ঘরটার জানালা ছিল দুই দিকে। একদিকে পোর্চ, আরেক দিকে ভেতরের উঠান। দুটি জানালা দিয়েই উৎসুক কয়েকটি অ্যাভাটার বিস্ফারিত চোখে উঁকি দেয়। জানালার শিক ধরে মাথাটা নিচে লুকিয়ে রাখে কেউ। তারপর চোখ অবধি তুলে ধরে একঝলক দেখেই আবার নিচে। হাউস পার্টিতে এ রকম দৃশ্য কি কেউ দেখেছে কখনো—বন্ধ দরজার ওপাশে ঝলমলে ফিরোজা গাউন পরা অ্যাভাটারকে ধর্ষণ করছে কালো হুডি পরা একজন। ফিরোজা গাউন অবশ্য ততক্ষণে কালো হলোগ্রাফিক মেঝেতে লুটিয়ে চিকচিক করছে।
ঠিক কতক্ষণ? দৃশ্যটা ইলিয়ানা আর নিতে পারে না। শরীর অবশ হয়ে যায় তার। অন-অফ-পজ বাটনগুলোর অবস্থানও মনে পড়ে না। ইলিয়ানা বরং লক্ষ করে অন্য অ্যাভাটারদের—তারা কীভাবে সহ্য করছে ও রকম একটা অবান্তর ঘটনা? দরজা ভাঙার চেষ্টা পর্যন্ত করে না কেউ! ইলিয়ানা লোহার দরজাটার ওপরে গজালের মতো একটা কিছু দিয়ে কয়েকবার আঘাত করে বটে, কিন্তু কপাট এতটুকু টলে না। হতাশ হয়ে শেষে হ্যাঁচকা টানে হেডসেটটা খুলে ছুড়ে ফেলে। ওটা খুলতেই নিজেকে ঠান্ডা ঘরের বিছানার পাশে পায়। টেবিলে হেডসেট পড়ার জোর শব্দটাও কানে আসে। শব্দেই হবে হয়তো, মা ভেজানো দরজা ঠেলে বলে, ‘হলো খেলা? এবার খেতে এসো।’ মায়ের কণ্ঠস্বরে চমকে উঠে ইলিয়ানা ফিরোজা গাউন খোলা অ্যাভাটারের মতো চারদিকে হাত-পা ছোড়ে। তা-ই দেখে মা বলে, ‘আরে হলো কী, খেলা শেষ হয়নি?’
খেলা শেষ না হতেই ইলিয়ানা কেন হেডসেট ছুড়ে ফেলে, তা মাকে বলা যায় না। বলতে গেলেই মা শুরু করবে রিহ্যাবে যাওয়ার কথা...‘এই গেমিং অ্যাডিকশন থেকে তোমাকে বাঁচতে হবে, ইলু!’ আর ওদিকে ইলিয়ানা জানত, সে বাঁচতে চায় না, কারণ ওই বাঁচাটাই তার জন্য মরা। গেমটা মাথায় না থাকলে ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় বেশি হতাশ লাগে। এই হতাশা ভুলতে গেমই আশ্রয়। মা যেমন বলে, ‘তুই কী ভুলতে এভাবে গেমে লেগে থাকিস?’ ইলিয়ানা মনে মনে বলে, ‘লেগে যে থাকি, সেইটা ভুলতে।’ কিন্তু যা-ই হোক, আজ হেডসেট খোলার পরেও গেমের দৃশ্যটা তাকে তাড়া করে ফেরে। মেয়েটার গাউন একটানে খুলে ফেলেছিল হুডি পরা লোকটা। মেয়েটা একা পেরে ওঠেনি, চিৎকার করেছিল সাহায্যের জন্য। অন্যরা ছিল স্বচ্ছ বন্ধ দরজা-জানালার বাইরে। কেউ চেষ্টা করেনি দরজা ভাঙার! ওই গেমে পারসোনাল স্পেসে এভাবে আসার কথা কি ছিল কারও? এ নিয়ে জোর তদন্ত দরকার। ইলিয়ানার কি এখন উচিত নয় মেটা কোম্পানির কাছে একটা আবেদন করা? আবেদন কেন, করা দরকার অভিযোগ। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার চোখে পানি আসে, ওই মেয়েটা ঠিক আছে তো! আচ্ছা, মেয়ে অ্যাভাটারটা মেয়েই ছিল তো? তবে ওটা ছেলে হলেই ভালো, গায়ে হাতাহাতি করলে কেমন লাগে জানুক এবার! সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ইলিয়ানার মাথা থেকে দৃশ্যটা চলেও যায়। খেয়ে নিয়ে আবারও খেলতে বসবে সে, বসবে কালও, পরশুও, কি তার পরের প্রতিটা দিনেও। কে এত ভাবে ও রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে!
খেলা শেষ না হতেই ইলিয়ানা কেন হেডসেট ছুড়ে ফেলে, তা মাকে বলা যায় না। বলতে গেলেই মা শুরু করবে রিহ্যাবে যাওয়ার কথা...‘এই গেমিং অ্যাডিকশন থেকে তোমাকে বাঁচতে হবে, ইলু!’
সেদিন এমন জমে ওঠে খেলা, অল্প সময়ে এতগুলো ধাপ পেরোবে, ভাবতেই পারেনি ইলিয়ানা। দাপট দেখিয়ে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে ঘুরে বেড়ায় সে। কখনো রাস্তায় বেরিয়ে শত্রু খোঁজে। হাতের নাগালে অ্যাভাটার পেলে কখনো কথা হয়, কখনো দূর থেকে সন্দেহজনক মনে হতেই অস্ত্র তাক করে। কে জানে কেন অন্যমনস্ক হয়ে সেদিন বেশ দূরে অজানা এলাকায় চলে যায় সে। আশপাশে কিছু অ্যাভাটার থাকে। একজনের সঙ্গে সেদিনের আবহাওয়া নিয়ে কিছু কথা বলতে যেতেই সে পারসোনাল স্পেসে চলে আসে। দ্রুত কয়েক পা পিছিয়ে যায় ইলিয়ানা। কিন্তু টকটকে লাল চোখের অ্যাভাটারটা ঠিক তত পা এগিয়ে আসে ইলিয়ানার দিকে। তারপর আরও কাছে। ইলিয়ানা হতভম্ব হয়ে যায়। হাতের রিমোটের সুইচে আঙুল ছোঁয়ায় না। এদিক-ওদিকে হেলতে হেডসেট দোলায় না। লালচোখা অ্যাভাটার সোজা এসে তার বুকে হাত রাখে। তারপর গেঞ্জির গলায় আঙুল ঢুকিয়ে দেয় একটা হ্যাঁচকা টান। চিরচির করে কাপড় ছেঁড়ার যান্ত্রিক শব্দ হেডসেটের মধ্য দিয়ে ইলিয়ানার কানে আসে। হ্যালো কিটির সাদা ছবিওয়ালা গোলাপি গেঞ্জির ছেঁড়া সরু টুকরাগুলো ইন করা অবস্থায় কোমরের কাছে ঝুলতে থাকে। তবে ঝুলতে হয় না বেশিক্ষণ; লালচোখা ইলিয়ানার জিনসের বোতামটা খুলতেই জিপারটা ঠ-আকৃতির হয়ে যায়। ইলিয়ানা হঠাৎ দেখে, রাস্তায় দূরে দুজন লোক হেঁটে যাচ্ছে। গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে থাকে। লোক দুটিকে ছুটে আসতে দেখেই ইলিয়ানা শক্তি ফিরে পায়। লালচোখাকে কষে একটা লাথি মারে মোক্ষম জায়গায়। লাথি খেয়ে সে সরতে না সরতেই দূরের অ্যাভাটার দুটি এসে পড়ে। ইলিয়ানা ভাবে, পারসোনাল স্পেসে এসে তার গেঞ্জি ছেঁড়ার মজা এবার টের পাবে ব্যাটা লালচোখা। কিন্তু কী আশ্চর্য, দূরের অ্যাভাটার দুটি লালচোখাকে না ধরে পেছন থেকে ইলিয়ানাকে চেপে ধরে। প্রথমে বোঝাই যায় না অ্যাভাটার দুটি তাকে বাঁচাতে চায়, নাকি তাকে...ভাবতে না ভাবতেই তাদের মধ্যে একজন ইলিয়ানাকে মাটিতে শুইয়ে দেয়, আরেকজন ধরে ঠেসে। ওদিকে প্রথম অ্যাভাটার ততক্ষণে ধুলো ঝেড়ে উঠে এসেছে। তার মুখে মিটিমিটি হাসি। তারপর পালাক্রমে একজন চেপে ধরলে আরেকজন ইলিয়ানার ওপরে চেপে বসে। হেডসেটে নিজের করুণ আর্তনাদ শুনতে শুনতে ইলিয়ানা তখন পাগলপ্রায়। হাত-পা ছোড়াছুড়িতে টেবিল ল্যাম্প আর নানান ডিভাইস ঘরের মেঝেতে গড়াগড়ি খায়। বালিশ ও বিছানার চাদর গোল্লা পাকিয়ে দূরে ছোড়ে সে। গোঙানির শব্দ কানে যেতে মা ছুটে এসে উন্মাদনা দেখে চিৎকার করে, ‘ইলু...ইলু...কী হলো তোর?’ নিজের চেয়ে প্রায় ছয় ইঞ্চি লম্বা কন্যার হেডসেট খুলে নিতে চেয়েও গলাকাটা মুরগির মতো ছটফট করা ইলিয়ানার মাথার ওপরে তার হাত পৌঁছায় না। তারপর কতক্ষণ পরে কে জানে, ইলিয়ানা নিজেই হেডসেট ছুড়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। খিঁচুনির মতো কেঁপে উঠে গোঙানিটা চিৎকার হয়। বাড়ির সবাই যখন তাকে চেপে ধরেছে, ঘামে আর চোখের পানিতে মাখামাখি হয়ে ইলিয়ানা বলে, ‘আই অ্যাম রেপড। গ্যাং রেপড।’
বাড়ির লোকেরা বুঝতে না পেরে ডাক্তারের কাছে নেয়। ইলিয়ানা ততক্ষণে ধাতস্থ, বলে, আমাকে টেস্ট করলে কি ধর্ষণের আলামত পাওয়া যাবে? ডাক্তার চোখ গোল করে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলেন, মানসিক ডাক্তারের কাছে নিন। ইলিয়ানা ডাক্তারের টেবিল থেকে পেপার ওয়েট নিয়ে ছুড়ে মারে ডাক্তারের দিকে। ভাগ্যিস ডাক্তারের রিফ্লাক্স ভালো, টেবিলের তলা থেকে উঠে বললেন, ‘কিন্তু ওটা তো ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্ল্ড!’
‘সো হোয়াট? ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্ল্ড ইজ রিয়েল! আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, শরীর আর মনে তার ভয়াবহ চাপ পড়েছে। একটা সাইকোলজিক্যাল ট্রমা! যে রকম নির্দয় নির্যাতন আর বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে...’ বলতে বলতে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল ইলিয়ানা, ‘আরেকটা কথা, ওদের মধ্যে একজন রেপ করার সময়ে ছবি তুলছিল। ছবি তুলেছে, মা, ছবি!’ বলতে বলতে ইলিয়ানা মায়ের বুকে সিটিয়ে গেল। ডাক্তার কোনোরকমে বললেন, ‘ভেরি স্যাড, কিন্তু ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্ল্ড সত্যিই রিয়েল?’
‘না তো কী! এত দ্রুত আমার সারা শরীরে রেপের অনুভূতিটা ছড়িয়ে পড়ল আর আপনি বলছেন রিয়েল নয়! আমি দেখলাম, ওরা আমার কাপড় ছিঁড়ে নিয়ে আমার সারা শরীরে...উহ্, আমি আর ভাবতে পারছি না। আই অ্যাম রেপড, আই অ্যাম রেপড। প্লিজ ডু সামথিং, প্লিজ...’
ডাক্তার চিন্তিত হন, ‘বিষয়টি ঠিক বুঝতে পারছি না, ভার্চ্যুয়ালি রেপ কি আসলেও ঠিক এভাবে ফিল করা যায়?’
‘কেন ফিল করা যাবে না? আনন্দ, ভয় ও উত্তেজনা যদি ঠিকমতো ফিল করা যায়, তবে রেপ কেন ফিল করা যাবে না? ওরা রেপ করেছে আমাকে। কেন করল? আমি ওদের শাস্তি চাই।’
ডাক্তার ইলিয়ানার চিৎকারে ব্যস্ত হয়ে বললেন, ‘আমার মনে হয় আপনারা পুলিশের কাছে যান। আমার তো এখানে কিছু করার দেখছি না। এখন তারা যদি কেস নেয় আরকি।’
‘আপনার শরীরে কোনো স্পর্শ লেগেছে? কোনো ব্যথা?’
‘নিশ্চয়! এই যে এভাবে আমার গেঞ্জি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, তারপর এভাবে প্যান্ট...তারপর আমাকে রাস্তায় শুইয়ে...’
‘আচ্ছা বুঝলাম। তা আপনি ছেঁড়া গেঞ্জি দেখাতে পারবেন? আর শরীরেও কী ঘটেছে, কোথায় লেগেছে, আমাদের কর্মী দেখে রিপোর্ট করবে।’
‘মানে? আমার শরীরে দাগ খুঁজতে হবে?’
‘নিশ্চয়। রেপ হবে আর আপনি প্রতিরোধ করবেন না? ওদিকে রেপিস্ট জোর খাটাবে। দাগ তো হবেই।’
‘আর শরীরে যদি দাগ পাওয়া না যায়?’
‘তাহলে রেপ হয়নি। সিম্পল।’
‘কিন্তু রেপ তো হয়েছে!’ থানায় বসে চিৎকার করে ওঠে ইলিয়ানা। ‘এই যে ওরা আমাকে এভাবে ধরে, তারপর এই যে এভাবে রাস্তায়...’
‘আইনে রেপের ডেফিনিশন জানেন? ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফিজিক্যাল কন্টাক্ট হতে হবে।’
‘তাহলে নন-ফিজিক্যাল কন্টাক্ট কিন্তু সাইকোলজিক্যালি অ্যাবিউজড হলে রেপ হবে না? আই অ্যাম সাইকোলজিক্যালি ড্যামেজড, আপনি বুঝতে পারছেন না কেন? ইট ওয়াজ ক্লিয়ারলি আ রেপ কেস। গেমটা রেকর্ডেড আছে, দেখে নেন।’
‘দেখার দরকার নেই। বুঝতে পারছি। আইনের পরিবর্তন দরকার। সেসব পরে হয়তো হবে, কিন্তু তার আগে কেস নিই কী করে?’
‘তাহলে আমি কখন আসব?’
‘আইনের পরিবর্তন হলে।’
‘মেটা! ওই মেটা কোম্পানির বিরুদ্ধে আমি কেস করব। আমার ১৬ বছরের ফুটফুটে মেয়েটাকে এভাবে একগাদা বিদেশি মিলে রেপ করল। মেটা এটা হতে দিল!’ ইলিয়ানার বাবার হতাশ রাগী গলা শুনে পুলিশ সদস্যরা কেউ কেউ হেসে ফেলে। ইলিয়ানা ফুঁপিয়ে ওঠে। এক পুলিশ সদস্য বলে, ‘তা যান না, মেটার বিরুদ্ধে কেস করেন। এখানে এসব কেস নেওয়া হয় না।’
পুলিশ সদস্যরা ইলিয়ানার শরীরে এমনভাবে চোখ বোলায় যেন এক কৃষ্ণাঙ্গ আর দুজন সাদা মানুষের বিচরণের চিহ্ন খুঁজছে। ওখানে আরেকটু বসে থাকলে ধর্ষণের বর্ণনা দিতে হবে। পুলিশ সদস্যরা কৌতূহলও বোধ করে, মিটিমিটি হাসিমুখে জানতে চায়, ‘খেলতে গিয়ে এর আগেও রেপড হয়েছেন কখনো?’
খবরের তালাশে থানায় কিছু সাংবাদিক বসে থাকে। মুখরোচক খবর হলে তো কথাই নেই। তারা ছুটে আসে, প্রশ্নের পর প্রশ্ন আছড়ায়। ইলিয়ানা ভড়কে গেলেও সাহস জুটিয়ে উত্তর দেয়, ‘অনলাইনে নোংরা শব্দ, অপমান আর গেমের সময়ে বুকে হাত বা শরীর নিয়ে মন্তব্যকে শারীরিক নির্যাতন বলেই মনে করি।...গেমের মধ্যে কেউ যখন গায়ে হাত দেয়, তখন আমার হ্যান্ড-কন্ট্রোলার কেঁপে উঠে মাথায় জট লাগে। বিরক্তিকর আর বিশ্রী অনুভূতি হয় গায়ে। আমাকে বলতেই হবে যে মানসিক বা আবেগপ্রবণ ট্রমা কিন্তু শারীরিক ট্রমার চেয়েও দীর্ঘস্থায়ী।...আপনারা বুঝতে পারছেন না কেন, আমি মানসিকভাবে ভেঙে গেছি। আমাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে! মেয়েদের ঘায়েল করার জন্যই অনলাইনে এসব ব্যবস্থা...’
দুর্ধর্ষ খবরটা কাগজের পাতায় আছড়ে পড়ে। অনলাইনে জোর গবেষণা শুরু হয়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্যের ঝড় ফেনিয়ে উঠতে উঠতে মন্ত্রীর দপ্তরে পর্যন্ত তার ঢেউ লাগে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যারা ধর্ষণ করতে পারে, বাস্তব জীবনে তো তারা নারী দেখামাত্র ধর্ষণ করবে! এদের শাস্তি দরকার।’ দামি কথা। শুনেই অনেকের মন ভরে যায়। হাজার হাজার শেয়ার হয়। ইলিয়ানার অ্যাভাটারের ধর্ষণের ভিডিও শেয়ার হয় আরও অনেক বেশি। অন্ধকার ঘরে দিনরাত বিষণ্ন বসে থাকা ইলিয়ানা কখনো হঠাৎ লিংকের নিচের কমেন্ট পড়ে।
‘ওর দরকারটা কী পড়েছিল এই গেম খেলার, যেখানে এ রকম কিছু একটা হতে পারে?’
‘মেয়েটা কি তখনই গেমটা বন্ধ করতে পারত না? নিজেই তো ধর্ষণের মজা নিতে চাইছিল!’
‘আচ্ছা, আমরা এসব গাঁজাখুরি কথা বাদ দিয়ে বাস্তব কিছু অপরাধে মনোযোগ দিই?’
‘কল অফ ডিউটি গেমে আমাকে না একজন খুন করেছিল! আমি কি খুনিদের শাস্তি চাইতে পারি?’
‘পারসোনাল স্পেস বাটন সে অফ করেনি কেন? লোকদেখানো এসব রেপের কাহিনি ফাঁদতেই তো?’
কমেন্টগুলোয় শত শত ‘হা হা’ প্রতিক্রিয়া পড়ে। ওদিকে ইলিয়ানার কান্নার শব্দে কখনো ঘরের অন্ধকার ঘোরতর হয়। কখনো চিৎকার শোনা যায়, ‘আরেকজনকে মারা কিংবা নিজে পরাজিত হয়ে খুন হওয়া—এটাই তো কল অব ডিউটির নিয়ম। কিন্তু মেটাভার্সে কি রেপড হওয়ার কোনো ক্লু ছিল আমার কাছে? একেবারে বাস্তবের মতো, বাড়িতে কিংবা পরিচিত মানুষের ফাঁদে মেয়েরা যখন ধর্ষণের শিকার হয়, তখন কি সেটা আগে থেকে জানতে পারে? তখন আমার মতোই সবাই ভয়ে কাঠ হয়ে যায়। কয়জন পারে পারসোনাল স্পেসে অনধিকার চর্চা করতে গেলে অন্যকে সময়মতো ঠেকাতে?’ চিৎকার করে করে খানিক রাগ ঝাড়া হলে ইলিয়ানা কান্নায় ভেঙে পড়ে। অস্পষ্ট শব্দগুলো তখন ধরা যায় কি না, আমি কী করে আমাকে বাঁচাব বাস্তবে কিংবা ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্ল্ডে? আজীবন এই আতঙ্ক সঙ্গে নিয়ে ঘুরব?...আমার নিষেধ কেউ শুনবে না!