রোকেয়ারা

হলুদ একটা সকালে 

ম্যাজেন্টা একটা ফুল দেখে রোকেয়া।

ওর মতোই,

একলা।

ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে

চায়ের কাপে চুকচুক—

হাত পুড়ে গেছে চুলার আগুনে।

স্বামী আর সংসার

সবাই সবার।

বুকের ভেতর ঘা

রোকেয়ার একার।

বিছানায় এলোচুলে

শুয়ে আছে রোকেয়া

বুক লন্ডভন্ড। 

ভালো লাগে না 

কারে বলে সে?

রোকেয়ারা,

সেলাই মেশিনে পা চালায়

চাপ দিয়ে ধরে মাটি।

তবুও ধরে না প্রেম।

শরীর এক অন্য কেউ

বিশে আর ত্রিশে

রোকেয়ার চোখের জল

মুছবে কিসে?

রোকেয়ারা

শাড়ির আঁচলে রাখে দাগ

সংসার বুকে নিয়ে

পুষে রাখে রাগ।

বকুলের গন্ধ রাখে

কামিজের ভাঁজে

রোকেয়ার দিন কাটে

কত–কী কাজে।

নারী এক বিস্ময়

রোকেয়াও জানে তা

শরীর কি শোনে আর

রোকেয়ার কোনো কথা?

আমাদের রোকেয়ারা

হারিয়েছে পার্কে

কেউ কেউ মুছে গেছে

সময়ের বুকে...

রোকেয়া ঢুকে যায়

বাসের ভেতরে, ঘর ও পুরুষের ভেতরে।

তবুও রোকেয়ার ক্রোধের ধর্মঘট। 

রোকেয়ারা দাম পায় না

চা–বাগানে পাতা তোলে

রোকেয়াদের চিনে রাখো।

তারা কিছুই কি ভোলে?

রোকেয়ারা ভাত পায় না

পায় না কাপড়, 

পায় শুধু লক্ষ্মী মেয়ের নাম;

লক্ষ্মী মেয়েকে রোকেয়া লাথিও মারে না।

নবীন পাতার মতো

আজও রোকেয়া ফোটে সকালে সকালে

একটা প্রেমিকও তারে তুলতে পারে না হাতে।

রোকেয়ার দুই মুখ তুলে ধরে কেউ

বৃষ্টির মতো সেখানে জলধারা বয়।

ব্লাউজের বোতামে বেঁধে আছে চুল

রোকেয়ারা সময়ের না করা ভুল!

রোকেয়ার ঠোঁটে আছে

তামাকের পাতা

প্রেমিকের নাম লেখা

আছে এক খাতা।

মিলেমিশে রোকেয়া পাপড়িকে শুকিয়ে

প্রেমিকের নামখানি রেখেছে তো লুকিয়ে।

রোকেয়া একলা আয়না দেখে,

ঘাসফুলে শুয়ে থাকে।

রোকেয়া একাই বাঁচে

পৃথিবীর জল মুখে মেখে!