অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান
অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

কাষ্ঠের পুতুলি নাচে না কুহকে

খেলতে খেলতে পুতুলকন্যা নিজেও পুতুল বনে। কে নেবে তারে বান্নির আসরে এই খেলা দেখাতে। হয়তো ছোট কাকু কিংবা ভাই–বেরাদর কেউ থাকলে, এই নাচ যদিও ছেলেমেয়ে উভয়কেই টানে। মাইশার মনে পড়ে, পুতুলের ঘর সাজানো সংসার তার কত বড় ছিল! হরেক রকম পুতুল যেমন ছিল, ছিল সোনালি-রুপালি কত না হান্ডি-পাতিল, দা, ছেনা, নারকেল কোরানি, ঢেঁকি, ছোরতা, পানের বাটা, জাঁতি কত কী! কেউ তখন কি ভাবত, এ যে আলতামিরার গুহাচিত্র।

এই পুতুল কী করে নাচে, তা-ই দেখতে সে উৎসুক ছিল, ‘পুতুল নাচ’ কথাটি কানে যখন আসে বারবার। নাচের চেয়ে তার চোখ-কান কম ধাঁধায়নি জরি-পুঁতির পোশাক কিংবা মিহি সুরে পুতুলের কথা বলার ঢং।

অনেকে যেমন বুঝতে পারে না, তারও তেমনি কিছু ঘটনা সময়ের অভিঘাতে বোঝা সাধ্যাতীত হয়ে যায়। কষ্ট করে চালাতে হচ্ছে পড়াশোনা, তেমন আর্থিক অনটন না থাকলেও জন্মায়নি তো সোনার চামচ মুখে নিয়ে। ‘এই মেয়ে, নিজের পায়ে দাঁড়াও’—এই সব কথাকে আমলে নেয় কেমন করে? অসময়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে কত বাঁকাত্যাড়া পথ ধরতে হয়, এসব মাইশার ভাল্লাগে না। সে দেখেছে, সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের পর থেকেই স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা মুঠোফোন নিয়ে বসে থাকে। এতে মেয়ের সংখ্যা যে অর্ধেক। বেকার ছেলেমেয়েরা উন্নত সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনলাইনে সব টিকিট কেটে নেয়।

অতঃপর ৫০ টাকা লাভে ব্ল্যাকারের কাছে বিক্রি করে, ব্ল্যাকার আরও ৫০ কি ১০০ টাকা লাভে যাত্রীর হাতে ছেড়ে দিলে এত হাত বদল হয়ে টিকিটের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। যখন এক দুপুরে সচরাচর স্টেশনে নিজেই টিকিট কিনতে গিয়ে নাকাল হয়ে রোদ-ঝাঁজালো দুপুরে ফিরছিল, তখন সে সিগন্যাল ঘরটার পাশে জামগাছটার নিচে পাখির ঠোঁটের আঁচড় লাগা জাম দেখতে পেল অগণন, আর রেললাইনের একপাশের পাটগাছের পাতাগুলো রোদের দাপটে মিইয়ে এসেছে, আর মেথরবাড়িটার কাছে দেখল শাঁস খাওয়া কিছু তালের খোসা ছড়িয়ে আছে। পুরো চরাচর তার কাছে মনে হলো, শূন্যতার আস্তরণ বিছিয়ে রেখেছে। কোনো মহাপুরুষ কিংবা মহীয়সীর কথা মনে করতে পারে না, কিন্তু কথাটা আবার কানে বাজল, ‘এই মেয়ে, নিজের পায়ে দাঁড়াও!’ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মানে কি দাঁড়িয়ে থাকা? আমি দাঁড়িয়ে থাকব কেন? আমি তো হাঁটছি। আমি কখনো দাঁড়াব না। তার ভাবনা বহুগামী হয়ে ভিন্ন অর্থ তৈরি করে ফেলে। সে হেঁটেই যাচ্ছে। রোদের ঝাঁজ সইতে না পেরে মাথার ওড়নাটা আঙুল দিয়ে আঁটসাঁট করে দেয়। সে চিন্তা করে, এইভাবে বা অন্যভাবে—কোনোভাবেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দরকার নেই। তার চেয়ে আমি যে এখনো প্রৌঢ়াদের স্মৃতিকে স্মরণ করে পাখা বুনি, নকশিকাঁথা সেলাই করি আর সময় পেলে কাপড়ের ওপর করি কারচুপির কাজ, সে ঢের ভালো। এই বয়সের মেয়েরা এখন এসব করে নাকি? এ জন্য ছোটদের কেউ কেউ ওকে কটাক্ষ করে দাদি-নানিও বলে। তবে প্রতিবেশিনী সালমার কথা ওর মনে ধরেছে। সে বলেছিল, ‘মাইশা আপু, তুমি যে এত এত জিনিস বানাইয়া ঘর ভইরা রাখতেছ, কয়দিন পরে তো একটা গুডাউন লাগব। তার চাইতে এইগুলা মেলায় পাঠাইয়া বিক্রি কইরা দেও। কুরিখাই, কামালপুর, ভাগলপুর...। কোনো খরচা নাই, যেখানেই পাঠাও, অটোভাড়া বিশ টেকা। খালি আমরার গ্রামের একটা ছেরা দরকার, কয়দিন বন্দে রাখালি না কইরা তুমার পাংখা-রুমালের পাহারাদার হোক।’ সালমার কথাটা মাইশার মনে থাকে। সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা সত্যিই ভাবে, তবে তার কোনো তাড়াহুড়া নেই।

মা-বাবা আর কী ভাবে, সবাই যেমন। মেয়ের একটা বিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে। উদ্যোগী ছেলেমেয়েরা যখন ভাবে পড়ালেখার বিষয় নির্বাচন কিংবা কেউ কর্মমুখী হওয়ার তালিমটা একাডেমিক ডিসিপ্লিনের মাধ্যমে নিতে থাকে, গ্রামে থেকেও এখন যেমন কেউ কেউ বিদেশে পড়াশোনার কথা ভাবে, কিংবা কান ভারী হতে হতে ভাবে ইমিগ্র্যান্ট হওয়ার কথা, তখন মা-বাবার এই একটাই কথা কিংবা স্বপ্ন, মেয়ের একটা ভালো বিয়ে হওয়া দরকার। এই রকম বিয়ের প্রসঙ্গ একদিন ওঠায় মাইশা তীব্র উষ্মা প্রকাশ করে। সে বড় ভাই বকুলকে বলে, ‘বাবা যে বলল, এলাকার অবস্থা ভালো নয়, কী হয়েছে এলাকার?’

‘হয়তো গুন্ডা-মাস্তানের সংখ্যা বাড়ছে।’

‘তাতে আমার কী?’

‘হয়তো ড্রাগির সংখ্যাও নেহায়েত কম হচ্ছে না।’

‘তাতে কার কী বয়ে গেছে?’

‘আরে বুঝলি না, এক অসিলায় বিদায় করা। তবে তুই তো গ্র্যাজুয়েশন করেছিস, এবার বিয়ের কথা একটু করে হলেও ভাবতে হবে।’

‘এখনই আমি বোঝা কাঁধে চাপাতে চাই না।’

‘কেন? সেই কত আগে থেকেই বিয়ের পরও তো মেয়েরা লোখাপড়া চালাচ্ছে। গ্রামে বিবাহিত ছাত্রীর সংখ্যা এখন অনেক।’

‘শুধু এই জন্য বলছি না। সবকিছুরই একটা সময় আছে।’

‘ঠিক আছে, তবে প্রস্তুতি তোকে নিতেই হবে। এটাও যে পরীক্ষা রে পাগলি!’

‘বুঝলাম। কিন্তু এলাকার অবস্থা ভালো নয়, এই অজুহাতে মেয়েকে বিদায় করতে চায়, এ কেমন কথা?’

‘আরে, এটা একটা কথার কথা। তবে এলাকার অবস্থা তো আসলেই ভালো নয়। এনভায়রনমেন্ট হ্যাজার্ড তো আছেই, এটা কি এলাকার বাইরে? এই ধর আমাদের গ্রামে এখন আশপাশের গ্রামের সাতটা ইটখোলা থেকে ধোঁয়া আসে। এই গ্রামে বেশি দিন থাকলে তো তুই একদিন শ্বাসকষ্টে ভুগবি। তার চেয়ে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস নে, যা ভাগ্!’

‘ভাইয়ার যে কথা! তুমি এক হাস্যকর, খোঁড়া যুক্তি দিলে। তা ছাড়া এত দিন শরৎ-রবীন্দ্র সাহিত্যে কী পড়লাম, মেয়েরা তো স্বামীর বাড়িতে গিয়ে সাধারণত দমবন্ধ অবস্থায়ই থাকে, নাকি?’

‘ক্ল্যাসিক এখন আর কেউ পড়ে না, তুই সেকেলে। তাই এসব বলছিস।’

‘মেনে তো নিলাম সব। কিন্তু বিয়েটা এখনই মানতে পারছি না।’

হাজার কথার মধ্যে মাইশা চাকরির প্রস্তুতি নিতে থাকে জোরেশোরে। কোনো কথাই সে কানে তোলে না। তবু একদিন অলক্ষ্যে তার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। সে বুঝতেই পারেনি, প্রতিবাদ বা ভাঙনের সুর তোলার আগেই দিন-তারিখ ঠিক করা সারা। ভাইকে সে বলেছিল, ‘তোমরা এ বিয়ে ভেঙে দাও। না হলে আমি প্রশাসনে খবর দেব। বলব, নিজের অমতে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ বকুল কিছুটা কটাক্ষের সুরেই বলেছিল, ‘তাতে কোনোই কাজ হবে না রে। ইহা নয় বাল্যবিবাহ!’ তবে বোনের রুদ্রমূর্তি দেখে বকুলের স্বর কিছুটা নরম হয়ে আসে। অনেক বুঝিয়েসুঝিয়ে বলে, ‘অলরেডি আমরা কথা দিয়ে ফেলেছি, বাড়ির একটা ইজ্জত আছে, কথাটা তোর মাথায় রাখা দরকার।’

মাইশাও যেনতেন মেয়ে নয়, বদনকেতাবে সহস্র ঘাঁটাঘাঁটি করে মাতাফ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে, একটা প্রারম্ভিক জানাশোনা তৈরি করে এতে সে সম্মতি দেয়। ভাবে, একদিন না একদিন তো বিয়ের পিঁড়িতে বসতেই হবে, যদিও জীবনটাকে এখনো অসম্পূর্ণই মনে করে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, তার পূর্বশর্ত পূরণ হচ্ছে, হয়তো সে মনের মতো একটা স্বামী পেতে যাচ্ছে, যৌতুকের গন্ধ যেমন থাকবে না, থাকবে না উটকো অন্য কিছুও। তার থাকবে পূর্ণ স্বাধীনতা। তবু এইভাবে মেনে নেওয়াটাকে নিজের কাছে মনে হচ্ছে, কাষ্ঠের পুতুলি যেন কুহকে নাচে!

অবশেষে প্রত্যাশাপূরক বিয়েটা হয়ে গেল মহা ধুমধামে। নিয়তির বরপ্রাপ্ত কতশত বরযাত্রী! নিয়ে এসেছে উনচল্লিশটা মাইক্রোবাস, সাতানব্বইখানা মোটরবাইক। তাদের শোডাউনের কোনোই কমতি নেই। এ অঞ্চলের মানুষ এসব দেখে দেখে অভ্যস্ত হলেও অতগুলো যন্ত্রযানের একত্র উপস্থিতির ঢমকে তারা চমকে যায়। যানগুলো পার্কিং করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ম্যানেজমেন্টের লোকজন। বরের দল কী মনে করে কজন নিরাপত্তারক্ষী ভাড়া নিয়ে এসেছিল। পাকা রাস্তার বাইরে বাড়ির আঙিনা পর্যন্ত কেবল এক জোড়া প্রাইভেট কার নেওয়া সম্ভব হয়েছে। গাড়িগুলোর পার্কিংয়ের লেজ অন্য লাগোয়া গাঁ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। তবু কেউ কেউ বলছে, ‘অ্যাহ্ দেখা আছে, আমাদের গ্রামের সদরুল আলম তো হেলিকাপ্টারে কইরা বউ আনছিল, তোমাদের দেড় শ গাড়ি মিলাইয়াও একটা হেলিকাপ্টারের সমান না।’ কিন্তু যাত্রীরা হুঁশিয়ার, কোনো কথাই কানে তুলবে না—এ রকম একটা সিদ্ধান্ত আগেভাগেই নিয়ে রেখেছিল। তবে কনের বাড়ির লোকেরা যে মহা খুশি, তা তাদের আচার–আচরণেই বুঝে গেছে জামাইযাত্রীর দল।

সারা দিনের কোলাহলের পর গাড়ির বহর বউ নিয়ে চলে গেলে যে শূন্যতা তৈরি হয়, তা পুরো গ্রামকেই গ্রাস করে। কোলাহল গিয়ে ভর করে মাতাফদের গ্রামে। মধ্যরাতে যানবাহনের আলোর ঝলকানি আর ভটভট শব্দে পুরো গ্রাম জেগে ওঠে। ঘুমভাঙা মানুষগুলো স্বাভাবিক হলে মনে করে, কেবল সন্ধ্যা লেগেছে। তবু রাতটি গড়িয়েই যায়। এই জন্য বলা চলে না বাসররাত, মাইশার হয় বাসরভোর।

অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠলেও ওর ঘুমকাতুরে ভাব যায় না। ঘরভর্তি মানুষ কত কথা বলছে, এরা তো সব কথারই ব্যাপারী। বলে কিনা, ‘মেয়েকে এইভাবে কেউ খালি হাতে শ্বশুরবাড়িতে পাঠায়?’

‘শুনলাম, যা হওয়ার হইছে। একরত্তিও কিছু দেবে না! এরা কি ছোটলোক, না কমজাত?’ কথা সব শুনতে শুনতে মাইশা জানালা দিয়ে তাকায়। লোকজন বলছে, ‘হাতি যাচ্ছে মেলায়, গুড়ই, না মরলভোগ? সেখানে খেলা হবে।’ আসলে হাতি দিয়ে টাকা আদায় করে মাহুত, এখন সব দুষ্ট মাহুতের দল, নিরপরাধ হাতিকে এরা অপরাধী বানাচ্ছে। মেলার কথা শুনতেই ওর সব মনে পড়ল, নিজের হস্ত ও কুটিরশিল্পগুলোর কথা। সালমার কথামতো সেগুলো মেলায় পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু জীবনটাকে অসমাপ্ত রেখেই সে চলে এল, বিয়ের জন্য পারল না সে জীবনের নতুন স্বাদ নিতে, এক দিনের জন্য হলেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে। তবে সেই স্মৃতি তাকে মোটেও কষ্ট দেয় না, সময় কখনো ফুরিয়ে যায় না—এই বিশ্বাসে।

জানালার ফাঁক গলিয়ে সে দেখছে হাতির আগমন কিংবা নির্গমনের সংবাদে ছেলেমেয়েরা বেজান ছুটছে। দেখতে ভালোই লাগছে। কিন্তু ঘরের মানুষের কথায় সে বিরক্ত হয়। আবার হাতির কথা ভাবে, সে যে এক আচানক শক্তিধর প্রাণী। আমিও যদি তেমনি ঠোঁট দিয়ে তুলতে পারতাম সোনামুখী সুই। সে নিজ চোখে দেখেছিল কোথাও, হাতি শুঁড় দিয়ে তুলছে একটি সুই। আবার ভাবে, আমিও যদি হাতির মতো পানি এনে গাছের গোড়া ভিজিয়ে তুলে ফেলতে পারতাম বিষবৃক্ষের শিকড়!

বরালয়ের লোকজনের মুখ ধরে রাখা যায় না। নতুন বউয়ের প্রতি হাসি-ঠাট্টার বাণ তো ছুড়ছেই, কেউ কেউ নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য সশব্দ বাক্য উচ্চারণ করে। জামাই নিয়ে বেয়াইন-ভাবিদের ঢলাঢলির তো কোনো অন্তই নেই। একজন বলে, ‘কিরে মাতাফ, তুই তো দেখি বউয়ের চাইতেও ফরসা।’

‘তোমরা হলদি দিয়া বানাইলে কেডা “না” করে?’

‘আরে বেশি কাছে যাইও না, আড়ালেতে বসা কইন্যার মন ভাঙ্গিও না!’

এমন ধারা বচনেও মাইশা বিরক্ত হয় না, বরং অন্তর্গত একটা মুচকি হাসি দেয়। তবে বিরক্ত হয়, যখনই শোনে দৃঢ়, সুরেলা কিংবা ভচকানো গলায় কেউ কেউ বলে ওঠে, ‘দেখি তো কী কী দিছে।’ তারও চেয়ে বেশি বিরক্ত হয় এই সব কথায় মাতাফের নীরবতা দেখে।

আবার ‘হাতি, হাতি’ রবের কোলাহল শোনা যায়। সে যে পড়েছিল, মাদি হাতির জীবনচক্র, তা তখন মনে পড়ে। ঠিক পড়া নয়, তথ্যভান্ডার ঘাঁটতে গিয়ে এই কনটেন্ট সহসাই তার সামনে এসে গিয়েছিল। এ যেন তরঙ্গে তরঙ্গে ভেসে এসেছিল ফ্লুরোসেন্ট আলোর মতো কিংবা দূরে ছিল স্থির। এখন কিছুই তার মনে নেই সেই বিস্ময়কর যথার্থ ছাড়া। তখন স্থূল হস্তিনীর এক সূক্ষ্ম ক্ষমতার পরিচয় মিলেছিল। এই ক্ষমতা প্রকৃতি মানবীকে দেয়নি, অতিমানবীকেও নয়। মিলনের পর সঙ্গী পছন্দ না হলে হস্তিনী নাকি শুক্রাণু গ্রহণ করে না। প্রত্যাখ্যান করতে পারে। তার এখন মন চায় গজদন্তী হতে। শুঁড়ের মতোই দাঁতের কত না শক্তি, যা দিয়ে সব এফোঁড়–ওফোঁড় করে দেওয়া যায়।

ঘরভর্তি মানুষের কোলাহল তখন কেবলই আনন্দকথনে রূপ নেয়। সেসব স্থূল বচনের লোক অন্তর্হিত হয়েছে, এক কোনায় চলছে রঙ্গ-রসের মেয়েলি গীত... ‘কদমগাছের তলে রে, কে বাঁশি বাজাও রে শাম... আমি যামু সুন্দরীর মন্দিরে, আমি যামু কামিনীর মন্দিরে...’ তবু তো মাইশার মানভঞ্জন হয় না। এসবে সে যোগ দেয় না। সে একটি অনড় স্থূলকায় প্রাণীর মতো গোঁ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে, যাকে মোটা এক কাছি দিয়ে বেঁধেও কেউ একচুল নড়াতে পারে না।