কর্মসংস্থানের পূর্বশর্ত কিন্তু সবার জন্য টিকার ব্যবস্থা করা। টিকার ব্যবস্থা করতে পারলে কর্মসংস্থানের পরিবেশটা আরও নিরাপদ হবে। তখন এমনিতেই বিনিয়োগ আসা শুরু হবে। বিশ্ববাজারে এখন ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি উন্নতির দিকে। ইউরোপও মন্দা থেকে বেরিয়ে আসছে। ফলে রপ্তানি বাজারে চাহিদার যে সমস্যা ছিল, সেটা আগামী দিনে কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কিন্তু সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে হলে আমাদের ব্যক্তি খাতকে প্রস্তুত রাখতে হবে। করোনা সংকট চলে গেলে অনেক নতুন বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসতে পারে। সে জন্য যেসব সংস্কার কার্যক্রম চলমান আছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করা উচিত। বিভিন্ন সরকারি সেবাদানকারী সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সমঝোতা স্মারক সই করছে। কিন্তু এখন বিডায় ওই সব সেবা পাওয়ার জন্য আবেদন করলে পাওয়া যায় না। তাই যত দ্রুত সম্ভব নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটা বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। করোনা থেকে বেরিয়ে এলে অর্থনীতিও দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে।
‘গরিবদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি’ শিরোনামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলাগুলোতে এই প্রকল্প চলমান। এর আওতায় কর্মহীনেরা ইউনিয়ন পরিষদে নিবন্ধিত হলে স্থানীয় সরকার কাজ দেবে। এটা আপৎকালীন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। করোনার প্রভাবে গত দেড় বছরে অনানুষ্ঠানিক খাতে ছোটখাটো অনেকেই কাজ হারিয়েছে। অনেকে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। সেখানে তো তাদের কিছু করে খেতে হবে। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তাদের আয়ের ব্যবস্থা করতে পারলে সেটা বেশি ফল দেবে। তাই ‘গরিবদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি’ শিরোনামে যে প্রকল্পটি আছে, সেটিকে আরও সম্প্রসারণ করা উচিত। এই প্রকল্পে আরও বরাদ্দ বাড়ানো দরকার আছে। এর মাধ্যমে একদিকে গ্রামে যেমন টাকার প্রবাহ বাড়বে, একই সঙ্গে গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণের কাজও হয়ে যাবে। এক কাজে দুই কাজ হয়ে যাবে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) গ্রামীণ অর্থনীতিকে ঘিরে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেটি হোক সামাজিক কিংবা ভৌত—এ ধরনের প্রকল্পেও আসছে বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সেখানেও কর্মসংস্থান হতে পারে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, সংসদ সদস্যদের জন্য যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেখানেও গতি আনতে হবে। একই সঙ্গে কাজের গুণগত মানও বাড়াতে হবে।
ব্যক্তি খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো করোনাকালে ভালো করেছে। তাদের তিন বছরে যেটা অর্জনের কথা ছিল, সেটা এক বছরেই অর্জন করেছে। নতুন অনেক উদ্যোক্তা আছে, যারা টাকার অভাবে ব্যবসায় রূপান্তর করতে পারে না। সরকার কয়েক বছর আগে স্টার্টআপে বরাদ্দ রাখা শুরু করেছে। এই তহবিলের আওতা বাড়ানো জরুরি। এখানে শুধু স্টার্টআপ নয়, যেকোনো বুদ্ধিভিত্তিক ব্যবসা, যাঁরা হাতের কাজ করেন, খাদ্য বিক্রি করেন, প্রযুক্তির ব্যবহার করে কিছু করতে পারেন, তাঁদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে। তাঁদের কারিগরি সহায়তা দেওয়া যেতে পারে।
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে যত দ্রুত সম্ভব ওয়ান স্টপ সার্ভিস কার্যকর করতে হবে। আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি রাখতে হবে। শুল্ক আইন সহজ করতে হবে। অবকাঠামোর উন্নতি ঘটাতে হবে, যাতে করোনা সংকট শেষ হওয়ার পর উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারেন।