২০২৩ হোক উপন্যাস শেষ করার বছর

কেউ ধূমপান ছাড়ার ঘোষণা দেন, আবার কেউ কেউ বলেন, ক্যারিয়ার নিয়ে সিরিয়াস হবেন। আমি এত বছরের জীবনে কখনোই নিউ ইয়ারে এমন কোনো রেজল্যুশন নিইনি। ২০২১–এর শুরুতে ভিশন বোর্ড বানিয়েছিলাম একটা। তাতে একাডেমিক লেখালেখি থেকে শুরু করে স্প্যানিশ শেখা, উকুলেলে বাজানো ইত্যাদি বহু কিছু তালিকাভুক্ত থাকলেও হয়ে ওঠেনি কোনোটাই। সেই থেকে আমার মনে হয় ‘এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না’ হলো আমার জীবনের আপ্তবাক্য। ভিশন বোর্ড কোথায় পড়েছে বাসা পাল্টানোর সময়, আর খুঁজিওনি। 

যত দূর মনে পড়ে উপন্যাস লিখতে শুরু করব—এমন একটা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলাম নিজেই নিজেকে। একুশ গিয়ে বাইশও চলে গেছে। উপন্যাস শুরু করেছিলাম ঠিকই, শেষ আর হয়নি। 

বাইশের ৩১ ডিসেম্বরে সজোরে ঘোষণা না দিয়ে নিজের মনে ঠিক করেছিলাম, কাল থেকে রোজ লিখতে বসব। হাতে গোনা দু–একজন বাদে বাংলাদেশের সব লেখকই জীবিকার জন্য কোনো না কোনো পেশায় নিযুক্ত আছেন। কাজেই পেশাগত দায়িত্ব ইত্যাদির অজুহাত দিয়ে লাভ নেই। গেল শনিবার ছিল ১ জানুয়ারি ২০২৩। তো রোববার সকালে আবিষ্কার করলাম, দ্য গড অব স্মল থিংস পড়ছি। কারণ, ফোর্থ ইয়ারের ক্লাসে এই বইটির ওপর লেকচার দিতে হবে। আমার দু–একজন সহকর্মীকে বলতে শুনেছি, উপন্যাস পড়ানো কঠিন। আমার মনে হয়, কঠিন লাগে কেননা, শিক্ষার্থীরা বড় আখ্যান পড়তে চান না, ক্ল্যাসিক হলে সিনেমা দেখে নেন, আর সমকালীন হলে সামারি পড়ে পরীক্ষা পাস করেন। উপন্যাসের জগতে ঢোকার আনন্দ কেউ না পেলে তাকে সেটি পড়তে বাধ্য করা অত্যাচারের শামিল বটে। শিক্ষক হিসেবে এই অত্যাচারটি আমাকে প্রায়ই করতে হয়। আশার ব্যাপার হলো, নিজে উপন্যাস লিখে ফেলতে পারলে অন্তত পাঠকের ওপর কোনো অত্যাচারের হেতু হতে হবে না আমাকে, আমার উপন্যাস তো আর পাঠ্য হচ্ছে না কোথাও! 

লেখক হিসেবে আমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখন একটাই, বড় একটি আখ্যান লেখা—এই বছর হোক বা আগামী বছরগুলোতে (যদিও এ বছরই লেখার ইচ্ছা)। যা লিখব সেটি দ্য গড অব স্মল থিংস–এর মতো অসাধারণ কিছু হবে—এত বড় দাবি করা বাতুলতামাত্র। পাঠক হিসেবে যা পড়ে আনন্দ পেয়ে আসছি সারা জীবন ধরে, সেই পদের একটা কিছু লিখতে না পারলে আর লেখক হওয়া কেন? সেই সূত্রে ২০২৩ কি আমার উপন্যাস শেষ করার বছর হবে?

আশা করতে তো দোষ নেই।