দিনের পর দিন এভাবে চলতে পারে না

ইলিয়াস কাঞ্চন
ইলিয়াস কাঞ্চন

ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছিল। তখন সবাই বলেছিল, ছাত্রছাত্রীরা চোখ খুলে দিয়েছে। কিন্তু দেখা গেল, কিছুদিন পর সবই আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। রাস্তায় মৃত্যু বন্ধ না হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা আবার রাস্তায় ফিরে এল। তারা শুধু যে হাফ ভাড়ার (অর্ধেক ভাড়া) জন্য এবার আন্দোলন শুরু করেছিল তা নয়, বরং পুরো সড়ক অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে।

মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র যদি এই বিশৃঙ্খলা বন্ধ না করে, তাহলে এর সমাধান পাওয়া কঠিন। দিনের পর দিন এভাবে চলতে পারে না। সময় লাগলেও পরিবর্তন করতে হবেই। পরিবহন সেক্টরে অব্যবস্থাপনার জন্য মূলত দায়ী যারা পরিবহন খাতের নেতৃত্বে রয়েছে। এই নেতৃত্ব এতটাই উগ্র যে তাদের সংগঠনের মানুষগুলোকেও উগ্র বানাচ্ছে। পরিবহনচালক, সহকারীদের যেখানে ধৈর্যশীল হওয়া দরকার, সেখানে তাদের উগ্রতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি তারা সরকারকে পর্যন্ত জিম্মি করেছে। সরকারের সঙ্গে থেকেও তারা পরিবহন ধর্মঘট করেছে।

পরিবহন খাতের নেতারা আন্দোলনের নামে ধর্মঘট করেন মূলত তাঁদের দাবিগুলো আদায় করতে। কিসের জোরে তাঁরা দাবি আদায় করেন? তাঁদের নিশ্চয়ই একটা শক্তি আছে। সড়ক নিরাপত্তা আইন তাঁরা বাস্তবায়ন করতে দিলেন না। তাঁরা বলছেন, এটাকে আরও সংশোধন করতে হবে। শাস্তি কমাতে হবে, জরিমানা কমাতে হবে। সেটার জন্য কিন্তু তাঁরা প্রস্তুত হয়ে গেছেন। যখন প্রতিটি মুহূর্তে তাঁরা জিতে যান, তখন তাঁদের সাহস আরও বেড়ে যায়। এটি তাঁদের আচরণের মধ্যেও প্রকাশ পায়। পরিবহনমালিকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে পরিবহনশ্রমিকদের আচরণও উগ্র হয়ে উঠেছে। তাঁদের আচরণ এমন পর্যায়ে গেছে যে চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। গাড়ি থেকে লাথি মেরে পরিবহনশ্রমিকেরা যাত্রীদের ফেলে দিচ্ছে, এমন ঘটনাও বাড়ছে। একজন ছাত্রকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়ার মতো সাহস তারা কী করে পায়। কারণ, তারা সবকিছুতে পেশিশক্তির জোরে জিতে যাচ্ছে। এর ফলে তারা আরও বেশি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছে।

আমার সুপারিশ হলো, যে সড়ক আইনটি করা হয়েছে, সেটির অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। যদি কিছু মতানৈক্য থাকে, তাহলে সেটা আলোচনার ভিত্তিতে সংশোধন হতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় যে আইন সংসদে পাস হয়েছে, তা অবশ্যই বলবৎ করতে হবে।

আর একটি বিষয়ে বলব, বিআরটিএকে অবশ্যই আধুনিকায়ন এবং শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে বিআরটিসি বাসের সেবা বাড়াতে হবে। সাম্প্রতিক দুটি দুর্ঘটনায় দুই সিটি করপোরেশনের পরিবহন শাখার অব্যবস্থাপনাও মানুষের নজরে এসেছে। আমরা দেখি, সেখানে যাঁরা কর্মকর্তা আছেন, তাঁরা মুখ দিয়ে অনেক কিছু করে ফেলেন। এবার অন্তত তাঁদের নিজের জায়গাটা সংশোধন হওয়া দরকার। তাঁদের গাড়িগুলো যোগ্য চালক দিয়ে চালাতে হবে। সেখানে আরও দক্ষ চালক নিয়োগ দিতে হবে। সব ধরনের অনিয়ম দূর করতে হবে।


ইলিয়াস কাঞ্চন, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, নিরাপদ সড়ক চাই