কূটনীতি

জাপান বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বিগত আট বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সফরে আসতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।
জাপান ও বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যগতভাবে অত্যন্ত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর প্রথম যে কয়টি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে, জাপান তার মধ্যে অন্যতম।
জাপানের পার্লামেন্ট ও বুদ্ধিজীবী মহল বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে সহায়তা করার জন্য ব্যাপক অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছিল। ১৯৭৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে জাপান ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল জাপান সরকার।
স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য জাপান সহায়তা দিয়ে আসছে। ১৯৮০ সালের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় সহায়তা দানকারী দেশগুলোর মধ্যে জাপান সর্বোচ্চ দাতা দেশ। জাপানের সহায়তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ যমুনা সেতু। যমুনা সেতু ১০০ টাকার নোটে স্থান করে নিয়েছে। আমি আনন্দিত যে যমুনা সেতু জাপান-বাংলাদেশ পারস্পরিক সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের মনে ঠাঁই করে নিয়েছে। জাপান ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাবে। বিশেষ করে, জ্বালানি খাতসহ অন্য যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রয়েছে, সেই সব ক্ষেত্রে জাপান সহযোগিতা জোরদার করার আশা রাখে।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রস্থল হিসেবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। জাপান এর ব্যতিক্রম নয়। বিগত সাত বছরে বাংলাদেশে জাপানি প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণের হার তিন গুণ হয়ে এখন ১৭৬-এ দাঁড়িয়েছে। গত পাঁচ বছরে বাণিজ্যের মূল্যমান বেড়েছে দ্বিগুণ আর সরাসরি বিনিয়োগ বেড়েছে ১১ গুণ। কিন্তু তারপরও দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের আরও অনেক সম্ভাবনা অনাবিষ্কৃত রয়েছে। বাংলাদেশে জাপানি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সম্প্রসারণ শুধু বাংলাদেশের উন্নয়নেই ভূমিকা রাখবে না, বরং জাপান সরকারের অর্থনৈতিক নীতি, যা আবেনোমিক্সকে প্রচার করছে, তারও সফলতা বয়ে আনবে। আমরা জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে দুই দেশের জন্য লাভজনক দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আশাবাদী।
জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা গভীরতর করার ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সাংস্কৃতিক ও আন্তব্যক্তিক যোগাযোগ ও বিনিময় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ১১৮ জন বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী গত বছর থেকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জাপানে পড়াশোনা করছে (জাপানে ছাত্রছাত্রী প্রেরণকারী দেশের মধ্যে ষষ্ঠ) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আটজন অধ্যাপকের মধ্যে একজন জাপান থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন, যা থেকে বোঝা যায়, জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে আন্তব্যক্তিক বিনিময়ের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জাপান ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পর্যায়ে জাপান সফরের আমন্ত্রণ, বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রদের অধ্যয়নের সুযোগ করে দেওয়াসহ বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্নভাবে আন্তব্যক্তিক বিনিময় উৎসাহিত করে আসছে। জাপান বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা দৃঢ় করার জন্য এসব উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই ভাবনাগুলো ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী হাসান মাহমুদ আলীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী আবে ও তাঁর মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দৃঢ় করার বার্তা পৌঁছে দিতে চাই।
আমরা আশা করি বাংলাদেশে গণতন্ত্রায়ণ প্রসার লাভ করবে এবং দুই দেশের ঐতিহ্যগত সুসম্পর্ককে আরও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে সরকার ও বিরোধী দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের চলমান উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচনকে স্বাগত জানাই।
দুই দেশের পতাকা তুলনা করলে বাংলাদেশ ও জাপানের সুসম্পর্ককে অনেকটা সহোদরের মতোই মনে হয়। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমি ভবিষ্যতে জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে দীর্ঘ পদক্ষেপ নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ইংরেজি থেকে অনূদিত

ফুমিও কিশিদা: জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।