কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য, প্রয়োজন সচেতনতা

>গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮,  প্রথম আলোর আয়োজনে ও বিআরবি হসপিটালস লিমিটেডের সহযোগিতায় ‘কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য, প্রয়োজন সচেতনতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো। 

আলোচনায় সুপারিশ

• চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না
• বছরে একবার হলেও কিডনি পরীক্ষা করা দরকার
• ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি
• জনস্বাস্থ্য শক্তিশালী করার লক্ষে্য মশা-মাছি ধ্বংস করা ও ভেজাল খাদ্যবিরোধী অভিযান চালানো উচিত
• শিক্ষকদের মাধ্যমে স্কুলে কিডনি রোগ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা
• খোলা খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা
• পরিমিত পানি ও সুষম খাবার গ্রহণ করা
• সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে কাজে লাগাতে হবে
• নিয়মিত কায়িক শ্রমের অভ্যাস করা বা ব্যায়াম করা 

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম
কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য, এটা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। প্রয়োজন সচেতনতা। কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ ধরনের আলোচনা খুব জরুরি। চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা রয়েছে কি না, সেগুলোও আলোচনায় আসবে। এখন এ বিষয়ে আলোচনা করবেন এম এ সামাদ। 

এম এ সামাদ

এম এ সামাদ
প্রচণ্ড বমিভাব, ক্ষুধামান্দ্য, চোখ-মুখ ফুলে যাওয়া, শরীর চুলকানো, প্রস্রাব কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি উপসর্গ কিডনি বিকলের প্রাথমিক লক্ষণ।

কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘কিডনি রোগ ব্যাপক ও মারাত্মক কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য’। কিডনি রোগ অনেকটা সমুদ্রে ভাসমান বরফখণ্ডের মতো। এর সামান্য অংশ পানির উপরিভাগে দৃশ্যমান থাকে। আর বেশির ভাগই পানির নিচে অদৃশ্য থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের, দুই কোটির বেশি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। দেশে ঘণ্টায় পাঁচজনের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে কিডনি বিকল হয়ে।

শরীরের বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়ার ক্ষেত্রে কিডনি অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পানির ভারসাম্য রক্ষা, লোহিত রক্তকণিকা তৈরির জন্য হরমোন উৎপাদন, অস্থিমজ্জাকে শক্ত রাখা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ কিডনি করে থাকে।

কিডনি বিকল হওয়ার উপসর্গ সাধারণত ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কিডনির কর্মক্ষমতা নষ্ট হওয়ার আগে বোঝা যায় না। কিছু লক্ষণ কিডনি রোগের সংকেত বহন করে। যেমন প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাব লাল হওয়া, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, কোমরের দুই পাশে ও তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা, শরীর-মুখ ফোলা ইত্যাদি।

তিন মাসের চিকিৎসায় কিডনি রোগ ভালো না হলে এটিকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হিসেবে ধরা হয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও নেফ্রাইটিস (কিডনির বিভিন্ন সমস্যা)—এই তিন রোগের কারণে ৮০ ভাগ লোকের কিডনি নষ্ট হয়। এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে একটু সচেতন হলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব।

বিশ্ব কিডনি দিবসে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুলপর্যায় থেকে শিশুদের কয়েকটি নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস করা গেলে কিডনি রোগ ছাড়াও অন্যান্য অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। ওজন, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। খাবার পরিমিত ও সুষম হতে হবে। দিনে পরিমিত  পানি পান করতে হবে।

ধূমপান ও মাদকদ্রব্য থেকে বিরত থাকা জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বেদনানাশক বা অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যাবে না। পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে প্রস্রাব ও রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করাতে হবে। 

আবু আলতাফ হোসেন

আবু আলতাফ হোসেন


যেকোনো রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে কিছু খাবার বাদ দিতে হবে। ভেজাল খাদ্য খেতে কেউ নিষেধ করলে দু-এক দিন পর আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাই।   আমরা সহজেই ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করি। কিডনি ভালো রাখতে হলে কোনো অবস্থায় ভেজাল খাদ্য খাওয়া যাবে না। এ জন্য সচেতনতা দরকার। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হৃদ্‌রোগ ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।

এম এ সামাদ কিডনি রোগের পাঁচটি স্তরের কথা বলেছেন। আমরা ইজিএফআর (কিডনি কী অবস্থায় আছে, সেটা নির্ণয়) করে রোগীকে প্রাথমিক পর্যায়ে পাওয়া গেলে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।

৪ নম্বর স্তর পার করে কিডনির কার্যকারিতা ১৫ ভাগের নিচে নেমে এলে তাকে ইএসআরডি বলি। তখন রোগীর চিকিৎসার জন্য ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজনের পরামর্শ দিই। 

গাজী আশরাফ হোসেন লিপু

গাজী আশরাফ হোসেন লিপু
আমার মা কিডনি রোগে ভুগছেন। তাঁর ব্যবস্থাপত্র দেখতে থাকি। কিডনিবিষয়ক বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করি। এভাবে কিছু দিনের মধ্যে এ রোগ সম্পর্কে বেশ অভিজ্ঞতা হয়। আমার একটা বিশেষ উপলব্ধি হলো, প্রধানত সচেতনতার অভাবে এ রোগ হয়। একসময় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ছিলাম। ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বিভিন্ন সময় ভীষণভাবে ব্যথায় আক্রান্ত হতাম। তখন অনেক ব্যথার ওষুধ খেতে হতো। এর একটা প্রভাব শরীরে পড়তে পারে। সে ভাবনা থেকে কিডনি পরীক্ষা করে জানতে পারি, কিডনি রোগের দ্বিতীয় স্তরে আছি। এটা খুব বেশি ক্ষতিকর মাত্রা না। কিছুদিন চিকিৎসা করলে ভালো হওয়া সম্ভব। খেলোয়াড়দের মধ্যেও কেউ কেউ হয়তো সচেতনতার অভাবে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফুটবলের স্বনামধন্য খেলোয়াড় মোনেম মুন্না কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। কোনোভাবে তাঁকে বাঁচানো গেল না।

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর—এটা জেনেও আমরা ধূমপান করছি। এগুলো নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা করা দরকার।

একটি প্রবন্ধ থেকে জেনেছি, বিরিয়ানি খাওয়ার চেয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি বা কোমল পনীয় কিডনির জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। গরমের সময় স্যালাইন গ্রহণের প্রয়োজন হয় কি না, তা সাধারণ মানুষকে জানানো উচিত।

পরিবার থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে কিডনি ভালো রাখার বিষয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। কিডনি সচেতনতা নিয়ে একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। দেশের স্কুলগুলোতে এটা নিয়ে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের সচেতন করা জরুরি।

বিনা মূলে্য কিডনি রোগ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো ব্যক্তি যদি জানতে পারেন তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত, তাহলে সচেতন হবেন।

প্রথমত, দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরেই রোগী যেন সচেতন হতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ নজর থাকা দরকার। রোগ প্রতিরোধে বাজেটের বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। 

নিজাম উদ্দিন চৌধুরী

নিজাম উদ্দিন চৌধুরী


অনেকের ধারণা, পানি বেশি খেলে কিডনি ভালো থাকে। প্রকৃতপক্ষে, দিনে পানি অথবা তরল খাবার দুই-তিন লিটার খেলেই যথেষ্ট। পানি বেশি খেলে পায়ে পানি চলে আসতে পারে। আবার কিডনি রোগ থাকলে অতিরিক্ত পানি পান শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। কেউ বেশি তাপমাত্রায় বসবাস করলে দুই-তিন লিটারের বেশি পানি পান করতে হবে।

নিয়ম অনুযায়ী প্রতি চার ঘণ্টা পরপর প্রস্রাব হওয়া উচিত। আবার প্রস্রাবের চাপ আটকে রাখা উচিত নয়। এতে মূত্রনালিতে প্রদাহ বা ইনফেকশন হতে পারে। স্বাস্থ্যসচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের ক্ষেত্রে ছয় মাস পরপর প্রস্রাব ও রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। অনেক সময় একজন সুস্থ–সবল মানুষ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করে। অনেকে জীবনে চিকিৎসকের কাছে জাননি বলে গর্ব করেন। এতে গর্বের কিছু নেই। যেকোনো সময় মানবদেহে সমস্যা হতে পারে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে কিডনি রোগ ও ডায়ালাইসিস-সংক্রান্ত কর্মসূচি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিটি জেলায় নেফ্রোলজি (কিডনি) বিভাগ চালু ও ২০ থেকে ২৫টি ডায়ালাইসিস মেশিন প্রদান করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি কার্যকর হলে প্রান্তিক মানুষের সেবা গ্রহণে অনেক সুবিধা হবে।

সঠিক চিকিৎসা প্রদান করে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করলে দেশেরই আর্থিক ক্ষতি হয়। বাংলাদেশে হার্ট ও ক্যানসার চিকিৎসায় বেশ উন্নতি হয়েছে। সম্প্রতি প্রায় ২০০ নেফ্রোলজিস্ট সেবা প্রদানে বাংলাদেশে আসবেন। আশা করা হচ্ছে, এ বিষয়ে আরও ৩০০ থেকে ৪০০ চিকিৎসক তৈরি হবেন এবং আরও উন্নতি হবে। 

আবুল খায়ের

আবুল খায়ের
স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করার সুবাদে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রায় সব বিভাগ সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশিক্ষণেও  অনেকবার অংশ নিয়েছি।

দেশের প্রধান সমস্যা হলো, আমরা কিডনি রোগ ছাড়াও অন্য প্রায় সব রোগ সম্পর্কে অসচেতন। অসচেতনতা আমাদের রোগের প্রধান কারণ। চিকিৎসকেরা রোগীকে খুব বেশি সচেতন করেন না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যেও সমন্বয় নেই।

বর্তমানে আমাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রটি অনেক উন্নত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরে যে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি, বাংলাদেশে সে চিকিৎসা প্রদানে সফলতা এসেছে। আমাদের দরকার সচেতনতা।

কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যম, চিকিৎসকসহ সমাজের সব সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসা উচিত।

কেউ কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে চায় না।  খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতা থাকতে হবে। ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করলে কেবল কিডনি নয়, শরীরের যেকোনো অঙ্গ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। খাবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোন উপাদান আমরা আমদানি করছি, কী খাচ্ছি, এসব বিষয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। 

এ কে এম শাহরিয়ার

এ কে এম শাহরিয়ার


বিআরবি গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমানের স্বপ্ন, মানুষ চিকিৎসার জন্য যেন বিদেশে না যায়। এ লক্ষ্যে তিনি কুষ্টিয়ায় একটি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছেন। এর কাজ প্রায় শেষের পথে। অচিরেই এটা চালু হবে। ফলে স্থানীয় রোগীদের ঢাকা, রাজশাহী বা খুলনায় যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। ঘরের পাশ থেকেই চিকিৎসা নিতে পারবেন। তিনি সে ব্যবস্থা করতে চান।

 একটা কথা সবাই জানি, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। বিআরবি হাসপাতাল এই মূলমন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। অন্যজন যেন অসুস্থ না হয়, তার জন্য সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বিআরবি।

বিআরবি হাসপাতালের পক্ষ থেকে ১৫ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর কিডনি রোগ সচেতনতা ও সেবা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। মাত্র ৫০০ টাকায় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ, একজন মেডিকেল অফিসার দ্বারা পরীক্ষা এবং চারটি পরীক্ষা করাচ্ছি। আগামী বছর ২৪টি জেলায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন করা হবে, যার উদ্দেশ্য কিডনি, ডায়াবেটিস ও হৃদ্‌রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। সচেতনতা সৃষ্টি ও রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে আমরা একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ দেখতে চাই। 

আছিয়া খানম

আছিয়া খানম
প্রতিরোধ শুরু করতে হবে ঘর থেকে। ৬০ থেকে ৭০ ভাগ রোগ আমরা প্রতিরোধ করে কমাতে পারি। অনেক স্কুলের শিশু ও নারী কেবল মূত্রনালিতে ইনফেকশনের চিকিৎসা গ্রহণ করাতে আসে। যার মূল কারণ অসচেতনতা, অপরিচ্ছন্নতা। আমাদের স্কুলগুলোতে স্যানিটেশনের জন্য ভালো পরিবেশ নেই। যার ফলে অনেক সময় শিশুরা প্রস্রাব চেপে রাখে এবং ইনফেকশন হয়।

দিনে চার ঘণ্টা অন্তর প্রস্রাব করা দরকার, এটা শিশুদের বোঝাতে হবে। পরিমিত পানি ও শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দিতে হবে। প্রস্রাব জটিলতায় অনেক কিডনি রোগীকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা করা হলে ৯০ ভাগ স্বাভাবিক পর্যায়ে  সম্ভব।

গর্ভকালীন নারীদের অতিরিক্ত বমি হয় এবং বমির জন্য পানিস্বল্পতা ও কিডনি বিকল হচ্ছে।

প্রচারমাধ্যমে জানাতে হবে যে একটা প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভবতী মা কিডনির অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন।

আগে থেকে কারও কিডনি রোগ থাকলে গর্ভধারণ সেটাকে আরও বাড়িয়ে দেবে।  এমনকি সন্তান বিকলাঙ্গ বা মারা যেতে পারে। মা ও সন্তান দুজনের ক্ষতি হতে পারে।

কায়িক শ্রম, নিয়মতান্ত্রিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে কিডনি রোগের মতো ব্যয়বহুল রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। কিডনি রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিনা মূল্যে তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। 

হারুন অর রশিদ

হারুন অর রশিদ


দুই ধরনের কিডনি রোগ হয়। একটি হঠাৎ হয় এবং অন্যটি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, যা বোঝা যায় না। এ দুটিই প্রতিরোধ করা যায়। জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে একজন মানুষের কিডনি সমস্যা হবে না।

জনস্বাস্থ্য বলতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা, মশা-মাছিমুক্ত পরিবেশে বসবাস করা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা ইত্যাদি। এসব অনিয়মের জন্য দীর্ঘস্থায়ী কিডনি সমস্যা হচ্ছে।

জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করা ঠিক না। এতে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। সুপ্ত কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত।

এ জন্য রোগী ছাড়াও চিকিৎসকদের উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদানের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। জ্বরের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন আছে কি না, তা বুঝতে হবে। বাংলাদেশে কিডনি রোগের এটি তৃতীয় বা চতুর্থ কারণ।

কিডনি রোগের আরও একটি কারণ হলো ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা। একমাত্র প্যারাসিটামল ছাড়া যেকোনো ব্যথার ওষুধ ৮০ ভাগই কিডনির ক্ষতি করবে।

লিভার বা আলসারের সমস্যা না থাকলে প্যারাসিটামল শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জন্য খুবই নিরাপদ একটি ওষুধ।

কিডনি রোগের প্রথম দুই স্তর পর্যন্ত নিরাময়যোগ্য। তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরের রোগী পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে ৫ থেকে ১০ বছর রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। পঞ্চম স্তরে রয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ২ ভাগ রোগী। এই শূন্য দশমিক ২ ভাগ রোগীর জন্য গোটা দেশে হইচই ফেলে দিচ্ছি।

কিডনি পরীক্ষায় কমিউনিটি ক্লিনিককে কাজে লাগাতে হবে। রোগীর মধ্যে যেকোনো ধরনের উপসর্গ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দিতে হবে।

সচেতন হলে প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের এক কোটি রোগী কিডনি রোগের ভয়াবহতা থেকে বেঁচে যাবে।

পঞ্চম স্তরের রোগীদের জন্য হাসপাতালগুলোতে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। বিশেষজ্ঞরা কিডনি সংযোজন ও ডায়ালাইসিসে সাহায্য করবে।

নেফ্রোলজিস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। রোগীর তুলনায় নেফ্রোলজিস্টের সংখ্যা অনেক কম। সে জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এ জন্য অনেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছে।

এসডিজিকে কাজে লাগিয়ে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, দীর্ঘস্থায়ী হৃদ্‌রোগ, ক্যানসার—সবগুলোই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন, কিডনি ফাউন্ডেশন ও বিআরবি কাজ করছে। সরকারেরও এগিয়ে আসা উচিত। তবেই কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। 

এম এ রহমান

এম এ রহমান
কিডনি রোগ ছোট শিশুদেরও হতে পারে। এ রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রচুর পানি পানের প্রয়োজন নেই। তবে পিপাসা পেলে পরিমিত পানি পান করা দরকার। প্রস্রাব চেপে রাখা উচিত নয়। যেকোনো ওষুধ ও রাস্তার খোলা খাবার কিডনিতে প্রভাব ফেলবে। প্রচুর পরিমাণে ওষুধ সেবন ও ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন হলে সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি নিতে হবে। কিডনি রোগ হলে প্রস্রাবের মাধ্যমে তা নির্ণয় করা যায়।

 কিডনি রোগের সঙ্গে হৃদ্‌রোগের ঘনিষ্ঠতা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

 উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, তবেই কিডনি ভালো থাকবে। বছরে একবার হলেও কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত। শরীর ফুলে গেলে বুঝবেন সেটা কিডনি বা হার্টের সমস্যা। এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি। বিআরবি হাসপাতালে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।


এম এ সালাম

এম এ সালাম


আমি প্রধানত ইউরোলজিক্যাল ক্যানসারের চিকিৎসা প্রদান করি। দেখা যায়, রোগীদের অর্ধেকের বেশিই কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত।

কিডনি রোগ মানুষের জন্য নীরব ঘাতক। আর কিডনির নীরব হলো ডায়াবেটিস ও হাইপার টেনশন। এ দুটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কিডনি রোগ বা হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া মানেই মূত্রনালিতে ইনফেকশন নয়। ইনফেকশন হলো সেই অবস্থা, যেখানে রোগীর জ্বরও থাকবে। জ্বর না থাকলে এ ক্ষেত্রে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না। কিন্তু অনেক চিকিৎসক এ বিষয়ে সচেতন নন। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। জ্বালাপোড়ার মূল কারণ নির্ণয় করতে হবে। এভাবেও কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

শিশুর কিডনিতে কোনো অসুখ আছে কি না, তার প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনি রোগ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এ জন্য শিশুর অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দুই-তৃতীয়াংশ কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সব রোগের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ প্রদান করা যাবে না। 

মুহাম্মদ রফিকুল আলম

মুহাম্মদ রফিকুল আলম
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ একটি অসংক্রামক ব্যাধি। বাংলাদেশেও দীর্ঘ স্থায়ী কিডনি রোগকে অসংক্রামক ব্যাধির তালিকায় রাখার অনুরোধ করছি। এতে কিডনি রোগের সচেতনতামূলক কর্মসূচিগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মডেলে চলে আসবে, যা জনগণের কাছে গুরুত্ব পাবে। বয়স, লিঙ্গ ও রক্তের ক্রিয়েটিনিন জানা থাকলে মোবাইলের অ্যাপসের মাধ্যমে সহজেই ইজিএফআর (কিডনি রোগ কোন স্তরে আছে তার পরীক্ষা) নির্ণয় করা যায়। ইজিএফআর ৬০–এর নিচে নেমে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

আইসিইউতে বেশির ভাগ সময় ২ থেকে ৩টা অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। এ জন্য চিকিৎসকদের সচেতন হতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে স্কুল স্বাস্থ্য কর্মসূচির দিকে নজর দিতে হবে। স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা যেতে পারে। একটি ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম ট্যাবলেট কিডনি বিকল করে দিতে পারে। হারবাল ওষুধের কিছু ক্ষতিকর উপাদানও কিডনি রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তবে বর্তমানে কোনো কারণ ছাড়াও কিডনি রোগ হচ্ছে।

আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশে গবেষণা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কীটনাশক ও টক্সিনের জন্য কিডনি রোগ হয়। পাতলা চামড়ার জন্য টক্সিন সহজেই শরীরে প্রবেশ করে। খাবার সোডা ও  হালকা গরম পানির মাধ্যমে টক্সিন দূর করা যায়।

কিডনিতে পাথর থাকলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ১০ গুণ বাড়ে। এ জন্য নিরাপদ পানি পান করা জরুরি। অতিরিক্ত স্থূলতা কিডনি রোগের জন্য দায়ী। স্থূলতা পিঠব্যথা ও হাঁটুব্যথা ইত্যাদি রোগের কারণ। এ কারণে কিডনির কাজ বেড়ে যায় এবং এটি বিকল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। 

আবুল কালাম আজাদ

আবুল কালাম আজাদ


সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেই। তবে কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিআরবি হসপিটালস লিমিটেডের এ উদ্যোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রশংসনীয়।

তবে অন্য হাসপাতালগুলো এগিয়ে এলে সাধারণ মানুষের সচেতনতা আরও বাড়বে। প্রতিবছর একবার কিডনি রোগ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত।

বিনা প্রেসক্রিপশনে ওষুধ প্রদান থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকের অভাব। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ না কিনে তো উপায় থাকে না। প্যাথলজিগুলোতে স্বাক্ষর ছাড়া রিপোর্ট না দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি প্রথা না তৈরি করতে পারি, তাহলে কীভাবে চলবে।

ছোট ছোট যন্ত্র বেরিয়েছে, তা দিয়ে পরীক্ষা করে কম্পিউটারের মাধ্যমে রোগ সম্পর্কে রিপোর্ট পাওয়া সম্ভব। এ ধরনের রিপোর্টে ভুল থাকতে পারে। কিন্তু এ রিপোর্টের ভিত্তিতে এমবিবিএস চিকিৎসক একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছেন। এটা না হলে সব ধরনের মানুষকে প্রধান শহরগুলোতে আসতে হতো। এ বাস্তবতাগুলোও আমাদের বিবেচনা করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেবা প্রদানের বিভিন্ন অসংগতি মাথায় রেখে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যেন একটি সুন্দর, পরিকল্পিত স্বাস্থ্যসেবা চালু করা যায়।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট অব্যাহতভাবে বাড়ছে। আরও বাড়বে। সরকারের অর্থ আছে কিন্তু এ অর্থের যথাযথ ব্যবহার করা হয় না। স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় আর্থিক হিসাব দেখাতে পারলে সরকারের কাছ থেকে বাজেট বাড়ানো সম্ভব।

আজ কিডনি সমস্যা নিয়ে যে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হলো, তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে কেবল কিডনি রোগই নয়, সব ধরনের রোগ নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। 

আব্দুল কাইয়ুম
কিডনি রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। 

যাঁরা অংশ নিলেন

আবুল কালাম আজাদ: মহাপরিচালক, ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

মুহাম্মদ রফিকুল আলম: সহ–উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

হারুন অর রশিদ: প্রতিষ্ঠাতা, কিডনি ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ঢাকা

এম এ সামাদ: বিভাগীয় প্রধান, িকডনি বিভাগ, বিআরবি হসপিটালস লিমিটেড

নিজাম উদ্দিন চৌধুরী: বিভাগীয় প্রধান, কিডনি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

আছিয়া খানম: চেয়ারম্যান, কিডনি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

আবু আলতাফ হোসেন: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিআরবি হসপিটালস লিমিটেড

এম এ সালাম: প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি,  ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টেশন ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ

এম এ রহমান: ডেপুটি ডাইরেক্টর মেডিকেল সাার্ভিস ও িশশু রোগ িবশেষজ্ঞ, বিআরবি হসপিটালস লিমিটেড

গাজী আশরাফ হোসেন লিপু: সাবেক অধিনায়ক, বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম

আবুল খায়ের: প্রধান প্রতিবেদক, ইত্তেফাক

এ কে এম শাহরিয়ার: হেড অব ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন, িবআরবি হসপিটালস লিমিটেড

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো