‘দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিং’—বিখ্যাত এই উপন্যাসের রচয়িতা মিলান কুন্ডেরা মারা গেছেন। ৯৪ বছর বয়সী বিশ্বখ্যাত এই চেক ঔপন্যাসিক গতকাল ১১ জুলাই প্যারিসে মারা গেছেন। উপন্যাস ছাড়াও চিত্রনাট্য, কবিতা, নাটক ও প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। ১৯২৯ সালে জন্ম নেওয়া এই চেক লেখককে ফ্রান্সে নির্বাসিত হতে হয়েছিল তাঁর লেখা ও ভিন্নমতের কারণেই। চেক ও ফরাসি ভাষায় লিখতেন। চল্লিশেরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর লেখা। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে কুন্ডেরা ফ্রান্সে বসবাস করছিলেন। ‘কেন পড়ি মিলান কুন্ডেরা’ নামে ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরির ওয়েবসাইটে ছোট এ লেখাটি লিখেছিলেন ওই গ্রন্থাগারের জে৵ষ্ঠ গ্রন্থাগারিক ড্যানিয়েল জিওর্জিয়েফ। এতে লেখক খুবই বুদ্ধিদীপ্তভাবে কুন্ডেরা পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। মিলান কুন্ডেরার মৃত্যুর পর সেই লেখার চুম্বক অংশ অনুবাদ করেছেন হুমায়ূন শফিক।
‘তিনি (মিলান কুন্ডেরা) এপ্রিল ফুল দিবসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন’—এ লেখার শিরোনামে যে প্রশ্নটি করা হয়েছে, তার সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে এটি। একজন ভিন্নমতের লেখকের জন্য এই উত্তর কতটা দুর্দান্ত, চিন্তা করা যায়! মিলান কুন্ডেরা চেকোস্লোভাকিয়ার ব্রনো শহরে ১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কমিউনিস্টদের সঙ্গে ঘন ঘন রাজনৈতিক সংঘর্ষের পর তাঁর লেখাগুলো সেদেশে নিষিদ্ধ হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবন শুরু করেন তিনি। ঔপন্যাসিক হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত হলেও চিত্রনাট্য, কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প এবং অন্যান্য লেখাও তিনি লিখেছেন।
‘দ্য জোক’, ‘দ্য বুক অব লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’ ও ‘দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিং’—মূলত এসব বই–ই তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে। বইগুলো ১৯৬৮ সালের ‘প্রাগ বসন্ত’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা। নোবেল পুরস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার মনোনীত হন তিনি; কিন্তু পাননি। ২০১৯ সালে চেক নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার পর সে বছরই তাঁর দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ‘ফ্রানৎস কাফকা পুরস্কারে তাঁকে ভূষিত করা হয়।
কুন্ডেরা যে শুধু রাজনৈতিক সাহিত্যই রচনা করেছেন তা নয়, ‘দ্য আর্ট অব দ্য নোবেল’ নামে উপন্যাসের কলকবজাবিষয়ক বইও তিনি লিখেছেন। লিখেছেন নাটকও। তাঁর উপন্যাসগুলো কীভাবে পড়া যায়, তা নিয়ে নিজেই ভেবেছিলেন কুন্ডেরা। বলেছিলেন, উপন্যাস শুধু মানসিক শান্তি ও তৃপ্তির জন্য পড়লেই হবে না।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, আমরা কেন কুন্ডেরা পড়ি? আমরা যাঁরা কমিউনিস্ট নই—যাঁদের বলা যায় চাটুকার, তাঁরা কেন কুন্ডেরা পড়ি? তাঁর লেখা আমাদের কিছুটা হলেও উন্নত মানুষ হতে সাহায্য করে। আমরা কুন্ডেরা পড়ি কারণ, আমরা কুন্ডেরা হতে চাই। অথবা সম্ভবত আমরা আমাদের জীবনের কোনো এক সময়ে কুন্ডেরাই ছিলাম।
কুন্ডেরার প্রতিটি বই লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। আমরা সেগুলো পড়ি কারণ, আমরা কী করতে চাই তা বলি না কারণ, আমরা কী করতে হবে, তা বলাকে ঘৃণা করি।