আল মাহমুদের ভুবনে
‘কবিতা তো মক্তবের মেয়ে, চুল খোলা আয়েশা আক্তার’। কবিতাকে একদিন এভাবেই ডেকেছিলেন আল মাহমুদ। সমকালীন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান এই কবি লোকান্তরিত হয়েছেন সম্প্রতি। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এ আয়োজনে থাকছে তাঁর অপ্রকাশিত কবিতা, নাসির আলী মামুনের নেওয়া সাক্ষাৎকার এবং তাঁকে নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণের লেখা।
তোমার জগৎ ছড়িয়ে আছে
তোমার মুখে কী মায়াবী তিলের চিহ্ন,
ওই তিলে তো জীবন হলো ছিন্নভিন্ন
তবু আমি ও মুখখানি হাতড়ে বেড়াই
কেবল হাওয়া যাচ্ছে বয়ে, নাই তুমি নাই।
তুমি তো নাই—তোমার জগৎ ছড়িয়ে আছে
লতায় আছে পাতায় আছে আমার কাছে,
স্মরণ করি মরণ কালের দুঃখ কেমন,
কে যেন গো বলছে আমায় তুমি যেমন—
আসলে বুঝি সবার শেষে, ভাসল জলে
আমার শূন্য নৌকাখানি মন্ত্র বলে
ঢেউ নাচে ওই কূলকিনারা নাইকো নদীর,
কেবল তুমি দেখছ চেয়ে চিরবধির।
অশ্রুজলে সিক্ত আছে আমার নামই
ক্ষমা ক্ষমা—একটি শব্দ, রক্তে আমার
বইতে থাকে সিজদা দেবার অক্তে আমার
মাটির ওপর ঠেকাই আমার ললাটখানি
অশ্রুজলে গড়িয়ে যায় সকল গ্লানি।
চোখের পানি ছলকে গেল বুকের ওপর,
যেন কবে সিক্ত হলো তপ্ত দুপুর।
যাক ধুয়ে যাক ক্লান্তি আমার ভ্রান্তিসহ,
দুহাত ভরে অঞ্জলি দিই—লহ-লহ।
কে নেবে গো আমার দেয়া এ অঞ্জলি,
কেবল শুনি পায়ের আওয়াজ—যেমন চলি।
লাগছে এসে আমার বুকে পাপড়ি নরম,
কে যেন গো বলছে মৃদু—শরম–শরম।
করজোড়ে ঠেকাই মাথা এমন মাটি,
কে বিছিয়ে রাখল সবুজ শীতল পাটি।
গড়িয়ে যায় দেহ আমার সেই পাটিতে,
ঘুমে আমি স্বপ্ন দেখি এই মাটিতে।
বাংলাদেশের ছবিখানি স্বপ্নে দেখা—
আমিই দেখি আমিই ছিলাম অশ্রুলেখা।
আমার নামই অশ্রুজলে সিক্ত আছে,
আমার নামটি শাখায় শাখায় গাছে গাছে।