ধাত্রীমাকে মনে করতে পারি না আমি—অথচ আমার জন্ম তাঁরই হাতে। আমার জন্ম মামাবাড়ির এক দোচালা টিনের ঘরে, ঘরের পেছনে নদী। আমার নাড়ির ফুল কি পোঁতা নয় নদীপাড়ের কাশবনে? বাঁশবন কি নয় আমার বাল্যকাল? ঘুরতে ঘুরতে যত যত নদী চোখে পড়ে, দেখি, নদীপাড়ে কাশবন আছে কি না! কাশবন কি নদীপাড়ে প্রভাষণা করে?
আমার জন্মদিন সাতাশে আশ্বিন। সেদিন কি দুর্গা বিসর্জন ছিল? দক্ষিণ এশিয়ায় বছর বছর কাশফুল ফোটে, জন্মদিন আসে। হাওয়ারা হইচই করে জানিয়ে যায়, ধাত্রীমার জন্যে একটি কবিতা লিখতে পারো না? কিন্তু আমার তো মনে নেই তাঁর মুখ, তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি! অসহায়ত্বকে কি কবিতায় আনা সম্ভব?
নদী দেখি, কাশবন দেখি। নদীই কি সেই বিধবা ধাত্রীমা? কাশবনই কি তাঁর পেকে ওঠা চুল? এই জন্যেই কি আমি নদীপাড়ে এত কৌতূহলী, স্তব্ধব্যাকুল? আমার জন্মদিন, সন্ধ্যার বাঁশবনে কি সেই জন্যেই এত হুলুস্থুল?
কবিতা লিখতে চাই, পারি না। না-পারা মন আঁকুপাঁকু করতে করতে বালু হয়ে যায়। নিরক্ষর মন ছুটে যায় চন্দ্রগ্রস্ত চরাচরে; গেলেই তো দেখি, কাশবন নদীপাড়ে প্রভাষণা করে—
ধাত্রীমাকে মনে নেই। মনই এমন, হয়তো মনে না-থাকাকেও মনে পড়ে...