যাঁরা আফ্রিকা মহাদেশ থেকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে প্রথমেই আলবেয়ার কামুর নাম উচ্চারণ করা হয়। ১৯৫৭ সালে তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফরাসি; কেবল জন্মসূত্রে আলজেরীয়। ক্লদ সিমোকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় ১৯৮৫ সালে। জন্ম মাদাগাস্কারে হলেও তিনি ফরাসি ভাষার ঔপন্যাসিক হিসেবেই প্রসিদ্ধ।
নাইজেরিয়ার ওলে সোয়িঙ্কা প্রথম অবিমিশ্র আফ্রিকি লেখক, যাঁকে ১৯৮৬ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। মিসরের আরবিভাষী ঔপন্যাসিক নাগিব মাহফুজকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় ১৯৮৮ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ লেখিকা ন্যাডেইন গর্ডিমাকে দেওয়া হয় ১৯৯১ সালে। সময়ের দীর্ঘ ব্যবধানে ২০০৩-এ জন ম্যাক্সওয়েল কুৎসিয়াকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার এই লেখক বলতে গেলে বিংশ শতাব্দীর ইংরেজি সাহিত্যের একজন মহাপুরুষ। তারপর দীর্ঘকাল কেটে গেছে। নাইজেরিয়ান ঔপন্যাসিক থিংস ফল অ্যাপার্ট-এর রচয়িতা চিনুয়া আচেবে বিশ্বসাহিত্যের কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন। ২০০৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয় পরিণত বয়সে। তাঁকে নোবেল দেওয়া হয়নি।
গত দু-তিন যুগে কেনিয়ার ঔপন্যাসিক গুগি ওয়া থিয়োঙ্গো আফ্রিকি সাহিত্যকে দৃঢ়মূলে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিশ্বসাহিত্যের দরবারে। কিন্তু সাহিত্যের নোবেল ইউরোপের বাইরে যেতে পরাঙ্মুখ।
২০২১ সালে শাপ কেটে গেল। জানজিবারে জন্মগ্রহণকারী আবদুলরাজাক গুরনাহর নাম যুক্ত হলো নোবেল প্রাপকদের তালিকায়। ১৯৬৪ সালে জানজিবারে মুসলমানবিরোধী দাঙ্গা শুরু হলে ১৯৬৮-তে তিনি ইংল্যান্ডে চলে এসেছিলেন—এখানেই স্থায়ী হয়েছেন, লেখাপড়া শেষে এখানেই সারা জীবন অধ্যাপনা করেছেন।
চিনুয়া আচেবে বা গুগি ওয়া থিয়োঙ্গোর যে বিশ্বজোড়া প্রবল খ্যাতি, তা আবদুলরাজাক গুরনাহর ছিল না। তাই তাঁকে নোবেল দেওয়া ছিল অপ্রত্যাশিত। কিন্তু তাঁর যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
২.
আবদুলরাজাক গুরনাহর উপন্যাসের সংখ্যা ১০। তাঁর সর্বশেষ উপন্যাস আফটার লাইভস প্রকাশিত হয়েছে ২০২০-এ। তিনি নিজের প্রথম উপন্যাস লেখার অনেক আগেই আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক শাসনের অবসায়ন পর্ব সূচিত হয়েছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেইন, ইতালি, বেলজিয়াম ও পর্তুগাল—সাতটি দেশ মিলে প্রায় পুরোটা আফ্রিকা দীর্ঘকাল দখলে রেখে শাসন-শোষণ করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ কারণে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ঐকমত্য গড়ে ওঠার ফলে ১৯৫৭-তে ঘানা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল এবং ১৯৭৭-এর মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশে ৫৪টি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হলো।
এই ঐতিহাসিক পটভূমিতে ১৯৮০-এর দশকে আফ্রিকার সমসাময়িক সাহিত্যকে ‘উত্তর-ঔপনিবেশিক সাহিত্য’ বলে অভিহিত করা শুরু হয়। আবদুলরাজাক গুরনাহর রচনাও সচরাচর উত্তর-ঔপনিবেশিক সাহিত্য হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ হয়ে থাকে।
গল্প লিখতে বসে একজন লেখককে কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেমন গল্পের বিষয়বস্তু কী হবে, কী হবে পাঠকের প্রতি লেখকের বক্তব্য, উপন্যাসের কাঠামো বা রূপবন্ধ কেমন হবে, কেমন হবে আখ্যানভাগ, প্রধান চরিত্র কে, যাকে বলা হয় প্রোটাগনিস্ট, মূল ঘটনার কালপর্ব কী হবে, কোন পাঠকগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে লেখা হবে, বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার ভারসাম্য কোন অনুপাতে রক্ষিত হবে ইত্যাদি। আবদুলরাজাক গুরনাহকেও এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।
গুরনাহ ১৯৮৫ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। এ সময় তিনি কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিছুদিন আগেই নাইজেরিয়ার বেয়ারিও বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর অধ্যাপনা করে ইংল্যান্ডে ফিরেছেন কৈশোরের কৃষ্ণ-আফ্রিকার স্মৃতি পুনরুদ্ধার করে।
ইতিমধ্যে ওলে সোয়িঙ্কার উপন্যাস সিজন অব অ্যানোমি (১৯৭২), রেকুইম ফর আ ফ্রুটোলজিস্টসহ (১৯৮৫) কয়েকটি বিখ্যাত নাটক এবং দ্য ইয়ার্স অব চাইল্ডহুড (১৯৮৩) ইত্যাদি ব্রিটেনে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে চিনুয়া আচেবের অ্যারো অব গড, আ ম্যান অব দ্য পিপল ইত্যাদি। তাঁর থিংস ফল অ্যাপার্ট-এর (১৯৫৮) মাহাত্ম্যে ক্রমে ক্রমে তিনি ‘আফ্রিকার আধুনিক উপন্যাসের জনক’ অভিধা অর্জন করেছেন। জোসেফ কনরাডের হার্ট অব ডার্কনেস-এর কড়া সমালোচনা করে আচেবে পৃথিবীতে ঝড় তুলে দিয়েছেন (১৯৭৫)। ডেসমন্ড টুটু ১৯৮৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। নিজের জেমস নগুগি নামকে উপনিবেশগন্ধি অভিহিত করে নতুনভাবে ‘নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো’ নাম ধারণ করেছেন নগুগি। ১৯৭৭-এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বিখ্যাত নাটক উই ইইল ম্যারি হোয়েন উই ওয়ান্ট। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত হয়েছে ডেভিল অন দ্য ক্রস; ১৯৮১-তে তিনি প্রকাশ করেছেন ডায়েরি ডিটেইন্ড। এ রকম একটি পটভূমিতে আবদুলরাজাক গুরনাহ সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাব নিয়ে লিখবেন—ফুটিয়ে তুলবেন দারিদ্র্যের লাঞ্ছনা, ক্ষমতার নিষ্পেষণ, বাস্তুচ্যুত মানুষের অসহায়ত্ব এবং অভিবাসী মানুষের অনপনেয় বৈদেশিকতার কথা। তাঁর পটভূমি হবে জন্মভূমি আফ্রিকা। আর তিনি লিখবেন স্বীয় অভিজ্ঞতাকে অবলম্বন করে। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস মেমোরি অব ডিপারচার।
৩.
মেমোরি অব ডিপারচার-এর পটভূমি পূর্ব আফ্রিকার সমুদ্রোপকূলীয় অঞ্চল। ১৯৪৮-এ এ রকম একটি এলাকা কেঙ্গেতে তাঁর জন্ম। উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু ১৫ বছরের কিশোর হাসান ওমর। সে এই উপন্যাসের প্রোটাগনিস্ট, উত্তম পুরুষের কথক।
তাদের দারিদ্র্য-লাঞ্ছিত পরিবারে কোনো শুচিতা নেই, শান্তি বলে কিছু নেই। তার বাবা ওমর সরকারি দপ্তরের নিম্নস্তরের কর্মচারী। তিনি গুন্ডা প্রকৃতির মানুষ, লম্পট ও মদ্যপ। দিনের পর দিন হাসান দেখে তার নীতিবিবর্জিত বাবা রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘর ছেড়ে চলে যায় রাস্তায় সস্তা বেশ্যাদের সন্ধানে। আর মা সংসারের ঘানি টানতে টানতে, বিনা প্রতিবাদে তার বাবার নিগ্রহ সহ্য করতে করতে অকালে জ্বরাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
জনশ্রুতি আছে, তার বাবা ওমর যৌবনে ছেলেধরা ছিল। ছোট ছোট ছেলেদের ধরে নিয়ে বিক্রি করে দিত দাস ব্যবসায়ীদের কাছে। দোষের মধ্যে তার ছিল বালকপ্রীতি। একবার এহেন কুকর্ম করতে গিয়ে ধরা পড়ে এক বছর জেলের ঘানি টেনে এসেছে সে।
হাসান দেখে তার বড় ভাই সাইদও প্রায়ই ছোট বালকদের ধরে এনে বিছানায় তোলে। হাসানের বৃদ্ধা দিদিমা প্রস্রাব করে তা বালতিতে সঞ্চয় করেন। তার বোন জাকিয়া পারিবারিক অন্ধকার থেকে পরিত্রাণ খুঁজতে ভাবে দেহ বিলিয়ে তার জীবনে চরিতার্থতা আসবে। তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিতম্ব দুলিয়ে শোরগোল তুলে জাকিয়া বলে, যার টাকা আছে, সে আমাকে বিছানায় তুলুক। এই দ্রোহ কেবল বয়ে নিয়ে আসে সামাজিক দুর্নাম আর পারিবারিক অশান্তি। তরুণী জাকিয়ার জীবনে দ্রুত পচন ধরে।
সুযোগ পেলেই পরিবারের সবার সঙ্গে নির্মম ব্যবহার করত বাবা। একদিন দুই ভাই রাস্তার পাশে আবর্জনার স্তূপে কিছু টাকা কুড়িয়ে পায়। সেই টাকা দিয়ে তারা বল কেনে। বাবা সন্দেহ করে, অন্যায়ভাবে তারা হয়তো এ টাকা উপার্জন করেছে। সে বলে, যা ঘরে নেই, তা পাওয়ার লোভে যদি আবর্জনার স্তূপ ঘাঁটতে যায় ওরা, তবে একদিন একই কারণে হয়তো অন্য কারও ছিানায় উঠে পড়তে পারে। বড় ছেলে সাইদকে সে ‘বেজন্মা’ বলে গাল দেয়। তারপর যা ঘটল, তা শোনা যাক হাসানের ভাষায়:
‘সাইদ ঘুরে দৌড় দিতে গেল। কিন্তু আমার বাবা ওর ডান কাঁধে ঘুষি দিয়ে একবারে মাটিতে পেড়ে ফেলল। এমন একটা শব্দ হলো যেন কুড়ালের কোপ পড়েছে মাংসে। হাঁটু বেঁকে গেল সাইদের, বাতাসের অভাবে তার মুখ হাঁ হয়ে গেল। বাবা তার প্রথম সন্তানের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর ঝেড়ে লাথি কষল ওর পেট বরাবর। সাইদ উঠানে পড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়াতে গেল। আবার লাথি ঝাড়ল বাবা। ওকে অনবরত ঘুষাতে লাগল। মাথা ঠুকে দিল। হাতের কবজির গিঁটে পেটাতে লাগল। মারের চোটে হেগে দিল সাইদ। মা এগিয়ে এল ছেলেকে বাঁচাতে। এবার সে স্ত্রীর দিকে ফিরে ক্রুদ্ধ পশুর মতো ফুঁসতে লাগল। ছেলেকে বাবা পেটাচ্ছিল আসুরিক ক্রোধ ও ঘৃণায়। তার হাত-পা দিয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছিল। ছেলের দুপাশে দুই পা রেখে সে বলল, ঠিকমতো হয়েছে, নাকি আরও মার দিতে হবে?’
অসুস্থ সাইদ বিছানায় শুয়ে ছিল। ওর মা ভুলে জ্বলন্ত মোমবাতি রেখে গিয়েছিলেন। তা থেকে সারা ঘরে আগুন ধরে গেল। বিছানা ছেড়ে নামার শক্তি নেই সাইদের। পুড়ে মারা গেল বড় ভাই সাইদ। হাসান কোনো সাহায্যই করতে পারল না। বাবা হাসানকে গাল দিলেন ‘আ ডার্টি মার্ডারার’ বলে।
পাড়ার ষন্ডা-পান্ডাদের খিস্তিখেউরে হাসানের কান দিবারাত্র ভারী হয়ে থাকে। এই মলমূত্র, খিস্তিখেউর, মদ্যপান, লাম্পট্য, অশুচিতা—সবকিছুর জন্য হাসানের বাবার লাগামহীন স্বেচ্ছাচারী প্রবৃত্তিই দায়ী বলে মনে হয়। গুরনাহ উপন্যাসে এমন পরিস্থিতির কথা বিশদভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অকপট গাম্ভীর্যে। ঔপনিবেশিকতা ও বাস্তুচ্যুত মানুষের দুর্দশার পরিবর্তে প্রকটভাবে তুলে ধরেছেন এক দরিদ্র স্কুলবালকের সর্বব্যাপ্ত অসহায়ত্ব।
হাসান পালাতে চায়—কিন্তু কোথায় পালাবে সে? কে দেবে তার পড়ার খরচ? লন্ডনে পড়তে চায় কিন্তু বৃত্তি কোথায় পাবে? কেনিয়ার নাইরোবিতে থাকে তার মামা আহমেদ বিন খলিফা। অবস্থাপন্ন মানুষ; হয়তো সাহায্য করবে। মা সেখানে যেতে বলে।
আহমদ মামা নাইরোবির সফল ব্যবসায়ী। তার ঝকঝকে প্রাসাদোপম বাসা, ঝলমলে পরিবেশ ও অফুরন্ত খাদ্যসম্ভার হাসানের কল্পনারও অতীত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই মামার আশ্রয়ে বেশি দিন থাকা হয় না। তার মেয়ে সালমা ও হাসানের মধ্যে ঘেঁষাঘেঁষি লক্ষ করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় হাসানকে। হাসানকে ফিরে আসতে হয় কেঙ্গেতে—মা-বাবার কাছে—খালি হাতে।
তার সব উচ্চাশা উবে যায়। আবার সে পরিকল্পনা করে। একদিন সে বন্দরে গিয়ে জাহাজে চাকরি জুটিয়ে ফেলে। বাড়ি থেকে চলে যায়। বলে যায় ফিরে আসবে, কিন্তু আর কখনো ফেরে না হাসান।
৪.
আবদুলরাজাক গুরনাহ উত্তর-ঔপনেবিশক সাহিত্যের বিশেষজ্ঞ শিক্ষক। তাঁকে সচরাচর উত্তর-ঔপনেবিশক ঔপন্যাসিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু নিজেকে ‘উত্তর-ঔপনেবিশক লেখক’ অভিধা দিতে তিনি নারাজ।
ঔপন্যাসিক হিসেবে তাঁর আবির্ভাব উত্তর-ঔপনেবিশক কালে, তাঁর উপন্যাসের পটভূমি ঔপনিবেশিক আফ্রিকা। কিন্তু সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থে যে বিবেচনাগুলো থাকলে উত্তর-ঔপনেবিশক তকমাটি সেঁটে দেওয়া হয়, তিনি সে পথে হাঁটেন না। আলোচ্য প্রথম উপন্যাসেও দেখা যায় যে তিনি ঔপনিবেশিক শাসনকে দায়ী না করেই জীবনের অমোঘ ও নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে প্রকট করে তুলেছেন। হাসানের বাবা ওমরের কথা যদি বিবেচনা করা যায়, তবে এ ক্ষেত্রে আর যা-ই হোক, ঔপনিবেশিক প্রভাবকে দায়ী করার অবকাশ নেই। হাসানের যে দুর্দশা ও পরিণতি, তা যতটা অবশ্যসম্ভাবী, যতটা নিয়তিলিখিত বলে মনে হয়, তার সঙ্গে আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক শাসনের কোনো যোগসূত্র নির্ণয় করা কঠিন। অতএব, এমত বলার অবকাশ নেই যে মেমোরি অব ডিপারচার-এ গুরনাহর লক্ষ্য বিদেশি শাসকদের হাতে বিকৃত ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে পুনরুদ্ধার করা। সেই স্থলে দেখা যায় এক নির্ভেজাল সত্যানুসন্ধিৎসা। আমরা লক্ষ করি, তিনি অন্তর্গত অভিপ্রায় ও স্বীয় অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাহিনির অবয়বে বাস্তবকে পুনর্গঠন করার প্রয়াস নিয়েছেন। এই বাস্তব কঠিন, এই বাস্তব অসহনীয়, নির্মম ও ভয়াবহ। এই বাস্তব উদ্রেক করে বিবমিষার। বাস্তবের এহেন অবারিত চেহারা পাঠককে আহত করে, ক্ষুব্ধ করে, পীড়িত করে। কিন্তু তারই মধ্যে নিহিত রয়েছে সত্যের প্রকৃত নির্যাস। এখানেই আবদুলরাজাক গুরনাহর অনন্যসাধরণ বৈশিষ্ট্য।