‘আকাঙ্ক্ষিত নারী–৩’, ভাস্কর: সুমন বর্মন
‘আকাঙ্ক্ষিত নারী–৩’, ভাস্কর: সুমন বর্মন

জলের কাঠামো

তরুণ ভাস্কর সুমন বর্মনের কাজের মাধ্যম কাঠ। কাঠে হাতুড়ি-বাটালির সমন্বয়ে তিনি যে দীর্ঘকায় মানবসদৃশ ভাস্কর্য তৈরি করেন, তার সবচেয়ে চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য হলো সজলতা। তাঁর ভাস্কর্যে যেন খোদিত হয়ে থাকে জল। ‘জলের নকশায় ত্রিমাত্রিক গড়নগুলো প্রকৃতি মানুষ আর তার স্থানিক অস্তিত্ব নিয়ে ভাবনা তৈরি করে।’ প্রদর্শনীর কিউরেটর ওয়াকিলুর রহমানের এমনই বক্তব্য।

‘জলজ’ নামের এটি সুমন বর্মনের দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী। লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্র শিল্পালয়ে প্রদর্শনী চলবে ২৯ জুন পর্যন্ত।

ঢাকা চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগ থেকে পাস করা সুমনের ভাস্কর্য আর কিছু রেখাচিত্র নিয়ে চলমান এ প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীতে সুমন ভাস্কর্যের যে রূপ তৈরি করেছেন, ঢাকার প্রদর্শনীতে তা খুব একটি দেখতে পাওয়া যায় না। ভাস্কর্যের বৈশিষ্ট্য এই যে তা চারদিক থেকে দেখার সুযোগ থাকে। তবে ওয়াকিলুর রহমানের ভাষ্যে সুমনের ভাস্কর্যে থাকে এক আধুনিকতাবাদী প্রয়াস। যেমন সুমন প্রায়ই তাঁর ভাস্কর্যের সামনের অংশে কাজ করে ‘ছেড়ে দিয়েছেন’। এই ধারা বজায় রাখতে গিয়ে কিউরেটর শিল্পীর কাজের ধারাবাহিকতায় ভাস্কর্যগুলো এমনভাবে স্থাপন করেছেন যেন শুধু এক দিক থেকেই দর্শক সেসব চাক্ষুষ করতে পারেন।

প্রদর্শনীতে দর্শক পাবেন সুমনের ভাস্কর্যের এই ব্যতিক্রম প্রত্যক্ষ করার সুযোগ। ভাস্কর্য যেন সেখানে একধরনের দ্বিমাত্রিকতা ধারণ করে আছে। সেসব যেন সূক্ষ্ম বুনটের পেইন্টিং, যার সম্মুখপট আছে, পশ্চাৎপট নেই। ওয়াকিলুর রহমানের কিউরেশনের এ এক অভূতপূর্ব কৌশল। তিনি এমনভাবে সুমন বর্মনের ভাস্কর্য উপস্থাপন করেছেন যেন দর্শক সেগুলো একটি বা বড়জোর দুটি পাশ অবলোকনের সুযোগ পান।

সুমনের ভাস্কর্যের প্রবণতার সঙ্গে মিল রেখেই এই উপস্থাপন। কলাকেন্দ্রে অতিরিক্ত মাত্রায় দ্বিমাত্রিক, অর্থাৎ পেইন্টিং, ড্রয়িং ও ছাপচিত্রের প্রদর্শনী হতে থাকায় কিউরেটরের মনে হয়েছিল এবার ভাস্কর্যের প্রদর্শনী হলে মন্দ হয় না। কলাকেন্দ্রের সীমিত আয়তনে এরপর তিনি একের পর এক বসাতে থাকেন সুমন বর্মনের ভাস্কর্য, যেগুলোর সম্মুখভাগই প্রবল। ভাস্কর্য প্রদর্শনীর এই বিরল উপস্থাপনই প্রদর্শনীটা দেখতে যাওয়ার কারণ হতে পারে, এমনকি সমালোচনারও।

কাঠ খোদাই করে সুমন বর্মন যে মায়াবী বাস্তবতা তৈরি করেন, তা পানিতে বিচ্ছুরিত আলোকচ্ছটার কথা মনে করায়। 

সুমনের রেখাচিত্রেও উঁকি মারে তাঁর ভাস্কর্যের প্রবণতা। তাঁর রেখাচিত্রে দেখা যায় সর্পিল রেখা, ঢেউখেলানো ফর্ম।

সুমন বর্মনের এই প্রদর্শনী শিল্পপ্রেমীদের কৌতূহলের উদ্রেক ঘটাবে।