গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য। ২০২০ সালে প্রথমা প্রকাশনী থেকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: কাছে থেকে দেখা’ শিরোনামে তাঁর একটি বই প্রকাশিত হয়। সেই বইয়ের ‘ছয় দফার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা’ অংশটি এখানে প্রকাশ করা হলো নুরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে।
১৯৬৯ সালের গোড়ার দিকে আমার এক বন্ধু তৎকালীন পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকের গভর্নর এম রশিদের কাছ থেকে আমি একটি বার্তা পাই। সে আমাকে জানায়, বঙ্গবন্ধু যত শিগগির সম্ভব ঢাকায় আমাকে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এর আগে কখনোই আমার সাক্ষাৎ হয়নি, এমনকি সাক্ষাতের চেষ্টাও করিনি। পাকিস্তানের পূর্ব-পশ্চিম অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিষয়ে আমার কাজ সম্পর্কে আমার বন্ধু রশিদ বিশদভাবে অবগত ছিল। পাকিস্তানের পরপর দুটি অর্থ কমিশন সম্পর্কে আমার যন্ত্রণাদায়ক ও হতাশাব্যঞ্জক অভিজ্ঞতার কথা সে জানত। আমার সন্দেহ যে রশিদই সম্ভবত আমার সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেছিল। আমি রশিদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সে বলে যে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আমার কাজ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু অবগত আছেন এবং আমি তাঁকে কীভাবে সাহাঘ্য করতে পারি, সেটা জানার জন্য তিনি নিজে থেকে আমার সঙ্গে দেখা করতে বিশেষ আগ্রহী। আমাদের দুজনেরই বন্ধু এক অবাঙালি ব্যবসায়ীর বাড়িতে আমাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের এই বন্ধুটি পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পরপরই ঢাকায় চলে আসেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতেন এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর ভালো জানাশোনা ছিল। সাক্ষাৎকালে বঙ্গবন্ধু আমাকে বোঝালেন যে তিনি বেশ কিছু বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন অনুভব করছেন, যাঁরা তাঁর স্বাধিকারের দাবি ও ছয় দফার প্রতিটি দফাকে জোরালো ও বিস্তারিতভাবে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করবেন এবং এ জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করবেন। তাঁর ধারণা যে আগামী দিনে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে কঠিন বোঝাপড়া করতে হবে। তিনি আরও বললেন যে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অর্থনৈতিক নীতিমালা রচনা ও সেসবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দান করার জন্য তাঁর যে টিম রয়েছে, আমি যেন একজন সদস্য হিসেবে তাতে যোগ দিই। আমি তাঁর আহ্বানে সাধ্যমতো সহযোগিতার আশ্বাস দিই।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে সংবিধানের খসড়া তৈরি করা। এর জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে রাজনৈতিক স্টিয়ারিং গ্রুপ বা পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়, তাতে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, খোন্দকার মোশতাক, কামারুজ্জামান, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও কামাল হোসেন।৩ সংবিধানের খসড়া তৈরি করার দায়িত্ব ছিল কামাল হোসেনের ওপর। আর পেশাজীবী বিশেষজ্ঞ দলে ছিলেন মোজাফফর আহমেদ, রেহমান সোবহান, আনিসুর রহমান, খান সরওয়ার মুরশিদ এবং আমি। বঙ্গবন্ধু আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করতেন। এ ব্যাপারে তাঁর উৎসাহের অন্ত ছিল না। আর আমরাও খসড়া প্রণয়নের সময় তাঁকে তাঁর সব চিন্তাভাবনা স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করতে বলতাম। অন্যান্য রাজনৈতিক নেতার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর পর তাজউদ্দীন ছিলেন এ ব্যাপারে সবচেয়ে কর্মতৎপর ও উৎসাহী একজন আলোচক।
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের দুই অংশ একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় (ফেডারেল) সরকার ব্যবস্থার অধীনে চলছিল। ছয় দফা কর্মসূচি সেই ব্যবস্থার আওতায় প্রচলিত অর্থে কেবল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছিল না। ছয় দফা কর্মসূচির বিস্তারিত বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি থেকে মৌলিকভাবেই ভিন্ন ছিল। এই কর্মসূচিতে বলা হয়েছিল যে শুধু প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতির বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের আওতায় থাকবে। কিন্তু বৈদেশিক বাণিজ্যের শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণ; মুদ্রা, ব্যাংকিং নীতি ও প্রতিষ্ঠান; আর্থিক নীতি (রাজস্ব, সরকারি ব্যয়সহ) এবং বৈদেশিক লেনদেনের বিষয়গুলো থাকবে প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে। একক মুদ্রা থাকলেও এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে মুদ্রা বা সম্পদ পাচার হবে না। এমনকি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগের মাধ্যমগুলোও সব আঞ্চলিক সরকারগুলোর অধীনে থাকবে।
এই বর্ণনা থেকে পরিষ্কার যে ছয় দফা কর্মসূচিতে কাস্টমস ইউনিয়ন বা অর্থনৈতিক ইউনিয়নের কথা বলা হয়নি। আমদানি শুল্ক বা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রতিটি অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন পর্যায় বা হার ও কাঠামোর কথা বলা হয়েছিল। এক অঞ্চল যদি কোনো বিদেশি পণ্য আমদানি করে, তবে সেই নির্দিষ্ট পণ্য অন্য অঞ্চলে রপ্তানি করতে পারবে না। কিন্তু দুই অঞ্চলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ পণ্যের অবাধ চলাচল থাকতে পারবে। এর কারণ যে অঞ্চলের শুল্কহার কম, সে যদি উচ্চ শুল্কহারসম্পন্ন অঞ্চলে পণ্য রপ্তানি করে, তাহলে উচ্চ শুল্কহারসম্পন্ন অঞ্চলের রাজস্ব ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি তার অভ্যন্তরীণ শিল্পকে যদি কোনো সুরক্ষা দিয়ে থাকে, তা-ও টিকবে না। এর বাইরেও, উচ্চ শুল্কহারসম্পন্ন অঞ্চল তৃতীয় দেশ থেকে সুলভ মূল্যে পণ্য আমদানি করার মাধ্যমে এক অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ পণ্যে অন্য অঞ্চলের প্রবেশাধিকার নষ্ট করে ফেলতে পারে। এ ছাড়া এই ব্যবস্থায় কোনো অঞ্চল যদি তার নতুন শিল্প খাতকে অন্য অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করতে চাইত, তাহলে সে তার শিল্প খাতের উৎপাদনসামগ্রী বা উৎপাদনে ভতুর্কি দিতে পারত। ব্যাপারটা এমন হতো যে প্রতিটি অঞ্চলই যেন একেকটি স্বাধীন দেশ। এভাবেই প্রতিটি অঞ্চল কার্যকরভাবে তার ইচ্ছেমতো অর্থনৈতিক যেকোনো খাতকে অন্য অঞ্চলের প্রবেশাধিকার বা প্রতিযোগিতা থেকে আলাদা করে রাখতে পারত। ছয় দফা কর্মসূচিতে এসব সুযোগের কথা অন্তর্নিহিত ছিল।
অঞ্চলগুলোর মধ্যে লেনদেনের ভারসাম্য উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমেই মেটানোর কথা বলা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি অঞ্চল বৈদেশিক লেনদেনের মাধ্যমে যা আয় করবে, তা যেন তার নিজের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। অন্যথায়, ঘাটতিতে থাকা অঞ্চল যদি একক মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে, তবে উদ্বৃত্ত অঞ্চল থেকে ঘাটতি অঞ্চলে সম্পদ বা পুঁজির পাচার ঘটবে। ছয় দফায় এ ধরনের সম্পদ পাচারের সম্ভাবনাকে পরিষ্কারভাবে বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল।
একইভাবে, যদি একক মুদ্রা থাকে কিন্তু একেক অঞ্চলের মুদ্রানীতি ও সুদের হার বিভিন্ন রকম হয়, তাহলে উচ্চ সুদহার অঞ্চলের বাসিন্দারা নিম্ন সুদহার অঞ্চল থেকে ধার করতে পারবে না। কারণ, এতে নিম্ন সুদহার অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণমূলক সুদ/আর্থিক নীতি নষ্ট হবে। একই সঙ্গে, প্রতিটি অঞ্চল একটি বিস্তৃত লেনদেনের ভারসাম্যের হিসাব বজায় রাখবে এবং তার দেখভাল করবে। এই হিসাবে পণ্য ও সেবা বাণিজ্যের পাশাপাশি সব ধরনের আর্থিক লেনদেনের হিসাব থাকবে। আর্থিক লেনদেনের হিসাবে বৈদেশিক ও আন্ত-অঞ্চল লেনদেনও অন্তভুর্ক্ত থাকবে। দুই অঞ্চলে একই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের যদি ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসা বা শাখা থাকে, সে ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে। উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে একক মুদ্রা কার্যত অর্থহীন হয়ে পড়ে। তার মানে শুধু নামেই একক মুদ্রা। অর্থাৎ একক মুদ্রা চালু রাখার কোনো বাস্তবিক তাৎপর্য থাকবে না। আরেকটি বিষয় থেকেও ব্যাপারটা পরিষ্কার বোঝা যায়। যদি এমন ঘটে যে একটি অঞ্চলের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি আছে, কিন্তু অন্য অঞ্চলের সে রকম ঘাটতি নেই অথবা উল্টো উদ্বৃত্ত আছে, তাহলে কী হবে? সে জন্যই প্রতিটি অঞ্চলের আলাদা বিনিময় হার থাকা দরকার। তা না হলে একক মুদ্রার ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, যেহেতু প্রতিটি অঞ্চলের স্বাধীন বা আলাদা বিনিময় হারের ব্যবস্থা নেই।
ছয় দফা কর্মসূচির আরও দুটি দিক ছিল। এই দিকগুলো কেন্দ্রীয় সরকারব্যবস্থার দুর্বলতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং এর স্থায়িত্বকে করে তুলেছিল আরও বেশি বিপন্ন। একটা দিক হলো কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়নের ব্যবস্থাবিষয়ক। অন্যটি আঞ্চলিক আধা সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার সঙ্গে সম্পর্কিত। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো স্বাধীন আয়ের উৎস ছিল না। তাকে তাই নির্ভর করতে হতো দুই অঞ্চলের আর্থিক অনুদানের ওপর। আর এই অনুদান এমন অনুপাতে হওয়ার কথা বলা হয়েছিল যেন তা পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে সংবিধানে যুক্ত করা হয়।
তবে চুক্তিতে ফাঁক রয়ে গিয়েছিল। যদি পূর্ব পাকিস্তান বলত যে সে এই ব্যবস্থায় থাকবে না এবং যেটুকু অর্থ দেওয়ার কথা সেটা দেবে না, তাহলে কী ঘটত? যদি কোনো একটি অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থা থেকে বের হয়ে যেতে চাইত, তাহলে দুই অঞ্চলকে একসঙ্গে রাখার জন্য সাংবিধানিক বিধান প্রয়োগের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের ছিল না। এই সূত্রে বলা যায় ছয় দফা কর্মসূচির বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল, যেগুলো তত বেশি পরিষ্কার করে আলোচিত হয়নি।
প্রথমত, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান যেমন আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগ দুটোতেই জনসংখ্যার ভিত্তিতে আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব রাখার কথা বলা হয়েছিল। অতএব, কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত প্রণয়ন প্রক্রিয়ার কতৃর্ত্ব থাকত পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের হাতেই। কারণ, জনসংখ্যার বেশির ভাগ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের। এর অর্থ দাঁড়াত এমন যে সশস্ত্র বাহিনীতেও পূর্ব পাকিস্তানের বেশির ভাগ অংশগ্রহণ থাকত। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর আকার, গঠন ও শক্তি নির্ধারণ এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সম্মতি নিতে হতো। এর ফলে যদি এমন পরিস্থিতি দেখা দিত যে পূর্ব পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার থেকে বের হয়ে যেতে চায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে চাইলে সেটা ঠেকানো সম্ভব ছিল। দ্বিতীয়ত, বলা ছিল যে পূর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব বেসামরিক সেনা বা আধা সামরিক বাহিনী থাকবে। এই বাহিনীর আকার, গঠন ও শক্তি নির্ধারণের কতৃর্ত্ব থাকবে সম্পূর্ণ পূর্ব পাকিস্তানের হাতেই। ফলে পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের যেকোনো সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ ঠেকাতে সক্ষম থাকবে।
ফলে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা কৌশলগত—যে দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা হোক না কেন, ছয় দফা কর্মসূচির প্রস্তাব ছিল মূলত দুটো আলাদা রাষ্ট্রকে নিয়ে একটি দুর্বল সম্মিলিত রাষ্ট্রীয় জোট। এই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে প্রস্তাবিত সংযোগ বা সম্পর্ক এতই ভঙ্গুর ছিল যে যেকোনো অঞ্চল চাইলেই তাতে ছেদ ঘটাতে পারে।
সাধারণ মানুষের কাছে এবং আপাত অর্থে ছয় দফা কর্মসূচি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের কর্মসূচি, যার মাধ্যমে পূর্ব বাংলা তার বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক আয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এ ছাড়া সরকারের আয় ও ব্যয়ের ওপরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে মুদ্রা বা পুঁজির পাচার হবে না। কিন্তু ওপরে বর্ণিত ছয় দফার বিস্তারিত বর্ণনা এবং এর অর্থনৈতিক বিধানগুলো ছিল অর্থশাস্ত্রের বিষয়। তাই সবার কাছে তা সহজবোধ্য ছিল না। ফলে বিশেষজ্ঞরা ছাড়া অন্যদের বোঝার উপায় ছিল না যে ছয় দফা আসলে স্বাধীনতার পথে বিরাট একটি পদক্ষেপ।
বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ১৯৭১-পরবর্তী পাকিস্তানের সংবিধানে এই বিষয়গুলো অন্তভুর্ক্ত করা হবে। ছয় দফা কর্মসূচির মূল বিষয়গুলো সম্প্রসারণ করার কাজ তিনি দিয়েছিলেন আমার কিছু সহকর্মী এবং আমাকে। তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠ সহযোগীসমেত তিনি ছয় দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা অনুমোদনের কাজে খুবই সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। এই বিষয়গুলোর সঙ্গে তাঁর নিজের যে লক্ষ্য বা আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেটা মিলে গিয়েছিল। সেই উদ্দেশ্য ছিল, সহজেই ভেঙে দেওয়া যায় এমন একটি প্রায় স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের সম্মিলিত জোট বা সংঘ তৈরি করা।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্ব তাদের বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় শুরু থেকেই ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিল এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের অর্থ কী। তারা বুঝতে পেরেছিল এর ফলে নামেই কেবল পাকিস্তান এক দেশ থাকবে। কিন্তু বাস্তবে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার পথে এটা হবে একটা বিরাট পদক্ষেপ। সে জন্যই বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে যখন ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন, তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি ছয় দফা বা সিক্স পয়েন্ট দাবির মোকাবিলা করবেন ওয়ান পয়েন্টের মাধ্যমে। সেটা হবে গান পয়েন্ট। তখন থেকেই পূর্ব পাকিস্তানকে দমনের ব্যাপারে পাকিস্তানের নেতারা মনস্থির করে রেখেছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর পূর্ব পাকিস্তানে অভিযানের লক্ষ্যে তাঁরা সামরিক প্রস্ত্ততি শুরু করেন, যা ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত চলে। রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য আলোচনার আড়ালে তাঁরা আসলে তাঁদের সামরিক প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
১৯৭০ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর ঊর্ধ্বতন সহকর্মীদের তত্ত্বাবধানে বিশেষজ্ঞদের কাজ গোপনে শেষ করে ফেলার কথা ছিল। আলোচনার স্থান বারবার পরিবর্তন করা হয়। আশা করা হয়েছিল যে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা এই গোপন সংবিধান তৈরির কাজটি সম্পর্কে জানতে পারবে না। সংসদ অধিবেশন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা অন্তভুর্ক্ত করে খসড়া সংবিধানের প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন, এভাবে পূর্বাঞ্চল সংসদের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে রাখবে। আর পশ্চিমাঞ্চলকে শুধু বিতর্ক এবং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সুযোগ দেওয়া হবে। পূর্বাঞ্চলের সংখ্যাধিক্যের বলে সংবিধানটিকে সংসদে গ্রহণ বা অনুমোদন করানোর আগাম পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছিল।
এ সময় আমাদের আলোচনায় কারও কারও মনে হয়েছে যে আমরা যেভাবে ছয় দফা ব্যাখ্যা করছি এবং এর যুক্তিসংগত পরিণতি হিসেবে যা ভাবছি, তার সঙ্গে খোন্দকার মোশতাক একমত নন। তিনি যেসব প্রশ্ন করতেন এবং যেসব বিষয়ের ব্যাখ্যা দাবি করতেন, তা আমাদের মধ্যে সন্দেহ জাগাত। আলোচনার একপর্যায়ে আমার মধ্যেই প্রশ্ন জাগে যে পরিচালনা কমিটির সবাই ছয় দফা দাবি পুরোপুরি বুঝতে পেরেছেন কি না এবং এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকার যে একেবারে দুর্বল এবং খুবই সীমিত ক্ষমতার অধিকারী হবে, সেটি সঠিক অনুধাবন করতে পেরেছেন কি না। আমরা তাঁদের ছয় দফা বাস্তবায়নের সুদূরপ্রসারী ফলাফলের বিষয়ে অবগত করানোর জন্য প্রচুর পরিশ্রম করি। যখন আমাদের অনুশীলন শেষ হলো, তখন জানা গেল যে ইতিমধ্যে তাঁরা সবাই বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হতে এবং তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। বঙ্গবন্ধু সবার আগে এবং খুব দ্রুত বিষয়টি বুঝতে পারেন। এর কারণ এই যে তিনি এ বিষয়ে অন্যদের চেয়ে বেশি ভেবেছেন এবং বেশি সময় ব্যয় করেছেন। বিশেষজ্ঞদের হাতে ছয় দফার সংক্ষিপ্ত বিস্তারিত হওয়ার পর অবশেষে যে রূপ লাভ করে, তা নিয়ে বঙ্গবন্ধু সন্তুষ্ট ছিলেন। পাকিস্তানের সঙ্গে অত্যন্ত শিথিল এবং সীমিত সম্পর্ক রক্ষার তাঁর যে মূল উদ্দেশ্য, তার সঙ্গে এই পরিকল্পনা সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। পরিচালনা কমিটির অন্য সব সদস্য এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর অনুগামী হতে রাজি ছিলেন। তাঁর ওপর তাঁদের পূর্ণ আস্থা ছিল। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন মোশতাক। আমাদের কয়েকজনের কাছে মনে হয়েছিল মোশতাক যেন বিষয়টির সঙ্গে নিজেকে পুরোপুরি মেলাতে পারছেন না।
১৯৭১ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে পাকিস্তানের লাহোরে একটি পত্রিকায় ছয় দফার মূল বিষয়গুলো ছাপা হলে আমরা সবাই অবাক হই। খসড়ার অনুলিপির সংখ্যা নির্দিষ্ট ছিল এবং গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য হাতে গোনা কয়েকজনকে এটি সরবরাহ করা হয়। সব অনুলিপি কামাল হোসেনের তত্ত্বাবধানে থাকত। পরিচালনা কমিটির সদস্য রাজনীতিবিদেরা এই অনুলিপি শুধু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধার নিতে পারতেন। সবচেয়ে ঘন ঘন ধার নিতেন মোশতাক এবং যে সময় ছয় দফার বিস্তারিত বিষয়গুলো ফাঁস হয়ে যায়, তখন মোশতাকের কাছে এর একটি অনুলিপি ছিল। আমাদের কেউ কেউ তাঁকে সন্দেহ করি।
কিন্তু এ বিষয়ে কেউ নিশ্চিত ছিলাম না। তবে মোটামুটি ধারণা করি যে মোশতাকের মারফতই এটি বাইরে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের গ্রুপের একজন সদস্য, যাঁর সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের লোকজনের ঘনিষ্ঠতা ছিল, তিনিই প্রথম সেখানকার সংবাদপত্রে ছয় দফা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার কথা জানতে পারেন। আমরা ছয় দফার এই অগ্রিম প্রকাশে খুবই অখুশি হই। কেননা, পশ্চিম পাকিস্তান ছয় দফা প্রস্তাবের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা আগেই জেনে যাওয়ার ফলে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে বিরোধিতা করবে এবং তারা নিজেদের জবাব তৈরি করতে সক্ষম হবে। বঙ্গবন্ধু কতৃর্ক সংসদে প্রস্তাব তোলার আগেই পশ্চিম পাকিস্তান সেটাকে ঠেকানোর পরিকল্পনা করার সুযোগ পাবে। কামাল হোসেন, রেহমান সোবহান ও আমি এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তাঁর কাছে অভিযোগ করি যে তাঁর কোনো সহযোগী সম্ভবত এই অনিষ্ট সাধন করেছেন। তিনি বিষয়টিকে রাজনৈতিক জীবনের ঝুঁকি হিসেবে গ্রহণ করলেন এবং আমাদের আশ্বাস দেন যে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। এভাবেই সে বিষয়টির পরিসমাপ্তি ঘটে।
আওয়ামী লীগের সব সদস্য ছয় দফা কর্মসূচির বিস্তারিত জেনে এর পক্ষে তাঁদের দৃঢ় অবস্থান বজায় রাখতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধু নিশ্চিত ছিলেন না। সংসদে যখন এ বিষয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে বিতর্ক উঠবে, তখন তাঁরা হয়তো পিছপা হবেন, দোটানায় ভুগবেন। পশ্চিমের সংসদ সদস্যরাও নিঃসন্দেহে পূর্বের সংসদ সদস্যদের কাউকে কাউকে লোভ অথবা ভয় দেখিয়ে তাঁদের পক্ষে টানার জন্য চেষ্টা করবেন। সেই প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা তাঁদের ছিল। এরই মধ্যে ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বিজয় উপলক্ষে ঢাকায় বিশাল এক গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে সমবেত বিশাল জনতার সামনে সংসদ সদস্যদের দিয়ে এ মর্মে শপথবাক্য পাঠ করানো হলো যে ছয় দফা ও পূর্ব বাংলার অন্যান্য দাবি আদায় করার জন্য পূর্ব বাংলার মানুষ তাঁদের যে দায়িত্ব দিয়েছে, সে ব্যাপারে তাঁরা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: কাছে থেকে দেখানুরুল ইসলামপ্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল, দাম: ২২০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বভাবজাত অনুভূতি ও প্রজ্ঞার বলে জনগণের মনের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন। ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সামরিক জান্তার হাতে অত্যাচারিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য জাতীয় নেতা ও কর্মী জেলে আটক ছিলেন। দলটি এ সময়ে দিকনির্দেশনাহীন হয়ে পড়ে। তাঁকে সেই দলীয় কাঠামো পুনরায় গড়ে তুলতে হয়। দলকে অল্প সময়ের মধ্যে পুনর্গঠনের দায়িত্ব নিতে হয় এবং দলীয় নিয়মানুবর্তিতা ফিরিয়ে আনতে হয়। ১৯৭০ সাল নাগাদ দলের সদস্যসংখ্যা প্রচুর বৃদ্ধি পায়। এই নতুন সদস্যরা পাকিস্তান আমলের নিষ্পেষণের শিকার হননি। সাংসদদের অধিকাংশই ছিলেন নতুন। ছয় দফা সম্পর্কে তাঁদের বিস্তারিত জ্ঞান এবং এই দাবির প্রতি তাঁদের অঙ্গীকার সম্পর্কেও স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া সম্ভব ছিল না। সাংসদদের জন্য খুব একটা খুশির বিষয় না হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু গণশপথের মাধ্যমে দলের প্রতি তাঁদের অবিচল আনুগত্য রক্ষার প্রতিশ্রুতি আদায় এবং তাঁদের সম্ভাব্য দলত্যাগের ঝুঁকি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেন।
সভায় গণশপথ নেওয়ার দিন রাতে আমি নবনির্বাচিত দুই সংসদ সদস্যের সঙ্গে একটা ডিনার পার্টিতে ছিলাম। তাঁদের একজন ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত আর্মি কর্নেল। বুঝতে পারলাম তাঁরা ছয় দফা দাবির অন্তর্নিহিত বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি জ্ঞাত নন। ওপরের বর্ণনা থেকে বোঝা যাবে যে বিশেষজ্ঞ নন, এমন লোকের কাছে ছয় দফার বিষয়গুলো পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা না হলে তাদের পক্ষে তা বুঝতে পারা বেশ কঠিন হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁরা মোটামুটিভাবে জানতেন যে ছয় দফার বাস্তবায়ন হলে পূর্বাঞ্চল নিজস্ব সম্পদ ব্যবহারের ও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিনিময় খাত এই উভয় ক্ষেত্রে পূর্বাঞ্চলের জন্য অধিকতর সুযোগ তৈরি হবে। ফলে পূর্বাঞ্চলের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটবে এবং অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। এমনকি পূর্ব থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে যে সম্পদের পাচার ঘটত, তা বন্ধ হবে—এত দূরও বুঝতেন। কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারেননি যে ছয় দফার বাস্তবায়ন হলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সম্পর্ক কতটা সীমিত ও শিথিল হয়ে পড়বে এবং এ কারণে পশ্চিম পাকিস্তান এই ছয় দফার কতটা বিরুদ্ধাচরণ করবে। তাঁরা বুঝে উঠতে পারেননি যে এটি পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য সম্পদ ও ক্ষমতার ক্ষেত্রে কত বড় ত্যাগ বা ক্ষতির কারণ হবে। এ অবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তান হয়তো ছয় দফা মেনে নেওয়ার চেয়ে পাকিস্তানের বিভক্তিই মেনে নেবে। কথাচ্ছলে বুঝতে পারলাম যে এই দুই নব্য সংসদ সদস্য গণশপথের বিষয়েও অসন্তুষ্ট। সাংসদদের সঙ্গে স্কুলবালকের মতো আচরণ তাঁরা মেনে নিতে পারেননি। পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করলে জনরোষের শিকার হবেন বলে প্রকাশ্য জনসমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটিকে তাঁরা মেনে নিয়েছিলেন।
পরিচালনা কমিটির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মাঝেমধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হতো, তাতে ছয় দফার ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা রকম অনুমাননির্ভর মতামত দেওয়া হতো। বঙ্গবন্ধু সব সময়ই বলতেন যে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চান না। যদি ছয় দফা আদায় করা যায়, তবে পূর্ব পাকিস্তান শাসন করার দায়িত্ব পূর্ব পাকিস্তানের ওপরই পড়বে। তেমন হলে তিনি নজরুল ইসলাম অথবা তাজউদ্দীন আহমদকে কেন্দ্রে পাঠাবেন। যদি ছয় দফা আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে তাঁর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া অর্থহীন। কেননা, তখন তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থে তাঁর প্রকৃত ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন না। পশ্চিম পাকিস্তান তাদের রাজনীতিবিদ, আমলাতন্ত্র এবং সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে অথবা তাঁকে নিষ্ক্রিয় করে রাখবে। আগেও যখনই পূর্ব পাকিস্তানের কোনো নেতা প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হয়েছেন, তখন এমনটাই ঘটেছে। এ ছাড়া পূর্বাঞ্চলের সদস্যরাও অতীতে ঐক্য টিকিয়ে রাখতে পারেননি। বিগত দুই দশকের রাজনৈতিক ইতিহাসই তার প্রমাণ। ছয় দফার মূল বক্তব্য ছিল অতীতের সাংবিধানিক ব্যবস্থা নাকচ করা। বঙ্গবন্ধু পুরোনো ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন না।