মতামত

ইউক্রেনের মানুষ কেন রাশিয়াকে অপছন্দ করে

রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলা চালালে তা প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ট্যাংক বিধ্বংসী এফজিএম-১৪৮ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে। ক্ষেপণাস্ত্রের চালান নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি মার্কিন বিমান কিয়েভে পৌঁছায়।
ছবি : এএফপি

বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে আগে ইউক্রেন ‘খবর’ হতো কালেভদ্রে। এখন প্রচারমাধ্যম রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ-উন্মাদনায় ভাসছে। বড় আদলে যুদ্ধ শুরু না হলেও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু করিয়ে দেওয়া গেছে ইউরোপজুড়ে। অথচ রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ হবে—কথাটা আপাতদৃষ্টিতে হাস্যকরই শোনায়।

এ দুই দেশের মধ্যে প্রায় কোনো বিষয়েই তুলনা চলে না। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়ার আয়তন প্রায় পৌনে দুই কোটি বর্গকিলোমিটার। ইউক্রেন তার পাঁচ ভাগও নয়। অর্থনীতির হিসাবে রাশিয়া এ মুহূর্তে বিশ্বে ১১তম। আর ইউক্রেন নিম্নমধ্য আয়ের দেশ। মানব উন্নয়ন সূচকে তার অবস্থান ৭৪, রাশিয়ার বেশ নিচে।

সামরিক বিষয়েও উভয়ের ব্যবধান বিপুল। রাশিয়া সামরিক সামর্থ্যে বিশ্বে দ্বিতীয়। পারমাণবিক অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ভান্ডার তার। বছরে প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে সামরিক খাতে। অন্যদিকে, ইউক্রেন পারমাণবিক অস্ত্র সবই রাশিয়াকে দিয়ে দিয়েছে অনেক আগে। প্রতিরক্ষায় তাদের খরচ রাশিয়ার চেয়ে ৬ থেকে ৭ গুণ কম।

স্থলবাহিনীর সংখ্যাও ক্রমে কমাচ্ছিল তারা। ন্যাটোর সলাপরামর্শে দেশটিতে নতুন করে সামরিক উন্মাদনা শুরু হয় গত কয়েক বছর হলো। এখন সামরিক খরচও বাড়াচ্ছে সরকার। তবে যুদ্ধক্ষমতায় রাশিয়ার ধারেকাছে পৌঁছা তাদের পক্ষে নিকট ভবিষ্যতে সম্ভব হবে না। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, ইউক্রেন তাহলে রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত কেন? এ কি কেবল ন্যাটোর উসকানিতে? নাকি ইউক্রেনবাসীর পুরোনো ঘৃণা আছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে?

এই ছবিটি ২০০৮ সালের ৩০ আগস্টের। জর্জিয়ার তসখনভালি এলাকায় ট্রাংক নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে রুশ বাহিনী। ওই সময় যখন বেইজিংয়ে সামার গেমস চলছিল তখন রাশিয়া তার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশ জর্জিয়ায় অভিযান চালায়। ওই অভিযানে কমপক্ষে সাত শ লোক নিহত হয় এবং কয়েক হাজার জর্জিয়ান বাস্তুচ্যুত হন।

সংকটের মূলে ভাষা ও সংস্কৃতি

রাশিয়া ও ইউক্রেনের বর্তমান রাজনৈতিক-সামরিক সংঘাত আসলে দেশ দুটির পুরোনো সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের নতুন প্রকাশমাত্র। ইউক্রেন সাংস্কৃতিকভাবে বিভক্ত এক জাতি। তার নাগরিকদের একদল আজন্ম রাশিয়াপন্থী, অন্য দল রাশিয়াবিরোধী। দ্বিতীয় দল নিজেদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে ‘ইউক্রেন জাতীয়তাবাদ’ হিসেবে চিহ্নিত করে। স্থানীয় সমাজের গভীরে থাকা এই বিভক্তি রুশ ও ইউক্রেন ভাষার ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব থেকে। গত দু-তিন দশকে এই দ্বন্দ্ব ক্রমে রাজনৈতিক চেহারা নিচ্ছিল। সর্বশেষ তা সামরিক রূপ নিয়েছে।

ইউক্রেনিয়ান দাপ্তরিক ভাষা হলেও সংস্কৃতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে রুশদের আধিপত্য ব্যাপক। রাশিয়ার অনেক তাত্ত্বিক ইউক্রেনিয়ানকে রুশের উপভাষা মনে করেন। এই দুই ভাষার বৈরিতার প্রকাশ ঘটছে বহু মাধ্যমে। রুশিরা ইউক্রেনকে রাশিয়ার নিকটজন এবং একই ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশীদার দেখাতে গান, সিনেমাসহ নানা খাতে অনেক অর্থ ঢালছে। তার অংশ হিসেবে কিছুদিন ধরে ব্যাপক তর্ক চলছে সাহিত্যিক নিকোলাই গোগোলকে ঘিরে। ইউক্রেনে জন্ম নিয়েও গোগোল বিশ্বজুড়ে ‘রুশ লেখক’ হিসেবে পরিচিত, রুশ ভাষায় লেখার কারণে। তাঁকে নিয়ে কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে বিস্তর টানাহেঁচড়া আছে এবং চলছে।

সাংস্কৃতিক সংঘাতের ফল হিসেবে ইউক্রেনে যখনই কোনো নির্বাচন হয়, বরাবরই তাতে স্থানীয় জাতীয়তাবাদীদের ঠেকাতে পর্দার আড়ালে কাজ করে মস্কো। কিন্তু সব সময় তারা সুবিধা করতে পারে না। জাতীয়তাবাদীরাও রাশিয়ার প্রভাব থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারেনি দীর্ঘ চেষ্টার পরও।

দেশটির অনেক অঞ্চলে, বিশেষ করে পূর্ব অঞ্চলে রুশভাষীদের ভালো রকমের প্রভাব আছে। সেখানে দনেৎস্ক ও লুহানস্কে রুশপন্থীদের সশস্ত্র তৎপরতায় মস্কোর মদদ আছে। এসব এলাকা অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল এবং রুশরা একরকম ছদ্ম যুদ্ধ চালাচ্ছে সেখানে ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধে।

ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ার লাখ খানিক সেনা জড়ো হয়েছে। যে কোনো সময় যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। সেই কথা মাথায় রেখে ইউক্রেনের সেনারা সীমান্ত এলাকা খারকিবে ইউক্রেনের বাহিনীকে ১০ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ মহড়া দিতে দেখা যাচ্ছে।

২০১৪ সালে ইউক্রেনের বড় এক এলাকা ক্রিমিয়া সরাসরি নিয়ে নিয়েছে রাশিয়া। মস্কো ওই দখলের ন্যায্যতা তৈরি করে ক্রিমিয়ার ভেতরকার রাশিয়াপন্থীদের বিদ্রোহের মাধ্যমে।

ইউক্রেন এখনো ক্রিমিয়াকে নিজ এলাকা মনে করে। কিন্তু রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে সেটা উদ্ধারের শক্তি নেই দেশটির; বরং আরও এলাকা হারানোর শঙ্কায় আছে। এসব বিবেচনা থেকে ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদীরা কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে দেশকে পুরোপুরি ইউরোপমুখী করে ন্যাটোর বলয়ে নিতে। বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে আবার ঠান্ডাযুদ্ধ শুরু হওয়ায় ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদীদের নতুন করে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।

সেই সূত্রেই ইউক্রেন এখন রাশিয়ার চোখে চোখ রেখে দু-চারটি কথা বলছে। তবে বড় আয়তনে যুদ্ধ লাগার আগেই গত আট বছরে এই দুই দেশের চোরাগোপ্তা সশস্ত্র সংঘাতে ইতিমধ্যে ১৫ হাজার মানুষ মারা গেছে। দীর্ঘস্থায়ী এই তুষের আগুনের কারণে ইউক্রেনকে ‘ইউরোপের সিরিয়া’ও বলা যায়, যেখানে কেবল মানুষ মরছে, কেউ জয়ী হচ্ছে না।

রুশ জাতীয়তাবাদের ক্রুদ্ধ চেহারায় ভীত ইউক্রেনবাসী

প্রায় তিন দশক হলো ইউক্রেন রাশিয়া থেকে স্বাধীন হলেও রাশিয়ার প্রভাববলয় থেকে এই দীর্ঘ সময়েও সামান্যই বের হতে পেরেছে। কিয়েভকে একসময় বলা হতো সমগ্র রুশি জনপদের ভরকেন্দ্র। নৃতাত্ত্বিকভাবে রুশ ঐতিহ্যের প্রায় ৮০ লাখ মানুষ আছে এই দেশে। সে কারণে একে ‘খুদে রাশিয়া’ও বলা হয়। এ রকম সাংস্কৃতিক বন্ধন ছিন্ন করা সহজ নয়। কিন্তু পুতিনের আধিপত্যবাদী মনোভাব ইউক্রেনবাসীর মনে ফিরিয়ে আনছে বৃহৎ প্রতিবেশীর হাতে লাঞ্ছনার পুরোনো সব স্মৃতি।

বিশেষ করে ১৯৩২ থেকে দুই বছরজুড়ে এই এলাকায় রুশিরা নির্মম এক দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিয়েছিল। ইতিহাসে যে বিভীষিকা ‘হলোদোমোর’ নামে পরিচিত। এ ছাড়া ইউক্রেনিয়ান ভাষাকে কোণঠাসা রাখতে নিষিদ্ধ করাসহ বহু কিছু করেছে রুশিরা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়।

২০১৯ সালের মে মাসে কিয়েভ পোস্টে প্রকাশিত জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৬০ ভাগ ইউক্রেনবাসী রাশিয়াকে খুব নেতিবাচক প্রতিবেশী হিসেবে দেখে। এখন এই হার আরও বেশি। রাশিয়ার চেয়েও ইউক্রেনবাসীর অধিক অপছন্দ পুতিনকে। পুতিনের দাবি, ইউক্রেন কোনোভাবে ন্যাটো জোটে ঢুকতে পারবে না। তিনি ইউক্রেনের প্রভুর মতো আচরণ করছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুবিধাজনক হয়েছে কিয়েভকে কাছে টানতে।

তবে রাশিয়ার তুলনায় আমেরিকার সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্কের ইতিহাস অতি সংক্ষিপ্ত। এর খানিকটা অর্থনৈতিক, বাকিটা ভূরাজনৈতিক স্বার্থমাত্র। সাংস্কৃতিকভাবে দুদেশের যোগসূত্র সামান্যই। ইউক্রেনবাসীর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মায়াকান্না এবং দরদ মূলত রাশিয়াকে রুখতে। ওয়াশিংটন মূলত চায় ইউক্রেন রাশিয়ার বলয় থেকে ছুটে তার অধীন থাকুক। গোপন আরেক লক্ষ্য হলো ইউক্রেনের জ্বালানি খাতে প্রভাব বাড়ানো।

তবে এ মুহূর্তে কিয়েভকে উদারভাবে সামরিক ‘সহায়তা’ দিচ্ছে ওয়াশিংটন। স্বভাবত, মস্কোর এসব ভালো লাগছে না। রুশিদের আশপাশে অনেক দেশকে ন্যাটো তার বলয়ে নিয়েছে আগে। ইউক্রেনকে সেই তালিকায় দেখতে চায় না মস্কো। রাশিয়ার সুবিধার দিক—ন্যাটোভুক্ত অনেক দেশ তার গ্যাসের ওপর নির্ভর করে। তারা কিয়েভের পাশে শক্তভাবে দাঁড়াবে বলে মনে হয় না।

তবে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বিরোধিতা করায় ইউক্রেনে তাদের বন্ধু ভাবার প্রবণতা বেড়েছে। উল্টো দিকে ক্রিমিয়া দখল করতে পারায় রাশিয়ায় পুতিনের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। রাশিয়ার ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ পুতিনের ক্রিমিয়া দখল অনুমোদন করেছিল। দেশটির পুতিনবিরোধীরাও এ কাজে সমর্থন দেয় তখন।

এ সুযোগে রুশ প্রচারমাধ্যমে এখনো তুমুল জাতীয়তাবাদী বিকার চলছে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে। রুশ জাতীয়তাবাদের এই ক্রুদ্ধ চেহারা ইউক্রেনবাসীকে আমেরিকা ও ইউরোপের দিকে ফিরতে বাধ্য করে। অনেক ভাষ্যকারের মতে, রাশিয়া ক্রিমিয়াকে পেতে গিয়ে হারিয়েছে ইউক্রেনকে। ক্রমে দেশটির বেশি বেশি মানুষ রুশিদের ঘৃণা করছে।

ইউক্রেন ঘিরে ভূরাজনীতির খেলা

যত সামরিক প্রস্তুতিই থাকুক, ইউক্রেন একা কোনোভাবে রাশিয়ার সঙ্গে পেরে উঠবে না। এমনকি ন্যাটোর সাহায্য নিয়ে লড়তে গেলেও আত্মরক্ষা কঠিন হবে। এর বড় কারণ দেশটি ভেতরে-ভেতরে বিভক্ত সত্তা। পশ্চিমাঞ্চল যতটা রাশিয়াবিরোধী, পূর্বাঞ্চল ততটাই রাশিয়াপন্থী। এ রকম বিভক্ত অস্তিত্ব নিয়ে মহাশক্তিধর মস্কোকে মোকাবিলা কঠিন।

তা ছাড়া ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কতটা পাশে থাকবে, সেটা অনুমান করা শক্ত। ওয়াশিংটনের টার্গেট শক্তিশালী ইউক্রেন, নাকি পুতিনকে চাপে রাখা, সেটা বোঝা দুরূহ নয়। তৃতীয় সমস্যা ইউক্রেন সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ততা। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যুদ্ধ-উন্মাদনার মধ্যে তিনি সেটা আড়াল করতে পারলেও এ রকম একজন নেতার পক্ষে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পুরো দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারা কঠিন।

দীর্ঘদিন সোভিয়েত কাঠামোয় রাশিয়ার অধীন থাকায় ইউক্রেনে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছে কম। দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষের আস্থাও কম। যে কারণে নির্বাচন এলে ব্যবসায়ী, অভিনেতা ইত্যাদি পেশাজীবীরা লোকরঞ্জনবাদী কথাবার্তা বলে রাষ্ট্রের পরিচালক হয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপের ত্রিমুখী টানাপোড়েনের মধ্যে দেশকে ভূরাজনীতির খেলায় বিজয়ী করার মতো রাজনৈতিক সামর্থ্য বর্তমান নেতৃত্বের আছে বলে মনে করে না কেউই।

এর মধ্যে সবার অলক্ষ্যে রুশ-ইউক্রেন সংঘাতের বড় ফায়দা যাচ্ছে চীনের ঘরে। এ মুহূর্তে চীনের প্রায় ১৫ ভাগ আমদানি (মূলত কৃষিপণ্য) এবং ১৫ ভাগ রপ্তানি হচ্ছে ইউক্রেনের সঙ্গে। কিয়েভের প্রধান বাণিজ্যিক বন্ধু এখন তারা। আগে ইউক্রেনের সঙ্গে মূল বাণিজ্য হতো রাশিয়ার। ২০২০ থেকে সে জায়গা দখল নিয়েছে বেইজিং। আবার ইউক্রেনের মতোই রাশিয়ার সঙ্গেও তাদের বাণিজ্য বেড়েছে কয়েক গুণ।

রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিবিধ নিষেধাজ্ঞার ফায়দা পাচ্ছে বেইজিং। চীন যদিও এখানকার সংঘাতে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে কথা বলে, কিন্তু ক্রিমিয়া নিয়ে জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে চালাকি করে অনুপস্থিত থেকেছিল। যুদ্ধ বাধলেও তারা দূর থেকেই নীরবে সেটা উপভোগ করবে। ইউক্রেন-রাশিয়া ঘৃণাবাজিতেই তাদের লাভ।

সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক কারণে ইউক্রেনের জন্য ভালো বিকল্প রাশিয়ার সঙ্গে মিলেমিশে থাকা। কিন্তু রুশভাষী ও জাতীয়তাবাদী নাগরিকদের দূরত্ব বেড়ে যাওয়া, পুতিনের আগ্রাসী আচরণ এবং ওয়াশিংটনের উসকানি মিলে যুদ্ধংদেহী অবস্থা দেশটির নিয়তি হয়ে উঠেছে।

ইউক্রেনকে বিশ্বব্যাপী ঠান্ডাযুদ্ধের খুব খারাপ এক বলি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এখানকার মানুষের দুর্ভাগ্য তারা মস্কো ও ওয়াশিংটনের রেষারেষির দাবার বোর্ড হয়েছে। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী অহংয়ের এক বৈশ্বিক ট্র্যাজেডিও বলা যায় ইউক্রেন সংকটকে। জয়-পরাজয়ের যুদ্ধ নয়, বরং সমাপ্তিহীন মরণসংঘাতে মেতেছে এই অঞ্চল, যা শেষ বিচারে ফায়দা দিচ্ছে কেবল আন্তর্জাতিক সমরশিল্পকে।

আলতাফ পারভেজ ইতিহাস বিষয়ের গবেষক