লেখক আকবর আলি খানের জায়গা-জমিন

মননশীল লেখক আকবর আলি খান প্রয়াত হয়েছেন ৮ সেপ্টেম্বর। লেখালেখি তিনি শুরু করেছিলেন ৫২ বছর বয়সে। এরপর বিচিত্র বিষয়ে একে একে লিখেছেন ১৬টি বই। লেখক হিসেবে কেমন ছিলেন তিনি? তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ সংখ্যায় থাকছে লেখক হিসেবে আকবর আলি খানের জায়গা-জমিনের অনুসন্ধান। সঙ্গে থাকছে প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী পুরানো সেই দিনের কথা নিয়ে একছত্র।

আকবর আলি খান (১৯৪৪—৮ সেপ্টেম্বর ২০২২)
 ছবি: নাসির আলী মামুন, ফটোজিয়াম।

আমি যখন আকবর আলি খানের ডিসকভারি অব বাংলাদেশ বইটি বাংলাদেশের সত্তার অন্বেষা নামে অনুবাদ করেছিলাম, তখন সত্যি বলতে, অনুরুদ্ধ হয়েই তা করেছিলাম। তিনি যখন বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) এমডিএস, সে সময় আমি তাঁর অধীন উপপরিচালক ছিলাম, তাঁর কুমিল্লা মডেল–সম্পর্কিত একটি রচনার অনুবাদ করেছিলাম, গ্রামোন্নয়নবিষয়ক একটি গবেষণা ও সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মমূল্যায়নবিষয়ক আরেকটি গবেষণার সহকারী গবেষক হিসেবে কাজ করেছিলাম। কোনো এক সভায় যখন তাঁকে ডিসকভারির বাংলা অনুবাদের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল, সেই সূত্রেই সম্ভবত তিনি আমাকে পুস্তকটি অনুবাদ করতে অনুরোধ করেছিলেন। আমার দিক থেকে সেটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানার একটি উপায়। যাহোক, আমি হয়তো বিষয়টির গুরুত্ব ততটা অনুধাবন না করেই অনুবাদকর্মে হাত দিয়েছিলাম, কিন্তু এত দিন পর আমার মনে হয়, এ ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ সম্পন্ন করে ড. খান আমাদের দেশ, জাতি ও বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের প্রতি একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন। আর আমি যে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছিলাম, সেটি আমার জন্যও আনন্দ ও গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিছুদিন আগে একটি পত্রিকা আকবর আলি খানকে সংবর্ধনা দেওয়ার অংশ হিসেবে একটি তথ্যচিত্র বানানোর উদ্যোাগ নেয় এবং সে জন্য আমার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। এতে অনেক কথার মধ্যে আমি বলেছিলাম যে আজ থেকে শতবর্ষ পরে যখন এ দেশের মানুষজন, বিদ্বৎসমাজ, সুশীল সমাজ বা আমলাতন্ত্র আকবর আলি খানকে স্মরণ করবে, তখন তারা তাঁর বইগুলোর কথাই স্মরণ করবে। তিনি যে সর্বোচ্চ পদাধিকারী বড় আমলা ছিলেন, অর্থনীতির অনেক ব্যবহারিক উন্নয়ন সাধনে কাজ করেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ছিলেন অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছিলেন—এসব কথা কেউ হয়তো ততটা মনে আনবে না। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর ভূমিকা (তাঁর আত্মজীবনী পুরানো সেই দিনের কথায় কিছুটা প্রকাশিত) এবং তাঁর লেখাজোখার জন্যই তাঁকে স্মরণ করবে।

আমার এই কথাগুলো বলার পেছনে যৌক্তিক কিছু কারণ বিদ্যমান। প্রথমত, আমার মনে হয়েছিল, আকবর আলি খান আমাদের বাংলাদেশে (মূলত পূর্ব বাংলায়) ধর্মান্তরকরণ সম্পর্কে নতুন একটি তত্ত্ব দিয়েছিলেন। আর বাংলাদেশের জাতিরাষ্ট্র গঠনে এটি যে একটি মূল উপাদান হিসেবে কাজ করেছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কিন্তু ধর্মান্তরকরণ এই এলাকাতেই কেন এত বেশি ঘটেছিল? এর যৌক্তিক, ভূপ্রকৃতিগত, আবহাওয়াগত কারণ (পানির প্রতুলতা), সামাজিক কারণ (অসংঘবদ্ধ গ্রামীণ সমাজ), প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতাপ্রিয়তা (সীমান্ত তত্ত্ব), ইত্যাদির মাধ্যমে যে বিশ্লেষণ তিনি তুলে ধরেছেন, এর জন্য ঐতিহাসিক, সমাজতাত্ত্বিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের যে ১০০ বছর পরও তাঁকে আবশ্যিকভাবে বিবেচনায় নিতে হবে, তা বারবারই আমার মনে হয়। তিনি কেবল ডিসকভারি অব বাংলাদেশ বইয়েই এ কথা বলেননি, আরও অনেক রচনাতেও বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন। যেমন বাংলায় ইসলাম প্রচারে সাফল্য: একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ, বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রসার: ঐতিহাসিক প্রশ্নসমূহের পুনর্বিবেচনা প্রভৃতি। বিদ্যমান কিছু সামাজিক-ঐতিহাসিক তত্ত্ব—যথা রিচার্ড ইটন, অসীম রায়ের তত্ত্বসহ প্রচলিত অন্যান্য তত্ত্ব—ইসলাম ধর্ম প্রচারে মুসলিম শাসকদের আনুকূল্য, ব্রাহ্মণ্যবাদের উৎপীড়ন হেতু নিম্নবর্ণের বিদ্রোহ, হিন্দু উৎপীড়নের ফলে উৎপীড়িত বৌদ্ধদের ইসলাম গ্রহণ, ধর্ম প্রচারে পীরদের অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ ইত্যাকার প্রস্তাবকে আংশিক সত্য অথবা ঐতিহাসিকভাবে বা সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে যুক্তিযুক্ত নয় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। আবার বাংলায় মুসলমানদের ধর্মান্তরকরণ সম্পর্কে যা বলেছেন, তা হলো ‘বাংলার ইসলাম প্রচারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে পূর্ব বাংলার উন্মুক্ত গ্রামের সংখ্যাধিক্য। উন্মুক্ত গ্রামে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। তাই এখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ছিল প্রবল। এখানে কেউ পীরদের সম্মোহনী শক্তিতে ও মাজেজায় অভিভূত হলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে দ্বিধা করেনি। কিন্তু যারা নিয়ন্ত্রিত সমাজে বাস করত, তাদের পক্ষে জাতিচ্যুতি ও একঘরে হওয়ার ভয়ে ইসলাম গ্রহণ সম্ভব ছিল না।’ আকবর আলি খান আরও লিখেছেন ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বাংলাদেশের মানুষের জন্য একই সঙ্গে ছিল আশীর্বাদ ও অভিশাপ। আশীর্বাদ কারণ, তারা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ধর্ম বেছে নিতে পেরেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অভাব রাজনীতিতে দুর্বলতার সৃষ্টি করেছে।

দ্বিতীয় যে কারণে খান সাহেবের লেখাজোখা গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘস্থায়িত্বের দাবিদার, তা হলো ‘ইকোনমিকস অব আলট্রুরইজম’। এই নামে তিনি একটি পুস্তকই রচনা করেছেন পরার্থপরতার অর্থনীতি নাম দিয়ে। বইটি আমরা সবাই উপভোগ করেছি লেখকের সরস গদ্য ও বিষয়বৈচিত্র্যের জন্য। এর কয়েকটি অধ্যায়ের কথা তো বিশেষভাবে বলতে হয়, ‘শুয়োরের বাচ্চার অর্থনীতি’, ‘মোল্লা নাসিরুদ্দিনের অর্থনীতি’, ‘সোনার বাংলা: অর্থনীতি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত’ ইত্যাদি। কেউ চাইলে রম্যরচনা পড়ার মতো করে এই বই পাঠ করতে পারেন। আমরা যারা অর্থনীতির ছাত্র নই, অনেক সময় তারা হয়তো বুঝতে পারি না যে রসিয়ে রসিয়ে অনেক কথা বলে তস্করের মতো মনের ভেতরে ঢুকে অন্য একধরনের অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত, তথা পরহিতব্রতের পথ আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন আকবর আলি খান। অর্থনীতিবিদ্যা বিভাগের সঙ্গে অপরিচিতির কারণে আমি জোর দিয়ে বলতে পারছি না, তবু বলি, ‘উন্নয়ন অর্থনীতি’ নামে যে অর্থনীতির বিদ্যা বিভাগ আছে, তা থেকে পরহিতব্রতের অর্থনীতির এই উপবিভাগ বোধ হয় একটু আলাদা—এটি কেবল বৌদ্ধিক স্তরেই কাজ করে না, জনমঙ্গল সাধনের অঙ্গীকারের স্তরেও কাজ করে।

পরার্থপরতার অর্থনীতিতে ড. খান ‘শুয়োরের বাচ্চার অর্থনীতি’ নামে একটি অধ্যায় যুক্ত করেছেন, যা আগেই উল্লেখ করেছি। এই নাম তিনি নিয়েছিলেন মাইকেল ক্যারিট নামের এক ইংরেজ সিভিলিয়ানের টাঙ্গাইল মহকুমায় তাঁর আমলাতান্ত্রিক কার্যক্রমের স্মৃতিকথাধর্মী বই থেকে। বইটির নাম আ মোল ইন দ্য ক্রাউন। এর একটি অনুবাদ বেরিয়েছে সম্প্রতি কলকাতা থেকে, গন্ধমূষিক পুরাণ নামে। এই বইয়ে ক্যারিট একজন ইংরেজ সিভিলিয়ান, এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হওয়ার কথা লিখেছেন। ব্যবসায়ী লোকটি তাঁকে বলেছিলেন, তিন ধরনের সরকারি কর্মচারী আছেন—এক ধরনের আছেন, যাঁরা ঘুষ খান না, কিন্তু যথারীতি দায়িত্ব পালন করেন; আরেক ধরনের আছেন, যাঁরা ঘুষ না পেলে কাজ করেন না; আর তৃতীয় ধরনের কর্মচারী যাঁরা, তাঁরা হলেন ‘শুয়োরের বাচ্চা’, তাঁরা ঘুষ নেন বটে, কিন্তু কোনো পরিষেবা দেন না, কোনো কাজ করেন না। মাইকেল ক্যারিট যাঁদের ‘শুয়োরের বাচ্চা’ বলেছেন এবং তাঁর সূত্রে ড. খান নিজের বইয়ে যেসব চরিত্রের কথা উল্লেখ করেছেন, আমলাতন্ত্রে কাজ করে তাঁদের অনেককেই আমি কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আবার সরকারি সেবাবঞ্চিত হয়েও তাঁদের দেখেছি। তাঁদেরকে সবাই-ই চেনেন। বর্তমান বাস্তবতার আলোকে আকবর আলি খান এই শ্রেণিকে কেবল প্রকাশ্য আলোতে মেলে ধরেছেন। বইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘নিজেদের দুর্নীতি হ্রাসে সরকারি কর্মচারীদের কোনো আগ্রহ নেই, তাদের অনেকেই হচ্ছে দুর্নীতির পোষক।’ দুর্নীতি একটি চিরকালীন সমস্যা। তার বিরুদ্ধে যে সব সময় যুদ্ধ জারি রাখতে হবে, বিষয়টি খান সাহেব ঐতিহাসিক সূত্র, বাস্তব অবস্থা ও নিজের অভিজ্ঞতা থেকে প্রামাণ্য আকারে তুলে ধরেছেন। তাই আমার ধারণা, পরার্থপরতার অর্থনীতি নামাঙ্কিত বইয়ের প্রাসঙ্গিতা আরও বহুদিন থাকবে।

প্রথমা প্রকাশন ও ইউপিএল থেকে প্রকাশিত আকবর আলি খানের কয়েকটি বই

কোনো এক লেখায় আমি বলেছিলাম, তিনটি প্রধান সমস্যা আকবর আলি খানকে সব সময় তাড়া করেছে ফিরেছে। প্রথমত, আমাদের দেশ ও জাতির আলাদা ও সুস্পষ্ট পরিচিতি; দ্বিতীয়ত, দারিদ্র্য; তৃতীয়টি হলো অব্যবস্থাপনা (এর সঙ্গে নৈতিকতার নিম্নমান তো রয়েছেই)। তাই তিনি আমাদের ইতিহাস, পূর্বপুরুষদের ধর্মান্তরকরণ, দারিদ্র্য ও তার নিরসন এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু পুস্তক রচনা করেছেন। একবার কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, (নিশ্চিতই তা তাঁর ইতিহাসপাঠের ধারণাসঞ্জাত) আমরা যে পরাধীন হয়েছিলাম, তা আমাদের সমরশক্তির অভাবে নয়, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে। যে ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়, তা-ও সেই ব্যবস্থাপনারই দুর্বলতা। সাম্প্রতিক কালে লেখা তাঁর বই দারিদ্র্যের অর্থনীতি: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আমাদের এই দারিদ্র্যের কারণ ও সে অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায়গুলো খুঁজে দেখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া আলোচ্য বইয়ে ব্যবস্থাপনার যে দুর্বলতার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন, তার বিশদায়ন করেছেন ইংরেজিতে লেখা তাঁর অন্য আরেকটি বই গ্রিশামস ল সিনড্রোম অ্যান্ড বিয়ন্ড: অ্যান অ্যানালাইসিস অব দ্য বাংলাদেশ ব্যুরোক্রেসিতে। গ্রিশামের সূত্রটি আসলে কী? সেটি হলো, খারাপ মুদ্রা ভালো মুদ্রাকে বাজারের সঞ্চলন থেকে বের করে দেয়। কেউ যদি এই সূত্রের অভিজ্ঞতাবাদী বিশ্লেষণ করতে চান, তবে তিনি বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র বেছে নিতে পারেন।

রাজনীতির আলোচনা কি বাদ পড়েছে আকবর আলি খানের লেখায়? একদমই না। অবাক বাংলাদেশ: বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি নামে যে বই তিনি লিখেছেন, তা আমাদের আলোড়িত না করে পারে না। মৃত্যুর সপ্তাহ দুয়েক আগে আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদের আয়োজনে আবুল মনসুরের আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর বইটির পর্যালোচনা করে একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন আকবর আলি খান। সেখানে তিনি বলেছিলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে লেখালেখি করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন, আদতে তিনি আবুল মনসুর আহমদের গণতন্ত্রের দাবিগুলোরই পুনরাবৃত্তি করে চলেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতি যে বিচিত্র ছলনাজালের রাজনীতি, তা থেকে উত্তরণের জন্য যে সত্যিকার গণতন্ত্রের প্রয়োজন, জীবনের শেষ বক্তব্যে সেদিন কথাটি জোর দিয়ে বলেছিলেন তিনি।

এই লেখকের আরও দু-একটি বইও দীর্ঘকাল আলোচনায় থাকবে এবং তর্কবিতর্কের খোরাক জোগাবে বলে মনে হয়—দুর্ভাবনা ও ভাবনা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এবং চাবিকাঠির খোঁজে: নতুন আলোকে জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’। একটি রবীন্দ্রনাথকে বিষয় করে আর অন্যটি লেখা হয়েছে জীবনানন্দ দাশের কবিতার এক চিত্তাকর্ষক বিষয়কে উপজীব্য করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বাংলাদেশে যেসব বিতর্ক বিদ্যমান—তিনি মুসলিমবিদ্বেষী ছিলেন কি না, মুসলমানদের উন্নয়নে অবদান রেখেছিলেন কি না, পৌত্তলিক ছিলেন কি না, সাম্রাজ্যবাদের সহযোগী-সমর্থক ছিলেন কি না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বাধা দিয়েছিলেন কি না, জমিদার হিসেবে শোষক ও অত্যাচারী ছিলেন কি না; এমনতর বহুবিধ প্রশ্নের স্পষ্ট বিশ্লেষণ আকবর আলি খান হাজির করেছেন দুর্ভাবনা ও ভাবনা বইটিতে। অন্যদিকে চাবিকাঠির খোঁজে বইটিতে ‘বনলতা সেন’ নিয়ে যে বিশ্লেষণ তিনি উপস্থাপন করেছেন, তা যেমন বিতর্ক উদ্রেককারী, একইভাবে কৌতূহলোদ্দীপকও। এই দুই বইয়ের কেন্দ্রে সাহিত্য ও সাহিত্যিক থাকলেও তিনি এসব বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন সমাজ, ইতিহাস ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের নিরিখে। লেখক হিসেবে আকবর আলি খানের মূল কৃতিত্ব বোধ হয় এখানেই যে লেখালেখি করতে গিয়ে তিনি একমাত্রিক পথে হাঁটেননি; নির্দিষ্ট বিষয়ে আবদ্ধ থেকে ওই বিষয়কে দেখেছেন সমাজ, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনীতি, সাহিত্য ইত্যাদি বহুমাত্রিকতার আলোকে।

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিবর্তন ও পরিচিতির সমস্যা, দারিদ্র্য থেকে উত্তরণ, ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, আমলাতন্ত্র ও রাজনীতির সমস্যা, রাষ্ট্রের মূল দর্শন তথা গণতন্ত্রের সমস্যা—এসবই আকবর আলি খানের লেখার মূল বিষয়বস্তু। ফলে বাংলাদেশের সমাজ, ইতিহাস, রাজনীতি ও জনমানসের মন বুঝতে হলে এই লেখকের লেখার দিকে আমাদের ফিরে ফিরে তাকাতেই হবে।

আকবর আলি খানের বইগুলো কিনতে ভিজিট করুন: prothoma.com