বৈশাখ আসবেই: আলেয়া আরমিন
ছিন্নবৃন্ত রক্তিম অশোক ঝরা পথের ধুলো মাড়িয়ে
পুরাতন যত ব্যথার গ্লানি চরণতলে দলে,
মুঠো পুরে শুদ্ধতা নিয়ে বৈশাখ আসবেই
সকল জরাজীর্ণতা উড়িয়ে।
নবপ্রভাতের অরুণোদয়ে অশুভ অশনি প্রখরতাপে পুড়িয়ে
মৃত্যুর মিছিলে যমদূতের নৃত্য থামিয়ে বৈশাখ আসবেই,
পাকা ধানের গন্ধে আশাহত ক্লান্ত কৃষকের শুকনো ঠোঁটে
তৃপ্তির হাসি হয়ে।
ঝোড়ো ঘূর্ণির বেশে গগনে তিমির ঘনঘটার ডঙ্কা বাজিয়ে
বিজলির চমকে অঝোর ধারার বাদলে বৈশাখ আসবেই,
কর্পূরে ঢাকা শবের ঘ্রাণ,শোকের ক্ষত ধুয়ে।
মাধবীলতার সুবাসে, জুঁইবেলির শুভ্রতায়,দই-মিষ্টির আপ্যায়নে
এবার না হোক কোনো হালখাতার নিমন্ত্রণ,
কেউ না সাজুক লাল-সাদায়,
না বাজুক কাচের চুড়ির রিনিঝিনি পথে-ঘাটে ঢাকঢোল,
না হোক মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন,
প্রার্থনারত বাঙালির ঘরে বসেই বাঙালিয়ানায় হোক
এবারের বর্ষবরণ।
কণিকা-কমলা কথোপকথন : অপি করিম
কণিকা: গৃহবন্দী! নার্ভাস?
কমলালেবু: (দীর্ঘশ্বাস) আলুথালু।
কণিকা: করে সব সর্বনাশ
প্রগতির উচ্চ শিখরে বসবাসের ইচ্ছেটা?
কমলালেবু: এ কী ভীতিপ্রদ সম্পর্ক আজ আমাদের!
কণিকা: শঙ্কা! অস্তিত্ব ফুরাল তোমার?
কমলালেবু: না, অনড় সংকল্প!
দূরত্ব কাছে টেনে রাখবে আমাদের।
কণিকা: খাঁচায় পোরা বস্তু বনে গেছ এত দিনে!
কমলালেবু: কড়াৎ কড়াৎ মৃত্যু বাজ থামাতে প্রস্তুত আছি সবাই!
কণিকা: আগড়ম বাগড়ম! অতঃপর—
চুকে যাবে? ভুলে যাবে তোমার দেনা সকল?
কমলালেবু: না! না! জরদগব অবস্থা চিরে
দ্রিমিদ্রিমি জয়োৎসবের মাদল বাজিয়ে
সুবাতাস হাসবে আমার উঠানে, শীঘ্রই!
আমার উত্তর গোলার্ধে,
আমার দক্ষিণ গোলার্ধে;
সবখানে! হ্যাঁ—
তখন ৭০০ কোটি কণ্ঠস্বর একসাথে
প্রকৃতির কাছে করব বশ্যতা স্বীকার!
মেঘমেঘালির ভেতর দিয়ে সূর্য উঠবেই—
অনিবার্য;
তুমিও তফাতে থাকো,
আপাতত আমরা ঘরেই নিরাপদ!
এই বোশেখে : আবদুন নূর তুষার
লাল-সাদা রং পরবে বলে
এক দুপুরে অনেক হেঁটে
তোমার জন্য এনেছিলাম
লাল রঙা টিপ,
ফুলের গয়না মানায় তোমায়
অর্কিড চাই বেগুনি রং
রুপার নূপুর
মাটির প্রদীপ
এনেছিলাম তোমার জন্য,
মুঠোর মধ্যে আমার হৃদয়
তাজা খুনে লাল টুকটুক
একটুকরো জমির মতো;
এই বোশেখে ওই শাড়িটাই
জড়িয়ে নিয়ো শরীরজুড়ে
সাপবেণিতে সমুদ্রঢেউ
হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি যত…
পয়লা বৈশাখ : সোমের কৌমুদী
পয়লা বৈশাখ আজ সুরম্য ফ্ল্যাটের দ্বাদশ তলা থেকে
সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে নেমে আসুক,
শোরগোল না পাকালেও চুপিসারে নেমে আসুক
ঠাঁই নিক তার পূর্বপুরুষের ভিটা কুঁড়েঘরে।
পয়লা বৈশাখ তার অস্তিত্ব ফিরে পাক
কাঁচের প্লেটের পান্তা-ইলিশকে ভুলে
মাটির শানকির পান্তার সাথে লঙ্কা আর নুনে,
মাতৃস্নেহের সুখ ফের ফিরে পাক।
করোনার দাঁত : রিক্তা রিচি
ভোরের সিঁড়ি বেয়ে নামে বোশেখি রোদ,
রোদের আড়ালে করোনার দাঁত।
গাছেদের রং আছে, পাখিদের গান গাছে,
নদীদের ঢেউ আছে, মাছেদের প্রাণ আছে।
শুধু রং নেই মানুষের!
সব রং খেয়ে গেছে করোনার দাঁত।
বোশেখি গান নেই, প্রাণেও প্রাণ নেই
হতাশায় কেটে যায় দীর্ঘ রাত,
লাশ গুনতে গুনতে মানুষেরা কাত।
সব রং খেয়ে গেছে করোনার দাঁত।