সাক্ষাৎকার: গণমাধ্যমের স্বাধীনতা

গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ মনে করছে একটি চক্র

স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা—এসব বিষয় নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সোচ্চার হয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। তাঁরা মনে করছেন, রাষ্ট্রীয় নানা আইন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান–এর সঙ্গে

ইলিয়াস খান
ইলিয়াস খান
প্রশ্ন

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পর এখন অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের প্রয়োগও দেখা গেল। এ পরিস্থিতি গণমাধ্যমকে চাপে রাখার কৌশল কি না?

ইলিয়াস খান: নিঃসন্দেহে এটি গণমাধ্যমকে চাপে রাখার কৌশল। আর রোজিনা ইসলামকে নির্যাতনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের একটি স্থায়ী হুমকি দেওয়া হলো। সাংবাদিকেরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলেন, সেটাকে আরও নুইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলো এ ঘটনার মাধ্যমে। যেন গণমাধ্যম মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। কর্তৃত্ববাদী সরকার সব সময় গণমাধ্যমকে দমন করতে চায়। আর সেটাই এখন বাংলাদেশে হচ্ছে বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন

রোজিনা ইসলামের জামিন মঞ্জুরের সময় আদালত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, গণতন্ত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ গণমাধ্যম। এটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল আচরণ করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আদালতের এই পর্যবেক্ষণ পাওয়ার পাশাপাশি আমরা দেখছি, গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে এমন নানা আইনেরও প্রয়োগ হচ্ছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?

ইলিয়াস খান: রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের ঘটনার পর সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী বেশ ইতিবাচক কথা বলেছেন। ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতা বলেছেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নয়, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে দেশ-জাতি উপকৃত হবে। কিন্তু এই ইতিবাচক কথাবার্তার কোনো প্রতিফলন আমরা দেখিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে রোজিনা ইসলামই প্রথম ব্যক্তি, যাঁর বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হলো। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বাইরে অন্য আইন দিয়েও যে সাংবাদিকদের ধরা যাবে, এবার অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট দিয়ে তা বুঝিয়ে দেওয়া হলো। এবার এই বার্তা দেওয়া হলো যে তোমরা যদি লিখতে চাও কিংবা বলতে চাও, তবে তোমরা সতর্ক থাকো। গণমাধ্যমের প্রতি একটা হুমকি থাকেই।

প্রশ্ন

আমলাতন্ত্র এবং ক্ষমতাবানেরা গণমাধ্যমের প্রতি একধরনের বৈরী আচরণ পোষণ করে। সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় এই প্রবণতা আরও প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে কি না?

ইলিয়াস খান: প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং শাসক দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। বালিশ–কাণ্ড, বিদেশি অতিথিদের দেওয়া ক্রেস্টের সোনা চুরি—এসব কর্মকাণ্ড আমরা জানি। বিষয়গুলো গণমাধ্যম তুলে ধরেছে। গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ মনে করছে একটি চক্র। এই আমলাতন্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করে, তারাই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। যে কারণে তারা যা ইচ্ছে করতে পারে। রোজিনা ইসলামকে যারা অত্যাচার করেছে, তারাই আবার তদন্ত কমিটি করেছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, প্রশাসন কিছু করলে সরকার নীরব থাকে।

প্রশ্ন

ক্ষমতায় গেলে রাজনৈতিক দল গণমাধ্যমের প্রতি একধরনের বৈরী আচরণ করে। আবার ক্ষমতার বাইরে থাকলে গণমাধ্যমের প্রতি আরেক ধরনের আচরণ করে। বিরোধী অবস্থানে থাকা অবস্থায় সাংবাদিক নিগ্রহের বিষয়ে সোচ্চার হয়, আবার সরকারে গেলে সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনা ভিন্নভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে। এই দ্বৈত অবস্থানের ব্যাখ্যা কীভাবে দেবেন?

ইলিয়াস খান: দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা নেই। ক্ষমতায় আসার পর তারা যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে। একটি দল বিরোধী অবস্থানে থাকলে তখন গণমাধ্যমের প্রতি কিছুটা সহানুভূতিশীল থাকে, কিন্তু সরকারে গেলে চরিত্র পাল্টে যায়। এটা দ্বিমুখী আচরণ। গণতন্ত্রের জন্য এটা সহায়ক নয়।