বাংলাদেশে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা: বাস্তবায়ন-অভিজ্ঞতা এবং সম্ভাবনা

>

গত ২৯ জানুয়ারি ব্র্যাক ও  জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) আয়োজনে ‘বাংলাদেশে প্রাক্–প্রাথমিক শিক্ষা: বাস্তবায়ন–অভিজ্ঞতা এবং সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।

আলোচনায় সুপারিশ

• শ্রেণিকক্ষগুলো সুন্দরভাবে সজ্জিত করতে হবে

 শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে

 বয়স অনুযায়ী শিক্ষা পাঠ্যসূচি তৈরি করা উচিত

 শিশুদের সৃজনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে

 শিক্ষক ও সেবাপ্রদানকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও পুনরায় জবাবদিহির ব্যবস্থা করা জরুরি

 প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষায় কোনো আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা নেওয়া যাবে না

 শিশুদের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে

 শ্রেণিকক্ষগুলো প্রযুক্তিনির্ভর করা উচিত

 শিশুদের বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক খেলার ব্যবস্থা করা দরকার

 শিক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শারীরিক উন্নতির কথা ভাবতে হবে

 প্রাক্‌–প্রাথমিক শিক্ষায় পর্যাপ্ত খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ থাকতে হবে

আলোচনা

মোহাম্মদ মহসীন


মোহাম্মদ মহসীন

প্রাক্‌-প্রাথমিকে পড়ুয়ারা অনেক ভালো করে। তারা প্রাথমিক শিক্ষার পর্যায়ে সর্বোচ্চ স্কোর অর্জন করে। এটা পরবর্তী জীবনেও সহজে সফলতা আনে।

পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা প্রাক্‌-প্রাথমিকে বর্তমানে এক বছর সময় পায়, যা অপর্যাপ্ত। এটা দু্ই বছর করার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এখন অনেক সংস্থা দুই বছর মেয়াদি প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালনা করছে। বর্তমানে তিনটি জেলায় দুই বছরের প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু আছে। জেলাগুলো হচ্ছে, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। শিশুর সার্বিক বিকাশের জন্য অল্প বয়সেই বিনিয়োগ করতে হবে। কেননা সেটা বেশি কার্যকর হয়। এ সময় ১ ডলার বিনিয়োগ করলে ১৭ ডলার মুনাফা পাওয়া যায়।

বিভিন্ন সংস্থা শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। এ জন্য অনেক সফলতা এসেছে। আমাদের বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। তাহলে বড় অর্জন সম্ভব হবে। চেষ্টা করলে যে অর্জন সম্ভব।

শফিকুল ইসলাম


শফিকুল ইসলাম

শিশুরা সৃজনশীলতা ও অনুকরণপ্রিয়। তারা সবকিছুই আগ্রহের সঙ্গে করে থাকে। এ জন্য শিশুদের কোনো কিছুতে বাধা দেওয়া ঠিক না।

এক বছরে শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য তৈরি করা সম্ভব না। এর জন্য সময় বাড়ানো দরকার। তাই দুই বছরের প্রাক্‌–প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে সবাই আগ্রহ প্রকাশ করছে।

আমাদের সম্পদের পরিমাণ অনেক কম। কিন্তু এই সীমিত সম্পদ দিয়েই কাজ করতে হবে। তাই সম্পদের সুষ্ঠু বিন্যাসের প্রয়োজন।

প্রফুল্ল চন্দ্র বর্মণ


প্রফুল্ল চন্দ্র বর্মণ

শিশুর প্রথম পাঁচ বছর বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। শারীরিক, সামাজিক, আবেগীয় ও বু্দ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। এ ছাড়া সুষ্ঠু িবকাশ সম্ভব নয়।

বাংলাদেশে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে। কিন্তু কমপক্ষে চার বছর বয়স থেকে শিশুর প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করা প্রয়োজন।

প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষায় আনন্দদায়ক শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন। শ্রেণিকক্ষ সুন্দরভাবে সজ্জিত থাকবে। শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। বয়স অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। তাঁরা সব সময় শিশুদের দেখাশোনা করেন।

সোহেল আহমেদ


সোহেল আহমেদ

 ২০১০ সালে শিক্ষা নীতি প্রণীত হয়। সেখানে দুই বছর প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা হয়। যেটা এখনো সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশে ৬৫ হাজার ৫৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সব বিদ্যালয়েই প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে। ইতিমধ্যে ৩৭ হাজার ৬৭২ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

শিশুদের চার বছর বয়সে স্কুলগামী করতে হবে। তাহলে তারা কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা থেকে বিরত থাকবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিশুদের দেখাশোনা করা হয়। এখান থেকে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে।

ইরাম মরিয়ম


ইরাম মরিয়ম

শিশুরা খেলা ভালোবাসে। এটা ছাড়া শিশুদের বিকাশ ঘটানো সম্ভব হবে না। খেলা শিশুদের আনন্দ দেয়। খেলার মাধ্যমে শিশুরা শিখতে পারে।

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য খুবই প্রয়োজন। এখান থেকেই আবেগ, চিন্তা ও ভালো লাগা তৈরি হয়। সৃজনশীলতা বিকাশেও এটি দরকার। অন্যথায় তারা বিপথে যেতে পারে। শ্রেণিকক্ষের সাজসজ্জার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সুন্দর পরিবেশ মনকে প্রফুল্ল রাখে। আর সব বিষয়ের সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি।

খন্দকার মো. মঞ্জুরুল আলম


খন্দকার মো. মঞ্জুরুল আলম

দেশের উন্নতির জন্য শিশুদের কাজে লাগাতে হবে। কেননা আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।

শিশুরা অবুঝ প্রকৃতির। তারা অনুকরণ করতে পছন্দ করে। শিশু ও শিক্ষকের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। শিশুরা বেশির ভাগ সময় পরিবারের সঙ্গে থাকে। তাই সবার আগে মা–বাবাকে এগিয়ে আসতে হবে।

গ্রামে সাক্ষরতার হার কম। প্রতি মাসে অভিভাবক সভার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শারীরিক উন্নতির কথা ভাবতে হবে।

অনেক স্কুলে তিন-চার বছরের শিশুকে দেখা গেছে। তবে এখনো ৪০ হাজার শ্রেণিকক্ষ দরকার।

গোলাম কিবরিয়া


গোলাম কিবরিয়া

দুই বছর মেয়াদি প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। এর জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। এগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। আনন্দময় ও শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এতে শিশুর বয়স ও সামর্থ্য অনুযায়ী সার্বিক বিকাশ ঘটবে। আর সেই সঙ্গে আজীবন শেখার একটি ভিত তৈরি হবে

প্রাক্‌-প্রাথমিকে শিক্ষাপ্রাপ্তরা ভবিষ্যতে ভালো করে। প্রায় ৭০ শতাংশ সময় সফলতা পাওয়া যায়। তবে শতভাগ সাফল্য আসে না। সেটা অপ্রত্যাশিত।

প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকদের প্রস্তুতি জরুরি। অন্যথায় কিছুই আশা করা যাবে না। রুমের পরিবেশ ঠিক রাখাও তাঁদের দায়িত্ব। তাঁরা শিশুর আবেগও বুঝবেন। শিশুদের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রধান করতে হবে। তারা নিজের ইচ্ছেমতো খেলাধুলা করবে। এ ছাড়া গান গাইবে, আবৃতি করবে ও ছোটাছুটি করবে। কখনো তাদের ওপর কর্তৃত্ব নিয়ে আসা যাবে না।

শিক্ষক ও সেবাপ্রদানকারীদের সৃজনশীল হতে হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা সৃজনশীল নয়। প্রশিক্ষণে যা শেখে, তা–ই উপস্থাপন করে। এমনটা করা যাবে না। শিশুদের সৃজনশীল ও নান্দনিক জায়গাগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। পড়ালেখার বাইরে তারা অনেক কিছুই করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এটা নিশ্চিত করতে হবে।

মো. মুরশীদ আকতার


মো. মুরশীদ আকতার

উন্নত দেশগুলোতে প্রাক্‌-প্রাথমিক পাঠ্যক্রম বেসরকারিভাবে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এই কর্মসূচি সরকারিভাবে গ্রহণ করা হয়। শহরাঞ্চলে প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষার অনেক উন্নতি হয়েছে। অজপাড়াগাঁয়ের স্কুলেও একই উন্নতি ঘটেছে। তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে। তাদের জোর করতে হয় না।

প্রাক্‌-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষায় অনেক পার্থক্য রয়েছে। প্রাক্‌-প্রাথমিকে সবকিছুই সহজভাবে শেখানো হয়। সে তুলনায় প্রাথমিক শিক্ষা কিছুটা কঠিন। তাই এর পাঠ্যক্রমে একটু পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষায় আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। এতে শিশুদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।

জেনা হামাদানী


জেনা হামাদানী

বেসরকারি ও কিন্ডারগার্টেনগুলোতে প্রাক্‌–প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়েছে। শিশুদের বুদ্ধি বিকাশে এ শিক্ষা সাহায্য করে।

প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষার ফলে শিশুরা বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। বেঞ্চে সুন্দরভাবে বসে থাকে। সঠিক সময়ে ক্লাস ও পড়ালেখা করে।

প্রত্যেক শিক্ষককে নিজের নৈতিকতা ঠিক রাখতে হবে। তাদের অবহেলা করে কাজ করলে চলবে না। তাহলে শিশুরা কিছু শিখতে পারবে না। শিক্ষকদের নিজের দায়িত্বটুকু পালন করতে হবে।

স্কুলে শিশুদের শাস্তি দেওয়া যাবে না। কেননা তারা অবুঝ। তাদের সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে।

সম্প্রতি গণমাধ্যম অনেক এগিয়ে এসেছে। তারাও শিশুদের নিয়ে কথা বলছে। শিক্ষামূলক বিভিন্ন বিজ্ঞাপনও দেখা যাচ্ছে।

মহিউদ্দীন আহমেদ তালুকদার


মহিউদ্দীন আহমেদ তালুকদার

উইনিসেফের সহযোগিতায় ব্র্যাক শিশুদের নিয়ে অনেক কাজ করছে। সংস্থাটি নিজ উদ্যোগে বিনিয়োগ করছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে।

সরকার প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কিন্তু এগুলো তেমন প্রচার হয় না। এগুলো প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

সরকারের একার প‌ক্ষে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব না। সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। এতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসতে পারে।

সফলতা অর্জনের জন্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। এ জন্য সবাইকে সময় দিতে হবে। একত্রে সভার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে সমস্যাগুলো চিহ্নিত হবে। পরে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

মো. গোলাম মোস্তফা


মো. গোলাম মোস্তফা

দেশে এক বছরের প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা আছে। দুই বছরের প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা করা খুবই জরুরি। এ শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশি।

শহরাঞ্চলে প্রাক্‌–প্রাথমিক স্কুলের অভাব নেই। তাই সহজেই প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এই চিত্রটা পুরো উল্টো। সেখানে স্কুলের সংখ্যা খুবই কম। তাই গ্রামে স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

গ্রামাঞ্চলে এক বছরের প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে। সেটা অব্যাহত রাখতে হবে। সম্ভব হলে দুই বছরের ব্যবস্থাও করতে হবে।

আমাদের কখনোই নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। সর্বদা অন্যের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। আর সব সময় দেশের কাজ করতে হবে।

মো. আহসান হাবীব


মো. আহসান হাবীব

প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা কলকারখানাপ্রধান এলাকায় অনেক উপকারে আসে। এই অঞ্চলের মায়েরা সকালেই কাজে চলে যান। শিশুকে অন্যের কাছে রাখা হতো। কিন্তু এখন তা করতে হয় না।

শিশুকে এখন স্কুলেই রাখতে পারেন। সেখানে শিশুটি অনেক আনন্দেই থাকে। অন্যান্যের সঙ্গে খেলাধুলা করে। পাশাপাশি অনেক কিছু শিখতে পারে।

সাতক্ষীরায় অভিভাবকদের নিয়ে একটি গবেষণা চালানো হয়। শিক্ষকেরা বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন। শিক্ষকদের নীতি ও অনুশীলন নিয়েও কাজ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রাইমারি স্কুলগুলোর পরিবেশ এখন বেশ ভালো। প্রাক্‌-প্রাথমিকের শ্রেণিকক্ষ সুন্দর।

শিশুদের জন্য বিনোদন ও খেলার মাঠ প্রয়োজন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে শ্রেণিকক্ষ ছোট থাকে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠও থাকে না।

মেহেরুন্নাহার স্বপ্্না


মেহেরুন্নাহার স্বপ্্না

প্রাক্‌–শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু পরে খোঁজখবর রাখা হয় না। তঁারা অনেকে ঠিকভাবে সেবা প্রদান করেন না।

আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম এখনো সনাতন পদ্ধতিতে চলছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শ্রেণিকক্ষগুলো প্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে।

অনেক সময় শিক্ষকেরা অলস হয়ে পড়েন। খেলার সময়কে তাঁরা অবসর ভাবেন। শিশুদের খোঁজখবর রাখেন না।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন খেলা প্রচলিত রয়েছে। সেসব খেলার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে খেলায় নতুনত্ব আসবে।

প্রতি মাসে অভিভাবকদের ডাকা যেতে পারে। তাঁদের নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

মো. মুস্তাফিজুর রহমান


মো. মুস্তাফিজুর রহমান

শ্রীলঙ্কা প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষায় অনেক এগিয়েছে। সেখানে প্রাথমিক স্কুলে শিশু পার্ক বানানো হয়েছে। শিশুদের খেলার সব ধরনের উপকরণ রয়েছে। উপকরণগুলো খুব বেশি দামি না। কিন্তু সেগুলো শিশুবান্ধব।

সেখানে মায়েরা স্কুলে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনা করেন। অনেক সময় শিক্ষকেরা ঠিকভাবে পাঠদান করেন না। মায়েরা সেটার তদারকি করেন।

শিশুরা অনেক সময় সমস্যায় পড়ে। মায়েরা এ সময় তাদের পাশে থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কাজে তাঁরা অংশ নেন। আমাদের দেশের মায়েরাও এমনটা করতে পারেন। সরকারি স্কুলগুলোতে পরিচ্ছন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বেসরকারি স্কুলগুলোও অংশ নিতে পারে।

ইকবাল হোসেন


ইকবাল হোসেন

প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে অনেক কিছুই করা হচ্ছে। কিন্তু তথ্য সংগ্রহ করা হয় না। পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে।

এখন এ শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের কথা চিন্তা করতে হবে। দুই বছরের প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলার দরকার নেই। কারণ, ২০১০ সালেই তা করা হয়েছে।

এখনো সবাই প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা পাচ্ছে না। দেশে ৬০ শতাংশ শিশু শিক্ষা পায়। অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ বঞ্চিত হয় । অনেক সময় পাঁচ-ছয় বছরের বাইরের শিশুরা এ শিক্ষা পায়।

প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা সর্বজনীন করতে হবে। শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করা দরকার। আর দুই বছর প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা জরুরি।

নিশাত ফাতিমা রহমান


নিশাত ফাতিমা রহমান

প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন করাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এ শিক্ষা সম্পর্কে অভিভাবকদের জানাতে হবে। দেশে অনেকের এ সম্পর্কে জ্ঞান নেই। সবাইকে অবগত করতে হবে।

মায়েরা বিভিন্ন কাজে শিক্ষকদের সহযোগিতা করেন। এতে শিক্ষকদের চাপ কিছুটা কমে। শিশুদের সামনে খারাপ আচরণ করা যাবে না। পরে শিশুরাও তা আয়ত্ত করতে চাইবে। কেননা তারা অনুকরণ করতে পছন্দ করে।

মায়েদের নিয়ে কমিউনিটি গ্রুপ তৈরি করা যেতে পারে। এখানে বিভিন্নজন বিভিন্ন মতামত দেবেন। সে অনুযায়ী কাজ করা যেতে পারে।

মো. তারিকুল ইসলাম চৌধুরী


মো. তারিকুল ইসলাম চৌধুরী

বাংলাদেশ শিশু একাডেমী দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। এর কার্যক্রম এখনো চলছে। শিশুরা প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করছে। এখন এ শিক্ষা দুই বছর বাস্তবায়ন করতে হবে।

সবাই এখন প্রাক্‌–প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানের কথা ভাবছে। এ জন্য খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধার প্রয়োজন। কেননা সাজসজ্জার জন্য অনেকটা জায়গা লাগে।

অল্প জায়গায় সুন্দরভাবে সাজানো যায়। কিন্তু সেখানে বেশি উপকরণ রাখা যায় না। ফলে শিশুরা বেশি খেলার উপকরণ পায় না।

প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। আগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কম ছিল। তবে এখনো অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে।

আনজীর লিটন


আনজীর লিটন

অনেক শিক্ষকের উচ্চারণ ঠিক নেই। তঁারা ভুলভাবে উচ্চারণ করেন।

ফলে শিশুরাও ভুল উচ্চারণ শিখতে থাকে। তঁাদের উচ্চারণ ঠিক করতে হবে।

শিশুদের ভেতরে দেশপ্রেম জাগাতে হবে। তাকে তার মতো করেই দেশের কথা জানাতে হবে। তাহলেই শিশুর মনে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে।

পাঠ্যসূচির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। অল্প বয়সে কঠিন বিষয় আয়ত্ত করা সম্ভব না। শিশুদের শেখানোর পদ্ধতিও হবে সহজ-সরল।

নিজের মতকে কখনো চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এটা শিশুরা গ্রহণ করতে পারবে না। তাদের আগ্রহ বুঝতে হবে। তাদের কৌশলগুলো অনুসরণ করতে হবে।

শিশুদের সঙ্গে রাগ করা যাবে না। কেননা তারা অল্পতেই অনেক কষ্ট পায়।

ছোটদের কথা শুনতে হবে।

পাওয়ান কুচিতা


পাওয়ান কুচিতা

সিঙ্গাপুরের সফলতা ঈর্ষণীয়। তারা প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষায় অনেক এগিয়েছে। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। সম্প্রতি চীনও প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ করছে।

প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বেশি বিনিয়োগ করলে সফলতা সম্ভব। এটা ছাড়া উন্নতি কল্পনা করা যায় না।

থেমে থাকা যাবে না। হঠাৎ আগ্রহ কমানোও যাবে না। কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। নয়তো কাজ ভেস্তে যাবে।

আগে প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করা হতো না। এখন শিশুকে প্রাক্‌-প্রাথমিকে ভর্তি করানো হয়। আর গুণগত মানেরও উন্নতি ঘটছে।

মো. মনোয়ার হোসেন খন্দকার


মো. মনোয়ার হোসেন খন্দকার

শিশুদের বন্দী করে রাখা যাবে না। তারা মুক্তমনে ঘুরে নিজেকে বিকশিত করবে।

শিক্ষক নিয়োগের সময় বয়স বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষকদের অবশ্যই শিশুবান্ধব হতে হবে। অভিভাবকদের শিক্ষিত করতে হবে। কারণ, বাসায় তঁারা শিক্ষকের ভূমিকা পালন করবেন।

কম লেখাপড়া জানা অভিভাবক শিশুদের ভালো-মন্দ বুঝবেন না। শিশুর বিকাশের দিকে তঁাদের মনোনিবেশ থাকে না। প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারে গণমাধ্যম প্রয়োজন। কারণ, সবাই গণমাধ্যমমুখী। সেখানে বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।

 তরুণ-তরুণীরাই সমাজকে পরিবর্তন করতে পারে। তাই তাদের এগিয়ে আসতে হবে।

মো. আকরাম–আল–হোসেন


মো. আকরাম–আল–হোসেন

দেশের সব প্রাথমিক স্কুলে প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে। সেগুলোতে শিক্ষকের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৬৭২। আরও ৩০ হাজার নিয়োগ দেওয়া হবে। আগে প্রতি ৫৬ জনের জন্য একজন শিক্ষক ছিলেন। এখন সেই সংখ্যাটা ৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে। অনেক নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ৬৫ হাজার নির্মাণ করা হবে। গত দশকে ১ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। আরও ১ লাখের বেশি শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।

ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়। এটা মায়েদের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। আমরা প্রতি সপ্তাহে ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা করছি। প্রধান শিক্ষক ও শ্রেণিশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলা হয়। এটা চালিয়ে যেতে হবে। এতে শিক্ষকেরা উৎসাহ পেয়ে থাকেন। গুণগত শিক্ষার বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখন সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে গুণগত পরিবর্তন আসবে।

এ খাতে বাজেট বাড়ানো হয়েছে। ভবিষ্যতে বাজেট আরও হবে। খেলাধুলার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শিশুরা এতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। ফলে তারা স্কুলে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। তারা প্রাক্‌-প্রাথমিক শিক্ষা ছাড়তে চায় না।

যাঁরা অংশ নিলেন

মো. আকরাম–আল–হোসেন: সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

পাওয়ান কুচিতা: প্রধান, শিক্ষা বিভাগ, ইউনিসেফ

সোহেল আহমেদ: মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

মো. আহসান হাবীব: সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আনজীর লিটন: পরিচালক, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী

খন্দকার মো. মঞ্জুরুল আলম: বিশেষজ্ঞ, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ

মহিউদ্দীন আহমেদ তালুকদার: উপপরিচালক, প্রাক্‌–প্রাথমিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

মো. মুস্তাফিজুর রহমান: উপসচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

মো. মুরশীদ আকতার: প্রধান, শিক্ষা বিভাগ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ

গোলাম কিবরিয়া: িশক্ষা বিশেষজ্ঞ, এডুকো

মো. গোলাম মোস্তফা: শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞ

জেনা হামাদানী: বিজ্ঞানী, হেড অব চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট ইউনিট, আইসিডিডিআরবি

ইরাম মরিয়ম: নির্বাহী পরিচালক, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট

প্রফুল্ল চন্দ্র বর্মণ: কর্মসূচি প্রধান, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি

মো. মনোয়ার হোসেন খন্দকার: হেড অব পার্টনারশিপ অ্যান্ড প্রজেক্টস, ব্র্যাক

ইকবাল হোসেন: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, ইউনিসেফ

নিশাত ফাতিমা রহমান: একাডেমিক কো–অর্ডিনেটর, ইসিডি বিআইইডি, ব্র্যাক িবশ্ববিদ্যালয়

মেহেরুন্নাহার স্বপ্‌না: প্রকল্প পরিচালক, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ

মো. তারিকুল ইসলাম চৌধুরী: ইসিডি স্পেশালিস্ট

সঞ্চালক
মোহাম্মদ মহসীন: শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞ, ইউনিসেফ

শফিকুল ইসলাম: পরিচালক, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি