বেগম’স ব্লান্ডার নাটকের দৃশ্য
বেগম’স ব্লান্ডার নাটকের দৃশ্য

সহজ আনন্দের খোরাক

আমরা শুধু এক বিদেশি ভাষার থিয়েটার দেখতে যাইনি, সংস্কৃতির নতুন ধারার সম্ভাবনাকে উপভোগ করতেও গিয়েছিলাম। অস্কার ওয়াইল্ডের লেডি উইন্ডারমেয়ার’স ফ্যান অবলম্বনে নির্মিত নাটক বেগম’স ব্লান্ডার সেদিন আমাদের সহজ আনন্দের খোরাক জুগিয়েছে।

জটিলকে সহজে ভেঙে ফেলা কঠিন কাজ। সে কাজটি মুনশিয়ানার সঙ্গে করেছেন পরিচালক নায়লা আজাদ। যাত্রিক প্রোডাকশন এবং প্রযোজক সাদাফ সায সিদ্দিকীর এ উদ্যোগ সৃজনশীল ও সময়োপযোগী।

শুরুতে ‘বিদেশি ভাষার থিয়েটার’ কথাটি বলার কারণ এ নাটকের ভাষা ইংরেজি। নাটক শুরুর আগে সেই অস্বস্তি কিছু দর্শকদের মধ্যে দেখেছিও, ‘পারবে তো ইংরেজি ভাষায় এত বড় নাটক টানতে, কঠিন কাজ।’ হ্যাঁ, আসলেও কঠিন কাজ।

তবে বলার কথা হলো, বেগম’স ব্লান্ডার কঠিন তো ছিলই না, বরং মনে হয়েছে এই মঞ্চে অভিনেতারা সময়কে উদ্‌যাপন করছেন। নাটকটির মূল আকর্ষণ হচ্ছে এর সহজ আধুনিক ভাষান্তর। একদিকে সরল ইংরেজি, ছোট ছোট বোধগম্য বাক্য। অন্যদিকে অস্কার ওয়াইল্ডের রসাত্মক সংলাপের দারুণ ব্যবহার। যখন গল্পের কোনো চরিত্র যখন বলে, ‘আই প্রেফার উইমেন উইথ আ পাস্ট, দে আর অলওয়েজ সো ড্যাম অ্যামিউজিং টু টক টু,’ দর্শককে তা হাসায় বটে, ভাবায়ও।

মূল গল্পটিকে ভেঙে উপমহাদেশের ১৯২০ সালের পটভূমিতে রূপান্তরের কাজও বেশ গোছানো। পোশাক, অভিব্যক্তি, মঞ্চসজ্জা ও আবহসংগীতেও তার যথাযথ প্রকাশ।

চরিত্ররাই তো আদতে গল্প হয়ে ওঠে মঞ্চে। কে বলবে এ মঞ্চে চরিত্র হয়ে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা কেউ পেশাদার অভিনয়শিল্পী নন? নয়টা-পাঁচটার ব্যস্ত চাকা ঘুরিয়েও যে নিষ্ঠা তাঁরা অনুশীলনে ব্যয় করেছেন, মঞ্চে তা প্রমাণিত।

সংস্কৃতি বিকেন্দ্রীকরণ সব সময় আশাপ্রদ। এ কারণে বিদেশি ভাষার থিয়েটার সাধুবাদযোগ্য। আশপাশে তাকিয়ে তরুণ প্রজন্মের এমন অনেককে এই প্রযোজনা উপভোগ করতে দেখেছি, ইংরেজি যাঁদের অন্তরস্থ।

এ নাটক ঢাকার বিভিন্ন স্থানে হয়েছে। আমরা দেখেছিলাম গুলশানের আলোকি মিলনায়তনে। এ মিলনায়তন কতটা অভিনয়পোযোগী, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সে কারণেই কিনা জানি না কিছু কারিগরি ত্রুটি—কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংলাপ শুনতে না পারা—ছিল পীড়াদায়ক।

নাটক শেষে বাড়ি ফেরার পথে মাথায় গুঞ্জরণ তুলতে লাগল অস্কার ওয়াইল্ডের এক আনন্দভাবনা, ‘লাইফ ইজ ফার টু ইম্পরট্যান্ট আ থিং এভার টু টক সিরিয়াসলি অ্যাবাউট ইট।’

 কিযী তাহ্‌নিন