দিব্যময়ী দাশ (ওপরে) ও ইয়ারুন্নেসা খানমের (নিচে) সঙ্গে সিলেট বেতার কেন্দ্রের খাতায় থাকা ‘নয়া দামান’ গানের তথ্য অবলম্বেন গ্রাফিক্‌স
দিব্যময়ী দাশ (ওপরে) ও ইয়ারুন্নেসা খানমের (নিচে) সঙ্গে সিলেট বেতার কেন্দ্রের খাতায় থাকা  ‘নয়া দামান’ গানের তথ্য অবলম্বেন গ্রাফিক্‌স

সবিশেষ

‘নয়া দামান’ গানের রচয়িতার খোঁজে

কী একটা চিবোচ্ছেন তিনি। প্রশ্ন করছি। উত্তর দিচ্ছেন রামকানাই দাশ। শাস্ত্রীয় সংগীতের গুরু, লোকগানেরও প্রবাদপ্রতিম শিল্পী তিনি। সিলেট নগরের করেরপাড়া এলাকায় তাঁর বাসায় বসেই সাক্ষাৎকার নিই। সময়টা ২০১৩ সালের মে মাসের শুরু। পরে, সে সাক্ষাৎকার রামকানাই দাশের নন্দনভুবন: অন্তরঙ্গ আলাপ (২০১৪) শিরোনামে বই হয়ে বেরোয়। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন, ‘আইলো রে নুয়া জামাই’ গানটি তাঁর মা দিব্যময়ী দাশের রচনা। যেদিন বইটা প্রকাশিত হয়, সেদিনই মারা যান রামকানাই দাশ।

এরও আগে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে অসময়ে ধরলাম পাড়ি (২০০৫) শীর্ষক তাঁর একটি সিডি-অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। সেখানে গানটি তাঁর মায়ের ভণিতাসহ গেয়েছেন। আমাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের বছর দুয়েক আগে থেকে অন্তত দুটো ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে গানটা তাঁর মায়ের রচিত বলে উল্লেখ করেছেন। এ পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধে গত ফেব্রুয়ারি মাসে। সিলেটের সংগীতশিল্পী তসিবা বেগম ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী তরুণ সুরকার মুজাহিদ আবদুল্লাহ (মুজা) গানটিকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেন। এরপর গানটি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তখনই শুরু হয় গীতিকারের খোঁজ। এপ্রিলের শেষে ফেসবুকে শাকুর মজিদসহ কয়েকজন জানান, এটি দিব্যময়ীর লেখা। বিপরীতে অনেকেই জানান, তসিবা ‘নয়া দামান’ গানটি গেয়েছেন, ‘নুয়া জামাই’ নয়। তিনি যেটি গেয়েছেন, সেটি লোকগান। সুনির্দিষ্ট করে বললে সিলেটের মুসলিম সম্প্রদায়ে প্রচলিত বিয়ের গীত। শুরু হয় পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল বিতর্ক।

জানিয়ে রাখা দরকার, আমার বইটা প্রকাশিত হওয়ার পর একাধিক শিল্পী জানিয়েছেন, গানটি দিব্যময়ীর লিখিত নয়। এটি ‘নয়া দামান’ লোকগানের আদলে রচিত। এ তথ্যের আলোকে চলে আমার অনুসন্ধান। কিছুদিন পর গানের একাধিক পাঠও পেয়ে গেলাম। তবে পর্যবেক্ষণ আর এগোয়নি। সম্প্রতি গানের রচয়িতা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হলে আরও একাধিক পাঠ সংগ্রহ করি। বর্তমানে গানের আটটি পাঠ সংগ্রহে রয়েছে।

মত-দ্বিমত

রামকানাই দাশের মেয়ে কাবেরী দাশের সাম্প্রতিক ভাষ্য, ১৯৬৫ সালে গানটি তাঁর ঠাকুরমা দিব্যময়ী দাশ রচনা করেছেন। ১৯৭৩ সালে এটি দিব্যময়ীর কাছ থেকে সংগ্রহ করে শিল্পী ইয়ারুন্নেসা খানম (২০২০ সালে প্রয়াত) সিলেট বেতারে রেকর্ড করেন। যেহেতু দিব্যময়ী বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার ছিলেন না, তাই এটি ‘সংগৃহীত’ হিসেবে রেকর্ড হয়েছিল। রেকর্ডে ‘জামাই’ শব্দটি ‘দামান’ এবং কিছু শব্দের অদলবদল করা হয়েছিল।

তবে সিলেটের দুই সংগীতজ্ঞ হিমাংশু বিশ্বাস ও হিমাংশু গোস্বামী গানটি দিব্যময়ীর নয় বলে জানিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ‘বিদিত লাল দাস ও তাঁর দল’ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে এই দুই শিল্পী এবং রামকানাই দাশ সম্পৃক্ত ছিলেন। দুই শিল্পী জানান, ১৯৭৩ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ বেতার ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস আয়োজিত প্রথম জাতীয় লোকসংস্কৃতি সপ্তাহের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল তাঁদের সংগঠন। সেখানে নারী শিল্পীরা গীতি-আলেখ্য হিসেবে গানটি পরিবেশন করেছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রামকানাইয়ের উপস্থিতিতে গানটি গাওয়া হলেও কখনোই তিনি এটিকে তাঁর মায়ের রচনা বলে দাবি করেননি।

প্রবীণ শিল্পী আকরামুল ইসলাম ও দুলাল ভৌমিকও একই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ১৯৬৫ সালের আগে থেকেই তাঁরা গানটি শুনে আসছেন। এরও আগে এ গানের প্রচলন ছিল। দিব্যময়ী নন, এর রচয়িতা অজ্ঞাত। ১৯৬৭ সালে সিলেটে বেতারকেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে গানটি একাধিক নারী শিল্পী গেয়েছেন।

রামকানাই দাশের বড় বোন ও একুশে পদকপ্রাপ্ত লোকসংগীত শিল্পী সুষমা দাশের (৯০) গাওয়া ২২৯টি গান নিয়ে আজিমুল রাজা চৌধুরীর সম্পাদনায় সুষমা দাশ ও প্রাচীন লোকগীতি (২০২০) নামে বই প্রকাশিত হয়েছে। এতে সুষমার বাবা রসিক লাল দাশের পাঁচটি গান সংকলিত হলেও দিব্যময়ীর কোনো গান নেই। বইয়ে সুষমা লিখেছেন, ‘ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সুবাদে আমার প্রায় কয়েক হাজার লোকগান মুখস্থ ছিল। শত বছরের পুরোনো অনেক গান আমার জানা ছিল। [...] আমার বাবা রসিক লাল দাশ খুব ভালো গায়ক ও বায়েন ছিলেন।’ এখানে সুষমা মায়ের গান রচনার কোনো প্রসঙ্গই উত্থাপন করেননি। তবে গানের গীতিকার নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে তিনি জানান, ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তিনি শ্বশুরালয়ে চলে আসেন। তাই তাঁর মা গান লিখেছেন কি না, সেটি সঠিক জানেন না।

আলোচ্য গানের গীতিকার হিসেবে মরমি কবি হাসন রাজা ও তাঁর বোন ছহিফা বানু, মরমি কবি গিয়াসউদ্দিন আহমদ, সিদ্দিকুর রহমান এবং এ কে আনামের নামও উচ্চারিত হচ্ছে। তবে এর দালিলিক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানান গীতিকবি শামসুল আলম সেলিম।

পুরোনো রেকর্ডের সন্ধানে

বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রে দুই ধরনের রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে। এগুলো ১৯৮০ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে রেকর্ড করা। দুটোতেই গীতিকারের স্থলে ‘সংগ্রহ’ লেখা আছে। ‘আইলারে নওয়া জামাই’ শীর্ষক পুরোনো রেকর্ডের শিল্পী শুক্লা দে ও স্বপ্না দে। ‘আইল রে নয়া দামান’ শিরোনামে রেকর্ডকৃত গানটি সমবেত কণ্ঠের। শিল্পী অজানা।

সিলেট বেতারের সহকারী পরিচালক প্রদীপ চন্দ্র দাস জানান, একটি রেজিস্টার খাতায় বেতারে প্রচারিত আঞ্চলিক ও বিয়ের গানের তথ্যাদি আছে। সেখানে ইয়ারুন্নেসার গাওয়া ৭টি আঞ্চলিক গানের প্রসঙ্গ উল্লেখ থাকলেও ‘নয়া দামান’-এর উল্লেখ নেই।

স্বপ্না দে (৬৫) জানান, ১৯৮০ সালে ‘আইলারে নওয়া জামাই’ গানটি তাঁর বড় বোন শুক্লা দে (৬৯) ও তিনি যৌথ কণ্ঠে রেকর্ড করেন। মা-মাসি আর পাড়ার নারীদের কাছ থেকে গানটি তাঁরা সংগ্রহ করেছেন। এটি হিন্দুধর্মাবলম্বী নারীরা ‘জামাই বান্ধা’ পর্যায়ের গান হিসেবে গেয়ে থাকেন। রচয়িতা অজ্ঞাত।

পাঠ ও পাঠান্তর

সিলেটের চার জেলায় ‘নয়া দামান’ গানের একাধিক পাঠ পাওয়া যায়। আমার সংগ্রহে সত্তরের দশক থেকে নব্বই দশকে শিল্পীদের গাওয়া আটটি পাঠ আছে। প্রতিটি গানে স্থায়ী হিসেবে ‘আইলা রে নয়া দামান আসমানেরও তেরা/ বিছানা বিছাইয়া দেও শাইল ধানের নেরা/ দামান বও দামান বও’ রয়েছে। তবে যেটি দিব্যময়ীর বলা হচ্ছে, সেখানে ‘আইলা’র স্থলে ‘আইলো’, ‘নয়া দামান’-এর স্থলে ‘নুয়া জামাই’ এবং ‘তেরা’র স্থলে ‘তারা’ আছে। সংগৃহীত গানগুলোতে স্থায়ী বাদে ৪টি অন্তরা রয়েছে। প্রতিটিতেই কোনো না কোনো পঙ্​ক্তি এবং আঞ্চলিক শব্দের পাঠ ভিন্ন। কোনো পাঠে ভণিতা না থাকলেও দিব্যময়ীর পাঠে আছে।

জফির সেতু সম্পাদিত সিলেটি বিয়ের গীত (২০১৩) এবং জাহান আরা খাতুনের সিলেটের বিয়ের গীত (২০১৭) বইয়ে গানটি সংকলিত হয়েছে। এ দুটো পাঠেও বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়। তবে এসব পাঠের সঙ্গে দিব্যময়ীর পাঠে শব্দগত এবং বিন্যাসগত তফাত রয়েছে। অপর পাঁচটি পাঠেও পঙ্​ক্তি এবং শব্দের ভিন্নতা আছে। জফির সেতু সংকলিত পাঠটি এমন:

‘আইলা রে নয়া দামান আসমানের তেরা।

বিছানা বিছাইয়া দেও শাইল ধানের নেড়া ॥

দামান বও দামান বও।


বও দামান কওরে কথা খাওরে বাটার পান।

যাইবার লাগি চাওরে যদি কাটিয়া রাখমু কান ॥

দামান বও দামান বও।


আইলা রে দামান্দের ভাই হিজলের মুড়া।

টুনকি দিলে মাটি পড়ে ষাইট-সত্তইর উড়া ॥

(টুনকি দিলে মাটিত পড়ন ষাইট বছরের বুড়া।)

দামান বও দামান বও।


আইলা রে দামান্দের বইন কইবা একখান কথা।

কইন্যার ভাইর চেরা দেইখা হইয়া গেলা বুবা॥

দামান বও দামান বও।

আইলা রে দামান্দের ভাইবউ মোটা বটর গাইল।

উঠতে বইতে সময় লাগে করইন আইল তাইল।

দামান বও দামান বও।’

তবে জাহান আরা সংকলিত পাঠটি অন্য রকম। সেখানে প্রথম অন্তরার দ্বিতীয় পঙ্​ক্তি ‘যাইবার কথা কওরে যদি কাইট্যা রাখমু কান’, দ্বিতীয় অন্তরায় দ্বিতীয় পঙ্​ক্তি ‘টুনকি দিলে মাটিত পড়ে গতরের গুঁড়া’, তৃতীয় অন্তরায় দ্বিতীয় পঙ্​ক্তি ‘কইন্যার বাড়ির চেরা দেইখ্যা হইয়া গেলা বোবা’ এবং চতুর্থ অন্তরায় প্রথম দুটি পঙ্​ক্তি ‘আইলারে দামান্দের ভাইবউ দেখতে গতরখান/ উঠতে বইতে সময় লাগে পড়ন আইন-টাইন’ লেখা আছে। দুটো পাঠেই বাকি পঙ্​ক্তিগুলোর মধ্যে সাদৃশ্য আছে। অন্যদিকে দিব্যময়ীর পাঠটি এমন:

‘আইলো রে নুয়া জামাই আসমানেরও তারা

বিছানা বিছাইয়া দেও শাইল ধানের নেরা।

জামাই বও জামাই বও॥


আইলো রে জামাইয়ের ভাইবউ দেখতে বটের গাইল

উঠতে বইতে ছয় মাস লাগে, করইন আইন-চাইন

জামাই বও জামাই বও ॥


আইলো রে জামাইয়ের বইন হিজলেরও মুড়া

ঠুনকি দিলে ফেদা পড়ে ষাইট-সত্তুর উরা

জামাই বও জামাই বও ॥


আইলো রে জামাইয়ের ভাই আসমানেরও চান

যাইবার লাগি কও রে যদি কাইট্টা রাখমু কান

জামাই বও জামাই বও ॥


কুঞ্জেরও ভিতরে জামাই বইছে গো সাজিয়া

পাড়ার লোকে দেখত আইছে দিব্যময়ীর বিয়া

জামাই বও জামাই বও ॥’

সংগৃহীত পাঠগুলো ঘেঁটে দেখা গেছে, গানের যে পাঠটি নতুনভাবে আলোচিত হয়েছে, সেটি অন্য পাঠের সঙ্গে মিলে যায়। এসবের সঙ্গে দিব্যময়ীর পাঠে খানিক তফাত আছে। দিব্যময়ীর পাঠে সুনামগঞ্জে ব্যবহৃত কিছু আঞ্চলিক শব্দ রয়েছে, যেগুলো তসিবার পরিবেশিত গান কিংবা অন্যগুলোতে নেই। তবে সব গানের বিষয়বস্তু একই। দিব্যময়ীর পাঠ ছাড়া অপরগুলোতে ব্যবহৃত অধিকাংশ শব্দই মৌলভীবাজার ও সিলেটের উজান অঞ্চলের। এমনকি শাইল ধানের চাষাবাদও এ দুই অঞ্চলে বেশি হয়। সে বিচারে মূল রচয়িতা উজানের বাসিন্দা হতে পারেন।

বলে রাখা ভালো, আমার সংগ্রহ ও সংকলনে প্রকাশিত বাংলাদেশের ধামাইল গান (২০১০) বইয়ে হাজারো ধামাইল গান রয়েছে। বেশির ভাগই ২০০৬-০৭ সালে দিব্যময়ীর জন্ম ও বেড়ে ওঠার বিচরণভূমি দিরাই ও শাল্লা উপজেলা থেকে সংগ্রহ করা। তখন অন্তত ২০ হাজার ধামাইল গান সংগ্রহ করি। সম্প্রতি সেসব ঘেঁটে ‘নুয়া জামাই’ গানের সন্ধান পাইনি। একাধিক প্রবীণ শিল্পীও গানটি গীত হওয়ার তথ্য জানাতে পারেননি। যদিও সম্প্রতি কিছু শিল্পীকে গানটি গাইতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ে চর্চিত বিয়ের গীতের পরিবেশনায় ‘নয়া দামান’ গানের একাধিক পাঠের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। অনেকের অনুমান, এটি কম–বেশি সাত দশক ধরে গীত হয়ে আসছে।

শেষ কথা

মৌলভীবাজারে প্রচলিত একটি লোকছড়া হচ্ছে ‘আমের তলে ঝুমুর ঝুমুর/ কলার তলে বিয়া/ আইলা রে নোয়া জামাই মুটুক মাথায় দিয়া’। একই রকমভাবে শেষ ছত্রটি এভাবেও বলতে শোনা যায় ‘আইলা রে নয়া দামান পাগড়ি মাথায় দিয়া’। অন্যদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় মুসলিম বিবাহরীতিতে প্রচলিত একটি লোকগান মনোয়ারা খাতুন তাঁর মুসলিম বিয়ের গানে বাঙ্গালি মুসলিম সমাজ (২০০৪) বইয়ে উদ্ধৃত করেছেন। এর স্থায়ী ‘আইলেন গো নয়া দামাদ আশমানের তারা/ বর-বরেতের আসন পাতো আমুন ধানের ন্যাড়া।’

বরকে স্বাগত জানিয়ে কৌতুকপূর্ণ ও হাস্যরসাত্মক অসংখ্য মুসলিম বিয়ের গীত সিলেট অঞ্চলেও রয়েছে। যেগুলোর অবয়ব ও বিষয়বস্তু প্রায় একই, তবে গীতিকারের নাম জানা যায় না। আবার হিন্দু সম্প্রদায়ে প্রচলিত ধামাইল গানেও ‘জামাই বান্ধা’ পর্বের অসংখ্য গান আছে, যেখানে কৌতুকপূর্ণ ও হাস্যরসাত্মক অসংখ্য ইঙ্গিত রয়েছে। ধামাইল গানের পাশাপাশি বয়স্ক নারীরাও উঠোনে বা ঘরের দাওয়ায় বসে বিয়ের গীত পরিবেশন করেন, সেখানেও হাস্যরসাত্মক গান আছে। যেমনটা আছে ‘নয়া দামান’ গানেও। ফলে ‘নয়া দামান’ নাকি ‘নুয়া জামাই’ কোনটি আগে আর পরে রচিত হয়েছে কিংবা লোকছড়া থেকেই গানটির উৎপত্তি কি না, সেটা শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে বলা একটু কঠিনই।

গানে শব্দচয়ন ও প্রকাশভঙ্গি খেয়াল করলে এটিকে মুসলিম বিয়ের গীত হিসেবেই সাধারণত মনে হয়। গানটি সিলেট অঞ্চলে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পাওয়ায় অনেকে নিজেদের মতো করে পুনর্নির্মাণ ও পরিমার্জন করে গানের রূপান্তর ঘটিয়েছেন। ফলে একাধিক পাঠ পাওয়া যাচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে, দিব্যময়ীও সে রকমই একটি পাঠের পুনর্নির্মাণকারী। তাই আপাতদৃষ্টে তাঁকে সরাসরি গানের রচয়িতা বললে কিছুটা বিভ্রান্তি থেকেই যাবে।

লোকগান মুখে মুখেই ছড়ায়, ‘নয়া দামান’ গানের ক্ষেত্রেও সেটি ঘটেছে। শিল্পীরা মুখে মুখে বয়ে নিয়ে এটিকে লোকগানের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। এরপরও নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে গানের আদি গীতিকারের সন্ধান চলবে। যদিও গানের জন্ম-ঠিকুজি বের করা একটু কঠিনই হবে, তবু বিশ্বাস রাখতে চাই, কখনো হয়তো পুরোনো পাণ্ডুলিপি কিংবা দলিল–দস্তাবেজ আর প্রাচীন মুদ্রিত বই–পুস্তক থেকে বেরিয়ে আসবে গীতিকারের নাম।