মোহাম্মদ রফিকের কবিতা

>২৩ অক্টোবর কবি মোহাম্মদ রফিকের জন্মদিন। আবহমান বাংলাকে খুঁজে ফেরা এই কবি এদিন ৭৭-এ পড়বেন। জন্মদিনের ক্ষণে তাঁর দুটি কবিতা।
মোহাম্মদ রফিক। ছবি: খালেদ সরকার
মোহাম্মদ রফিক। ছবি: খালেদ সরকার

বংশপরম্পরায়

সেই, দাদা যখন গেলেন

ভোররাত,

দেউড়ির বাইরে খালপাড়ে

তেঁতুলের পাতায় পাতায়

বাতাসের শিরশির, 

শিউলি বৃষ্টিভেজা,

অবশ্য তখনো

ভিনদেশি বনবিড়ালের

ডাক শোনা যেত

বনবাদাড়ে;

রাত্তিরের প্রথম প্রহর, 

বাবার শরীরে গূঢ় ছায়া

মুদে এল চোখ, ঠোঁট বিড়বিড়— 

ওই গাছটাকে দেখিস

আমাদের ভিটের প্রহরা

তোর দাদা তার দাদা তার...

হঠাৎ হর্নের ত্রাহি শব্দ

দৌড়াদৌড়ি চিলচিৎকার

কেউ কি মরেছে, দেখো;

আমার সময় হলো, 

দেহ ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে

মাথা তুলছে অচেনা-অজানা

পরভোজী উন্নয়নে ইট-কাঠ

মস্তিষ্কে মেধায় চুন-সুরকি-বালু

হাড়ে-হাড়ে রাতে-দিনে

হাতুড়ির শব্দ—বৈদ্যুতিক

ঘোঁষ্টানির হুংকার সংগীত;

নাতি-পুত্র, তোমাদের কালে, 

দুশ্চিন্তার কিছুই থাকবে না

তখন সারাটা পৃথিবীই

মরুভূমি মরুময় চিন্তালোক

ছিন্নমাথা স্বপ্নলোক নাঙ্গা

হা নিস্তব্ধ হাহাকার; 

তখনো কি ভোর হয়

জন্ম নেয় বৃক্ষ, ধায় জল, স্রোত;

খোঁজো, সেই সুদিনের! 

২৫ মে ২০১৯, উত্তরা, ঢাকা।

অলংকরণ: সাব্যসাচী মিস্ত্রী

সখী, মৃত্যু দাও

সাধিত পোশাকি ভালোবাসা

নয়, ভালোবাসা, মৃত্যু দাও, 

অগ্নি কিংবা তুমুল তুষার; 

মরে, গোরে পচে গলে—যেতে

যেতে—কাঁদি, চিৎকারে ফাটিয়ে

দিই বিশ্ব, নিস্তব্ধ আকাশ

দাহ, ঢেউ, সাগরে সাগর;

 দুটি শব্দে, জীবন, জীবন

তড়পিয়ে তীব্র হু-হুংকারে;

উইমাটি আচ্ছাদিত অস্থি

নালি, ফেটে দোলনচাঁপার

পাপড়ি, নীল গোলাপের ঝাড়; 

দেখে নিয়ো, সকল কবর

ভেঙে, মাটি উপড়ে, চিতা থেকে

হত্যাকারী, পুষ্পছুরি হাতে, 

চুমু খায় হাতে-মুখে-গালে, 

যেখানে যেমন যাকে পারে; 

আমার মৃত্যুতে আজ মৃত

মৃত্যু, হিংসা, ঘৃণা, হানাহানি, 

চতুর্দিকে, কাজরী উৎসব, 

অভিষিক্ত গজলের কলি

পদাবলি, বর-বধূ আলিঙ্গনে

দোলে মালা, বাসর-চুম্বনে; 

অন্ধকার, আলো, অন্ধ গাইছে

শেখ ফরিদের মত্তশব্দ প্রাণ, 

মীরার ভজন, কবীরের বোল

তোলে এক বাউলিয়া লালন; 

তুমি, তবে ভালোবেসেছিলে! 

২৮ মে ২০১৯, উত্তরা, ঢাকা।