শহীদ নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর শততম জন্মদিন ছিল ২৭ নভেম্বর। তাঁর গদ্যের শক্তি টের পাওয়া যায় সমালোচনামূলক লেখায় এবং নাটকের সংলাপে। আর নাটকের বাইরে তাঁর আগ্রহের ক্ষেত্র ছিল ভাষা। বাংলা সাহিত্যে এই লেখকের কৃতিত্বের জায়গাটি কোথায়? তাঁর নাটকগুলো কেন জনপ্রিয় হয়েছিল? জন্মশতবর্ষে দাঁড়িয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা।
পাকিস্তান-পর্বের চব্বিশ বছর মুনীর চৌধুরীর স্ফুরণের কাল। এটি তাঁর খ্যাতির কালও। ১৯৪৭ সালে তিনি ইংরেজি বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন। ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত ছাত্র ছিল না। ছাত্রীদের সংখ্যা ছিল আরও কম। তখন থেকেই মুনীর চৌধুরীর নাম সবাই জানত। বামপন্থী রাজনীতি করতেন। এ ছাড়া কিছু চমৎকার ছোটগল্প আর নাটকও লিখে ফেলেছেন তখন। তবে জনপ্রিয়তার মূল কারণ ছিল তাঁর বক্তৃতা করার অদ্ভুত ক্ষমতা।
কথাবার্তায় তাঁর একটি সরস, কৌতূহল-উদ্দীপক ভঙ্গি ছিল। এই ভঙ্গি তাঁর নাটকের সংলাপেও সঞ্চারিত হয়েছে। মুখরা রমণী বশীকরণ থেকে একটা নমুনা দেখা যাক।
কাহিনির মুখরা রমণীর নাম ক্যাথেরিনা। তার সঙ্গে পেট্রুশিওর প্রথম সাক্ষাতের দৃশ্য। পেট্রুশিও বলে, ‘সুপ্রভাত, কেথি, সুপ্রভাত। অন্যের মুখে শুনেছি বলেই আপনাকে ওই নামে ডাকলাম।’ নাম সংক্ষেপ করার কারণে ক্যাথেরিনা ব্যঙ্গ করতে ছাড়ে না, ‘ঠিকই শুনেছেন। তবে আপনি সম্ভবত কানে কিছু খাটো। যারা আমার কথা বলাবলি করে, তারা আমাকে ক্যাথেরিনা বলেই ডাকে।’
ক্যাথেরিনার পাণিপ্রত্যাশী পেট্রুশিও এতে মোটেও দমে যায় না। রূঢ়ভাষী ক্যাথেরিনাকে একটানা মিথ্যা প্রশংসায় ভাসিয়ে তারপর বলে, ‘... এই জনশ্রুতিই আমাকে টেনে এনেছে এখানে আপনাকে পত্নীরূপে আকাঙ্ক্ষা করতে।’ পেট্রুশিওর কথায় ক্যাথেরিনা গলে যায় না। বরং বলে, ‘টেনে এনেছে। এতক্ষণে আসল কথাটা ফাঁস করে দিয়েছেন। যে আপনাকে এখানে টেনে এনেছে, তাকেই আবার বলুন টেনে অন্যখানে নিয়ে যেতে। আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল আপনি আসলে টানাহ্যাঁচড়া করারই বস্তু।’
পাল্টা জবাব দেওয়ার আগে পেট্রুশিও জানতে চায়, ‘সেটা কী রকম?’ ক্যাথেরিনা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে, ‘যেমন ধরুন, কেদারা-কুর্সি।’ তখন পেট্রুশিও সাপটা জবাব দেয়, ‘ভালো বলেছেন। তাহলে, আসন গ্রহণ করতে আজ্ঞা হোক।’
মূল নাটক শেকস্পিয়রের লেখা। সেখানে সংলাপ লেখা হয়েছে পদ্যভাষায়। আর মুনীর চৌধুরী অনুবাদ করেছেন গদ্যভাষায়। তবে মূলের সঙ্গে মিলিয়ে পড়লে দেখা যায়, পদ্য-সংলাপ গদ্যে লেখার কারণে ভাব কোথাও ক্ষুণ্ন হয়নি। এমনকি সংলাপের গতি শ্লথ হয়নি, হাস্যরসও ব্যাহত হয়নি।
মুনীর চৌধুরীর নাটকের সংলাপ দারুণ আকর্ষণীয় হয়। কারণ, এক চরিত্রের সংলাপের জবাবে অপর চরিত্র কী বলবে, দর্শকের জন্য তা অভাবনীয় থাকে। অনুবাদ নাটকেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। জমা খরচ ও ইজা নাটকে জয়নাব বলে, ‘আমি জীবনে কারও কাছ থেকে এ রকম কথা শুনিনি।’ উত্তরে জামাল বলে, ‘না শোনারই কথা। হিসাবের এই নিয়ম আমিই প্রথম চালু করলাম।’ কিংবা মহারাজ নাটকে গমীর বলে, ‘না না ওকে গুলি করবেন না। ও তো এমনিতেই আমাদের জন্য মরতে চায়।’ জবাবে মহারাজ বলে, ‘বেশি বকবক করলে ওকে চাইতে হবে না, আমিই খতম করে দেব।’
দৃষ্টিভঙ্গিতে রঙ্গপ্রিয়তা থাকায় নিদারুণ বিষয়কেও মুনীর চৌধুরী নাটকে তুলে আনতে পারতেন পরিহাসের মাধ্যমে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় পলাশী ব্যারাক নাটকের কথা। দেশভাগের পর পলাশী ও নীলক্ষেতে বানানো হয় সারি সারি লম্বা ব্যারাক। সেগুলোর মধ্যে থাকতেন কলকাতা থেকে আসা কয়েক হাজার কেরানি। তাঁদের নিত্যদিনের বাদানুবাদ উপলক্ষ করেই লেখা পলাশী ব্যারাক। এ নাটকের সংলাপে নাজিমুদ্দীন-নুরুল আমিনের মুসলিম লীগ সরকারের প্রতি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও আছে।
তবে এ নাটকে কৌতুককর দিকটিই প্রধান। নাটকের কেরানি চরিত্র হাবিব আরেক কেরানি মারুফকে কাগজ-কলম এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘করুন, হিসেব করুন। দেখি আপনি কত বড় জাঁদরেল ম্যাথমেটিশিয়ান। প্রতি ঘর প্রস্থে চোদ্দ হাত দৈর্ঘ্যে পনেরো হাত, প্রতি ব্লকে পঁচিশটা ঘর, প্রতি ঘরে দশ জন করে মানুষ, সবগুলো ব্যারাক মিলিয়ে এখানে থাকে চার হাজার কর্মচারী। এক একটা ব্লকের জন্য মাত্র একটা করে কল, তাতে পানি থাকবে সকাল সাতটা থেকে দশটা অবধি, কলের মুখের ব্যাস কোয়ার্টার ইঞ্চি, পানি পড়বে ঝির ঝির করে—’। হাবিব জানতে চান, এই বাস্তবতায় আদৌ সকালে অফিসে যাওয়ার আগে মুখ ধোয়ার পানি পাওয়া যাবে কি না!
১৯৪৭ সালে অমুসলমান শিল্পী-সাহিত্যিকদের অনেকে দেশ ছেড়ে চলে যান। তখন ঢাকা বেতারে প্রচারের জন্য নাটকের অভাব দেখা দেয়। নাটক বিভাগের প্রধান নাজির আহমেদ মুনীর চৌধুরী ধরে নিয়ে যেতেন নাজিমুদ্দিন রোডের বেতারকেন্দ্রে। সেখানে গোশত-পরোটা, চা, পান এসব দিয়ে তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হতো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মুনীর নাটক লিখে ফেলতেন।
নাটক লেখার ব্যাপারে মুনীর চৌধুরীর মন বুঝি প্রস্তুতই থাকত। নইলে কায়কোবাদের মহাশ্মশান পড়ার পর রক্তাক্ত প্রান্তর লেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠবেন কেন! যে যুদ্ধের কাহিনিকে ভিত্তি করে এই ঐতিহাসিক নাটক রচিত, তার পরিণতি দর্শকের জানা। তবু রক্তাক্ত প্রান্তর জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হলো, এর সংলাপ। পেশওয়ারের সেনাপতি ইব্রাহিম কার্দি আর তাঁর পত্নী জোহরা বেগম স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দুই বিরুদ্ধ পক্ষে যুদ্ধে নামেন। তাঁদের মধ্যে আদর্শের ভিন্নতা থাকলেও দাম্পত্য-প্রেমের অবসান হয় না।
নাটকের অন্তিমে ইব্রাহিম কার্দির মৃত্যু হলে জোহরার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয় একরাশ বিষণ্ন পঙ্ক্তি, ‘তুমি কেন সাড়া দিলে না? কেন জেগে উঠলে না? কেন ঘুমিয়ে পড়লে? আমি এত কষ্টের আগুনে পুড়ে, মনের বিষে জরজর হয়ে এত রক্তের তপ্তস্রোত সাঁতরে পার হয়ে তোমাকে পাবার জন্য ছুটে এলাম—আর তুমি কিনা ঘুমিয়ে পড়লে। ...’
বৃহৎ মানবপ্রেমের প্রতিফলনও আছে মুনীর চৌধুরীর নাটকে। ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে রচনা করেন মানুষ নাটক। এতে দেখা যায়, আব্বা কাঁপা হাতে পিস্তল তুলে বলেন, ‘কে, কে তুমি?’ তখন ঘরে ঢুকে পড়া লোকটি বলে, ‘আমি—আমি মানুষ।’ ছোট্ট একটা সংলাপ; কিন্তু কী গভীর অর্থবিস্তারী। মানুষের ধর্ম বা অন্য পরিচয়ের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে—সে মানুষ।
কবর নাটকেও সংলাপের শক্তি দেখা যায়। নাটকের এক জায়গায় নেতা চরিত্র একজন শহীদকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘দেখ ছেলে, আমার বয়স হয়েছে। তোমার মুরব্বিরাও আমাকে মানে। বহুকাল থেকে এ দেশের রাজনীতি আঙুলে টিপে টিপে গড়েছি, শেপ দিয়েছি। কওমের বৃহত্তম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের, বলতে পার, আমিই একচ্ছত্র মালিক! কোটি কোটি লোক আমার হুকুমে ওঠে বসে—।’
তখন নেতার কথা শেষ হওয়ার আগেই মূর্তি বলে, ‘কবরে যাব না।’ প্রত্যুত্তরে নেতা বলার চেষ্টা করেন, ‘আগে কথাটা ভালো করে শোনো। তুমি বুদ্ধিমান ছেলে, শিক্ষিত ছেলে। চেষ্টা করলেই আমার কথা বুঝতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে উঁচু ক্লাসে উঠেছ। অনেক কেতাব পড়েছ। তোমার মাথা আছে।’ তখন মূর্তি বলে, ‘ছিল। এখন নেই। খুলিই উড়ে গেছে। ভেতরে যা ছিল রাস্তায় ছিটকে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।’ প্রত্যুত্তরের মধ্য দিয়েই মুনীর চৌধুরীর নাটক জমে ওঠে।
নাট্যকার না হলে মুনীর চৌধুরী গল্পকারও হতে পারতেন। ছোটগল্প লেখার মধ্য দিয়ে তাঁর সাহিত্যচর্চার সূচনা। তবে কালের গর্ভে প্রায় সব গল্পই হারিয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত গল্পসংগ্রহতে মুনীর চৌধুরীর ‘মানুষের জন্য’ গল্পটি এখনো আছে। নিরন্ন মানুষের ক্রোধ, ভালোবাসা ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিয়ে লেখা। এ গল্পে চরিত্রের সংলাপে আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ আছে। আর আছে লেখকের সহজাত কৌতুকপ্রবণতা।
মুনীর চৌধুরী সমালোচনামূলক প্রবন্ধ লেখা শুরু করেন অনেক পরে। ছাত্রদের ক্লাসের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে যা পড়তেন, তার ওপর ভিত্তি করে লেখেন মীর-মানস। মীর মশাররফ হোসেনের কয়েকটি গ্রন্থের আলোচনা আছে এ বইয়ে। এ ছাড়া উনিশ ও বিশ শতকজুড়ে সাহিত্য সমালোচনার ক্ষেত্রে তুলনামূলক ধারা বেশ জনপ্রিয় হয়। মুনীর চৌধুরীর এ ধারার জনপ্রিয় বই তুলনামূলক সমালোচনা।
বাঙলা গদ্যরীতি বইয়ে বাংলা ভাষার লিপি, বানান ও গদ্যরীতির পরিবর্তনের উদ্যোগকে সমালোচনা করেছেন তিনি। ভাষার সঙ্গে জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গটি পাকিস্তান-পর্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ছিল। তবে মুনীর চৌধুরী ভাষার আকস্মিক ও বিপ্লবাত্মক পরিবর্তনের বিরোধিতা করে গেছেন সব সময়। বিশেষ করে উর্দু বা রোমান হরফে বাংলা লেখার তিনি ঘোর বিরোধী ছিলেন।
পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৯ সালে পূর্ববঙ্গ সরকার ‘ইস্ট বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ কমিটি’ গঠন করে। এই কমিটির লক্ষ্য ছিল বাংলা ভাষাকে ‘পাকিস্তানের মানুষের প্রতিভা ও কৃষ্টির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ’ করা। কমিটি ‘শহজ বাংলা’ নামে নতুন ভাষারীতির প্রস্তাব করে। প্রস্তাবে সংস্কৃতমূল শব্দের বদলে যথাসম্ভব সব ক্ষেত্রে আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করতে বলা হয়। প্রচলিত লিপি ও বানান-পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়। মুনীর চৌধুরী এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেন, যাঁরা ‘ভাষাতত্ত্বে অনভিজ্ঞ, ব্যাকরণের মর্মোদ্ধারে অনভ্যস্ত, অভিধানে অনাস্থাবাদী’, তাঁরাই এমন প্রস্তাব করতে পারে। এই প্রস্তাব অবশ্য শেষ পর্যন্ত চাপা পড়ে যায়।
এরপর ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল বাংলা ভাষা, ব্যাকরণ ও বর্ণমালা সংস্কারের জন্য আরেকটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির সদস্য হয়েও মুহম্মদ এনামুল হক, মুহম্মদ আবদুল হাই ও মুনীর চৌধুরী সুপারিশকৃত প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেননি। এই তিনজন পরে যৌথভাবে মন্তব্য করেন, বাংলা বানান ও লিপির ব্যাপারে যে ধরনের মৌলিক পরিবর্তন সুপারিশ করা হয়েছে, তা সম্পাদন করা হলে ভাষায় নৈরাজ্য তৈরি হবে।
মুনীর চৌধুরী বাংলা ভাষাকে এর প্রবণতা অনুযায়ী চলতে দিতে চেয়েছেন। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের ব্যাপারে তিনি উদ্যোগী হয়ে কিছু কাজও করেন। বাংলা বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পর চালু করেন সর্বাধুনিক বাংলা টাইপরাইটার। উচ্চশিক্ষায় বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সেই প্রস্তাব কখনোই বিবেচনায় নেওয়া হয়নি, তবু তিনি বার বার প্রস্তাব দিয়ে গেছেন। মুনীর চৌধুরী বলতেন, ‘রক্ষণশীলতার শেষ দুর্গ’ হলো বিশ্ববিদ্যালয়। এই দুর্গ ভাঙতে না পারলে সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন সম্ভব হবে না।
মুনীর চৌধুরী বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তবে শুরুতে যোগ দিয়েছিলেন ইংরেজি বিভাগে। এর বছর দুয়েক পরে ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বেগবান হয়। ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখে শিক্ষকদের প্রতিবাদ সভা আহ্বান করতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। ওই সময় তাঁকে চাকরিচ্যুতও করা হয়। প্রায় দুই বছর জেলে ছিলেন। জেলে থাকতেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। বাংলায় এমএ পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণও হন। এরপর জেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে ইংরেজি বিভাগে এবং এর স্বল্পকাল পরে মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের আমন্ত্রণে বাংলা বিভাগে যোগ দেন।
যোগদানের পর তিনি মধুসূদন ও বঙ্কিমচন্দ্র পড়াতে শুরু করেন। তবে কবিতা বা উপন্যাস-প্রবন্ধের চেয়ে বেশি পছন্দ করতেন নাটক। মুনীর চৌধুরীর নাট্যপ্রেম নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি জেলে থাকা অবস্থায় অনুবাদ করেন বার্নার্ড শর নাটক কেউ কিছু বলতে পারে না। জেলে থাকতেই লিখেছেন তাঁর কালোত্তীর্ণ নাটক কবর। যখন বিদেশে যেতেন, সব ছেড়ে ছুটতেন সেখানকার থিয়েটারে।
মুনীর চৌধুরীর সময় বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে ভাষাবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা ছিল। মুনীর চৌধুরী ভাষাতত্ত্ব পড়ার জন্য ১৯৫৬ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তাঁর শিক্ষক চার্লস ফার্গুসনের সঙ্গে মিলে বাংলা ধ্বনি-সংগঠন বিশ্লেষণ করেন। এটি আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকা ল্যাঙ্গুয়েজ-এ প্রকাশিত হয়।
মুনীর চৌধুরী ছিলেন বহুমাত্রিক লেখক ও গবেষক। এই কর্মপ্রাণ নাট্যকার, অনুবাদক, শিক্ষাবিদ, সাহিত্য-সমালোচক ও ভাষাপণ্ডিত ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হন। তিনি কর্মের মধ্যে প্রাণ খুঁজে পেতেন—প্রাণের অবসান হলেও তাঁর কর্ম টিকে রয়েছে জনপ্রিয় নমুনা হয়ে।