জলদাস কি জলদাসই থেকে যাবে

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড সেন্ট মার্টিনের জেটি
ফাইল ছবি

“…জেলেপল্লীর অনেক নারী বিধবা। তাদের স্বামীরা সমুদ্রে মরেছে। কেউ ঝড়ের কবলে পড়ে, কেউ জালের সঙ্গে আটকে অতল পানির নিচে গিয়ে। সাপের কামড়ে কারো কারো জীবনলীলা সাঙ্গ হয়েছে”। জলদস্যুর আক্রমণ “অতি অল্পসময়ের মধ্যে জেলেদের নিঃস্ব করে দিয়ে সাম্পানগুলো দূরে ভেসে…” যায়। “আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র-আশ্বিন—এই চার মাসে তাদের হাঁড়িতে ভাত থাকে। বাকী আট মাস খেয়ে না খেয়ে তাদের দিন কাটে”। উথালপাতাল বঙ্গোপসাগরের জেলে-কৈবর্তদের জীবনের হাসি, কান্না, দুঃখ-দুর্দশার এমনই চিত্র আছে কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাসের জলপুত্র উপন্যাসে। সমুদ্রই জেলেদের জীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে। এ কারণেই তাঁরা সমুদ্রপুত্র। সমুদ্রের মঙ্গলে তাঁদের মঙ্গল, অমঙ্গলে তাঁদের জীবনে নামে ঘোর অন্ধকার। বছরের পর বছর সমুদ্রই তাঁদের প্রান্ত-কৈবর্ত জীবনের আশ্রয়দাতা।

উপকূলীয় জেলেদের জীবন ও জীবিকার গল্পের স্বীকৃতি এবার বিশ্ব সমুদ্র দিবসের বিষয়বস্তু—‘সমুদ্র: জীবন ও জীবিকা’। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৪ নম্বর ঘোষণা অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য ও বিপুল সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। দেখা যাক, সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর এবং সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্রের কী অবস্থা?

উপকূলীয় জেলেদের জীবন ও জীবিকার গল্পের স্বীকৃতির বিষয়টি উঠে এসেছে এবার বিশ্ব সমুদ্র দিবসের প্রতিপাদ্যে

জীবনের নিরাপত্তা দাদনে বন্দী

প্রাচীনকাল থেকে কৈবর্ত নামের যে জনগোষ্ঠী ছিল তাদের এক অংশ চাষি এবং অপর অংশ জেলে হিসেবে নিয়োজিত। জেলেরা অঞ্চলভেদে মালো, রাজবংশী বা জলদাস হিসেবে পরিচিত। উপকূলবর্তী সমুদ্রের জেলেরাই জলদাস হিসেবে পরিচিত। সাধারণ জেলেদের সঙ্গে উপকূলের জেলে-জলদাসদের জীবন ও জীবিকার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সমুদ্রের বিশাল ঢেউ, ঘন ঘন দুর্যোগ এবং জলদস্যুদের সঙ্গে উপকূলের জেলেদের আজীবন সংগ্রাম করে যেতে হয়। সাধারণ জেলেরা জীবন ধারণের জন্য মাছ ধরার পাশাপাশি অন্য কাজে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ থাকলেও সমুদ্রই জলদাসদের একমাত্র জীবিকার উৎস। সমুদ্রে মাছ ধরা ছাড়া তেমন কোনো পেশায় পারদর্শী নয় তারা।

কিন্তু অনেকেরই মাছ ধরার নিজস্ব সরঞ্জাম থাকে না। নিজের অর্থ খরচ করে বিশাল নৌকা-জাল সংগ্রহ করতে পারে না। আবার প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ব্যবস্থা না থাকায় মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সুদ ঋণ নিতে হয়। অথবা এরা মজুর হিসেবে কাজ করে মহাজনের নৌকায়। মাছ ধরে দাদন শোধ করতে হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত মাছ না পেলে, দুর্যোগে কিংবা জলদস্যুদের আক্রমণের মুখে পড়ে দাদনের দায়মুক্ত হতে পারে না। ঋণের জালে আটকে থাকে। ফলে ভাগ্যের চাকা ঘোরে না। দারিদ্র্যের দুষ্টুচক্রেই তাদের যাপিত জীবন।

সেকেলে প্রযুক্তি ও অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থা

ঋণের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা না থাকাতেই জলদাসেরা দাদনে জড়িয়ে যাচ্ছেন। আর এর সুযোগ নিচ্ছেন মহাজনেরা। উচ্চ সুদে তাঁদের ঋণ নিতে হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে। অন্যদিকে জীবন ও জীবিকার টানাপোড়েন থাকলেও জলদাস সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নেই। ফলে দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ভোগান্তি বাড়ে। আবার আধুনিক প্রযুক্তি থেকেও পিছিয়ে আছেন উপকূলের জেলেরা, তা কেনার সামর্থ্যও তাদের নেই।

প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও প্রশিক্ষণ এবং পর্যাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলে জলদাস সম্প্রদায় হয়ে উঠবে সমুদ্রসম্পদের টেকসই রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারের মূল শক্তি। কারণ, এই জেলেরাই তাঁদের চিরায়ত লোকজ জ্ঞান থেকে জানে কোন সময়ে সমুদ্রে কোন মাছ বেশি পাওয়া যায়, কোন মাছ কখন ডিম পাড়ে, রেণু ছাড়ে। তাঁদের জ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমুদ্রসম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের রক্ষণাবেক্ষণ, সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার কর্মসূচি নেওয়া গেলে টেকসই সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা সহজ হবে।

প্লাস্টিকদূষণে রুদ্ধ সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র

বিশ্বের সাগর-মহাসাগরে প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ টন প্লাস্টিকবর্জ্য জমছে। সমুদ্রের স্রোত প্লাস্টিকবর্জ্য ভাসিয়ে নিয়ে যায় দূরদূরান্তে। ছোট ছোট প্লাস্টিকের টুকরো (মাইক্রোপ্লাস্টিক) পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী ও পাখির পেটে। মাত্র ২০টি কোম্পানি বিশ্বের প্লাস্টিকবর্জ্যের ৫৫ শতাংশ উৎপাদন করে। এ কোম্পানিগুলোর ১১টি এশিয়ায়, ৪টি ইউরোপে, ৩টি উত্তর আমেরিকায় এবং ১টি করে লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত। বিশ্বের বড় বড় ব্যাংক এসব কোম্পানির প্লাস্টিক উৎপাদনে অর্থায়ন করে থাকে। বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার বছরে ১০ শতাংশেরও বেশি হারে বাড়ছে। খাবারের প্যাকেট, পলিথিন ব্যাগ ও পণ্যের মোড়ক হিসেবে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে তেমন কার্যকর উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।

জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সংস্থা ইউএনইপি প্রকাশিত ‘বিশ্বের প্লাস্টিকের ব্যবহার পরিস্থিতি’ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিকবর্জ্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। পরিমাণের দিক থেকে এটি বিশ্বে পঞ্চম। এই বর্জ্যের উৎস গঙ্গা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার দেশ চীন, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা হয়ে এগুলো সাগরে যায়। সংস্থাটির হিসাবে, সমুদ্রে প্লাস্টিকবর্জ্য অব্যবস্থাপনার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে ১০তম স্থানে রয়েছে।

যদি এ নদীগুলোর প্লাস্টিকের দূষণ অর্ধেক কমানো যায়, তবে সারা বিশ্বে দূষণের হার ৩৭ শতাংশ কমানো সম্ভব। করোনাকালে ব্যবহৃত মাস্ক ও গ্লাভস বিভিন্ন সমুদ্রসৈকতে জমা হয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে। বৈশ্বিকভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণ বন্ধে বাসেল কনভেনশনকে আরও যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।

ক্রমাগত ক্ষতিতে জীববৈচিত্র্য

সমুদ্রের প্রাণীর মৃত্যুর কারণ বিশ্নেষণে দেখা গেছে, প্রতিবছর ফাঁস জালে ৭৪ শতাংশ, বেহুন্দি জালে ১০ শতাংশ ও টানা বড়শিতে ৭ শতাংশ আটকা পড়ে এবং নৌকা-জাহাজের প্রপেলারে ৮ শতাংশ আঘাত পেয়ে মৃত্যু ঘটে। নদীদূষণ, উজানে বাঁধের ফলে নদীর নাব্যতা হ্রাস, নির্বিচার মাছ আহরণ ও চিংড়ি নিধন সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবন আরও বিপন্ন করে তুলছে। সংরক্ষণের জন্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার বেশ কয়েকটি অভয়াশ্রম তৈরি করেছে। তবে কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিমূলক তদারকির ব্যবস্থার অভাবে তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

উপকূলীয় অঞ্চলে বাড়ছে লবণাক্ততা

জলবায়ু পরিবর্তন, নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড় এবং অনাবৃষ্টির কারণে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে লবণাক্ততা বাড়ছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মিঠাপানির অভাবে ধান চাষ কমে যাচ্ছে। ধানের বদলে চিংড়ি অথবা সামুদ্রিক মাছ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে পরিবেশের ওপর আরও বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্য অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫ গ্রাম লবণ খেতে পারেন। কিন্তু উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে কিছু ক্ষেত্রে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে প্রায় ২০০ গুণ বেশি লবণ গ্রহণ করছে। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ ও গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

অরক্ষিত সেন্ট মার্টিন ও কুয়াকাটা

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে প্রতিদিন অগণিত পর্যটকদের যাতায়াত, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, পরিবেশদূষণ ইত্যাদি কারণে প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। দ্বীপটিতে প্রাপ্ত প্রবাল, শৈবাল, সামুদ্রিক কাছিম, লাল কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুকসহ নানা জলজ প্রাণী এবং জীববৈচিত্র্য এখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে।

সেন্ট মার্টিনে যেকোনো ধরনের স্থাপনা গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বরং প্রতিনিয়তই গড়ে উঠছে রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৯৯ সালে দ্বীপটিকে সরকার পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করেছিল। তবু থেমে নেই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড।

অন্যদিকে বিশাল ঢেউয়ের আঘাতে কুয়াকাটা সৈকতের বালু সরে যাচ্ছে। ফাটল ধরে সৈকতের বিরাট অংশ তলিয়ে যাচ্ছে সাগরে। গত এক মাসে প্রায় ২০-৩০ ফুট পাড় ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে সাগরে। এতে সৈকতের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

বালুক্ষয় এভাবে চলতে থাকলে কুয়াকাটা বেড়িবাঁধও ভেঙে যেতে পারে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে সৈকতের সবুজ বেষ্টনী, কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যানসহ লোকালয়। বালুক্ষয় রোধে সরকার পরিকল্পনা নিলেও এখনো পুরোদমে কাজ শুরু হয়নি। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সমুদ্র সৈকতে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেবে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও ঘূর্ণিঝড়ে বিপন্ন জীবন

বিভিন্ন গবেষণা বলছে, গত ২০ বছরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলো ক্রমে শক্তিশালী হচ্ছে। অন্যতম কারণ হলো জলবায়ুর পরিবর্তন ও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি। বায়ুমণ্ডলের অত্যধিক তাপমাত্রায় সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বাড়ে। ফলে সমুদ্রের পানি বেশি পরিমাণে বাষ্পে পরিণত হচ্ছে। এতে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ছে, আর ঘূর্ণিঝড়গুলো আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হচ্ছে।

বঙ্গোপসাগরের আকৃতি ফানেল বা চোঙ-এর মতো হওয়ায় এখানে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা পৃথিবীর অন্য যেকোনো স্থানের চেয়ে বেশি। ‘ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ড’–এর তথ্য অনুসারে বিশ্বের ৩৫টি সবচেয়ে ভয়ংকর মৌসুমি ঘূর্ণিঝড়ের তালিকার মধ্যে ২৬টি ঘূর্ণিঝড়ই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট।

ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে উপকূলের মানুষের জীবন ও জীবিকা লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে। টেকসই ও মজবুত বেড়িবাঁধের অভাবে সামান্য জলোচ্ছ্বাসেও লোকালয় লোনাপানিতে ভেসে যাচ্ছে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জীর্ণশীর্ণ বাঁধ ভেঙে ফসলের খেত, লোকালয় ভাসিয়েছে। উপকূলকে সুরক্ষিত না করলে ভবিষ্যতে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়বে। সমন্বিত কর্মসূচির আওতায় বাঁধগুলোকে সুরক্ষিত করার বড় উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। স্থানীয় জনগণই স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতে প্রতিবার কাজ করছে। কিন্তু সরকারিভাবে টেকসই ও মজবুত বাঁধ নির্মাণ ছাড়া উপকূলের মানুষ ও প্রকৃতি পরিবেশকে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। আবার অনেক জায়গায় ভুলভাবে ও উপকূলের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সংগতি না রেখে বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সমস্যা বাড়ছে।

বঙ্গোপসাগরের অবারিত সমুদ্রসম্পদ

বঙ্গোপসাগরে ৪৭৫ প্রজাতির মাছসহ ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, তিন প্রজাতির লবস্টার, ২০ প্রজাতির কাঁকড়া ও ৩৩৬ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্লকে আছে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। তেল-গ্যাস ছাড়াও রয়েছে মূল্যবান খনিজ সম্পদ। অপার সম্ভাবনাময় এই খাতকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হলে সমুদ্রের তলদেশে কী কী সম্পদ রয়েছে এবং তা আহরণে কী ধরনের প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ জনবল প্রয়োজন, তা পরিকল্পনামাফিক নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

দেশের ৮টি হাইড্রোলজিক্যাল এলাকাকে কেন্দ্র করে সরকার দীর্ঘমেয়াদি ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ গ্রহণ করেছে। তবে এ পরিকল্পনায় বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষত নদীর সঙ্গে জীবনের প্রবাহ কীভাবে সমন্বয় করা হবে, তা উপেক্ষিত থেকে গেছে।

হাতে হাত রেখে জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা

সমুদ্রের বিপুল সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার এবং টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য দরকার সমন্বিত উদ্যোগ। এ উদ্যোগে জল, জলদাস, জীবন ও জীবিকার প্রতিটিকেই গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, যেকোনো দূষণ থেকে সমুদ্রের বিপুল জলরাশির জীবন, পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র বাঁচাতে হবে। দ্বিতীয়ত, সমুদ্রের জলের ওপর নির্ভরশীল সবার জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা প্রদান জরুরি। সমুদ্রের জীবন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং টেকসই ব্যবহারের মাধ্যমেই নির্ভরশীল মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করা যায়। এ জন্য আইনের সংশোধন, যথাযথ প্রয়োগ, জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু তদারকি জরুরি। মাঝি, জেলেদের জীবন ও জীবিকা এবং সমুদ্রের টেকসই রক্ষণাবেক্ষণের নিশ্চিত করার মধ্যেই নিহিত সুনীল অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নের ভবিষ্যৎ। সমন্বিত উদ্যোগে সবাইকে হাতে হাত রেখে সংগ্রাম করে অর্জন করতে হবে টেকসই সমুদ্রসম্পদ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ।

ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এবং ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’–এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন। আইইউসিএন এশীয় অঞ্চলের সদস্যদের কমিটির ভাইস চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশের আইইউসিএন জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন।

rt@du.ac.bd