প্যালিয়েটিভ কেয়ারে সচেতনতা সৃষ্টি তরুণ নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা

>গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, প্রথম আলো ও আয়াত এডুকেশনের আয়োজনে এবং ঢাকা ব্যাংকের সহযোগিতায় ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ারে সচেতনতা সৃষ্টি তরুণ নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

আলোচনায় সুপারিশ

  • বয়স্ক রোগীর পাশে থেকে সেবা করা অত্যন্ত জরুরি
  • চিকিৎসাশাস্ত্রে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
  • তরুণদের প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এবং জনসচেতনতার জন্য কাজে লাগানো প্রয়োজন
  • পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হবে
  • তরুণ ডাক্তার ও নার্সদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে
  • বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কাজ করা তরুণদের সংগঠনগুলোকে কাজে লাগানো প্রয়োজন
  • তরুণদের মাধ্যমে প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে কমিউনিটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে
  • প্যালিয়েটিভ কেয়ার সচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যম শক্তিকে কাজে লাগানো প্রয়োজন
  • রাষ্ট্রের চিকিৎসাব্যবস্থা ও বাজেটে প্যালিয়েটিভ কেয়ার যুক্ত করতে হবে

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ক্ষেত্রে রোগীকে শারীরিক ও মানসিক সেবা দেওয়া হয়। অনেক রোগী কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। তখন তঁার ভোগান্তি কমানোর জন্য এই বিশেষ সেবা দরকার হতে পারে। সেবা প্রদানকারী সংগঠন ও আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে ভূমিকা পালন করতে হবে। প্যালিয়েটিভ কেয়ার মানসিক শান্তি আনে। এ সেবার ক্ষেত্রে তরুণদের কীভাবে যুক্ত করা যায়, সেটাই আজকের আলোচনার বিষয়।

নিজাম উদ্দিন আহমেদ

নিজাম উদ্দিন আহমেদ
চিকিৎসাবিজ্ঞান মূলত রোগ সারানোর দিকে লক্ষ্য করে। তাই আরোগ্য–অযোগ্য রোগগুলো অনেকটা পরিত্যক্ত থেকে যাচ্ছে। এসব রোগের জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রয়োজন।

আরোগ্য–অযোগ্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব। রোগ ভালো করা না গেলেও যেন রোগীর ভোগান্তি কমানো যায়। ভোগান্তি কমানোর সেবাই প্যালিয়েটিভ কেয়ার। এই সেবায় রোগীর শারীরিক, সামাজিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করা হয়।

আমাদের দেশে ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্যালিয়েটিভ কেয়ার দেওয়া হয়। ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় মরফিনের দরকার। বাংলাদেশে ক্যানসার ব্যথা দূর করার জন্য প্রতিবছর ১ হাজার ২০০ কেজি মরফিন দরকার। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যবহার করেছে মাত্র ৩ কেজি। এর মানে হলো, অনেক রোগী তীব্র কষ্ট নিয়ে মারা গেছেন। কিন্তু এটা খুব সহজেই প্রশমন করা যেত।

দুঃখজনকভাবে আমাদের এখানে আরোগ্য-অযোগ্য রোগীদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আমরা যেন তাঁদের দেখেও দেখি না। তাঁদের সেবা করা সব সভ্য সমাজেরই দায়িত্ব। প্যালিয়েটিভ কেয়ার একটা এভিডেন্স বেইজড স্বাস্থ্যসেবা। আমাদের মেডিকেল শিক্ষাক্রমে এটিকে যুক্ত করা দরকার।

বিমলাংশু রঞ্জন দে

বিমলাংশু রঞ্জন দে
অসুস্থতা, ভোগান্তি ও মৃত্যু অনেকটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু যঁারা মারা যাবেন, তঁাদের মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে হয়। কেউ মৃত্যুর আগের দিনগুলোতে অনারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগতে পারেন। এই সময়ে তাঁদের পাশে থাকা অত্যন্ত জরুরি।

এ ধরনের রোগীর সঙ্গে সৎ ও আন্তরিক যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। একজন ভালো চিকিৎসক  বন্ধুত্বপূর্ণভাবে রোগীর পাশে থাকবেন। তাঁর কথা শুনবেন।

ক্যানসার চিকিৎসার পদ্ধতি অনুযায়ী একজন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীকে তীব্র কষ্ট ও ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই ভোগান্তির নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মাধ্যমে রোগীর এই ভোগান্তি কমানো যায়।

প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রক্রিয়ায় রোগীকে তঁার স্থাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা বলা হয়। ভবিষ্যৎ দিনগুলোর স্বাস্থ্য সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এক –ৃতীয়াংশ রোগী জানিয়েছেন তঁাদের সঙ্গে এ ধরনের আলাপ যখন করা হয়েছে, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।

প্যালিয়েটিভ কেয়ারে আমি চারটি বিষয় গুরুত্ব দিতে বলব। সামাজিক সচেতনতা, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী, অবকাঠামো এবং সর্বশেষ একটা নীতির মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাওয়া। আমাদের সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য খাতে অনেক কাজ করেছে। প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ক্ষেত্রেও আমরা এমনটা প্রত্যাশা করছি। সরকারি ও বেসরকারি খাতগুলোর সমন্বয় ঘটিয়ে আমাদের কাজটি করতে হবে।

এ্যান ম্যারি ব্যারোন

এ্যান ম্যারি ব্যারোন
প্যালিয়েটিভ কেয়ারে আমরা রোগীর কষ্ট ও ভোগান্তির প্রতি গুরুত্ব দিই। আমরা রোগীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করি। একজন রোগী যেন যতটা সম্ভব শান্তিতে তঁার শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করতে পারেন।

আমরা ক্যানসারের ক্ষেত্রেই প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিয়ে থাকি। কিন্তু ভোগান্তির ধরন দেখে যেকোনো রোগের ক্ষেত্রেই এই সেবা দেওয়া যায়।

রোগীকে যতটা সম্ভব ব্যথা থেকে মুক্তি দেওয়াই সেবার লক্ষ্য। সময়টা নির্দিষ্ট থাকে না। ছয় দিনও হতে পারে আবার ছয় বছরও হতে পারে। রোগীর শেষ মুহূর্তগুলোকে সুখকর করাই প্যালিয়েটিভ কেয়ারের লক্ষ্য।

নুসরাত আমান

নুসরাত আমান
আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে সবাইকে ধারণা দেওয়া। এ সম্পর্কে সচেতন করা। যখন আমরা এটা নিয়ে কথা বলা শুরু করেছিলাম, তখন কিছু ডাক্তারসহ অনেকেই বলেছেন, এর দরকার নেই। কিন্তু এটা অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবার মতোই একটা স্বাভাবিক সেবা। একই সঙ্গে অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবার মতোই দরকারি।

তরুণদের উচিত এই সেবার গুরুত্ব অনুধাবন করা। এটাকে তাঁদের গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের দেখা উচিত তরুণদের মাধ্যমে প্যালিয়েটিভ কেয়ার কমিউনিটি পর্যায়ে নিয়ে আসা ও স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরির বিষয়ে কাজ করতে হবে। এরা বাড়িতে গিয়ে লোকজনকে সচেতন করবে।

মানুষ তার শেষের দিনগুলোতে একটু ভালোবাসা চায়। একটু যত্ন ও সম্মান চায়। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। তরুণেরাও যেন উদ্বুদ্ধ হয়, সেই ব্যবস্থা করা জরুরি।

আনিসুল হক

আনিসুল হক
আমাদের আশপাশে অনেক মুমূর্ষু ব্যক্তি আছে, যারা জেনে যায় সে আর বাঁচবে না। দেখতে হবে সেই ব্যক্তিটির পাশে আমরা কীভাবে দাঁড়াতে পারি। সবার মৃত্যু হবেই। কিন্তু জীবন নাছোড়বান্দা। মুমূর্ষু রোগীটিও বাঁচতে চায়। তার বাঁচার আশা থাকে। আমাদের দেখা দরকার সে যত দিন বেঁচে থাকবে, কীভাবে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে।

আমাদের তরুণেরা সব সময় ভালো কাজ করার জন্য প্রস্তুত আছে। তবে তাদের এ বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে। কিন্তু সেটা বোঝাতে হবে  তাদের ভাষায়। জটিল ভাষায় বোঝানো যাবে না। তরুণদের কাছে যদি আমরা বার্তাটি পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে একটি বড় কাজ হবে।

রাহাত হোসেন

রাহাত হোসেন
আমরা তরুণেরা প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে জানি না। আমি নিজেও বিষয়টি সম্পর্কে জানতাম না। যখন আমার মা ক্যানসারে আক্রান্ত হলেন, তখন আমি বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেছি। শুধু ডাক্তার ও ওষুধ যথেষ্ট নয়। পরিবারের সদস্যদের সাহায্যও জরুরি।

প্যালিয়েটিভ কেয়ারে তরুণদের যুক্ত করা প্রয়োজন। তার জন্য তাদের কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। তরুণদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। এরপর সহযোগিতা করতে হবে। তরুণ যদি অন্তত তার প্রতিবেশীদের সাহায্য করে, তাতেও অনেক কাজ হবে।

করভী রাখসান্দ

করভী রাখসান্দ
আমরা প্রায় ৩৫ হাজার তরুণের সঙ্গে কাজ করছি। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কাজ করি। আমাদের এখানে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। যাঁরা প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরা আমাদের এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন। এভাবে তরুণদের মধ্যে বিষয়টি ছড়িয়ে দেওয়া যাবে।

তরুণদের সঙ্গে কাজ করার উপায়টি একটু ভিন্ন। তরুণদের সঙ্গে কাজ করেত হয় তাদের ভাষায়। তাদের মতো করেই বিষটির গুরুত্ব বোঝাতে হয়।

তরুণেরা দায়িত্ব নিতে ভালোবাসে। কাজ করতে ভালোবাসে। কিন্তু তাদের এ বিষয়টি বোঝাতে হবে।

আ ন আহম্মদ আলী

আ ন আহম্মদ আলী
তরুণদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। তারা আমাদের সব উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা কেবল উন্নয়ন ও সামাজিক সমস্যা সমাধানেই অংশ নেয়নি। ’৬৯, ’৭১, ’৯০-এ রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামগুলোতেও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে। তাই তাদের দ্বারা সব ধরনের ভালো কাজ আশা করা যায়।

প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ক্ষেত্রেও তারা ভালো কাজ করবে। তবে এ জন্য তাদের সংগঠিত করতে হবে। তাদের মধ্যে বিষয়টি ছড়িয়ে দিতে হবে। তরুণদের এর সঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে কাজটি খুব স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। আমাদের মাধ্যমে কাজটি যতটা সম্ভব হবে, তরুণদের দ্বারা আরও সহজে হবে।

আরিফ মাহমুদ

আরিফ মাহমুদ
প্যালিয়েটিভ কেয়ারে সাফল্য পাওয়ার জন্য প্রথমত সচেতনতা দরকার। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে পরিচালনা প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। আমাদের এখানে চিকিৎসাশাস্ত্রে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়ে পড়ানো হয় না। নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়ে ভেবে দেখা দরকার। আমাদের উচিত কারিকুলামে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা। এর মাধ্যমে যে চিকিৎসকেরা বের হবেন, তাঁদের মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়বে।

ক্যানসার হাসপাতালগুলোতেও প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ব্যবস্থা করা যায়। এ বিষয়েও নীতিনির্ধারকেরা ভেবে দেখতে পারেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি প্রতিটি বিভাগীয় সদর দপ্তরে একটি করে আন্তর্জাতিক মানের ক্যানসার হাসপাতাল করার কথা বলেছেন। এ হাসপাতালগুলোর সঙ্গে প্যালিয়েটিভ কেয়ার একীভূত করা যেতে পারে।

খাদিজা স্বপ্না

খাদিজা স্বপ্না
আমার দুই বছরের কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বর্তমানে দেশে প্রায় ছয় লাখ রোগীর প্যালিয়েটিভ কেয়ার দরকার।

আমাদের স্বাস্থ্য খাতে যথেষ্ট লোকবল নেই। প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়টিকে কমিউনিটি পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। আমাদের প্রায় ৪০ শতাংশ তরুণকেও এর সঙ্গে যুক্ত করা যায়। এতে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

এ এইচ এম এনায়েত হোসেন

এ এইচ এম এনায়েত হোসেন
স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে। আমরা সেগুলোর বাস্তবায়নের কাজও শুরু করেছি।

স্বাস্থ্য খাতে আমরা ভালো সাফল্য অর্জন করেছি। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মতো বিষয়গুলো সামনে আসছে। সেই জায়গাগুলোতেও ভালো কিছু করতে পারব বলে আশা করি। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি সংগঠনগুলোর সহযোগিতা আশা করছি। সবাই মিলে আমরা ভালো কিছু করতে পারব।

প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়টি নিয়ে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের একটি যৌথ প্রকল্প আছে। যুব মন্ত্রণালয় তার মধ্যে একটি। আমরা তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বসব। যুবকদেরও কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটাও দেখব। আমরা চিকিৎসাশাস্ত্রের  কারিকুলাম পরিবর্তনের কথা ভাবছি। সেখানে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

আলোচনায় মরফিনের বিষয়টি এসেছে। এখানে আমাদের কিছু নিয়মনীতি ও বাধ্যবাধকতা আছে। মরফিন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যে আইনের জায়গাটা আছে, সেটা আমরা দেখব। যাতে মরফিন নিশ্চিত করা যায়।

আয়াত এডুকেশনকে ধন্যবাদ এ বিষয়টি নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি ও  আলোচনার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।

নিশা ওয়ালী

নিশা ওয়ালী
প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে পাঁচ দিন ধরে বাংলাদেশে আমরা ৯২ জন নার্সকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। শ্রেণিকক্ষে তাঁদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁরা নতুন কিছু শেখার জন্য খুবই আগ্রহী ছিলেন।

ঐতিহাসিকভাবে নার্সরাই রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য বড় ভূমিকা পালন করেন। স্বাস্থ্য খাতে তাঁদের অবদান অসামান্য।

ম্যান্ডি সিকদার

ম্যান্ডি সিকদার
চিকিৎসাশাস্ত্রের কারিকুলামে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়টি রাখা উচিত। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের কাজের সুযোগ করে দিলে তাঁরা কাজে আগ্রহী হবেন।

বাংলাদেশের নার্সরা খুবই ভালো করছেন। কিন্তু তাঁরা স্বীকৃত নন। এদিকে সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারলে নার্সরাও তাঁদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পাবেন। তরুণ চিকিৎসক ও নার্সরা কাজ করার ক্ষেত্রে খুবই আন্তরিক হন। তাঁদের এই সেবার সঙ্গে যুক্ত করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

চায়না ব্যানার্জি

চায়না ব্যানার্জি
কেবল মৃত্যুপথযাত্রীসহ যাঁরা বার্ধক্যে পৌঁছেছেন, তাঁদেরও এই সেবার আওতায় আনা জরুরি। এতে কাউকে রোগাক্রান্ত হয়ে বহুদিন ভুগতে হবে না। আমাদের তরুণেরা যৌতুক, সন্ত্রাস নির্মূলে কাজ করছে। তারা প্যালিয়েটিভ কেয়ারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কোর্সে বিষয়টি নেই। এটিকে নিয়ে আসতে পারলে খুবই ভালো হয়।

অখিল রঞ্জন বিশ্বাস

অখিল রঞ্জন বিশ্বাস
জীবনের সবচেয়ে সত্য হলো মৃত্যু। এটাকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়া উচিত। মৃত্যুতে শোক থাকবে। কিন্তু একই সঙ্গে যেন শান্তিও থাকে। এখানেই প্যালিয়েটিভ কেয়ারের গুরুত্ব।

আমাদের সমাজে প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রচলিত আছে। কিন্তু কয়েকটি রোগের ক্ষেত্রে বিষয়টি অন্য রকম হয়।

রোগীর চিকিৎসার জন্য যখন আর কিছু করার থাকে না তখন আমাদের দেখতে হবে যেন তার মৃত্যুটা কষ্টকর না হয়।

স্বাভাবিক হয়। প্যালিয়েটিভ কেয়ার অন্যান্য সেবার মতোই। তাই এ সেবার দরকার হবেই।

এ্যামিলী ইয়ারহাদ

এ্যামিলী ইয়ারহাদ
কেউ মৃত্যুর আগে কষ্ট পেতে অথবা ভুগতে চায় না। আমরা এই জায়গাতেই কাজ করি। লোকজনকে এ বিষয়ে ধারণা দিই।

বেশির ভাগ রোগ আরোগ্য করার ক্ষেত্রে রোগকেন্দ্রিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু প্যালিয়েটিভ কেয়ারে রোগীকেন্দ্রিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগীই সবার আগে প্রাধান্য পায় প্যালিয়েটিভ কেয়ারে।

আমার মনে হয় বর্তমানে রোগাক্রান্ত হয়ে কাউকেই ভুগতে হবে না। কারণ, সব রোগের ক্ষেত্রেই এ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।

মোহাম্মদ গোলাম নবী

মোহাম্মদ গোলাম নবী
প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাক্রমে বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

জনসচেতনতা তৈরির জন্য গণমাধ্যমকে ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম খুবই শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। এ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব।

বর্তমান তরুণদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা আমাদের সময়ের থেকে অনেক বেশি। আমাদের উচিত তাদের একত্র করা। এর জন্য তরুণদের সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করা যায়।

লায়লা করিম

লায়লা করিম
যঁারা শেষ বয়সে প্রবেশ করছেন, তঁাদের বেশির ভাগেরই ছেলেমেয়েরা কাছে থাকে না। সন্তানদের  বাবা–মায়ের কাছে থেকে তঁাদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। নিজ উদ্যোগে তাঁদের খেয়াল রাখা দরকার।

প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রতিটি পরিবারের জন্যই দরকার হবে। পরিবারের সদস্য, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, সমাজ ও রাষ্ট্রকে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। এসডিজি  অর্জনের ক্ষেত্রে প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

আমি তরুণসমাজকে আহ্বান জানাব প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে কাজ করার জন্য। বর্তমানে তরুণেরা বাল্যবিবাহ, মাদকাসক্তিসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে কাজ করছে।

প্যালিয়েটিভ কেয়ারেও তরুণদের মনোযোগ দেওয়া দরকার।

মোয়াররফ হোসেন

মোয়াররফ হোসেন
প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মাধ্যমে রোগীর কষ্টগুলো কমিয়ে রাখা যায়। কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়ে রোগীকে সাহায্য করা যায়।

প্রত্যেক মানুষ একটা মর্যাদাপূর্ণ মৃত্যু চায়। কারণ, জীবিত থাকাকালীন মানুষটি তঁার দেশ, সমাজ, পরিবারের জন্য কাজ করেছেন। তঁাদের জীবনের

শেষ মুহূর্তগুলো যেন ভালো হয়, তা আমাদের দেখা উচিত।

তৌহিদুর রশিদ

তৌহিদুর রশিদ
আমাদের দেশ উন্নত দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন করছি আমরা কতটা ভালোভাবে বেঁচে আছি। একই সঙ্গে ভাবছি কী অবস্থায় মারা যাচ্ছি। মারা যাওয়ার আগে কীভাবে আমাদের শেষ মুহূর্তগুলো অতিবাহিত করছি।

প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ক্ষেত্রে তরুণ নেতৃত্ব যুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণদের যে সংগঠনগুলো আছে, সেগুলোকে কাজে লাগানো যায়। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। তারা প্রথমত তাদের পারিবারিক পর্যায়ে কাজ করতে পারে। পরে সামাজিক পর্যায়ে বড় পরিসরে কাজ করতে পারবে।

আবুল মাল আবদুল মুহিত

আবুল মাল আবদুল মুহিত
সাত-আট বছর আগে প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। এটা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন একটা ধারণা ছিল। সময়ের সঙ্গে আমরা নতুন ধারণার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি।

একসময় প্যালিয়েটিভ কেয়ার যে একটা উপযুক্ত বিষয়, সেটা আমরা মনে করতাম না। যদিও আমাদের এখানে পারিবারিক ও সামাজিক ভিত্তিতে সেবাটি চালু ছিল। বুড়োদের সঙ্গে গল্প করা। তাঁদের সঙ্গে বসা। এই রেওয়াজগুলো আমাদের এখানে প্রচলিত ছিল। কিন্তু এটা যে একটা প্রয়োজনীয় বিষয়, সেটা আমরা ভাবতাম না।

মানুষের যখন বয়স হয়, তখন সে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কোনো সংস্কৃতি আমাদের এখানে ছিল না। সুতরাং বিষয়টি আমাদের জন্য একেবারেই নতুন।

একসময় আমরা স্বাস্থ্যসহ অনেক সূচকে পিছিয়ে ছিলাম। এখন আমাদের সেই অবস্থা নেই। আমরা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়েছি। এখন আমরা উচ্চ ধারণা পোষণ করার জায়গায় এসেছি। আমাদের বর্তমান অবস্থায় আমাদের এখানে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মতো ধারণাগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব।

আব্দুল কাইয়ুম

প্যালিয়েটিভ কেয়ার একধরনের বিশেষ সেবা। এ ধরনের সেবায় একজন গুরুতর অসুস্থ রোগীকে শারীরিক ও মানসিক সেবা দেওয়া হয়।

এ সেবার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

যাঁরা অংশ নিলেন

আবুল মাল আবদুল মুহিত: সাবেক অর্থমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

এ এইচ এম এনায়েত হোসেন: অতিরিক্ত মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

আ ন আহম্মদ আলী: পরিচালক (যুগ্ম সচিব), প্রশাসন ও অর্থ, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর

আনিসুল হক: লেখক ও কথাসাহিত্যিক, সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

নিজাম উদ্দিন আহমেদ: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, ডিপার্টমেন্ট অব প্যালিয়েটিভ মেডিসিন, (বিএসএমএমইউ)

চায়না ব্যানার্জি: সহকারী পরিচালক, প্রশিক্ষণ, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর

এ্যান ম্যারি ব্যারোন: ক্লিনিক্যাাল নার্স স্পেশালিস্ট, অ্যান্ড ফ্যাকাল্টি অ্যাট এমজিএইচ

অখিল রঞ্জন বিশ্বাস: সহযোগী অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব হেমাটোলজি অ্যান্ড বিএমটি ইউনিট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল

মোয়াররফ হোসেন: পরিচালক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটাল

বিমলাংশু রঞ্জন দে: এমজিএইচ, হার্ভার্ড মেডিকেল কলেজ, বোস্টন

আরিফ মাহমুদ: হেড অব মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যাপোলো হসপিটাল

মোহাম্মদ গোলাম নবী: উন্নয়ন, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ

নুসরাত আমান: প্রধান পৃষ্ঠপোষক, আয়াত এডুকেশন

করভী রাখসান্দ: প্রতিষ্ঠাতা, জাগো ফাউন্ডেশন

নিশা ওয়ালী: আনএন, ম্যাস জেনারেল হসপিটাল, বোস্টন

এ্যামিলী ইয়ারহাদ: আনএন, ম্যাস জেনারেল হসপিটাল বোস্টন

রাহাত হোসেন: ম্যানেজার, আয়াত এডুকেশন

তৌহিদুর রশিদ: ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, আইস টুডে, আইস বিজনেস টাইম

ম্যান্ডি সিকদার: পরিচালক, জে এইচ সিকদার মহিলা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল

খাদিজা স্বপ্না: কো–অর্ডিনেটর, প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রোগ্রাম

লায়লা করিম: সিনিয়র অ্যাডভাইজর, আয়াত এডুকেশন

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো