প্রকৃতিপ্রেমী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় একবার ঠিক করলেন, কয়েকজন বন্ধু মিলে উড়িষ্যার দুর্গম বনাঞ্চলে ভ্রমণ তথা অভিযান করতে যাবেন। যেমন কথা, তেমনি কাজ। সঙ্গী হলেন বন্ধু-লেখক পরিমল গোস্বামী, সরকারি চাকুরে প্রমোদরঞ্জন দাশগুপ্ত ও সাংবাদিক কিরণকুমার রায়। তাঁরা খুশিমনেই যেতে রাজি হয়েছিলেন। যদিও বিপদ বাধল অন্যত্র। বন্য অভিযানের নেশায় মশগুল বিভূতিভূষণ প্রথমেই সফরসঙ্গীদের জানিয়ে দিলেন, এ হলো একদম খাঁটি অভিযান, সঙ্গে করে তাই খাবারদাবার কিছু নেওয়া যাবে না। কারণ, প্রকৃত অভিযাত্রীরা রোমাঞ্চের টানে ঘুরতে বেরোয়, খেতে নয়। খেলে কি আর অ্যাডভেঞ্চার হয়? অবশ্য বিভূতিভূষণের এমন খ্যাপা মনোভাব দেখেও যাত্রাপথের খিদে সামাল দেওয়ার জন্য পরিমল ও কিরণকুমার নিজেদের ব্যাগে রুটি ও মাখন ভরে নিয়েছিলেন লুকিয়ে লুকিয়ে। ট্রেনে করে অতঃপর যাত্রা শুরু হলো তাঁদের। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই বিভূতিভূষণ ভয়ানক বিচলিত হয়ে পরিমল গোস্বামীকে ডেকে বললেন, ‘ব্যাগে কিছু থাকে তো বার করুন—অবিলম্বে।’ বোঝা গেল, খিদের জ্বালায় অসম্ভব কাতর হয়ে বিভূতিভূষণ পাগলপারা হয়েছেন। তারপর ব্যাগ থেকে সেই রুটি-মাখন বের করে দেওয়া হলো তাঁকে। পেটপূজা করে তিনিও শান্ত হলেন। খিদে এমনই মহার্ঘ জিনিস, বিভূতিভূষণের মতো অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী মানুষকেও বন-অভিযানের শর্ত বেমালুম ভুলে রুটি-মাখনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য করতে পেরেছিল!
সূত্র: পরিমল গোস্বামীর পথে পথে।