প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের বসতি-জীবন ও জীবিকা গড়ে উঠেছিল। এখানকার হাটে-মাঠে-ঘাটে, গ্রামে-গঞ্জে, নদীতীরে, অরণ্যের সঙ্গে এ দেশের বেশির ভাগ মানুষের নিবিড় বন্ধন ও জীবনসংগ্রামের চিত্র পাওয়া যায় শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন উপন্যাসে। প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি করে গড়ে উঠেছে বাংলার বিচিত্র জনপদ, নদ-নদী, গ্রাম-শহর। প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠলেও কালের যাত্রায় প্রকৃতিকে নিয়ে জীবন যাপন করা এখানকার অধিবাসীরা যেমন হারিয়ে গেছে, তেমনি বিনষ্ট হয়েছে প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ। অথচ সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য চাই সুন্দর পরিবেশ।
আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ১৯৭২ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এ দিনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর দিনটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির এবারের বিষয়বস্তু ‘বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার’। তবে এবারের পরিবেশ দিবসের আরেকটি গুরুত্ব আছে, তা হচ্ছে, আজ থেকে জাতিসংঘের বাস্তু পুনরুদ্ধার দশকও (২০২১-২০৩০) শুরু হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ, এত দিন ধরে আমরা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ আমাদের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিবেশের যে ক্ষতি করেছি, তা পুনরুদ্ধারের জন্য বিশ্বের সব কটি রাষ্ট্র আগামী এক দশক ধরে চেষ্টা করবে। তবে পরিবেশবাদীদের পক্ষ থেকে আমরা অপেক্ষায় থাকব, কতটুকু কী হয়। তবে তার আগে আমাদের জানা দরকার, বাংলাদেশের বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্র কেমন আছে? আর কী করলে এর পুনরুদ্ধার সম্ভব।
১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর পরিবেশ দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির এবারের বিষয়বস্তু ‘বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার’
জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে বাংলাদেশে বার্ষিক বন উজাড় হওয়ার হার বৈশ্বিক গড়ের প্রায় দ্বিগুণ, ২ দশমিক ৬ শতাংশ। আর বন বিভাগের হিসাবে সারা দেশে দখল হয়ে গেছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৩ একর বনভূমি। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি। দেশে ৪১টি বনভূমিকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হলেও এগুলোকেও নিরাপদ বলা যাবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্যপূর্ণ সাঙ্গু-মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এই বনের আরেকটি গুরুত্ব আছে, তা হচ্ছে, বনটি এশিয়ার সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকা ইন্দো-বার্মা হটস্পটের অন্তর্ভুক্ত। সুন্দরবনের বাইরে একমাত্র এ বনকে মহাবিপন্ন বেঙ্গল টাইগার পুনরুদ্ধারের উপযোগী হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশ্বের অনেক বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে এখানে। ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৪৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৯ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১১ প্রজাতির বিরল পাখির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সাঙ্গুর কাছাকাছি এলাকায় ২০০ অধিক প্রজাতির পাখি আছে বলে ধারণা করা হয়। এ বন শুধু যে জীববৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তা নয়। এখানে বসবাস করা জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা ও আর্থসামাজিক অবস্থাও এই বনের ওপরে নির্ভরশীল। ফলে এই বন উজাড় হলে ওই জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা বিপদের মধ্যে পড়বে।
সুন্দরবন সংরক্ষণ করার কথা যেমন একদিকে বলা হচ্ছে, আবার এই বন ধ্বংসের নানা আয়োজনও আমরা দেখতে পাচ্ছি। এর মাঝখানে আমাদের অনেকেরই মনে থাকবে, এই এক যুগ আগেও আমাদের সামনে কক্সবাজারের চকরিয়া সুন্দরবন উজাড় হয়ে উধাও হলে গেল—আস্ত একটি বনের এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে সরকার নদী ও সাগরের মোহনায় জেগে ওঠা নতুন চরে বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বনভূমিতে একের পর সাফারি পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, বাস্তুতন্ত্র রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের মূল বিষয় হলো প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণ। প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে শুধু গাছ লাগালে পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলা করা যাবে না। সরকারি, বেসরকারি ও স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রয়াসে বিভিন্ন বাস্তুসংস্থানের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আইইউসিএনের টাঙ্গুয়ার হাওর, কক্সবাজার, নিঝুম দ্বীপসহ কয়েকটি প্রকল্প থেকে আমাদের বেশ কিছু ইতিবাচক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা হয়েছে। এসব জলাভূমি ও বনভূমি রক্ষায় সহব্যবস্থাপনা প্রকল্প বেশ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। ফলে এ ধরনের উদ্যোগ আরও বাড়ানো দরকার।
সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে স্থানীয় জনগণের মাধ্যমে সংরক্ষিত এলাকা বা ‘কমিউনিটি কনজার্ভড এরিয়া’ গড়ে তোলার কথাও আমরা ভাবতে পারি। স্থানীয় জনগণই লোকজ জ্ঞান ব্যবহার করে বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সবচেয়ে বেশি পারদর্শী। এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। প্রাকৃতিক বন কতটা রক্ষা ও পুনরুদ্ধার করা গেল, তা দিয়ে হিসাব করতে হবে। জীববৈচিত্র্যের সঠিক তথ্য জানতে হালনাগাদ জাতীয় জীববৈচিত্র্য দলিল বা ন্যাশনাল বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার প্রণয়ন জরুরি।
দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম উপাদান পাহাড়ের টিলা কেটে বিভিন্ন স্থানে বসতবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। যেমন ২০০৩ থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১২৩টি পাহাড় কাটা হয়েছে। শুধু কক্সবাজারের চুনতি বনভূমি এলাকায় ১৫ থেকে ২০টি পাহাড় থেকে ২ কোটি ঘনফুট মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। পাহাড় কাটার কারণে পাহাড়ধস বাড়ছে। চট্টগ্রামে ২০০৭ সালে পাহাড়ধসের ঘটনায় ১২৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। অন্যদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশবাদী সংগঠনের হিসাবে সিলেট নগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ও টিলার সংখ্যা ছিল ৪১২। ৬১টি টিলা কেটে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। ৩৫১টির মধ্যে অর্ধেকের বেশি টিলা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে।
ফলে ভূতাত্ত্বিক গঠন নষ্ট হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে পাহাড়। বাণিজ্যিক ও ‘উন্নয়ন’ কর্মকাণ্ডের আড়ালে পাহাড়ের প্রাকৃতিক বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে এসব কর্মকাণ্ডের জন্য জরিমানা করলেও পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না, বরং জরিমানা দিয়ে পাহাড় কাটা যেন বৈধ হয়ে গেছে! পাহাড়ি অঞ্চলের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয় ও আদিবাসী জনসাধারণের নিজস্ব উদ্ভাবিত ব্যবস্থা ‘ভিলেজ কমন ফরেস্ট’ (ভিসিএফ) সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায় নিজেদের বসতির পাশে লোকজ কায়দায় স্ব-উদ্যোগে প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণ করে এবং এ বন থেকেই নিজেদের জীবিকার চাহিদা মেটায়।
দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক জলাশয় চলনবিল একসময় মৎস্যভান্ডার হিসেবে বিখ্যাত ছিল। তবে অপরিকল্পিত নানা ‘উন্নয়ন’ কর্মকাণ্ডে এখন চলনবিলের অস্তিত্বই সংকটে। প্রায় এক হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিলটি এখন মাত্র প্রায় দুই শ বর্গকিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। বিলের সঙ্গে সংযুক্ত অসংখ্য নদী, খাল, জলাশয় পানিশূন্য হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। এতে চলনবিলকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকা এবং পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। অনেক দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে।
দেশের মোট আয়তনের ৭০ শতাশই জলাভূমি। তবে বেশির ভাগ নদী ও জলাভূমি সুরক্ষিত নয়। ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মুখে জলাভূমির বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, বন বিভাগ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএনের যৌথ জরিপ বলছে, জলাভূমিগুলোতে দেশে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ২০ হাজার পরিযায়ী পাখি কম এসেছে। আইইউসিএনের গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু সংরক্ষিত জলাভূমিগুলোতে পরিযায়ী পাখির বিচরণ বাড়ছে। তাই সব কটি নদী ও জলাভূমি সংরক্ষণ করা গেলে সংশ্লিষ্ট বাস্তুসংস্থানের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা যাবে। নিশ্চিত হবে অগণিত মানুষের জীবিকা।
বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রের নীল জলরাশির মাঝে রয়েছে বিচিত্র সব সামুদ্রিক সম্পদ। স্থলভাগের প্রায় সমপরিমাণ (৮১ শতাংশ) সম্পদ রয়েছে সমুদ্রের তলদেশে। বঙ্গোপসাগরে প্রায় ৫০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। আছে ২০ প্রজাতির কাঁকড়া, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৩০০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক।
কিন্তু সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বাভাবিক পানিচক্রে বাধা। আন্তদেশীয় পানিপ্রবাহের বৈষম্যের কারণে ভাটির নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে বাঁধ নির্মাণ, দখল বন্ধ করে পানি মজুত ও প্রবাহে বাধা তৈরি করা হচ্ছে। ফলে সাগরের লবণাক্ত পানি নদীতে চলে আসছে। পানিচক্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার কারণে জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে। নতুন বিপদ প্লাস্টিক দূষণ সমুদ্রের পরিবেশকে রুদ্ধ করে ফেলছে।
বঙ্গোপসাগরের বিপুল সম্পদের সুফল কাজে লাগাতে হলে এ অঞ্চলকে ঘিরে টেকসই, সবুজ, পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন প্রকল্প নিতে হবে।
দেশের বনভূমিগুলোর জীববৈচিত্র্য যেখানে বিপন্ন, সেখানে সবুজ নগর আশা করা কঠিন। আমাদের শহরগুলোতে ক্রমশ কমছে সবুজের পরিমাণ। ধূলিধূসর দালানকোঠা নগরের অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষিত শহরগুলোর একটি। কংক্রিটের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) মতে, ঢাকায় সবুজের পরিমাণ শহরটির মোট আয়তনের ৯ দশমিক ২ শতাংশ। গত ২০ বছরে সবুজে আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ কমেছে ৩৭ শতাংশ।
গত কয়েক যুগে শহরগুলোর পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থারও আশানুরূপ উন্নয়ন ঘটেনি। নাগরিক সুযোগ-সুবিধায় সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া শহর ঢাকায় মাত্র ২০ শতাংশ পয়োনিষ্কাশন পাইপলাইন রয়েছে৷ সারা দেশে পয়োবর্জ্যের মাত্র ২ শতাংশ পরিশোধন করা হয়, বাকি বর্জ্য উন্মুক্ত জলাশয়ে গিয়ে মিশছে৷ ফলে দূষণে জর্জরিত হয়ে পড়েছে নদী-নালা এবং সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থান। এ ছাড়া নগরীর পাশের প্রতিটি নদী ও খালই অবৈধ দখল, আবর্জনা ও রাসায়নিক বর্জ্য ইত্যাদি কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় মোট খাল আছে ৬৫টি। এগুলোর মধ্যে ৪৩টি খালই অবৈধভাবে দখলের শিকার এবং ২৪টি খালে পানি আংশিকভাবে প্রবহমান।
শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও ক্রমবর্ধমান আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠার কারণে কৃষিজমি আশঙ্কাজনক হারে কমছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, দেশে মাথাপিছু আবাদি জমির পরিমাণ শূন্য দশমিক ৪৪ হেক্টর৷ ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ নানা কারণে প্রতিবছর দেশের প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে৷ অর্থাৎ প্রতিবছরই ১ শতাংশ হারে কৃষিজমি ও প্রতিদিন প্রায় ২১৯ হেক্টর আবাদি জমি কমছে।
এ ছাড়া কলকারখানার নানা রকমের বিষাক্ত বর্জ্য খালের পানিতে মিশে কৃষিজমিতে গিয়ে পড়ছে। এতে জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। আবাসস্থল হারাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে জমিতে কীটনাশক, আগাছানাশক। সার ব্যবহারের কারণে পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আবাদি জমি রক্ষায় দেশের ৩০টি কৃষি প্রতিবেশ এলাকাকে সংরক্ষণ পরিকল্পনায় নেওয়া প্রয়োজন।
জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানের বর্তমান নেতিবাচক প্রবণতা রুখতে এবং করোনার মতো মহামারির অভিঘাত থেকে টেকসই পুনরুদ্ধারে নতুন সুনির্দিষ্ট পথনকশা নির্ধারণ দরকার। প্রথমত, এতে সমাজের সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সরকারের সব বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থাকে নিয়ে সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। তৃতীয়ত, যেহেতু বেশ কিছু কার্যকারণ আন্তর্জাতিক, এ প্রক্রিয়ায় বিশ্বের সব রাষ্ট্র, বৈশ্বিক ও বহুজাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে যুক্ত করতে হবে।
পথনকশা বাস্তবায়নে বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যের বর্তমান সঠিক অবস্থা জানা থাকলে সুনির্দিষ্ট কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা যায়। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই অভীষ্ট অর্জনে দেশের মোট স্থলভূমির ৩০ শতাংশ এবং জলভূমির ৩০ শতাংশের (৩০:৩০:৩০) সংরক্ষণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত লোকজ জ্ঞানের সঙ্গে বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানের সমন্বয় করে পরিকল্পনা সাজানো দরকার। পৃথিবীব্যাপী প্রতিবেশ রক্ষায় লোকায়ত জ্ঞান, স্থানীয় সংরক্ষণ পদ্ধতি, জনগোষ্ঠীভিত্তিক সংরক্ষণ উদ্যোগগুলো বড় ভূমিকা রাখছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। তৃতীয়ত, স্থানীয় ও আঞ্চলিক সুরক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। চতুর্থত, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা এবং সবুজ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর জোর দেওয়ার বিকল্প নেই। সবচেয়ে বড় কথা, স্বাধীন, প্রাণ-প্রকৃতিকেন্দ্রিক ও জবাবদিহিমূলক মনিটরিং ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং তবেই একটি ভারসাম্যপূর্ণ, সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য আকাঙ্ক্ষিত ‘আরণ্যক’ পরিবেশ তৈরি সম্ভব।
ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এবং ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’–এর প্রতিষ্ঠাতা–চেয়ারপারসন। আইইউসিএন এশীয় অঞ্চলের সদস্যদের কমিটির ভাইস চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশের আইইউসিএন জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন। rt@du.ac.bd