‘হানি ট্র্যাপ’ শব্দটি মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। এই ‘হানি ট্র্যাপ’ বিষয়টি কী? জানা যাক হানি ট্র্যাপের কয়েকটি কাহিনি।
দুই ব্রিটিশ তরুণ–তরুণী জোনাথন ও ক্যাথেরিন। অল্প কিছুদিনের পরিচয়ে একে অপরকে ভালোবেসে ফেলে। ক্যাথেরিন একটা সময় জোনাথনকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বিয়ের আগে ক্যাথেরিন চায় জোনাথনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে।
লন্ডন শহরে জোনাথনের পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা রিনির সঙ্গে পরিচয় হয় ক্যাথেরিনের। ধীরে ধীরে তারা বন্ধু হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে ক্যাথেরিন জোনাথনের বিশ্বস্ততা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে এবং এ ব্যাপারে রিনির সহায়তা চায়। রিনি তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় জেরেমির সঙ্গে, যে একজন প্রাইভেট গোয়েন্দা। জোনাথনের জন্য একটি ‘হানি ট্র্যাপ’ বা ভালোবাসার ফাঁদের আয়োজন করে জেরেমি। জোনাথনের সঙ্গে অপূর্ব সুন্দরী এক নারীর ডিনারের আয়োজন করা হয়। পুরো সময়টি ভিডিও করা হয় গোপনে। কিন্তু এই ভিডিওতে জোনাথনকে সন্দেহ করার মতো কিছু পাওয়া যায় না। এতে ক্যাথেরিন বিব্রত বোধ করে এবং বিশ্বস্ততা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বিয়ে করে জোনাথনকে। একই সঙ্গে প্রাইভেট গোয়েন্দা জেরেমির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে ক্যাথেরিন।
আমরা বলছি, ‘হানি ট্র্যাপ’ নামে একটি থ্রিলার চলচ্চিত্রের গল্প। মাইকেল জি গানথার পরিচালিত সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ২০০২ সালে।
গল্পে ফিরে যাই। ক্যাথেরিন-জোনাথন দম্পতি বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমায় যায়। ফিরে আসার পর সবকিছু ভালোমতোই চলছিল। কিন্তু অজ্ঞাত টেলিফোন এবং রাতবিরাতে জেরেমির হাজির হওয়া এই দম্পতিকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। একদিন ক্যাথেরিনের হাতে এসে পৌঁছায় ডিনারের সেই রাতে অজ্ঞাত সুন্দরী নারীর সঙ্গে জোনাথনের অন্তরঙ্গ ছবি। এভাবে ক্যাথরিনের মনে ফিরে আসে পুরোনো সন্দেহ। এবার ক্যাথেরিন নিজেই তার স্বামীর গোপন সত্য আবিষ্কারের চেষ্টায় বেরিয়ে পড়ে। সিনেমা মোড় নেয় অশুভ পরিণতির দিকে।
শব্দটি ‘হানি ট্র্যাপ’। দুনিয়াব্যাপী বহু সিনেমা, ওয়েব ও টিভি সিরিজ নির্মিত হয়েছে ‘হানি ট্র্যাপ’কে উপজীব্য করে। বিশ্বখ্যাত জেমস বন্ড সিরিজের একাধিক চলচ্চিত্রে রয়েছে ‘হানি ট্র্যাপ’ ঘিরে গল্প।
হানি ট্র্যাপ একধরনের অপকৌশল। বাংলা অনুবাদে একে ‘ভালোবাসার ফাঁদ’ নামে অভিহিত করা যেতে পারে। সহজ কথায় এটা হলো যৌনতার প্রলোভন দেখিয়ে বিপক্ষ শিবির থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি। যৌনতা ও শারীরিক সম্পর্কের প্রলোভন দেখিয়ে কাজ সমাধা করে নেওয়ার নামই হানি ট্র্যাপ। নিছক মজা করার জন্য এই ফাঁদ পাতা হয় না, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি—রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী বা গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়াই থাকে এর উদ্দেশ্য।
সাহিত্যে ‘হানি ট্র্যাপ’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৭৪ সালে বের হওয়া ‘টিঙ্কার, টেইলর, সোলজার, স্পাই’ নামে এক গোয়েন্দা উপন্যাসে। ব্রিটিশ-আইরিশ লেখক জন লে ক্যারের এই উপন্যাসে শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল বলে বিভিন্ন লেখাপত্রে পাওয়া যায়।
হানি ট্র্যাপ একধরনের অপকৌশল। বাংলা অনুবাদে একে ‘ভালোবাসার ফাঁদ’ নামে অভিহিত করা যেতে পারে। সহজ কথায় এটা হলো যৌনতার প্রলোভন দেখিয়ে বিপক্ষ শিবির থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি। যৌনতা ও শারীরিক সম্পর্কের প্রলোভন দেখিয়ে কাজ সমাধা করে নেওয়ার নামই হানি ট্র্যাপ। নিছক মজা করার জন্য এই ফাঁদ পাতা হয় না, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি—রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী বা গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তথ্য হাতিয়ে নেওয়াই থাকে এর উদ্দেশ্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং এর পরবর্তী সময়ে স্নায়ুযুদ্ধকালে হানি ট্র্যাপে ফেলে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন পশ্চিমাদের কাছ থেকে গোপন তথ্য জানার চেষ্টা করেছে। মস্কোর কাছ থেকে তথ্য হাতিয়ে নিতে একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে পশ্চিমারাও।
হানি ট্র্যাপের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে এসেছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নাম। পরমাণু শক্তিধর আমাদের দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধেও হানি ট্র্যাপে ফেলে পরস্পরের তথ্য হস্তগত করার অভিযোগ আছে। হানি ট্র্যাপের মধ্য দিয়ে কখনো কখনো সত্য বেরিয়ে আসে, আবার নিরপরাধ লোক ক্ষণিকের ভুলে ফেঁসেও যেতে পারে।
হানি ট্র্যাপ এমন একটা ফাঁদ, যা এড়ানো কঠিন।
ভদ্রলোকের নাম মরদেচাই ভানুনু। তিনি একজন ইসরায়েলি টেকনিশিয়ান। কাজ করতেন দেশটির দিমোনা পারমাণবিক ক্ষেত্রে। ১৯৮৬ সালে তিনি আচমকা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের কাছে গিয়ে দাবি করলেন, ইসরায়েলের কাছে পারমাণবিক বোমা আছে। নিউজটি ব্রেকিং, তবে সত্যাসত্য যাচাইয়েরও দরকার আছে। আবার ভানুনু যে পদে আছেন, তাতে খবরটি উড়িয়েও দেওয়া যায় না।
এমন অবস্থায় ব্রিটিশ দৈনিক ‘সানডে টাইমস’ ভানুনুকে লন্ডনে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু এই বন্দিজীবন তাঁর ভালো লাগে না। তিনি লন্ডনের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে লাগলেন। এমন সময় ভানুনুর সঙ্গে পরিচয় ঘটল এক সুন্দরী তরুণীর। পরিচয় থেকে প্রণয়। তাঁরা ডেটে যেতে চাইলেন। তবে লন্ডনে নয়, রোমে। ‘সানডে টাইমস’ কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রেমযাত্রায় বাধা দেওয়া সংগত মনে করেনি।
ভানুনু রোমে পৌঁছানোর পর আটক হলেন মোসাদ এজেন্টদের হাতে। জোরপূর্বক শরীরে নেশাজাতীয় দ্রব্য প্রয়োগ করে জাহাজে করে সোজা তাঁকে নিয়ে আসা হলো তেল আবিবে। বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে কারাদণ্ড হলো ১৮ বছর। ২০০৪ সালে মুক্তি মিলল তাঁর। তবে এ মুক্তিও একধরনের কারাগারের মতোই। এখানে যাওয়া যাবে না, ওর সঙ্গে কথা বলা যাবে না—এমন বিধিনিষেধের জালে বন্দী ছিল তাঁর জীবন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ভানুনু যাঁর প্রেমে মত্ত হয়েছিলেন, সেই তরুণী ছিলেন মোসাদেরই এজেন্ট। চেরিল বেন টভ ওরফে সিন্ডি নামের সেই তরুণী যখন ভানুনুর সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করছেন, তখন তিনি বিবাহিত। কিন্তু ভানুনু কিছুই বুঝতে পারেননি। হানি ট্র্যাপের অন্যতম উদাহরণ হিসেবে এ ঘটনাকে সামনে আনা হয়।
কখনো কখনো ‘হানি ট্র্যাপ’ অপারেশন চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। এতে নিরপরাধ লোকও ফেঁসে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। র্যাচেল নিকেল হত্যাকাণ্ড ঘিরে এমন এক হানি ট্র্যাপ পেতেছিল ব্রিটিশ পুলিশ, যে কারণে নিন্দিত হয়েছিল তারা।
দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের উইম্বলডন এলাকা। ১৯৯২ সালের ১৫ জুলাই সকালবেলা। বেশ ঝকঝকে আবহাওয়া। রোদে একটু বেড়িয়ে আসা যাক, এমনটা ভেবে দুই বছরের ছেলে অ্যালেক্স ও পোষা কুকুরকে নিয়ে হাঁটতে বের হয় ২৬ বছর বয়সী র্যাচেল নিকেল। মনের আনন্দে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসেন নির্জন একটি এলাকায়। হঠাৎ কোত্থেকে ছুরি হাতে এসে এক লোক ধাক্কা দিয়ে র্যাচেলকে রাস্তার ওপারে নিয়ে গেল। ফেলে দিল মাটিতে। ছোট অ্যালেক্সকে সরিয়ে সমানে ছুরি চালাতে লাগল র্যাচেলের শরীরে। গলা চিরে গেল তার। তবু থামাথামি নেই। ততক্ষণে ৪১ বার আঘাত করা হয়ে গেছে। এবার মৃতদেহের ওপর বিকৃত কামনা চরিতার্থ করে পালিয়ে গেল সে।
খানিক পরে এক পথচারী র্যাচেলের ছিন্নভিন্ন দেহ খুঁজে পায়। ছোট্ট অ্যালেক্স মায়ের লাশ আঁকড়ে বসে ছিল আর ‘ওয়েক আপ মম’ বলে ডাকছিল বারবার।
স্বাভাবিকভাবেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রচণ্ড চাপে পড়ে ব্রিটিশ পুলিশ। কারণ, সংবাদমাধ্যমে অনবরত প্রতিবেদন করা হচ্ছিল। হবেই না বা কেন? উইম্বলডনের মতো এলাকায় দিনের আলোয় এমন হত্যাকাণ্ড! নিরাপত্তার এমন দুর্বলতায় ক্ষুব্ধ ছিল সাধারণ ব্রিটিশরা।
এ হত্যা মামলার তদন্তের ভার পড়ে জন ব্যাসেটের ওপর, যিনি ছিলেন ডিটেক্টিভ সুপারিনটেনডেন্ট। এই মামলায় বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করা হয় ৩২ জনকে। আর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ৫৪৮ জনকে। এত লোককে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য থেকে বোঝা যায়, ব্রিটিশ পুলিশ ঘটনাটি নিয়ে কতটা বিচলিত ছিল। কিন্তু কোনো কূলকিনারা বের করা যায়নি। পুলিশের তো চুল ছেঁড়ার মতো অবস্থা। এমন সময় কলিন স্ট্যাগ নামের একজনের দিকে চোখ পড়ে পুলিশের।
ঘটনাস্থলের কাছেই ছিল কলিন স্ট্যাগের বাসা। বেকার মানুষ। কুকুর নিয়ে হাঁটতে বের হতো সে। কলিনের এক ভাই ধর্ষণের দায়ে জেল খাটছিল, অর্থাৎ ভাই যেহেতু অপরাধী, সে–ও অপরাধী হতে পারে। পুলিশ অভিযান চালাল কলিনের বাসায়। পাওয়া গেল ছুরি ও কালো দস্তানা। ঘরে আঁকা ছিল পেন্টাগ্রাম নামের একধরনের প্রতীক। এটা নাকি শয়তান উপাসনার জন্য আঁকা হয়। ঘরে ছিল কালো জাদু ও অতিপ্রাকৃতবিষয়ক নানা বই। কিন্তু নিকেল খুনের সঙ্গে কলিনকে জড়ানোর মতো কোনো আলামত পাওয়া গেল না।
কী করা যায়, ভাবছে ব্রিটিশ তদন্তকারীরা। ওই বছরের ডিসেম্বরে হঠাৎ এক নারী যোগাযোগ করল তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বলল, কলিনের সঙ্গে তার প্রেম ছিল। কিন্তু দিনে দিনে তার চিঠির ভাষা যৌন সহিংসতার দিকে মোড় নেয়। ফলে সে কলিনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে।
এমন বক্তব্যে তদন্তকারীরা যেন বড় মওকা পেয়ে গেল। মামলার গোয়েন্দা কর্মকর্তা কেথ পেডার যোগাযোগ করল ফরেনসিক মনোবিজ্ঞানী পল ব্রিটনের সঙ্গে। পল ব্রিটন প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিকেলের হত্যাকারী প্রোফাইল তৈরি করল। বলল, খুনি সম্ভবত সহিংস যৌন তাড়নায় ভুগছে, যা কলিনের সঙ্গে মিলে যায়। পুলিশি নিঃসন্দেহ হলো, কলিন হত্যাকারী, কিন্তু লাগবে প্রমাণ।
ঠিক এমন পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ পুলিশ পেতেছিল মধুর ফাঁদ। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের বিশেষ ইউনিট থেকে নিয়ে আসা হলো লিজি জেমসকে। কলিনের বন্ধুর বন্ধু হিসেবে লিজি তার ঘনিষ্ঠ হয়। চিঠি লেখে, লন্ডনের হাইড পার্কে দেখা করে। যৌনতা নিয়ে তার বিকৃত ফ্যান্টাসির কথা জানিয়ে প্রমাণ করতে চায় কলিন ও তার মানসিকতা একই। একপর্যায়ে সরাসরি বলে, উইম্বলডনের খুনটা যদি কলিন করেও থাকে, তবু তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে আপত্তি নেই। উত্তরে কলিন দৃঢ়ভাবে বলে, সে খুন করেনি। তবু পুলিশ এ মামলায় কলিনকে গ্রেপ্তার করে। ১৩ মাস তাকে কারাবাস করতে হয়।
পরের বছর (১৯৯৪) মামলা আদালতে গেলে ফাঁস হয় সব জারিজুরি। পুলিশের অভিযোগপত্র দেখে আঁতকে ওঠেন বিচারক। হানি ট্র্যাপের মাধ্যমে পাওয়া সব তথ্য নাকচ করে দেন তিনি। আইনানুগ পদ্ধতির বাইরে যাওয়ায় তীব্র ভর্ৎসনা করেন পুলিশকে। বেকসুর খালাস পায় কলিন। খালাস পেলে কী হবে! গণমাধ্যম তো তত দিনে তাকে র্যাচেলের খুনি বলে রায় দিয়ে দিয়েছে। তবে কলিন ছেড়ে দেওয়ার পাত্র ছিল না। হানি ট্র্যাপের অভিযোগে ব্রিটিশ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করে ৭ লাখ ৬ হাজার পাউন্ড। প্রেমের অভিনয় করতে গিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে লিজিও। দেড় বছর ছুটি কাটাতে হয় তাকে, নিতে হয় আগেভাগে অবসর।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য র্যাচেলের খুনি ধরা পড়েছিল, সে আরেক গল্প।
দুনিয়াজোড়া হানি ট্র্যাপের গল্পের যেন শেষ নেই। মাতা হারির গল্পটা বলতেই হয়। তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে। মাতা হারি ছিলেন একজন ডাচ নৃত্যশিল্পী। বসবাস ও ক্যারিয়ার এগিয়ে নেওয়ার জন্য চলে গিয়েছিলেন প্যারিসে। অভিযোগ ওঠে, ফরাসির খ্যাতনামা রাজনীতিবিদদের প্রলুব্ধ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করে নিতেন তিনি। আর তা সরবরাহ করতেন শত্রুপক্ষ অর্থাৎ জার্মানদের। একসময় তিনি ধরা পড়ে যান। ১৯১৭ সালের ১৫ অক্টোবর ফায়ারিং স্কোয়াডে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ফরাসি সরকার। প্যারিসে তাঁর বিচার চলার সময় একজন আইনজীবী মাতা হারির কার্যক্রমকে ‘হানি ট্র্যাপ’ আখ্যায়িত করেছিলেন।
যুগ পাল্টে গেছে। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় অ্যাডাল্ট ডেটিং সাইটগুলো হয়ে উঠেছে হানি ট্র্যাপের মোক্ষম জায়গা। বড় ব্যবসায়ী, পদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিক, সাংবাদিক কিংবা শিল্পীদের সঙ্গে অ্যাডাল্ট সাইটের প্রেমিক-প্রেমিকারা অন্তরঙ্গ, কিংবা নগ্ন ভিডিও চ্যাট করে পরে তা ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করছেন। কিংবা কখনো তাঁরা কোনো পক্ষের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে টার্গেট ব্যক্তিকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন।
কথা বলেছিলাম দেশের শীর্ষস্থানীয় অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ উমর ফারুকের সঙ্গে। তাঁর মতে, হানি ট্র্যাপ অবশ্যই প্রতারণামূলক অপরাধ। সংঘবদ্ধ অপরাধীরা সাধারণত এমন প্রতারণার ফাঁদ বেশি পাতে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি এদের পেছনে কাজ করে। যাদের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কম, তারাই এ ধরনের প্রতারণার শিকার বেশি হয়।
অধ্যাপক উমর ফারুক মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি এ ধরনের ফাঁদ তৈরি করে, তাহলে সেটা নৈতিক ও আইনগতভাবে সিদ্ধ নয়। তাঁর মতে, এ ধরনের মধুর ফাঁদ থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম উপায় হলো সচেতনতা বাড়ানো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই এই সচেতনতার কাজ করতে পারে।