অভিযুক্তরা যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারেন

সম্পদের হিসাব চাওয়া

মুখরক্ষা করতে গিয়ে দুদক সম্ভবত উভয়সংকটে পড়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সম্পদের হিসাব বিবরণীর সূত্র ধরে তারা এখন পর্যন্ত মাত্র এক সাংসদকে তলব করেছে। মাত্র সাতজনকে নোটিশ জারি করতে গিয়ে তাদের ইতস্তত মনোভাব চাপা থাকছে না। যে সাতজনকে নোটিশ দেওয়া হবে তাঁদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের পাঁচ বর্তমান সাংসদ, একজন সাবেক সাংসদ এবং বিএনপির একজন সাবেক সাংসদ রয়েছেন। আরও যাঁদের নোটিশ দেওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল, তাঁদের অন্যতম সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রী। তিনি ইতিমধ্যে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে আরও ইঙ্গিত মিলছে, নোটিশ পেতে বিলম্ব ঘটলে আরও অনেকে দেশ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেন। তাই আমরা আশা করব, দুদক সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তদন্তে যেন বিলম্ব না করে এবং তাদের উচিত হবে তাঁদের দেশত্যাগে বিধিনিষেধ আরোপে সরকারকে অনুরোধ জানানো।
আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের সাংসদ আবদুর রহমান বদিকে তলব করা হয়েছে। দুদকের এ উদ্যোগকে যথেষ্ট ইতিবাচক মনে করা হলেও এর পরিণতি কী হবে, তা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ কেবল গণমাধ্যমে প্রকাশের কারণেই আপাতত সাত সাংসদের সম্পদের অনুসন্ধানে কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে দুদক কর্তৃপক্ষ। অপ্রিয় হলেও এটা সত্য যে এ উদ্যোগ যে শেষ পর্যন্ত আইনের আপন গতিতে চলবে তা নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। তদুপরি দুদক নামের একটি প্রতিষ্ঠান যে এখনো তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চাইছে, এটি হয়তো তার একটি প্রমাণ। কিন্তু এটা অনুমেয় যে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নিতান্ত দায়সারা উপায়ে প্রার্থীরা তাঁদের সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রকাশ করেছিলেন। লক্ষণীয়, যে সাতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তাঁদের পাঁচজনই ক্ষমতাসীন দলের হলেও তাঁদের বাছাইপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ, তা বলা কঠিন। কারণ একই দলের আরও অনেকে আছেন, যাঁদের হিসাব বিবরণীতে প্রকাশিত সম্পদ ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চেয়ে কম নয়।
আসলে এ ব্যাপারে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আছে বললে কম বলা হয়। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চকে আদেশ দিয়ে বলতে হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করতে হলে সরকারের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে না। এ রায় যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে আইনে উপযুক্ত সংশোধনী আনতে হবে। গত বছরের নভেম্বরে দুদক আইনে আরও একটি ক্ষতিকর ধারা যুক্ত করা হয়েছিল। দুর্নীতি বিষয়ে কেউ অসত্য তথ্য দিলে তাঁকে দুই থেকে পাঁচ বছরের জেল দেওয়া যাবে। হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করেছেন। এ রকমের একটি ধারা থাকলে সহজে কেউ দুদককে সহায়তা করার ঝুঁকি নেবে না। সরকারের উচিত হবে আদালতের দিকে না তাকিয়ে উপযুক্ত সংশোধনী এনে এ ধারাও বাতিল করা।
আর এই মুহূর্তে বর্তমান সংসদের সরকারদলীয় পাঁচ সাংসদের জবাবদিহি কীভাবে দুদক নিশ্চিত করে, সেটা দেখতে সচেতন মহল অপেক্ষায় থাকবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কেউ যাতে দেশ ত্যাগ না করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।