>উর্দু কবি মির্জা গালিবের জীবন বিচিত্র। জীবদ্দশায় তাঁর নিন্দুক কম ছিল না। গালিবের বিরুদ্ধে নানা কথা বলতেন তাঁরা। সেসব নিয়ে আছে বিচিত্র কাহিনি। আজ কালজয়ী এই কবির জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে বইপত্র ঘেঁটে তাঁর নিন্দুকদের সম্পর্কে জানাচ্ছেন জাভেদ হুসেন।
মির্জা গালিবের কবিতা নিয়ে তাঁর সময়ের কবি সমালোচকেরা শুরু থেকেই মুখর ছিলেন, প্রায়ই নিন্দা-মন্দ করতেন। এমন যে হতে পারে তা বুঝতে পেরেছিলেন মীর তকি মীর। গালিবের বয়স তখন সবে বারো কি তেরো। আট বছর বয়সেই কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন গালিব। সেই কবিতা ছিল ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে। তাঁর একটা কবিতা নিয়ে একজন দেখালেন মীর তকিকে। মীর তকি সে কবিতা পড়ে গম্ভীরভাবে বলেছিলেন, এই ছেলে যদি কোনো ভালো ওস্তাদ পায় তো অসাধারণ কবি হবে, নইলে প্রলাপ বকা শুরু করবে। তবে কাউকে ওস্তাদ মানার লোক ছিলেন না গালিব। তিনি ধ্রুপদি কবিদের কবিতা পড়লেন। তাঁদের গুরু মেনে নিজের কবিতার পথরচনা শুরু করলেন।
কবিতা লিখতে গিয়ে তাঁর মনে হলো—কী লেখা হচ্ছে এসব চারপাশে! এ তো শুধু শব্দ নিয়ে ছেলেখেলা! কবিতা লেখার নতুন ধারণা নিয়ে এলেন তিনি। বললেন, প্রচলিত ব্যবহারে ও প্রাত্যহিকতায় জীর্ণ হয়ে যায় শব্দ। এই জীর্ণ শব্দ জীবনের প্রবহমান অর্থ ধরতে পারে না। এর জন্য দরকার শব্দের মাঝে নতুন অর্থ সৃষ্টি করা। একজন কবিকে মানসগুরু বলে মানতেন গালিব—ফারসি কবি বেদিল। তাঁর জন্ম পাটনায়। মা ছিলেন বাঙালি। তিনি ভারতীয় ধারায় ফারসি কবিতা লেখায় অন্যতম সিদ্ধ কবি। এই ধরনকে বলা হতো সবকে হিন্দি। ইরান দেশের লোকেরা একে মোটেই আমলে দিত না। বলত, এই কবিতা অতি জটিল। যাহোক, গুরু বেদিলের কাছ থেকে ধার করে গালিব বলতেন:
‘আমি যখন কবিতা বলব বলে
উঠে দাঁড়াই
শব্দেরা ভিক্ষাপাত্র নিয়ে বলে,
আমায় কিছু অর্থ ধার দাও।’
এমন ভাবনা সহজে মেনে নিতে পারলেন না গালিবের কালের কবিরা। গালিবের কবিতা তাঁদের কাছে দুর্বোধ্য মনে হলো। মীর আর মির্জা বলতে বোঝায় দুই অতিকায় কবি মীর তকি মীর আর মির্জা রফি সওদা। তাঁদের কথা বলেই গালিবকে নিয়ে ব্যঙ্গ করলেন এক কবি:
‘মীরের কবিতা বুঝি
মির্জার বয়ানও বুঝলাম
আপনার কবিতা গালিব, আপনি নিজে নয়তো খোদা বোঝেন।’
প্রথম দিকে গালিব অবশ্য এসব নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। বলতেন:
‘প্রতিদান আশা করি না,
প্রশংসার পরোয়া করি না
আমার কবিতার মানে
না থাকলে না থাকুক।’
নিজেকে তিনি মনে করতেন ফারসির বড় কবি। উর্দু নিয়ে তেমন আগ্রহ তিনি দেখাননি। আদতে তিরিশ বছরের পর উর্দু কবিতা লেখা ছেড়েই দিয়েছিলেন গালিব। শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর তাঁকে সভাকবির চাকরি দিয়েছেন। বাদশার কবিতা দেখে দিতে হয়, আসরে কবিতা পড়া চাই। ফলে ষাটের কাছাকাছি বয়সে আবার উর্দুতে কবিতা লেখা শুরু করেন। এর আগ পর্যন্ত সভাকবি ছিলেন শেখ ইব্রাহিম যওক। প্রচণ্ড বাদবিসম্বাদ চলত এই দুই কবির মধ্যে। তাঁদের সম্পর্ক কেমন ছিল, বুঝতে এই কাহিনিটি বলা যেতে পারে: যওকের সওয়ারি যাচ্ছে গালিবের বাড়ির সামনে দিয়ে। ইয়ার দোস্ত ঘেরা গালিবকে কেউ একজন বলল, ওই যে বাদশার ওস্তাদ যায়! গালিব তাৎক্ষণিক বললেন, বাদশার মোসাহেব হয়ে বুক ফুলিয়ে ঘোরে...। এতে বাদশার কাছে নালিশ করলেন যওক। ভরা দরবারে গালিবকে ডেকে বাদশা জিজ্ঞেস করলেন, ‘মির্জা, এই অভিযোগ কি সত্য? আপনি প্রকশ্যে কি এমন বলেছেন আমার ওস্তাদকে?’ গালিব বললেন, ‘জি হুজুরে আলা! এটা আমার একটা গজলের শেষ পঙ্ক্তি। কথাটি বলেই সঙ্গে সঙ্গে শোনালেন:
‘বাদশার মোসাহেব হয়ে
বুক ফুলিয়ে ঘোরে
নইলে শহরে গালিবের আর
কী সম্মান আছে?’
তারও আগে ঘটনা ঘটেছিল কলকাতায়। পৈতৃক সূত্রে গালিবদের একটা জায়গির ছিল। ইংরেজরা সেটা পরে আরও নানাজনের ভেতরে মাসোহারা হিসেবে ভাগ করে দেয়। এর মধ্যে ঢুকে পড়ে এমন সব দাবিদার, যাদের সঙ্গে কবির পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই। গালিব সেটা নিয়ে মামলা করেন। তখন বাদশা নামমাত্র আছেন। সবকিছু ইংরেজদের হাতে। আর ইংরেজদের রাজধানী কলকাতা। ১৮২৮ সালে গালিব এসেছিলেন কলকাতায়। ছিলেন প্রায় বছর দুয়েক। কলকাতার প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। দিল্লির পুরোনো জীবন, ভাবনা আর নগরব্যবস্থার বিপরীতে ইংরেজদের নতুন ব্যবস্থা মুগ্ধ করেছিল তাঁকে। জলের কল, রাস্তায় বাতির ব্যবস্থা, চওড়া রাস্তা—এসব তিনি নতুন রকমের হিন্দুস্তানের চিহ্ন বলে চিনতে পেরেছিলেন:
‘স্বাগত প্লাবন, হৃদয়ে কী আনন্দ গান
বাজাও তুমি
প্রেমিকের প্লাবিত ঘরে শুনি
জলতরঙ্গের ধ্বনি।’
তো সেই কলকাতায় মোকদ্দমা করতে এসে গালিব জড়িয়ে পড়লেন এক দীর্ঘমেয়াদি সাহিত্যিক বিতর্কে। কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসা তখন ইংরেজদের কায়দায় মুসলমানদের শিক্ষার কেন্দ্রে। তখন মাদ্রাসাটিতে ব্রেটন সাহেবের উদ্যোগে গণিত, দর্শন, তর্কবিদ্যা ও চিকিৎসাশাস্ত্রের পাঠও শুরু হয়েছিল। গালিব মাদ্রাসার কাউন্সিল মেম্বার অ্যান্ড্রু স্টারলিং এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ফারসি বিভাগের মীর মুনশি আবদুল করিমের সান্নিধ্যে এলেন। ফলে অতীতমুখিনতা ছেড়ে বর্তমান সময়ের মতো করে লেখার দিকে মনোযোগ এল তাঁর। ফারসিতে একে এককথায় এভাবে বললেন: ‘নাওয়িশতান কম আজ গুফতান না বাশদ’ অর্থাৎ, মুখে যেভাবে বলো, লেখায় তার চেয়ে বাড়াবাড়ি কোরো না।
মাদ্রাসায় মাসে একবার কবিতার আসর হতো, যাকে বলে মুশায়রা। সেখানে একই সঙ্গে কবিতা নিয়ে আলোচনাও হতো। একবার পাঁচ হাজারের বেশি লোকের উপস্থিতিতে গালিব সেখানে দুটি ফারসি কবিতা পড়লেন। এর মধ্যে কয়েকজন পণ্ডিত আপত্তি তুললেন তাঁর ফারসির গঠন নিয়ে। সমর্থনে তাঁরা উল্লেখ করলেন খ্যাতিমান ফারসি অভিধানকার কবি কাতিলের সূত্র। গালিব নিজেকে ফারসির কর্তাব্যক্তি মনে করতেন। নিজে ফারসি শিখেছেন আবদুস সামাদ নামে এক খাস ইরানির কাছে। এর পেছনে বহু শ্রম আছে তাঁর। নিজের কবিতা নিয়ে কথা তিনি শুনে অভ্যস্ত। কিন্তু তাঁর ভাষা নিয়ে আপত্তি! তা–ও কিনা এক দেশি লোকের বরাত দিয়ে! যে কখনো জীবনে ইরানে যায়নি, যার চোদ্দগুষ্টিতে কেউ ইরানি নয়! এটা গালিব সহ্য করবেন কেন?
নিজের সমর্থনে প্রবল বিক্রমে কথা বলতে থাকলেন তিনি। এমনকি কাতিলের অযোগ্যতা নিয়েও কথা বললেন। তাঁর সমর্থনে এ সময় এগিয়ে এলেন কলকাতায় কর্মরত হেরাতের ইরানি রাজ প্রতিনিধিও। গালিব বললেন, কোনো খাস ইরানি এসে বলুক আমি মানব, কিন্তু তাই বলে ফরিদাবাদের কাতিল! হাফিজ সিরাজির কবিতা উদ্ধৃত করে নিজের পক্ষে সাফাই দিলেন তিনি। লাভ হলো না। কাতিলপন্থীরা একে দিল্লি বনাম কলকাতার ইজ্জতের লড়াই বলে ভাবলেন। গালিবের বিরুদ্ধে কুৎসা শুরু হলো। দেয়ালে দেয়ালে লাগানো হলো পোস্টারও।
কিন্তু কলকাতায় এমনভাবে আলোচনার কেন্দ্রে থাকতে চাননি গালিব, বিশেষ করে যখন এসেছিলেন মোকদ্দমার কাজে। সেখানে যদি স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাঁকে শত্রু মনে করে, তবে তো বিষয়টি ভালো হয় না। ফলে বন্ধুদের পরামর্শে ঝামেলা আর বাড়ালেন না তিনি। সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে লিখলেন, ‘বাদে মুখালিফ’ (বিরুদ্ধ হাওয়া) নামে একটি কবিতা। সে দফায় দুই বছর থেকে কলকাতা ছাড়লেন গালিব। লাভের মধ্যে তাঁর লাভ হলো এই, প্রচুর শত্রু জোগাড় হলো কলকাতায়। তবে মাসোহারার এক টাকাও উদ্ধার হলো না।
এর পরের অংশ গালিবের জীবনের ভাঙনের গল্প। বড় ফারসি কবি বলে স্বীকৃতি মিলল না। তাঁর অবহেলার উর্দু কবিতাই উঠে এল তাঁর পরিচয় নিয়ে। আর্থিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হলো। জুয়া খেলার দায়ে জেল খাটলেন ছয় মাস। মদের টাকা বাকি পড়ে পাওনাদারের নালিশে দাঁড়ালেন কাঠগড়ায়। বিচারক তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, শোধ করতে পারবেন না জেনেও কেন করলেন এত দেনা? গালিব হেসে জানালেন:
‘কর্জ করে মদ খেতাম ঠিক,
তবে জানতাম যে হ্যাঁ
এই খালি পেটে আনন্দ করা একদিন পুরো দুনিয়ায় রং ছড়াবে।’
অল্প কিছুদিন সামান্য টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা হলো বাদশার ওস্তাদ আর রাজকীয় ইতিহাসকার হয়ে। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর সেটুকুও গেল। এই সময় তিনি লিখেছিলেন:
‘সুরের ফুল নই,
নই আমি বীণার আবরণ
আমিই শুধুই নিজের
ভেঙে যাওয়ার শব্দ।’
দুরবস্থার তুঙ্গ অবস্থাতেই আরেক বিসংবাদে জড়ালেন কবি। ১৮৫৯ সালে দক্ষিণাত্যের মৌলভি মোহাম্মদ হুসেইন তাবরেজির বিখ্যাত ফারসি অভিধান বুরহানে কাতেতে (যুক্তির অস্ত্র) নিয়ে একটা বিশ্লেষণী মতামত লিখলেন তিনি। কলকাতা থেকে তাবরেজির বইটি প্রথম ছাপা হয় ১৮১৮ সালে, প্রকাশক ছিলেন ক্যাপ্টেন রিবুক। ১৮৫৭–এর সেই দুর্বিষহ সময়ে সেই অভিধানের ওপরে নিজের মতো নোট নিয়েছিলেন গালিব। বন্ধুদের অনুরোধে তাই ছাপালেন কাতেই বুরহান নামে। কিন্তু মুশকিল হলো, দিল্লিজুড়ে মৌলভি তাবরেজির অনেক শিষ্য ছিল। গালিবের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল তারা। কলকাতার সময় ঝামেলা হয়েছিল কম, কিন্তু এখন ছাপাখানা সুলভ। তার ওপর গালিব এবার বহাল প্রতিষ্ঠানের গোড়া ধরে নাড়া দিয়েছেন। তাই ঝামেলা বেশিই হলো। গালিবের মতের পাল্টা বই ছাপা হতে থাকল দেদার। এর মধ্যে একজন শক্ত প্রতিপক্ষ ছিলেন—মৌলভি আহমেদ আলী শিরাজি জাহাঙ্গীরনগরী। নামেই বোঝা যাচ্ছে তিনি ঢাকার লোক। গালিবের বিরুদ্ধে তিনি লিখলেন মুয়াইয়িদে বুরহান নামে একটি বই। গালিবও রচনা করলেন একটি পুস্তিকা—তেগে তেজ (ধারালো তরবারি)। এর জবাবে আগা আহমদ আলী ইস্পাহানি (১৮৩৯–১৮৭৩) নামে আরেকজন লিখলেন শামসিরে তেজতর (তীক্ষ্ণতর তরবারি)। তিনিও ঢাকার মানুষ। ছিলেন বাঙালি শিক্ষাবিদ এবং কলকাতা মাদ্রাসার ফারসি ভাষার শিক্ষক। তো, গালিবের কাছে দিনে গোটা দশেক বেনামি চিঠি আসতে লাগল। তাতে অকথ্য গালিগালাজ। ১৮৬৬ সালে পাতিয়ালার আমিনউদ্দিন খুব নোংরা ভাষায় আক্রমণ করে বই ছাপলেন; এবং সেখানে তাঁকে মাতাল, দেনাদার, অবিশ্বাসী, দিল্লির শুঁড়িখানার খদ্দের, জুয়াবাজ—কিছুই বলতে বাকি রাখেননি তিনি। এবার ব্রিটিশ কমিশনারের আদালতে মামলা ঠুকে দিলেন গালিব। বড় পণ্ডিতেরা আমিনউদ্দিনের পক্ষে এগিয়ে এসে বললেন, গালিব যেসব অর্থ করছেন, এর আসলে ভাষাতাত্ত্বিকভাবে অন্য অর্থও হয়। আর সেটাই আসল অর্থ। এ মামলায় বিচারক ছিলেন একজন ইংরেজ, যিনি বহু কষ্টে বেশি হলে হুক্কা লাও, পানি লাও পর্যন্ত বলতে পারেন। তত দিনে দিল্লির পুরোনো অভিজাতদের কেউ বাকি নেই যে গালিবের পাশে এসে দাঁড়াবে। নোংরামির চূড়ান্ত দেখে ১৮৬৭ সালে মামলা প্রত্যাহার করলেন গালিব। তত দিনে তিনি রিক্ত, শরীর ভেঙে পড়েছে, কানে শুনতে পান না। সাত মৃত সন্তানের পর পোষ্য নেওয়া ভাতিজাও মারা গেছে ২৩ বছর বয়সে। দেনার দায়ে ডুবে আছেন আকণ্ঠ। ভুগছেন ডায়াবেটিসে। এই বেদনা আর অপমান নিয়েই বছর দুয়েক পর মারা যান কালজয়ী উর্দু কবি মির্জা গালিব।
গল্প এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু গালিব তো বলেই গিয়েছিলেন তিনি অনাগত বাগানের পাখি, যে বাগান এখনো পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয়নি। মৃত্যুর বছর পঞ্চাশেকের মধ্যে উর্দু কাব্যের অদ্বিতীয় সম্রাটরূপে পরিগণিত হলেন গালিব। কেউ এমন রইল না যে তাঁর মহিমার সামনে নতমস্তক হয়নি। তিনি এখন মধ্যাহ্নের প্রখর সূর্য। এর মধ্যে একজন মাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন—মির্জা য়াগানা চাঙ্গেজি। তাঁর জন্ম ১৮৮৩ সালে পাটনায়। খুবই ভালো ছাত্র ছিলেন এবং ক্ষুরধার ছিল তাঁর লেখনী। কিন্তু সবাইকে শ্লেষ করা ছিল তাঁর অভ্যাস:
‘আমার আমির নেশা ধরল যখন নিজের মাঝে থাকতে পারলাম না
ঈশ্বর হতে চলেছিলে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলে না তো।’
য়াগানা মানে অদ্বিতীয়। আর তাঁর এই ঈশ্বর হচ্ছেন অবমানিত হয়ে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া, কিন্তু পঞ্চাশ বছর পরের কাব্যেশ্বর মির্জা গালিব। য়াগানা তাঁর কালের লক্ষ্ণৌর কবিদের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে তাঁদের গালিবভক্তির বিরুদ্ধে এবং ক্রমে ক্রমে গালিবের বিরুদ্ধেও বলা শুরু করেন। তার ফল হলো এই—ভারতের যেখানেই তিনি যান, সব কবি তাঁর সভা বয়কট করেন। শেষে য়াগানা বই লিখলেন গালিব শিকন। মানে গালিব ধ্বংসকারী। এবার আর তাঁর কোথাও জায়গা হলো না। সর্বত্রই অপদস্থ হতে লাগলেন তিনি। চাকরি হারালেন। পাটনা, লক্ষ্ণৌ, লাহোর, হায়দরাবাদ—কত জায়গায় চেষ্টা করেছেন থিতু হতে। তবে তাঁর গালিববিরোধিতা কোথাও তাঁকে রেহাই দেয়নি গালিবপ্রেমিকদের হাত থেকে। একাকী নিঃসঙ্গ অবস্থায় য়াগানা মারা গেলেন ১৯৫৬ সালে। গালিব নিজে বেঁচে থাকলে বোধ হয় য়াগানা চাঙ্গেজির এই উল্টো পথে চলায় বিরক্ত হতেন না। নির্যাতিত নিজে নির্যাতক হয়ে উঠুক—এই অপবাদ নেওয়ার লোক ছিলেন না মির্জা গালিব।