দেশীয় দুগ্ধশিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

গত ২৩ এপ্রিল ২০১৯, প্রথম আলোর আয়োজনে ও প্রাণ ডেইরী লিমিটেডের সহযোগিতায় ‘দেশীয় দুগ্ধশিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।


আলোচনায় সুপারিশ

*  কৃষক পর্যায়ে সংকর জাতের গরু পৌঁছে দিতে হবে

*  গোখাদ্যের দাম কমানোর জন্য এর আমদানি শুল্ক কমানো প্রয়োজন

*  জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে

*  খামারগুলো আধুনিকায়ন করা ও সেই সঙ্গে খামারে প্রয়োজনীয় খাদ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা জরুরি

*  যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও এনজিওগুলোর মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে

*  ভোক্তাদের কম দামে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন

*  দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে খামারিদের প্রশিক্ষণের জন্য সহজ বাংলায় সচিত্র নির্দেশিকা তৈরি করা দরকার

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

প্রবাদ আছে—মাছে-ভাতে বাঙালি ও দুধে-ভাতে সুখে থাকো। প্রবাদগুলোর একটা তাৎপর্য রয়েছে। সেটি হলো শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জন্য এ দুটি খুবই প্রয়োজনীয় খাদ্য। দেহের বিকাশ, পুষ্টির অভাব পূরণ ও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য কিছু পুষ্টি উপাদান দরকার হয়। মাছ ও দুধ এসব পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

শিশুরা ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ পান করে। এ সময়ের পরও শিশুদের দুধ পানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বাজারজাত তরল দুধ শিশুর এ চাহিদা মেটায়। দুগ্ধশিল্পের ওপর জোর দেওয়া হলে মানুষের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। মানুষের উচ্চতার ক্ষেত্রেও দুধ প্রভাব ফেলে। খর্বকায় শিশু জন্ম নেওয়ার একটা কারণ হলো দুধের চাহিদা পূরণ না হওয়া।

ইতিমধ্যে আমাদের দেশ দুগ্ধশিল্পে বেশ কিছুটা বিকশিত হয়েছে। তবু মানুষের মধ্যে দুধের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই সচেতনতার বার্তা মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিতে পারি। মানুষের বুদ্ধিমত্তা, উচ্চতা ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দুধের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্যেরও প্রয়োজন রয়েছে।

মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে পারলে দুধের সামগ্রিক চাহিদা বাড়বে। এই চাহিদা কাজে লাগিয়ে দুগ্ধশিল্পও বিকশিত হতে পারবে। দুগ্ধশিল্পকে বিকশিত করার জন্য কী করণীয়, সে বিষয়গুলো আজকের আলোচনায় আসবে। দুগ্ধশিল্পকে আমরা শুধু ব্যবসায়িক দিক থেকে দেখব না। মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণে এর যে প্রয়োজনীয়তা, সেদিক থেকেও দেখব। এখন এ বিষয়ে আলোচনা করবেন নাথুরাম সরকার।

নাথুরাম সরকার

নাথুরাম সরকার
আমাদের পোলট্রি খাত অনেক বিকশিত হয়েছে। দুগ্ধশিল্প সে তুলনায় বিকশিত হয়নি। বর্তমানে এ শিল্পের বিকাশে একটা সাড়া জেগেছে। সরকারের একার পক্ষে দুগ্ধশিল্পের বিকাশ সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। পোলট্রি খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দুগ্ধশিল্প খাতেও প্রাণ, ব্র্যাকের মতো আরও বড় প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।

গত ১০ বছরে দুগ্ধশিল্প খাত অনেক বিকশিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে নেদারল্যান্ডসের খামারের মতো কিছু খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি রয়েছে। খামারে প্রয়োজনীয় খাদ্য ব্যবস্থাপনায়ও কিছু পরিবর্তন এসেছে। এখন এসব খাদ্য বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত হচ্ছে।

আমি একটি খামার পরিদর্শন করেছি। খামারি আগে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। আমাদের সহযোগিতা নিয়ে তিনি বিশেষ পদ্ধতিতে দুধ বাজারজাত করছেন।

এ ধরনের উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে পারলে এ খাত দ্রুত বিকশিত হবে। মৎস্য খাতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। দুগ্ধ খাতেও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারব বলে আশা করছি।

মোহাম্মদ ইমরান হোসেন

মোহাম্মদ ইমরান হোসেন
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনে এখন ৮১ হাজার সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে ৫০ হাজারের বেশি সদস্য স্নাতক। একসময় খামারিদের ছোট করে দেখা হতো। এখন আমরা সে চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। ফলে শিক্ষিত ও শিল্পপতিরা এ খাতে আসছেন। দুগ্ধশিল্পে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের খুব কাছাকাছি পর্যায়ে আছি।

গত পাঁচ বছরে দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা বেড়েছে—৩০ হাজার লাখ মেট্রিক টন থেকে ৯৪ লাখ মেট্রিক টন। দুধের চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন। এই ঘাটতি পূরণে আমাদের আরও কিছু সময় লাগবে।

সে জন্য সরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দুধ উৎপাদনে ভর্তুকি দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো ভর্তুকি দেওয়া হয় না। তবু খামারিরা প্রোটিনের চাহিদা পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই বাংলাদেশের খামারিদেরও সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেওয়া প্রয়োজন।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এলডিডিপি (লাইভ স্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট) প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আশা করি এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৬০ লাখ মেট্রিক টন দুধের যে ঘাটতি আছে, তা পূরণ করা সম্ভব হবে। গুঁড়া দুধের আমদানি কর বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলেই দেশীয় কোম্পানিগুলো ভালো করবে। গত পাঁচ বছরে লিটারপ্রতি দুধের উৎপাদন ব্যয় কমেছে। সংকর জাতের গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ খরচ কমেছে। এখনো সব খামারির কাছে সংকর জাতের গরু নেই। কৃষক পর্যায়ে এ জাতের গরু পৌঁছে দিতে পারলে দুধের উৎপাদন খরচ আরও কমবে। তখন ভোক্তারাও কম দামে দুধ পাবেন।

গোখাদ্যের দাম অনেক বেশি। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ দাম বাড়ানো হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ট্যাক্স ছাড়া গোখাদ্য আমদানি করতে দিলে এ দাম কমে আসবে। খামারি প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো সব ঢাকায় অবস্থিত। এগুলোকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। শিশুদের জন্য ফ্লেভারযুক্ত দুধ করা যেতে পারে।

রায়হান হাবিব

রায়হান হাবিব
বর্তমান বিশ্বে দুধ উৎপাদনে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করা দরকার। ভালো মানের একটি গরু দিনে গড়ে ৬২ লিটার দুধ দেয়। আমেরিকাতে গড়ে প্রতিটি গরু ৫২ লিটার দুধ দেয়। আমাদের খামারগুলোতে গড়ে প্রতিটি গরু ৫ থেকে ৬ লিটার দুধ দেয়। এর বাইরে যে গরু আছে, সেসব ২ থেকে ৩ লিটার দুধ দেয়।

১৯৭১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মাথাপিছু দুধের প্রাপ্যতা ছিল ২৬ থেকে ২৮ মিলি। সে সময় প্রতিটা গরু দিনে ২ লিটার দুধ দিত। ১৯৯৭ সাল থেকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর উন্নত জাতের বীজ বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করে। ১৯৯৮ সাল থেকে এ খাত বিকশিত হতে থাকে।

বর্তমানে দেশে গরুর সংখ্যা ৩ কোটি ৫০ লাখের কাছাকাছি। এর মধ্যে ৫০ লাখ গরু দুধ দেয়। এর ৫০ শতাংশ গরুকে গড়ে দিনে ১০-১২ লিটার দুধ দিতে হবে। তখন মাথাপিছু দুধের প্রাপ্যতা হবে ১৫০ থেকে ১৮০ মিলি।

বর্তমানে দুধ বাজারজাতকরণের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সমন্বিত বিপণনব্যবস্থা নেই। এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে মানসম্পন্ন দুধ পাচ্ছি না। দুধে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেশি। আন্তর্জাতিক নিয়ম হলো, প্রতি মিলি দুধে সর্বোচ্চ ২ লাখ ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারবে। বাংলাদেশে প্রতি মিলি দুধে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ ২০ লাখের বেশি। এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

দুধ জনপ্রিয় করার জন্য প্রচারণার অভাব রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রচার করা হচ্ছে। বিদেশ থেকে তরল দুধ আমদানি করা কঠিন। তাই স্থানীয় পর্যায়ে দুধ উৎপাদন করে এ চাহিদা মেটাতে হবে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও এনজিওগুলো অনেক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। কিন্তু খামারির সংখ্যা অনুপাতে এটা নগণ্য। এ জন্য সহজ বাংলায় সচিত্র নির্দেশিকা তৈরি করতে হবে। আশা করছি সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগে আগামী ২০ বছরে এ খাত স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

ইলিয়াছ মৃধা

ইলিয়াছ মৃধা
অ্যাগ্রো প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। জাতীয় শিল্পনীতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ খাতকে জোরালো (থ্রাস্ট) খাত হিসেবে বিবেচনা করেছেন। অ্যাগ্রো প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রির বহুমুখী সামাজিক প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতে পড়ে। প্রথমত, গ্রামীণ অর্থনীতিতে এ খাত সরাসরি প্রভাব ফেলে। দ্বিতীয়ত, গ্রামে বহু বেকারের চাকরির সুযোগ করে দেয়। এ ছাড়া এ খাত অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছে।

নতুন চাকরি ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দুগ্ধশিল্প খাত এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দুগ্ধশিল্পে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। একসময় খাদ্যেও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলাম না। সরকার ও অন্যান্য বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগের ফলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে। দুধ একটি আদর্শ খাবার। যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য এটি প্রয়োজন। একজন মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য খাদ্যাভ্যাসে দুধ থাকা জরুরি। দুধ বিভিন্ন রকম ভিটামিনের অভাব পূরণ করে থাকে। মেধাসম্পন্ন একটি জাতি গঠনে এর ভূমিকা রয়েছে।

এ খাত বিকাশে যেসব বাধা আছে, সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন এজেন্সি, বেসরকারি খাতসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু দুধের উৎপাদন বাড়ালেই হবে না। এ দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন সক্ষমতাও বাড়ানো প্রয়োজন।

শুধু তরল দুধ বাজারজাত করলেই হবে না। এর ভিন্নতা আনতে হবে। শিশুরা দুধ খেতে চায় না। তাই তাদের জন্য ফ্লেভারড দুধ ও বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য বাজারে আনা যেতে পারে। ঐতিহ্যবাহী দুগ্ধজাত পণ্য আমরা সনাতন পদ্ধতিতে ভোগ করছি। এগুলোকে স্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি করে ভোক্তার কাছে সহনীয় দামে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

দুগ্ধশিল্প বিকশিত করার জন্য কৃষকদের স্থানীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ প্রশিক্ষণে পশু পালন ও দুধ উৎপাদনের পদ্ধতি তাঁদের হাতে-কলমে শেখাতে হবে। তাহলেই দুধের মান বাড়বে। বিপণনব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে। দুধের চাহিদা সমগ্র বাংলাদেশে রয়েছে। এর উৎপাদন কার্যক্রমও সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

সনাতন পদ্ধতিতে গরু পালনে যে ব্যয় হয়, সে তুলনায় দুধ উৎপাদিত হচ্ছে না। ফলে কৃষকের লোকসান হয়। উন্নত জাতের গরু আমদানি করা গেলে একই ব্যয়ে বেশি দুধ উৎপাদন সম্ভব হবে। কৃষক লাভবান হবেন। এই খাত বিকশিত হবে। এই খাতে এখন অনেক শিক্ষিত যুবক উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুবকদের এই খাতে উদ্যোক্তা হিসেবে আসার জন্য উৎসাহিত করা যায়।

সাইফুল ইসলাম আকন

সাইফুল ইসলাম আকন
আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। কথাটা আমাদের আবেগের সঙ্গে জড়িত। সন্তানদের আমি নিয়মিত দুধ পানের ব্যবস্থা করে থাকি। দুধ সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা ছিল না। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে প্রাণ ডেইরী মিল্ক ১০০ জন ভোক্তাকে তাদের দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনপ্রক্রিয়া দেখার সুযোগ দিয়েছিল। আমিও সে সুযোগ পেয়েছিলাম। দুধ সংগ্রহ থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছানো পুরো প্রক্রিয়াটি দেখেছি। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি পণ্য বিপণন করে। কিন্তু তাদের পণ্যের গুণমান সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারি না। প্রাণ এ সুযোগ দেওয়ায় তাদের পণ্যের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছি।

প্রাণ ছাড়াও কিছু বড় কোম্পানি আছে। তারা যদি দুধ সংগ্রহ থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছানো পুরো প্রক্রিয়া ভোক্তাদের দেখার সুযোগ দেয়, তবে দুটো উপকার হবে। প্রথমত, ভোক্তা ভালো পণ্য পাবে। দ্বিতীয়ত, একটা প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে। প্রতিযোগিতার ফলে দুধের মান বাড়বে। বিদেশে রপ্তানির সুযোগ আসবে। প্রাণের দুধ উৎপাদনপ্রক্রিয়া দেখে মুগ্ধ হয়েছি।

বিদেশ থেকে আমরা গুঁড়া দুধ আমদানি করি। এটা না করে দেশীয় পণ্য ভোগ করলে কোম্পানিগুলো উপকৃত হবে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে দুধের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ খাতের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ বের করতে হবে। এসব করা গেলে এ খাতে নতুন উদ্যোক্তা আসবে। ভ্যাট ও ট্যাক্সের ব্যাপারে ভাবতে হবে। এসব বেশি থাকলে কোম্পানিগুলো সহনীয় দামে পণ্য বিক্রি করতে পারে না। ভোক্তাদের কম দামে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

শাহ এমরান

শাহ এমরান
বাজারে প্রতিযোগিতা থাকতে হবে। কিন্তু যারা প্রতিযোগী, তাদের প্রতিযোগিতার সমান সুযোগ করে দিতে হবে। দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকশনএইড। যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে খামারিদের কী পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া হয়, তা তুলে ধরা হয়েছে।

এই ভর্তুকি দেওয়া দুধ আমাদের দেশে আসছে। অনেক ক্ষেত্রে আমদানি করা দুধ নিম্নমানের ও ভেজিটেবল ফ্যাটমিশ্রিত। এই দুধ শিশুখাদ্য হিসেবে একেবারেই উপযোগী নয়।

কৃষকদের বাঁচাতে হলে দুধের আমদানি শুল্ক বাড়াতে হবে

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম লস্কর

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম লস্কর
২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ প্রণীত হয়। এই আইনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। অধিদপ্তরের কাজ তিনটি। সেগুলো হলো ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ, ভোক্তাবিরোধী কার্যকলাপ প্রতিরোধ ও ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘনের ফলে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তি করা।

দুধ একটি সুষম খাবার। এটি সবার জন্য প্রয়োজন। দুধে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক। মাথাপিছু ২৫০ মিলি দুধ প্রয়োজন। আমরা পাচ্ছি ১৯৮ মিলি। খুব শিগগির এ ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে।

দেশে এখন নতুন চর জাগছে। সরকার এসব জায়গা খামার করার জন্য ইজারা দিতে পারে। এ খাতে লোকসানের আশঙ্কা কম। তাই অনেক স্নাতক পাস ব্যক্তি এ খাতে এগিয়ে আসছেন।

খামারে দেশি জাতের গরু রয়েছে ৮৫ শতাংশ। সংকর জাতের আছে ১৫ শতাংশ। সংকর জাতের গরুর সংখ্যা বাড়াতে পারলে দুধের উৎপাদন বাড়বে।

বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত মিল্ক ভিটা কোম্পানি বৈচিত্র্যপূর্ণ দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করছে। মিল্ক ভিটা প্রতিটি জেলায় বিপণনের ব্যবস্থা করছে। উপজেলা পর্যায়ে খামারিদের সংগঠন তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

উম্মে কুলসুম স্মৃতি

উম্মে কুলসুম স্মৃতি
গোখাদ্যের দাম যে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে, এটা সহজেই বোঝা যায়। শুল্ক কমানো না গেলে খামারিরা ভালো করতে পারবেন না। তাই শুল্ক কমাতে হবে। গত ১০ বছরে দুধের উৎপাদন চার গুণ বেড়েছে। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। এরা কোনো না কোনোভাবে দুধ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত।

নারীরা এ খাতে সরাসরি যুক্ত রয়েছে। তাই স্থানীয় পর্যায়ে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে খামারের সংখ্যা এক লাখ। কীভাবে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।

সরকারি ও বেসরকারি সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে আশু প্রদক্ষেপ নিতে হবে। ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। খামারিদের সহজ শর্তে স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। দুধের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।

বিদেশ থেকে দুধ আমদানি নিরুৎসাহিত করতে হবে। কারা দুধ আমদানি করতে পারবে এবং কী পরিমাণ দুধ আমদানি করতে পারবে, তা নির্ধারণ করে দিতে হবে। আগামী বাজেটে দুগ্ধশিল্পে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা ভাবতে হবে। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীকে সামনে রেখে আমাদের কাজ করতে হবে।

এস এম ইসহাক আলী

এস এম ইসহাক আলী
আজকের বিষয়বস্তু দুটো। প্রথমটি হলো তরল দুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়টি হলো পরবর্তী করণীয় ঠিক করা। দেশে গুঁড়া দুধ আমদানি হয়। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বাড়াতে হবে। তারপর গুঁড়া দুধ আমদানি বন্ধ করতে হবে। আজকাল পত্রিকায় দুধ সম্পর্কে অনেক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এর কারণ হলো গরুকে যে খাবার দেওয়া হয়, তা মানসম্পন্ন না।

খামারি পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। খামারি পর্যায়ে দুধ দোহনের পদ্ধতি অস্বাস্থ্যকর, যা এ খাতে একটি বাধা।

দুধ দোহনের পর চিলিং সেন্টারে পাঠাতে অনেক সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে দুধের মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মাঠপর্যায় থেকে এগুলো তদারক করতে হবে। তাহলেই মানসম্পন্ন দুধ উৎপাদন ও দুধ নষ্ট হওয়া ঠেকানো সম্ভব।

পত্রিকায় দুধ সম্পর্কে নেতিবাচক খবর ছাপা হয়, যা অনৈতিক। অনেকেই আমদানি করা গুঁড়া দুধ নিম্নমানের বলেছেন। এটি সঠিক নয়। বিএসটিআই ও বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে এ দুধ আমদানি হয়। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা হয়।

খামারিদের ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। ঋণ প্রদানের আগে তঁাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে তরল দুধের উৎপাদন আরও বাড়বে।

মো. মুনিরুজ্জামান

মো. মুনিরুজ্জামান
বাংলাদেশে সার্বিকভাবে দুধ গ্রহণের পরিমাণ কম। বিভিন্ন রকম ভুল খবর প্রকাশের কারণে মানুষের মধ্যে দুধপানে ভীতি রয়েছে। এ জন্য দুগ্ধশিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। কৃষক ও ভোক্তা উভয় পক্ষের চাপে থাকি আমরা। এ খাত সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি সহযোগিতার আহ্বান জানাই। ভোক্তার আস্থা অর্জনে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে যেভাবে দুধ পৌঁছায়, তা ভোক্তাদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।

২০০৩ সালে প্রাণ এ খাতে এসেছে। আমরা কৃষক নিয়ে কাজ করি। শুরুতেই পাবনার বেড়া ও বাঘাবাড়িতে কৃষকের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহের জন্য হাব করি। কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি যোগ না থাকায় মধ্যস্বত্বভোগী দুধ নিয়ে আসত। এসব দুধে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যেত। তাই কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি দুধ সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছি।

বর্তমানে হাবগুলো কৃষকের কাছাকাছি করা হয়েছে। যেন কৃষকেরা দ্রুত সময়ে দুধ নিয়ে আসতে পারেন। যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে মানসম্পন্ন দুধ গ্রহণ করি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ দুধ ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় নিয়ে আসা হয়। দুধে ভেজাল মেশানোর কোনো সুযোগ নেই।

নারীরা এ খাতে যুক্ত আছেন। নারীর ক্ষমতায়নে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। খামারিদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। সে জন্য আমরা ক্ষুদ্র আকারে হলেও ডেইরি একাডেমি করেছি, যেখানে ১ হাজার ৫০০ খামারির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আমরাও চাই গুঁড়া দুধ আমদানি বন্ধ হোক। তবে স্থানীয় পর্যায়ে গুঁড়া দুধ উৎপাদন না বাড়িয়ে আমদানি বন্ধ করা যাবে না। গুঁড়া দুধের আমদানি আরও কয়েক বছর চলতে পারে। তবে ইউএইচটি মিল্ক আমদানি করার প্রয়োজন নেই। কেননা, ইউএইচটি মিল্ক চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট উৎপাদিত হচ্ছে।

গোলাম রহমান

গোলাম রহমান
এ আলোচনার দুটো দিক আছে। একটি হলো চাহিদার দিক। অন্যটি জোগানের দিক। চাহিদার দিক থেকে মাথাপিছু দুধ ভোগের পরিমাণ কম। এ পরিমাণটা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলারের কাছাকাছি। আয় বাড়ার পাশাপাশি চাহিদা বাড়া স্বাভাবিক। দুধের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। দুগ্ধজাত পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। তাহলে দুধের চাহিদা বাড়বে।

ভোক্তারা চায় সহনীয় দামে মানসম্পন্ন পণ্য। আমাদের দেশের উৎপাদিত দুধ কতটা মানসম্পন্ন, সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মানসম্পন্ন পণ্য যেন উৎপাদিত হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। জোগান নিশ্চিত হয় আমদানি ও স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনের মাধ্যমে।

আমদানিতে ২৫ শতাংশ কর রয়েছে। নিম্নমানের পণ্য যেন আমদানি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। দুধ উৎপাদনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি দুধ উৎপাদন ব্যয় যেন কমে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করা উচিত নয়। আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যেতে পারে।

খামারিকে প্রয়োজনে ভর্তুকি দিতে হবে। কোম্পানিগুলো যেন স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যকর ও উৎপাদন—এ তিন বিষয়ে লক্ষ রাখে। উৎপাদন ব্যয় কমলে উৎপাদনের প্রতিযোগিতা বাড়বে। সে জন্য আমদানি বন্ধ করার প্রয়োজন নেই।

একটা প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদকেরা যেন উপকৃত হন, সে জন্য ইতিমধ্যে অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। স্কুলগুলোতে সরকার দুধ পানের ব্যবস্থা করলে দুধের চাহিদা বাড়বে।

 চাহিদা বাড়লে খামারিরা উপকৃত হবে দুগ্ধশিল্পে সমৃদ্ধি আসবে।

হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক

হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক
আলোচনায় আসা যেসব বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের করণীয় আছে, সেসব আমরা দেখব। বর্তমানে দুধের উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে। মাথাপিছু দুধের প্রাপ্যতা থাকা উচিত ২৫০ মিলি। সরকারি হিসাবে দুধের মাথাপিছু প্রাপ্যতা ১৫৮ থেকে ১৬০ মিলি।

ঘাটতি পূরণের জন্যই আমদানি করতে হচ্ছে। দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে আর আমদানি করা লাগবে না। দুধের উৎপাদন ব্যয় বেশি, যা এ শিল্পে একটি বাধা। দুধের মানের সঙ্গে আপস করা যাবে না। গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।

সরকার চলে করের টাকায়। তাই কর একেবারে উঠিয়ে দিলে সরকার বেকায়দায় পড়বে। সরকার সব দিক বিবেচনা করে করের পরিমাণ নির্ধারণ করে। তবু কীভাবে কর কমিয়ে গোখাদ্যের দাম কমানো যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

দুগ্ধশিল্পে আরেকটা বাধা হলো প্রাতিষ্ঠানিক বাজারের অভাব। দেশে বেশির ভাগ দুধ অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেচাকেনা হয়, যার কিছু অংশ যায় মিষ্টির দোকানে। সাধারণত দুধ দূষিত হলে তা ছানা হয়ে যায়। মিষ্টির দোকানের ছানা কি বানানো, নাকি দুধ নষ্ট হওয়ার কারণে হয়েছে, তা জানা সম্ভব নয়।

এটা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের পক্ষে একটা অন্তরায়। সুতরাং প্রাতিষ্ঠানিক বাজারের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে চিলিং (শীতলীকরণ প্রক্রিয়া) ও পরিবহন একটা সমস্যা। এ ব্যবস্থাও উন্নত করতে হবে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ও বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে খাদ্য দ্বিগুণ করার কথা বলা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরও এ জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের চারণভূমি কম। তাই গরুর সংখ্যা না বাড়িয়ে গুণমান বাড়াতে হবে। যেন একটি গরু থেকে ৫ লিটারের জায়গায় আমরা ২০ লিটার দুধ উৎপাদন করতে পারি।

গরুর বিভিন্ন রোগ আছে, যা এ শিল্পের অন্তরায়। এ মুহূর্তে ১৫ শতাংশ ভ্যাকসিন তৈরি করা যাচ্ছে। ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা যেন আরও বাড়ানো যায়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

গুঁড়া দুধ আমদানি বন্ধ নয়, নিরুৎসাহিত করতে হবে। যখন দেশ দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, তখন গুঁড়া দুধ আমদানিতে ভ্যাট বাড়ানো যেতে পারে। দেশীয় উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমাতে হবে।

পশুখাদ্য ও ডেইরিসংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক কমানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। কৃষকের জন্য সহজ শর্তে স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা নতুন করে পশুবিমা করার প্রকল্প নিয়েছি।

সারা দেশকে এই মুহূর্তে হয়তো এর আওতায় আনা সম্ভব হবে না। প্রাথমিকভাবে এক লাখ গাভিকে এ আওতায় আনা হবে। খামারিদের বিদ্যুৎ ও পানির বিল কৃষি ট্যারিফ বিল হিসেবে নির্ধারণের জন্য কাজ চলছে।

দুধ পানে ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তরল দুধ খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা গেলে গুঁড়া দুধ আমদানি এমনিতেই কমে যাবে। সে জন্য স্কুলে শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে দুধ পানের ব্যবস্থা করা হবে।

দুগ্ধশিল্পকে আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্বতন্ত্র বোর্ড করা প্রয়োজন। এ জন্য ইতিমধ্যে আইনের খসড়া জমা দেওয়া হয়েছে। আইন পাস হলে জাতীয় ডেইরি বোর্ড গঠিত হবে। এ বোর্ডের অধীনে এ শিল্প নিয়ন্ত্রিত হবে। দেশে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড রয়েছে। একইভাবে জাতীয় দুগ্ধ গ্রিড করা হবে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দুগ্ধশিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হবে।

আব্দুল কাইয়ুম

ভবিষ্যতে কীভাবে দুগ্ধশিল্প বিকশিত হতে পারে, আলোচনায় এ বিষয়গুলো এসেছে। দুগ্ধশিল্পের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সহজে সমাধান করা সম্ভব হবে। পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে দুধের চাহিদা বাড়বে। এ চাহিদা ও সরকারের সহযোগিতা কাজে লাগিয়ে দুধ উৎপাদন, খামারি ও গাভির সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব।

আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

যাঁরা অংশ নিলেন

হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক: মহাপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর

নাথুরাম সরকার: মহাপরিচালক, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট

গোলাম রহমান: প্রেসিডেন্ট, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম লস্কর: মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর

এস এম ইসহাক আলী: সার্টিফিকেশন মার্কস উইং (সিএম), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)

উম্মে কুলসুম স্মৃতি: সাবেক সাংসদ, সভাপতি, জাতীয় ডেইরি উন্নয়ন ফোরাম

রায়হান হাবিব: অধ্যাপক, ডেইরি সায়েন্স বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

মোহাম্মদ ইমরান হোসেন: সভাপতি, বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন

সাইফুল ইসলাম আকন: সহকারী অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ

ইলিয়াছ মৃধা: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রাণ গ্রুপ

মো. মুনিরুজ্জামান: নির্বাহী পরিচালক, প্রাণ ডেইরী লিমিটেড

শাহ এমরান: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো