প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশেষে স্বীকার করলেন যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির চেষ্টা হয়েছিল এবং সেই কারণেই বিশ্বব্যাংকসহ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এক নির্বাচনী সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যাদের দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তারা আমার আত্মীয় হতে পারে না।’ তাঁর এবং ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনির বাইরে কেউ আত্মীয় নেই বলেও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কে আত্মীয় কে আত্মীয় নন, সেটি নির্ধারণের এখতিয়ার একমাত্র তাঁরই। এ ব্যাপারে অন্য কারও কথা বলার সুযোগ নেই। কিন্তু পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির চেষ্টাসহ গত পাঁচ বছরে নানা অপকর্মে যারা লিপ্ত ছিল, তারা যে কখনো তাঁর আত্মীয়তার, কখনো দলের নাম ভাঙিয়ে অন্যায় সুবিধা আদায় করেছেন, দেশের প্রধান নির্বাহী হিসেবে তা তাঁর না জানার কথা নয়। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম যখন সেই অপকর্ম সংঘটনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল, তখন সরকারের সর্বোচ্চ মহল তা বাঁকা চোখেই দেখেছে। কেবল তা-ই নয়, বরং পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে ক্ষমতাসীনেরা ফলাও প্রচার করেছেন। সেই প্রচার যে দেশের এমনকি সরকারেরও কোনো উপকারে আসেনি, বিলম্বে সে কথারই প্রতিধ্বনি পাওয়া গেল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
সে সময়ে সরকারের বোধোদয় ঘটলে কিংবা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলে দেশের বৃহত্তম প্রকল্পটি থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যেত না এবং বহু আগেই পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হতো। এখন প্রধানমন্ত্রী আগামী মেয়াদে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার কথা বলছেন। কিন্তু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে সেই কাজটি কেন হলো না, সেই কৈফিয়ত চাওয়ার অধিকার নিশ্চয়ই জনগণের আছে।
যাদের কারণেই পদ্মা সেতু প্রকল্প পিছিয়ে গেল, তাদের আইনের আওতায় উপযুক্ত শাস্তি দিলেই প্রধানমন্ত্রীর ‘তারা আমার আত্মীয় হতে পারে না’ বক্তব্যটি অর্থবহ হতে পারে। অন্যথায় এটিও নিছক কথার কথা হয়ে থাকবে।