প্রথম পরীক্ষায় আউয়াল কমিশন পাস না ফেল

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বোচন নিয়ে পরীক্ষার মুখে পড়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও তাঁর কমিশন
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে বসে তিন ঘণ্টার জন্য। এই পরীক্ষায় যারা ভালো করে না, তারা ফেল করে। আর যারা ভালো করে, তারা পাস করে। তার চেয়েও যারা ভালো করে, তারা জিপিএ–৫ পায়। নির্বাচন কমিশনের পরীক্ষার সময়টা একটু বেশি। কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় যে পরীক্ষার হলে বসেছে, তার নাম কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। তাদের পরীক্ষক হলেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ ভোটার।

প্রশ্ন হলো এই পরীক্ষায় নির্বাচন কমিশন টেনেটুনে পাস করবে, জিপিএ–৫ পাবে, না ডাহা ফেল করবে, সেটি জানা যাবে বিকেল চারটায়। নির্বাচন কমিশন নিজেই বলেছে, এটা তাদের প্রথম পরীক্ষা। এর আগে ছোটখাটো বাছাই পরীক্ষা হয়েছে, সেটা ধর্তব্যের বিষয় নয়। তাই দেশবাসীর চোখ এখন কুমিল্লার প্রতি।

যেকোনো নির্বাচনে প্রার্থীর জয়–পরাজয় আছে। যিনি বেশি ভোট পাবেন, তিনি জিতবেন। আর যিনি কম ভোট পাবেন, তিনি হারবেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের হার–জিতটা ভোটের সংখ্যা বা উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশের ওপর। ভোটারদের নির্বিঘ্নে তাঁদের পছন্দসই প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার সুযোগ পাওয়ার ওপর। ভোট গ্রহণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে; যাতে কেন্দ্রের ভেতরে কেউ কারসাজি করতে না পরে কিংবা বাইরে থেকে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাতে না পারে। এটাই সুষ্ঠু নির্বাচন। আদর্শ নির্বাচন।

স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ভোটের পরিবেশ রক্ষায় নির্বাচন কমিশনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পুরো শহরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কিন্তু সেই সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করতে যে লোকবল দরকার, তা নির্বাচন কমিশনের নেই। নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও সেই ইভিএমকে কীভাবে ত্রুটিমুক্ত করা যাবে, সে বিষয়েও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বুথ থেকে জিন–ভূত বা ডাকাত ধরা হবে বলে মুখে হুমকি দিলেই দুর্বৃত্তরা নির্বৃত্ত হবে না, সেই বিষয়টিও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের বুঝতে হবে।

কুমিল্লায় নির্বাচনের হাওয়া বইছে। আজ ভোটগ্রহণ। ইতিমধ্যে প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরের অলিগলি। কান্দিরপাড় এলাকা, কুমিল্লা, ১৪ জুন তোলা

অনেকেই বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যতটা গর্জন করেছে, ততটা বর্ষণ তারা দেখাতে পারেনি। অভিযোগ তদন্ত করে বেশ কয়েকজন প্রধান প্রার্থীদের জরিমানা করে কমিশন খুবই ভালো কাজ করেছে। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে সেটি প্রতিপালন করতে না পারা তাদের ব্যর্থতা হিসেবেই গণ্য হবে।

আইন অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন সার্বভৌম। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা প্রয়োজন, তারা সেটা করবে। কমিশন নির্দিষ্ট অভিযোগ ও তদন্তের ভিত্তিতে সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়তে বলেছে। তিনি কী এখতিয়ারে সেই নির্দেশ অমান্য করলেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা উচিত ছিল কমিশনের। কেন তারা সেটি করল না? স্থানীয় সংসদ সদস্য যদি তাদের প্রশ্নের জবাব না দিতেন, তাহলে তারা সরকার কিংবা জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে প্রতিকার চাইতে পারবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, যিনি সম্মানিত পদে থেকে এই নির্দেশ অমান্য করেছেন, এটা তাঁরই লজ্জা। আমরা মনে করি, লজ্জা উভয়েরই। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/ তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।’

এসব ব্যর্থতা ও দুর্বলতা সত্ত্বেও দেশবাসী দেখতে চায় নির্বাচন কমিশন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছে এবং জিপিএ–৫ না হলেও পাস করেছে। তবে সেই সঙ্গে এ কথাও বলব যে কুমিল্লার ভোটকেন্দ্রে পরীক্ষার পাস করাই শেষ কথা নয়। বিগত নূরুল হুদা কমিশনও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু করেছিল। তাদের পরবর্তী পরীক্ষায় তারা ডাহা ফেল করেছে।

বাংলাদেশে সরকারগুলো অনেক সময় পরীক্ষা না দিয়েও পাস করতে চায়। অনেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নকলও করে টিকে যান। কিন্তু ছোট–বড় প্রতিটি নির্বাচনে যে কমিশনকে ভোটারের কাছে পরীক্ষা দিতে হয়, তাদের কারচুপি করার সুযোগ কম।