স্পষ্ট করা।

উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করা এবং তরুণেরা যেন তাদের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক শক্তি পায়, সেগুলো নিশ্চিত করা। এ ছাড়া আমরা অনলাইনের কথা বলি। আমরা যদি ছেলেমেয়েদের চাহিদা পূরণ করতে না পারি, তাহলে তারা অনলাইনের সুবিধা নেবেই। হয়তো একটা ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গেল, তাকে ফেলে তো দেওয়া যাবে না। তাকে সহানুভূতি দিয়ে বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে। 

যারা এই পথে চলে গেছে, তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, সেই ব্যবস্থাই আমাদের করতে হবে। এই দায়িত্বটা পরিবার, বিদ্যালয় এবং রাষ্ট্র—সবার। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ বন্ধ করার জন্য টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। 

 

হামিদুল হক

হামিদুল হক

আমি গত ছয় মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের সঙ্গে কাজ করেছি। তরুণেরা মূল হোতা নয়। তারা শিকারে পরিণত হয়েছে। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলে কোথাও তরুণদের তেমন সুযোগ নেই। এমনকি ক্লাবে, খেলার মাঠেও তাদের সুযোগ নেই।

বাংলাদেশে এখন অধিকাংশ তরুণেরা এভাবে সুযোগবঞ্চিত। এই ছেলেমেয়েরা কী বলতে চায়? তাদের মধ্যে কেউ সম্প্রীতির সমালোচনা করেছে? কেউ বলেছে সম্প্রীতি হতে পারে জীবনের দর্শন? কীভাবে তরুণেরা সহনশীল হবে? সহনশীলতায় বিশ্বাসী হবে। এটাই হতে পারে তার জীবনের দর্শন। এটাকে আমি একটি সফলতা মনে করি।

দেশে জঙ্গি হিসেবে যাকে চিহ্নিত করা হয়, তার পরিণতি হয় ভয়াবহ। কিন্তু যিনি তাঁকে জঙ্গিবাদে আসক্ত করছেন, তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন। 

উগ্রবাদে আসক্ত করার জন্য এই হোতারা সাধারণ মানুষের মাথায় একটা মতবাদ ঢুকিয়ে দেয়। সেটা হলো তার মতের বিপরীতে যদি কেউ কথা বলে, তাহলেই সে তার শত্রু। যদি এমন কোনো ব্যক্তিকে পাওয়া যায়, যে এ ধরনের অবস্থার শিকার, তাহলে তাকে প্রথমে ভালো পথে আনার চেষ্টা করা হবে। তাতে যদি সে ভালো না হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্প্রীতি যদি একটি দর্শন হিসেবে ধারণ করি, তাহলে সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে তরুণ ও বৃদ্ধদের একটি জায়গায় সচেতন হতে হবে যে আমি সহনশীল থাকব। আমি সহিংসতায় যোগ দেব না। 

 

ফয়সাল বিন মজিদ

ফয়সাল বিন মজিদ

ইউএনডিপিতে উগ্রবাদ সহিংসতা নিয়ে আমাদের কাজ। যেসব তরুণ জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে, তাদের সেদিকে আসক্ত হওয়ার কারণ কী, তা খোঁজার চেষ্টা করছি। এই তরুণদের জঙ্গিবাদের দিকে আসক্ত হওয়ার নির্দিষ্ট একটি বা দুটি কারণের মধ্যে আবদ্ধ নেই। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, বাবা-মা থেকে দূরত্ব, অস্তিত্বের সংকট, মানুষের অবহেলা। জঙ্গিবাদে আসক্ত হওয়ার এমন সব কারণও রয়েছে। জঙ্গিরা যেভাবে বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে, তাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এর প্রভাব কম। আমরা যেভাবে বলি যে পরিবারগুলো প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ভেঙে যাচ্ছে, আসলে বিষয়টা তেমন নয়।

পরিবারে সন্তানদের সঙ্গে মা-বাবার দূরত্ব অনেক বেশি। অন্যান্য দেশে এই সমস্যা অনেক আগে থেকে আছে কিন্তু আমাদের দেশে নতুন করে আসছে। তারপরও সম্প্রীতির জায়গাটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা কোনো নির্দিষ্ট একটা বিষয়কে জঙ্গিবাদের কারণ হিসেবে দেখাতে পারছি না। যেসব তরুণ উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকছে, তাদের আমরা একটা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতেও ফেলতে পারছি না। উগ্রবাদে শুধু একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের মানুষ জড়িয়ে নেই। এখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে যাচ্ছে। 

আমরা কোনো নির্দিষ্ট এলাকা বা স্কুল–কলেজ নিয়ে কাজ না করে, সব জনগণকে নিয়ে একত্রে কাজ করতে পছন্দ করি। কোনো রোগ যেমন স্কুল–কলেজ বা নির্দিষ্ট কোনো এলাকা মেনে হয় না, তেমনি একজন সহিংস উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়লে ওই এলাকার আরও অনেকেই উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে যারা উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ছে, তারা যে স্থান থেকেই আসুক না কেন, তাদের অন্তত একটি জায়গায় মিল রয়েছে। তা হলো তাদের সহনশীলতার অভাব আছে। 

সহনশীলতা যদি বাড়াতে পারি, তাহলে তা একটি ভালো কাজ হবে। সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে, তারা কখন অসহনশীল হয়ে পড়ছে। সেটা কি কিশোর বয়সে নাকি স্কুল–কলেজ লেভেলে! বাংলাদেশ দেশ হিসেবে অনেক সহনশীল দেশ। যদি সহনশীলতার দিকে আরও বেশি দৃষ্টিপাত করা যায়, তাহলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। 

 

শাফকাত মুনির

শাফকাত মুনির

আমরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না যে শুধু প্রাইভেট বা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া ছেলেমেয়ে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত। অথবা একসময় আমরা শুনেছি, মাদ্রাসাপড়ুয়া ছেলেমেয়েরাই শুধু জঙ্গিবাদের দিকে আসক্ত হচ্ছে। সমাজে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের সমাজে সম্প্রীতির অনেক উদাহরণ আছে। এসব সুসংহত করার মাধ্যমে আমরা সমাজে একধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি।

প্রযুক্তিনির্ভরতাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই না। কারণ, প্রযুক্তির উন্মেষ আর্থসামাজিক উন্নয়নে এক বিশাল ভূমিকা রাখছে।

প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কীভাবে আমরা সম্প্রীতি বৃদ্ধি করতে পারি এবং উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি, সে বিষয়ে আমাদের গভীরভাবে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। যদি তরুণসমাজ সামাজিক মাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় করে, তাহলে সেই মাধ্যমটাকে ব্যবহার করে কীভাবে তাদের কাছে আমরা সঠিক বার্তা পৌঁছাতে পারি, সেই বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। 

তরুণদের নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে। সহিংস উগ্রবাদকে শুধু একটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান হিসেবে চিন্তা করলে হবে না। অবশ্যই জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করার জন্য নিরাপত্তা সংস্থার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। 

তরুণদের মধ্যে যেন আশাহীনতা বা হতাশা কাজ না করে সে বিষয়ে আমাদের দেখতে হবে। আমাদের সমাজে সে সম্প্রীতি, সংহতির উপাদান রয়েছে, সেগুলোকে সুসংহত করে আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি সে বিষয়ে দেখতে হবে। 

 

এ কে এম নজরুল হায়দার

এ কে এম নজরুল হায়দার

শুধু নির্দিষ্ট একটা বয়স নিয়ে না ভেবে সব বয়সের মানুষের নিয়ে চিন্তা করি। তাহলে সমস্যাটা আরও দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। আমরা মানুষের বাইরের দিকটা দেখতে পারলেও মনের দিকটি দেখতে পাই না।

অনলাইনে তরুণ থেকে শুরু করে সব মানুষের মনের দিকটা বিচরণ করে। বিশ্বের ২২০টি দেশ যখন অনলাইনে সেবা ব্যবহার করছে, তখন একটাই দেশ হয়ে যায়। সেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ থাকে। সেখানে নানা দেশের নানা মানুষ। তাদের নির্দেশনা দেওয়ার মতো কেউ নেই।

অনলাইনের কোনো গাইডলাইন এখনো হয়নি। পরিবারের মাধ্যমেই সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তোলা যায়। অনলাইনের কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এখন যোগাযোগ খুবই কম হয় ।

সবাই নিজের মতো অনলাইনে ব্যস্ত থাকে। একে অপরের সঙ্গে কথা বলছে ঠিকই কিন্তু তাদের প্রত্যেকের মনোযোগ অনলাইনে। পরিবারের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক না থাকায় সন্তানেরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়লে সেই খবর পিতামাতার কাছে থাকে না। 

যে ছেলেটা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত সে এক দিনে এমন হয়নি। ছোট থেকে কয়েক বছরে আস্তে আস্তে পরিণত হয়েছে। এই সময়টা কেউ খেয়াল করেনি। এক বিছানায় ঘুমানো আপনজনও জানছে না সে কোন পথে চলছে। ফলে একটা অজানা জগৎ তৈরি হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে।

এ জন্য প্যারেন্টিংয়ের খুব দরকার। সন্তানদের কীভাবে ছোট থেকে গাইড করতে হবে, তা ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অভিভাবকদের শেখানো হচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের ছেলেমেয়েরা কিছু ভিডিও গেম খেলে থাকে। এই গেমের প্রভাবে তারা ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ছে, নিজেদের জীবন দিয়ে দিচ্ছে। দিন দিন এ ধরনের তরুণদের হতাশা গ্রাস করছে। 

এখনকার তরুণদের খেলা প্রায় সব ভিডিও গেম সন্ত্রাসী ধরনের হয়ে থাকে। কীভাবে একজনকে মেরে একটি শহর দখল করা যায়, কীভাবে একটি জাতিকে শেষ করে দেওয়া যায়, তা তরুণেরা ভিডিও গেমস থেকে শিখছে। এর থেকে পার পেতে হলে পরিবার ও রাষ্ট্রের বড় ভূমিকা রয়েছে। 

 

দিলশাদ নাহার কনা

দিলশাদ নাহার কনা

সহিংস উগ্রবাদ রোধ করতে পরিবার থেকেই সতর্ক হওয়া দরকার। এটা সম্পূর্ণই মানসিকতার ব্যাপার। ছোটবেলা থেকেই মানসিকতা জন্মাতে শুরু করে। খাবার টেবিলে বাবা-মা যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলেন, ওই বিষয়টা আমাদের মাথায় থেকে যায়। কোনো ব্যক্তি খারাপ হওয়া সত্ত্বেও বাবা-মা তাকে ভালো বললে আমরা তাকে ভালো হিসেবেই দেখি।

মা-বাবার মুখের কথাই অনেক গুরুত্ব বহন করে। সহিংসতা ও উগ্রবাদের ভয়াবহতা নিয়ে সন্তানদের সঙ্গে কথা বলা উচিত।

 সন্তানের সামনে কী ব্যাপারে কথা বলবেন, তা হিসাব করে বলা উচিত। শিশু-কিশোরদের সব থেকে বড় বন্ধু মা-বাবাই হয়ে থাকেন।

আর খেলাধুলা করাটা খুব দরকার। স্মার্টফোনের যেমন ভালো দিক আছে আবার খারাপ দিকও আছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা অল্পতেই হতাশ হয়ে যায়। আমাদের সময় গান লিখে আমরা স্টেজে গান করতাম। 

বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সহজেই গানটা অনলাইনে পাওয়া যায়। তাতে গানটা লিখতে হয় না। এখানে দেখা যায়, নেট স্পিড কম হলেই তারা হতাশ হয়ে পড়ছে। শিশুরা সারা দিন এসির মধ্যে থাকে, এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলেই তারা হতাশ হয়ে পড়ছে।

তাদের অস্থিরতা বেশি। তো অস্থিরতা কমানোর জন্য কাজ করা উচিত বলে আমার মনে হয়। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে পরিবারকেই। 

 

শাহাজাদী বেগম

শাহাজাদী বেগম

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সম্প্রীতি প্রকল্পে আমরা মূলত স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছি। আমাদের কাজের মূল জায়গাটি হচ্ছে সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধ। এতে তরুণদের মধ্যে মূল্যবোধ তৈরি হবে। ফলে তাদের মধ্যে সহিংস উগ্রবাদ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাা কম থাকে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সম্প্রীতি প্রকল্পে আমরা সমস্যা তৈরি হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করতে চাই।

সম্প্রীতি প্রকল্পে আমরা বৃহত্তর ঢাকার ছয়টি জেলায় কাজ করছি। এই ছয় জেলায় আমাদের ৩৮টি সহযোগী সংগঠন রয়েছে। তাদের মাধ্যমে আমরা ২২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও ৩টি সরকারি দপ্তরে কাজ করতে পেরেছি।

এখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ডিগ্রি কলেজ, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রকল্পটিতে টিভি, মঞ্চ ও পথনাটক, বিতর্ক, খেলাধুলা, চলচ্চিত্র, কুইজ, ক্যাম্পিং, ট্রেনিং, আর্ট, লোকসংগীত ও কনসার্ট, যুব সম্মেলন, টক শো, আন্তধর্মীয় সংলাপ, অ্যাপস তৈরিসহ ৪২ ধরনের সৃজনশীল কাজে তরুণদের সম্পৃক্ত করে কাজ করছি। 

বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, যুব সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়, টেলিভিশন চ্যানেল, পত্রিকা, বেসরকারি লিমিটেড কোম্পানি এবং অল্পসংখ্যক এনজিওর সঙ্গে পার্টনারশিপে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। 

এতগুলো জায়গায় এত ধরনের কাজ করার পেছনে আমাদের মূল লক্ষ্য তরুণদের কতভাবে সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত করা যায় এবং সেখান থেকে আমরা কী ফলাফল নিতে পারছি, সেটা দেখা। 

আমাদের সন্তানেরা পরিবারে কতটুকু সময় পাচ্ছে, তারা কতটুকু পারিবারিক আবহে বড় হচ্ছে তা আমাদের দেখতে হবে। 

আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকার জায়গাটিও দেখতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মাধ্যমে নোংরা রাজনীতি ছড়িয়ে পড়ছে বা ছাত্রীরা যে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, সে বিষয়টি দেখাও জরুরি। ভিন্নতার দিকটিও আমাদের ভাবতে হবে। ভিন্নতাও একধরনের সৌন্দর্য। আমাদের স্বাভাবিকতা ধরে রাখার জন্যও ভিন্নতা দরকার। শুধু তরুণেরা ইতিবাচক হলেই চলবে না, সেই সঙ্গে আমরা যারা তাদের পরিচালনা করছি, তাদেরও ইতিবাচক হতে হবে। 

 

আশরাফুন নেসা মৌরি

আশরাফুন নেসা মৌরি

আমি একজন তরুণ হিসেবে মনে করি, আজ সহিংস উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ বা মৌলবাদ যা–ই হোক না কেন, এর পেছনে রয়েছে আত্মকেন্দ্রিকতা। এখন চার্চে, মন্দিরে, মসজিদে হামলা হচ্ছে। কেন এই হামলা! কারণ, আমরা আমাদের নিজেদের ধর্মটাকে সব ধর্মের ওপরে মনে করি। একটা পরিবারে যখন একটি শিশু বেড়ে ওঠে, সেখানে তাকে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়।

সেই সময় আমাদের সন্তানদের নিজ ধর্মের ভালো দিকগুলোর সঙ্গে যদি অন্যের ধর্মেরও ভালো দিকগুলো তুলে ধরি, তাহলে আর অন্যের ধর্মকে অবহেলা করবে না।

এতে মানুষ হিসেবে মানুষকে ভালোবাসতে শিখবে। একজন শিশু শৈশব থেকে কী চায় তা দেখতে হবে। সে যদি আঁকতে চায়, তাকে আঁকতে দিতে হবে। কারণ, একজন মানুষের মধ্যে সংস্কৃতি ও সাহিত্য ভাব থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা মানুষকে উদার হতে শেখায়।

আমাদের ভালোটা দেখার শক্তি অর্জন করতে হবে। যদি ভালোটাকে বুঝতে না পারি, তাহলে মন্দকে আমরা দূর করতে পারব না। 

 

আরেফিন রহমান হিমেল

আরেফিন রহমান হিমেল

সম্প্রতি আমরা ৭২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০০ ছেলেমেয়েকে নিয়ে জরিপ করেছি। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কতটা আসক্ত, তা নিয়েই এই জরিপ। জরিপ দেখে আমরা হতাশ।

জরিপে ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী দৈনিক তিন ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ব্যবহার করছে। দৈনিক পাঁচ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকে ২১ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।

কোনো তরুণ যদি দিনের পাঁচ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে, তাহলে তার পরিবারের খবর নেওয়ার সময় কোথায়? আর আমাদের বোন বা সহপাঠীরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

অনেক ছেলেমেয়ে যেকোনোভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জঙ্গিবাদে জড়িত এমন ব্যক্তির মধ্যে ৮০ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সহিংস উগ্রবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। 

দেশের বাইরে যোগাযোগের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের পিতামাতা, শিক্ষক বা আমরা যারা বয়সে বড়, তাদের উচিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি ভালো কাজে ব্যবহার করা। 

বেশির ভাগ তথ্যই আমরা অনলাইনে সহজে পাচ্ছি। আবার অনেক সময় ভুল তথ্যের কারণে তরুণসমাজ ভুল পথে চলে যাচ্ছে। 

সুতরাং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটাকে আমাদের ভালো দিকে ব্যবহার করতে হবে। 

 

আব্দুল কাইয়ুম

আমাদের সহনশীল হতে হবে। অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আমাদের ছোটবেলার শিক্ষাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলোকে ফিরিয়ে আনতে হবে। উদার মনের মানুষ হতে হবে। সম্প্রীতির মাধ্যমে সহিংসতা রোধে আমরা সফল হব। 

আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

 

যাঁরা অংশ নিলেন 

শাহীন আনাম: নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

ইসফাক ইলাহী চৌধুরী: নিরাপত্তা বিশ্লেষক, ট্রেজারার, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক

আনিসুল হক: সম্পাদক, কিশোর আলো, কথাসাহিত্যিক

কাজী মারুফুল ইসলাম: অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মো. তৌহিদুল ইসলাম: সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

হামিদুল হক: অধ্যাপক, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

ফয়সাল বিন মজিদ: পার্টনারশিপ ফর টলারেন্ট, ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ, ইউএনডিপি

শাফকাত মুনির: রিসার্চ ফেলো ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজ

এ কে এম নজরুল হায়দার: আইসিটি বিশেষজ্ঞ, ফ্যাকাল্টি মেম্বার, বিইউপি

দিলশাদ নাহার কনা: সংগীতশিল্পী

শাহাজাদী বেগম: ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, সম্প্রীতি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

আশরাফুন নেসা মৌরি: শিক্ষার্থী, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, সদস্য, বন্ধুসভা

আরেফিন রহমান হিমেল: সভাপতি, ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশ

 

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো