ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষা পরিস্থিতি নিয়ে লেখার অনুরোধ আসে, যেহেতু এই মাসেই ভাষা নিয়ে যত আলোচনা, তার প্রায় সব আমরা সেরে ফেলি। কিন্তু এবার সম্পাদকের অনুরোধ সাহিত্য পরিস্থিতি নিয়ে লেখার। বিষয়টাকে নানাভাবে দেখার সুযোগ আছে। আমি দেখব ডিজিটাল প্রযুক্তির, পণ্য আগ্রাসন ও চমকের এবং দৃশ্যমানতার এই যুগের দৃষ্টিকোণ থেকে, যেহেতু দেখার (এবং দেখানোর) চর্চা যত বাড়বে, বিকল্প-বাস্তব বা ‘হাইপার-রিয়েলিটি’র দাপট যত শক্তি পাবে, প্রযুক্তির ব্যবহার যত ব্যাপক হবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যত সার্বভৌম হবে, তত সাহিত্য পরিস্থিতির নতুন নতুন সমীকরণ তৈরি হবে। এর কিছু এখনই স্পষ্ট হচ্ছে। যাঁরা অ্যান্ড্রয়েড ফোন অথবা ইন্টারনেট সংযুক্ত কম্পিউটার ব্যবহার করেন, তাঁরা অ্যালগরিদমের অযাচিত ভয় ধরানো আর নাক গলানোর প্রমাণ পেয়েছেন। সম্প্রতি চ্যাটজিপিটি (এবং এর গুগল সংস্করণ বার্ড) আলোচনায় এসেছে, মুহূর্তে মানুষের বুদ্ধি পড়ে ফেলে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর নিয়ে হাজির হওয়ার তার শক্তির কারণে। প্রশ্ন উঠছে, চ্যাটজিটিপি যদি একমুহূর্তে শেক্সপিয়ারের একটা সনেটের বিনির্মাণবাদী ব্যাখ্যা হাজির করতে পারে, তাহলে সে নতুন একটা সনেট লিখে ফেলতেও পারে কি না? এর উত্তর আমার কাছে নেই। কিন্তু আমি যা দেখতে পাচ্ছি: যেভাবে বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ হচ্ছে, একসময় তার হাতে সাহিত্য সৃষ্টির দায়টা পড়তেও পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি এক লাখ পাঠকের মনঃ তুষ্টির রসায়নটি কবজা করতে পারে, ভাষার সব প্রকাশ আত্মস্থ করতে পারে, তাহলে হয়তো সে জনপ্রিয় সাহিত্যকে এমন এক মাত্রায় নিয়ে যাবে, যার আকর্ষণ হবে অপ্রতিরোধ্য। হয়তো ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিকল্প বুদ্ধিমত্তা হিসেবে আবির্ভূত হবে, বিকল্প সৃষ্টিশীলতাও তার অধিকারে আসবে। ফলে বইমেলায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পাঠক তার লেখা বই কিনবেন।
এই চিত্র এখনো ভবিষ্যতের এবং এর প্রকাশ বাংলাদেশের বাস্তবতায় মূর্ত হওয়া অনেক দূরের ব্যাপার। তাই এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়াটা মুলতবি রেখে বরং বর্তমান সাহিত্য পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়া যাক।
প্রথমেই দুটি কথা সেরে নেওয়া যায়। ওপরে যে ছবিটি আমি দিলাম, ৪০ বছর আগে তা কাউকে দেখালে নিশ্চয় বলা হতো, এটি নিছক একটা কল্পকাহিনি। এখন তা কেউ বলবে না। অর্থাৎ ৪০ বছরে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। আমি পরিবর্তনকে, এমনকি চ্যাটজিটিপি অথবা বার্ডকে খোলামনেই দেখি। যে দুর্ভাবনা অনেকে এটি নিয়ে করছেন, দেখা যাবে, তার সমাধানও প্রযুক্তি এবং আমাদের সৃষ্টিশীল চিন্তা দিয়ে আমরা হয়তো শিগগিরই করে ফেলব। নতুন কিছু দরজায় এসে দাঁড়ালে দরজা বন্ধ করে রেখে লাভ নেই; বরং তাকে ভেতরে ডেকে, তার সঙ্গে কথোপকথনে লিপ্ত হয়ে, তার শক্তিটা জেনে নিয়ে সেটি কাজে লাগানোটাই উত্তম।
সাহিত্যও আমাদের তা-ই শেখায়। সে জন্য সাহিত্য পরিস্থিতি যত জটিল হোক, জটিলতার সূত্রগুলো বুঝে নেওয়ার চেষ্টাও এই সাহিত্যই আমাদের করতে শেখায়।
শুরুতে দৃশ্যমাধ্যম ও দেখা/দেখানোর, ডিজিটাল প্রযুক্তি, পণ্যমনস্কতা ইত্যাদি যেসব বিষয়ের কথা আমি তুলেছি, তাদের প্রভাব আমাদের সাহিত্যে ইতিমধ্যেই পড়ছে। পশ্চিমে ষাট-সত্তরের দশক থেকে উত্তরাধুনিকতার যে ঢেউ জেগেছে, তাতেও শক্তি জুগিয়েছে এই বিষয়গুলো। উত্তরাধুনিক সাহিত্য এখন প্রায় সবখানেই লেখা হচ্ছে, চর্চা আমাদের দেশেও হচ্ছে। উত্তরাধুনিকতার প্রকাশ ও চর্চা এখন স্থাপত্য, চিত্রকলা ও অন্য অনেক ক্ষেত্রেও আধুনিকতাবাদের পুঁজিসংশ্লিষ্টতা, ক্ষমতাকেন্দ্রিকতা ও পশ্চিমের চিন্তাদর্শনের সঙ্গে গভীর সংযুক্তির বিষয়গুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এর বিষয় ও প্রকরণ, ভাষা ও শৈলীকে পাল্টে দিয়ে উত্তরাধুনিক সাহিত্য একটা বিকল্প উপহার দিচ্ছে। আমাদের সমাজেও কেন্দ্রিকতা, নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি বাড়ছে, পুঁজি অতি আগ্রাসী হচ্ছে। হয়তো এসবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য সাহিত্য যখন এগিয়ে আসে, তখন অপ্রথাগত চিন্তা, অপরিচিত ভঙ্গি, কাঠামো ও ভাষা হবে এসব পরাস্ত করার একটা কার্যকর উপায়। তবে স্বীকার করতেই হবে, এই সময়ে দৃশ্যমাধ্যম ও ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে (এবং এদের মাধ্যমে) সাহিত্যের একটি নতুন ঢেউয়ের যে সৃষ্টি হয়েছে, তার নিবন্ধগুলোও ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা যাক।
ফরাসি তাত্ত্বিক ও সমালোচক রোলাঁ বার্থ তাঁর এস/জেড (১৯৭০) গ্রন্থে সাহিত্যকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন: পাঠককেন্দ্রিক ও লিখনকেন্দ্রিক। প্রথমটি হচ্ছে সেই সাহিত্য, যা বোঝার জন্য পাঠককে বেগ পেতে হয় না, অর্থাৎ এর পঠন এর নানা উদ্দেশ্যের মতোই অজটিল। দ্বিতীয়টি হচ্ছে সেই সাহিত্য, যার নানা অর্থ উদ্ধার করতে পাঠককে পরিশ্রম করতে হবে, প্রশ্ন করতে হবে, অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ায় পাঠককে একটা ভূমিকা রাখতে হবে। মোটাদাগে আধুনিক-পূর্ব সাহিত্য পড়বে প্রথম শ্রেণিতে, আধুনিক সাহিত্য পড়বে দ্বিতীয় শ্রেণিতে। আমার ধারণা, বার্থ তাঁর এই চিন্তা যদি
এখন উপহার দিতেন, তাহলে তৃতীয় একটি ধারা তিনি যোগ করতেন, তা হচ্ছে দেখনকেন্দ্রিক, অর্থাৎ যে সাহিত্যে চিত্রকল্প-উপমা ইত্যাদির চিরাচরিত উপস্থিতির বাইরে এমন সব দৃশ্যকল্প উপস্থিত, যাতে অনুভব ও অনুধ্যানের চেয়েও দৃশ্যের মাধ্যমে বিষয়বস্তু প্রকাশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৮০ সালে যখন মিউজিক ভিডিও (যেমন এমটিভি) সংগীতকে দৃশ্যমান করল, বোঝা গেল, শিল্পের রূপবাদী বিবর্তনের দিন শুরু হয়েছে। একসময় গ্রাফিক উপন্যাস বাজারে এলে এটিও একই বার্তা দিল। কিন্তু বাংলাদেশে দেখন-সাহিত্য এখনো দৃশ্যমান হয়নি। তবে প্রযুক্তি-তাড়িত দৃশ্যমানতা যতই শক্তি পাবে, তত তা অনিবার্য হবে।
দেখন-সাহিত্যের যেটুকু আদল এখানে দেখা যাচ্ছে, তা প্রধানত লেখকদের এই ভাবনাকে ধারণ করে যে তাঁদের এবং তাঁদের বইকে পাঠকের দৃষ্টিগোচর করতে হবে। বিজ্ঞাপন সব সময় সেই কাজটি করে, প্রচারও। ফেব্রুয়ারি মাসে পত্রপত্রিকা ও এগুলোর সাহিত্য পাতাজুড়ে বইয়ের যে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়, তার একটি উদ্দেশ্য বইয়ের সঙ্গে লেখককে পাঠকের দৃষ্টিতে স্থান দেওয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখকেরা আরও খোলাখুলিভাবে আত্মপ্রকাশ করেন। যিনি করেন না, তিনি প্রান্তে থেকে যান। যিনি যত বেশি করেন, তিনি তত পাঠকের দৃষ্টিতে থাকেন। তবে এসবের বাইরেও দেখন-সাহিত্যের একটি পরিচয় এর অন্তর্গত দৃশ্যমনস্কতা (যাকে ইংরেজিতে ‘ভিজ্যুয়ালিটি’ বলা যায়)। অনেক পাঠক এখন দেখতে চান, দেখাটা তাঁদের কাছে পড়াকে ছাড়িয়ে যায়, তা ছাড়া সাহিত্যের ভাষা, শৈলীগত বিভিন্ন প্রয়োগকৌশলে দৃশ্যের অনুভবটি মূর্তমান।
জন বার্জার যেমন বলেছেন, দেখার অনেক উপায় আছে। সমাজকে, পৃথিবীটাকে দৃশ্যমনস্ক সাহিত্য একসময় ক্যামেরার লেন্সের ভেতর দিয়েও দেখে, অনেক সময় লেন্সে লাগিয়ে। ফটোশপের কল্যাণে যেমন বাস্তব বদলে যায়, সাহিত্যের এই দেখন-উপায়ও বাস্তবের নানা বদল ঘটায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক উত্তরাধুনিক সাহিত্যিক, যেমন ডন ডিলিলো বা টমাস পিঞ্চন হামেশাই তা করেন। এই উপায়টি আমাদের এই সময়ের সাহিত্যে একেবারে অনুপস্থিত নয়। কিন্তু যা অনেক লেখকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিজেদের দেখানোটা যেন যা তাঁরা লিখছেন, তা দেখানোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। ফেসবুকে যেভাবে আত্মপ্রচারে নামেন কিছু লেখক, যেভাবে পুরস্কার পাওয়ার দৌড়ঝাঁপে অনেকে শামিল হন, তাতে বোঝা যায়, আত্মরতির বিষয়টি এখন লেখকের সাহিত্য সৃষ্টির আনন্দকেও যেন ছাপিয়ে যায়। এই প্রবণতা যে বাড়বে, তা বলা যায়; কারণ, দৃশ্যমাধ্যমের নতুন নতুন রূপ গ্রহণ এটিকে অনিবার্য করবে। তাহলে কি বলা যাবে, দেখন-সাহিত্য এমনই এক সাহিত্যযুগ নিয়ে আসবে, যখন লেখক নিজে পাঠকের খোঁজে নামবেন, পাঠক আর লেখককে খুঁজবেন না এবং যে লেখক যত বেশি প্রচার পাবেন, তাঁর বই তত বিক্রি হবে, অথচ আত্মপ্রচারবিমুখ, নিভৃতচারী কোনো মেধাবী লেখক পাঠকের কাছে অনাবিষ্কৃতই থেকে যাবেন?
যে কাজ প্রকাশকের করার কথা, সেটি যদি লেখক করেন, অর্থাৎ বইয়ের বিপণন, তাহলে তিনি বাজারের ফাঁদে পড়ে যেতে পারেন এবং তিনি সেই সাহিত্য হয়তো রচনা করবেন না, যা পাঠককে ভাবায়, অস্বস্তিতে ফেলে, প্রতিবাদী করে, তাঁর ভেতরে ক্রোধ জাগায়। সেই সক্রিয় পাঠক সংখ্যায় খুব বেশি নন, কিন্তু তাঁরাই সাহিত্যকে সপ্রাণ রাখেন, লেখককে উৎসাহ জোগান। লোকপ্রিয়তাকে অভীষ্ট করলে বার্থীয় পাঠককেন্দ্রিক সাহিত্যই তা হয়ে দাঁড়াবে, লিখনকেন্দ্রিক সাহিত্য হবে না, যার একটি বলিষ্ঠ ধারা গত শতাব্দীর পাঁচ ও ছয়ের দশক থেকে বাংলা সাহিত্যের মূলভূমি রচনা করে। ঔপন্যাসিক রশীদ করিম তাঁর বড়ই নিঃসঙ্গ (১৯৮৫) উপন্যাসটি নিয়ে একটি কথা বলেছিলেন এক আলাপচারিতায়, যা এখনো মনে গেঁথে আছে, ‘লেখাটা আসে বিশ্বাস থেকে, অন্তত একজন পাঠকের মনটা জাগাতে যে পারি, সেই বিশ্বাস থেকে।’ স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, মন জাগানোর বিষয়ে দেখন-সাহিত্য কী করবে? যেহেতু দেখায় অভ্যস্ত পাঠক চমকেও অভ্যস্ত হবেন, সেই চমকই হয়তো তাঁরা ওই সাহিত্যে চাইবেন।
লিখন-সাহিত্য পাঠক সৃষ্টির কাজটিও করে। আসলে পাঠক নানা বিষয়েই ভাবেন। সেসব ভাবনা তাঁর মনে বিচিত্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই প্রতিক্রিয়ার নিষ্পত্তি বা নিষ্পত্তির সম্ভাবনা তিনি তো সাহিত্যেই খুঁজবেন। দৃশ্যমাধ্যম প্রবলভাবে উপস্থিত হওয়ার এবং আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বাজারের হাতে চলে যাওয়ার আগে (নব্য উদারবাদী শিক্ষা খোলাখুলিভাবে বাজারের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা চায়, যে কারণে দর্শন ও ইতিহাস এই শিক্ষায় অনাকাঙ্ক্ষিত), পাঠক লেখককে খুঁজে বের করে তাঁর বই পড়তেন, স্কুল-কলেজে লাইব্রেরি থাকত, পরিবারগুলোতে বইয়ের সংগ্রহ থাকত। জনপ্রিয় সাহিত্য সব যুগেই থাকে, থাকাটা স্বাভাবিক, কিন্তু জনপ্রিয়তাকে লক্ষ্য মেনে লিখতেন, তেমন সাহিত্যিক কয়েকজনই মাত্র থাকতেন। এই চমকের, দেখা ও দেখানোর যুগে, জনপ্রিয়তার আশা অনেককেই করতে দেখি। পশ্চিমেও এই প্রবণতা আছে।
গত তিন দশক থেকে দেখা যাচ্ছে, সাহিত্য উৎসব বা ‘লিট ফেস্ট’-এর সংখ্যা প্রচুর বেড়েছে। ঢাকায় একটি হয়, কলকাতাতে তিন-চারটি হয়। এগুলোতে ডাক পড়ে তারকা সাহিত্যিকদের, তাঁদের দেখতে পাঠক ভিড় জমান। অনেক লেখক তাঁদের উপস্থিতির চড়া অঙ্কের সম্মানী দাবি করেন। লিট ফেস্টগুলো সাহিত্যের জন্য কতটা জরুরি, তা ছাপিয়ে সাহিত্যিক ও প্রকাশকদের জন্য কতটা সহায়ক, সে প্রশ্ন ওঠে। হয়তো লেখকের দৃশ্যমানতা একসময় একটা শর্তই হয়ে দাঁড়াবে, কে জানে।
আমাদের সাহিত্য পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে বসলে কয়েকটি প্রশ্ন মনে জাগে, যেমন এ সময়ের সাহিত্য কি কোনো বিষয়ে প্রতিবাদী অবস্থানে যায়? সামাজিক অনাচার, রাষ্ট্রের নানা অনধিকার চর্চা উগ্রপন্থা, বাক্রুদ্ধতা এবং পশ্চাৎপন্থী নানা মতাদর্শের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটা অবস্থান গ্রহণ করে, নাকি একটা গা বাঁচানো ভাব বজায় রেখে চলে? বিপ্লবী নতুনদের আগমন কি ঘটছে, নাকি স্থিতাবস্থার পুনরাবৃত্তি চলছে? সাহিত্য অবশ্যই বিপ্লব ঘটায় না, কিন্তু তাতে সমর্থন দেয়, পরিবর্তনের পক্ষে পাঠককে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের যেসব কবি-সাহিত্যিক সাম্প্রদায়িকতা, মানুষের অধিকারহীনতা, নারীদের অবদমনের বিরুদ্ধে লেখেন, তাঁদের সংখ্যা কম নয়, কিন্তু যে–সংখ্যক পাঠকের তাঁদের বই পড়ার কথা, এই দেখন-যুগে ততসংখ্যক পাঠক তাঁদের প্রতি আগ্রহী হন না। এই পাঠকদের আমাদের শিক্ষাক্রম ও পরিবার তৈরি করতে পারেনি; যত তাঁরা দেখন-মাধ্যমের কবজায় চলে যাবেন, সেই সম্ভাবনাও তত সুন্দর হয়ে যাবে। আর এই ২৪/৭ নজরদারি আর আড়ি পাতার যুগে অনেক লেখক হয়তো এমন কিছু বিষয় নিয়ে লিখতে দুবার ভাবেন, যেগুলো রাষ্ট্রের, বৃহত্তর সম্প্রদায় ও বাজারনিয়ন্তাদের পছন্দ নয়। তারপরও আমাদের সাহিত্য পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্টির তেমন কোনো কারণ নেই। গত তিন-চার বছর আমি অনেকগুলো উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ পড়েছি; কবিতাও। অনেক তরুণ লেখককে আবিষ্কার করেছি। তাঁদের লেখায় নতুন চিন্তা আছে, অন্তর্দৃষ্টি আছে, জিজ্ঞাসা আছে। তাঁদের পাঠক হয়তো কম। তবে সেসব পাঠকের একটা গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা বা ‘ক্রিটিক্যাল ম্যাস’ যখনই তৈরি হয়, চিন্তার সক্রিয়তা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন তখন সূচিত হয়। ফলে চমকের সাহিত্যও থাকবে, দেখন-যুগের সূত্র মেনে অনেক লেখক হয়তো চমকে সমর্পিত হবেন, কিন্তু মন জাগানোর কাজটাও একই সঙ্গে চলবে এবং তা হবে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য একটা সমীকরণ।
● সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ।