১৯৪৭ সালের বাংলাভাগকে পাঠ করতে গেলে পূর্ববঙ্গ ছেড়ে যাওয়া মানুষের বিদীর্ণ হওয়ার গল্প কেবল শোনা যায়। এ অঞ্চলে একই মাত্রায় শোনা যায় না বাংলাভাগ নিয়ে বাংলাদেশের কোনো আখ্যান। বাংলাদেশের পটভূমিতে বাংলাভাগকে দেখা হয়েছে নতুন আলোয়
১৯৪৭ সালের পার্টিশনকে* প্রথাগতভাবে গণ্য করা হয়ে থাকে বেদনাবিধুর, অনাকাঙ্ক্ষিত, হতাশাজনক ও নেতিবাচক এক ঘটনা হিসেবে। সেটা যে সত্য নয়, তা আমরা বলি না। পাঞ্জাব ও বাংলাকে খণ্ডিত করে রচিত দুই সীমান্তরেখার দুই ধারে সংঘটিত হয়েছিল ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, রক্তপাত, ধর্ষণ ও সহিংসতা। ছিল তাড়া খাওয়া কিংবা তাড়া খাওয়ার ভয়ে আতঙ্কিত মানুষ—আক্রান্ত বা আক্রমণের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু মানুষ। ছিল তাদের বাস্তুচ্যুতি, ছোটাছুটি আর দেশত্যাগ। তবে ধরুন, আক্রান্ত হওয়ার, ভিটেমাটি ছাড়ার এবং দেশত্যাগ করার গল্পগুলো স্থান-কাল-নির্বিশেষে সবখানে একই মাত্রায় দৃশ্যমান হয়নি। ১৯৪৭ সালের পার্টিশনকে পাঠ করতে গেলে পূর্ববঙ্গ ছেড়ে যাওয়া মানুষের বিদীর্ণ হওয়ার গল্প যতটা শোনা যায়; পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তর প্রদেশ ছেড়ে আসা মানুষের যন্ত্রণা সেই একই মাত্রায় চোখে পড়ে না। একইভাবে বাংলাভাগের ফলে পূর্ববঙ্গ ছেড়ে যাওয়া অমুসলমানদের ক্ষতির কথা আমরা যতটা শুনি; যে অমুসলমান পরবর্তীকালের বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ল, বাংলাভাগ তাদের যে পরিণাম বয়ে আনল, সে কথা আমরা তেমনভাবে শুনি না। সে কারণেই বাংলাভাগের প্রথাগত বয়ানকে অনেকেই বলবেন অর্ধসত্য।
এই অসংগতি ছাড়াও বিগত বছরগুলোয় আমার গবেষণা বলে এসেছে যে অশ্রু আর রক্তে মাখামাখি পার্টিশনের যে আখ্যান, তার বাইরে এর একেবারে ভিন্ন আখ্যানও রয়েছে। সেদিকে চোখ ফেরানোটা জরুরি। সত্যের খাতিরে বলতে হবে, সেদিনের পূর্ববঙ্গে বাংলাভাগ একই সঙ্গে বয়ে এনেছিল হতাশার উল্টো পিঠে প্রত্যাশা, বেদনার বিপরীতে আনন্দ। এই ভূখণ্ডে বাংলাভাগ যে কেবলই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল, এমন নয়। বাংলাভাগ এখানে বাঙালি মুসলমানের নতুন আত্মপরিচয় তৈরির আকাঙ্ক্ষারও জন্ম দিয়েছিল।
১৯৭১ সালে বাঙালির জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে ধর্মভিত্তিক পরিচয় দৃশ্যপট থেকে আপাতভাবে সরে গেলেও তা যে এই সমাজে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে, সে কথা নিশ্চয়ই এখন আর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয় না। পূর্ববঙ্গে মুসলমান পরিচয় উদ্বোধনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং সুদূরপ্রসারী তাৎপর্যকে পার্টিশনের প্রথাগত পাঠ বরাবরই উপেক্ষা করতে চেয়েছে। নিদেনপক্ষে বলা যায়, উপেক্ষা করে গেছে। এ কারণেই এই দাবি করতে হয় যে পার্টিশন-অধ্যয়ন এখনো এক ভারতকেন্দ্রিক চর্চা—যা অপরাপর বিবিধ মানুষের, বিবিধ ভূখণ্ডের বৈচিত্র্যময়, বহুধাবিভক্ত, এমনকি বিপরীতমুখী অভিজ্ঞতাকে সচেতন বা অচেতনে আমলে আনে না। একটি একঘেয়ে করুণ আখ্যান বারবার পুনরুৎপাদিত হওয়ার মধ্য দিয়ে পার্টিশনের একক শিকার হিসেবে ভারত প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বয়ান প্রতিবেশীদের ওপর ভারতের নৈতিক চাপ জারি রাখতে ভূমিকাও পালন করে। পার্টিশন-অধ্যয়ন এ কারণে জ্ঞানতাত্ত্বিক সহিংসতা এবং আধিপত্যবাদের নজির হয়ে আছে।
পার্টিশনের জনপ্রিয় বোঝাবুঝি আরও একটা বিষয়কে স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নেয়। তা হলো ঘটনাটি ছিল ব্রিটেনের এক হীন চক্রান্ত। তাদের ‘ভাগ করো শাসন করো’ নীতির বিষফল। আবারও বলতে হয়, এই জনপ্রিয় বোঝাবুঝিও আরেকটি অর্ধসত্যের ওপরে দাঁড়ানো। এই বোঝাবুঝি দেখতে পায় না যে পার্টিশন সংঘটিত হয়েছিল এক রাজনৈতিক দর-কষাকষি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এখানে তখনকার অবিভক্ত ভারতের রাজনীতিবিদেরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। আর তাঁরা নিছকই ব্রিটিশ শাসকদের চক্রান্তের অবলা শিকার ছিলেন না। এই অর্ধসত্য আরও যা দেখতে পায় না বা দেখতে দেয় না, তা হলো, পার্টিশন ঘটানোর রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা অবিভক্ত ভারতে দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুত করা হয়েছিল।
বাংলার কথাই ধরা যাক। আজকে আমরা যতই অভিন্ন বাঙালি সংস্কৃতির কথা বলি না কেন, দুই বাংলা এবং এর দুই প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এক অমোচনীয় ভিন্নতা গড়ে উঠেছিল। বাংলাভাগকে দুই বাংলার ভাঙনের মুহূর্ত বলে বিবেচনা করা কিংবা তাকেই এই ভাঙনের জন্য দায়ী করা তাই কোনোভাবেই সংগত নয়। আবুল মনসুর আহমদের আত্মজৈবনিক রচনা পড়লে দেখা যায়, মানচিত্রে র্যাডক্লিফ মহাশয় দাগ কাটার বহু আগে থেকেই পূর্ববঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসরত বাংলাভাষী মুসলমান পদে পদে আবিষ্কার করেছে যে বাংলাভাষী হিন্দু প্রতিবেশী তাঁকে সমান নজরে দেখেন না। বাংলার সাহিত্য সম্মেলনে গিয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো সাহিত্যিক এবং ভাবুকের মনে হয়েছে যে তারা যেন বড়লোকের বাড়িতে নেমন্তন্নে আসা গরিব আত্মীয়।
সামাজিকভাবে পূর্ববঙ্গ ছিল মূলতই এক দারিদ্র্যজর্জর কৃষকসমাজ, যার সিংহভাগ ছিল মুসলমান। তাদের না ছিল শিক্ষাদীক্ষা, না ছিল সহবত। এই জনগোষ্ঠী এবং তাদের পেটে ধরা পূর্ববঙ্গকে ‘কলিকাতা’ নামক তিলোত্তমা কখনোই সমান চোখে দেখেনি। ‘বাঙাল’ তাদের চোখে ছিল এক অদ্ভুত প্রজাতি। কলকাতার ছিল ঔপনিবেশিকতার ঔরসজাত ঠাট। এই ঝাঁ-চকচকে মেট্রোপলিটন হয়ে উঠেছিল হাভাতে ‘বাঙাল’-এর বিপরীতে বিকাশমান নতুন শিক্ষিত অফিসগামী বেতনভোগী মধ্যবিত্তের লালনক্ষেত্র। বাংলার ভাঙন তাই পার্টিশন ঘটার আগেই সম্পন্ন হয়েছিল। মোটকথা দুই বাংলা আগেই দুই ভিন্ন ঐতিহাসিক ও সমাজ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভিন্নরূপ পরিগ্রহ করেছিল।
এরই প্রকাশ আমরা দেখি যখন কিনা পাকিস্তান আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। এ সময়ে বাংলাভাষী মুসলমান লেখক, সম্পাদক ও সাহিত্যিকেরা এমনকি কলকাতায় বসেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য দাবি করতে শুরু করেন। ভারত নয়, তাঁরা পাকিস্তানের কল্পনা বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু তাঁদের কল্পিত সেই পাকিস্তান মোটেই জিন্নাহর পাকিস্তান ছিল না। পাকিস্তানের ভেতরে তাঁরা আবার একই সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্বতন্ত্র পূর্ব পাকিস্তানের রূপকল্প দাঁড় করাতে চান। একদিকে পূর্ব পাকিস্তানের নদীবিধৌত জনপদ ও জনজীবনের উপকরণ, অন্যদিকে ইসলাম ধর্মের রূপক ও স্মারকগুলো তুলে এনে কলকাতার প্রভাববলয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁরা স্বতন্ত্র ভাষা এবং সাহিত্যচর্চার প্রয়াস নেন। ফররুখ আহমদের কবিতা এই প্রয়াসের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বাংলা ভাষায় ফররুখের মতো লেখকেরা সে সময় প্রচুর ভিনদেশি উপকরণও যুক্ত করেছিলেন।
তবে দুই পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের অসুখী ক্ষণস্থায়ী সংসার দ্রুতই ভেঙে যায়। ভাষিক-সাহিত্যিক পরিসরে পূর্ব পাকিস্তানের কল্পনায়নের সেই প্রয়াস কখনোই আর বাস্তবের দেখা পায় না। পরবর্তীকালে যখন বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকশিত হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তখন পূর্বসূরিদের এই প্রয়াসকে অনেকেই জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ‘পশ্চাৎপদ’ বলে বিবেচনা করেন।
এ সময় ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বিপরীতে ভাষিক জাতীয়তাবাদকে শ্রেয়তর বলে বিবেচনা করা হয়। শিক্ষাদীক্ষা ও শিল্প-সাহিত্যচর্চায় কলকাতাকে অগ্রসর মেনে স্বাধীন বাংলাদেশে শুরু হয় সাহিত্যচর্চা। দুই জাতীয়তাবাদের মধ্যে কোনটি উৎকৃষ্ট, কোনটি অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক—তা নিয়ে আমরা তর্ক বহাল রাখতেই পারি। কিন্তু বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় কলকাতাই আদর্শ ও আরাধ্য—এই দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের ভাষিক ও সাহিত্যিক স্বাতন্ত্র্যের প্রশ্নটিকে গৌণ করে ফেলে। মুখ্য হয়ে ওঠে অভিন্ন বাঙালিত্বের উদ্যাপন।
এ কথা সত্য যে বাংলাদেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্তের বেড়ে ওঠায় একদা কলকাতার সাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র ইত্যাদি বড় ভূমিকা রেখেছিল। আমাদের আগের প্রজন্ম শুনেছিলেন শচীন, জগন্ময় কিংবা সতীনাথকে; দেখেছেন উত্তম-সুচিত্রাকে। আমরাও বারবার ফিরে গেছি সুমন, নচিকেতা কিংবা সুনীল, সমরেশ, শীর্ষেন্দু কি জয় গোস্বামীতে। এই বাঙালিত্বের উদ্যাপন এবং বাঙালি বিভক্ত হওয়ার আহাজারি বাংলার বাংলাভাগের আলোচনায় এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ‘কতই না ভালো হতো যদি আমরা একসঙ্গে থাকতাম’ কিংবা ‘যদি সীমান্ত না থাকত’—এই যে স্মৃতিকাতরতা—তাকে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় পরিমণ্ডলে লালন করা হয়। অথচ একই ভাষায় কথা বলা সত্ত্বেও দুই বাংলা যে বহু আগেই ভিন্ন পথে বিকশিত হয়েছিল, দুই বাংলা যে কখনোই অভিন্ন ছিল না—এ বিষয় আমরা তলিয়ে দেখি না। এমনকি এ-ও ভেবে দেখি না যে ২০১১ সালে যখন আমরা দুই বাংলা (আদতে দুই রাষ্ট্র ভারত ও বাংলাদেশ) মিলেমিশে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত বার্ষিকী উদ্যাপন করছি, ঠিক তখনই হয়তো সীমান্তে গুলি খেয়ে আরও একজন ফেলানী মরে যাচ্ছে। দু-একটি হাতে গোনা ব্যতিক্রম বাদে পশ্চিমবঙ্গে আমাদের অগ্রসর পণ্ডিত বন্ধুরা সে ব্যাপারে টুঁ শব্দটিও করছেন না। তাহলে কেমন এই বাঙালির ঐক্য, কেমন তার এক না থাকতে পারার আহাজারি?
স্পষ্টই দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ পরস্পরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে বাঁধা পড়ে আছে সাংস্কৃতিকভাবে এক অসম উচ্চম্মন্য ও হীনম্মন্য সম্পর্কে। আর এই উচ্চম্মন্য ও হীনম্মন্যতার বোধ গড়ে উঠেছে ঐতিহাসিক ভিন্নতার মধ্য দিয়েই, যে প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। বিভক্ত বাংলার দুই খণ্ডের কারও পক্ষেই সেই ভিন্নতাকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
রাষ্ট্রিক ও রাজনৈতিক পরিসরে এই অসমতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক নৈতিক বোঝা—১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঋণ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করেছিল—বিভিন্ন সময়ে ভারতের নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদ, এমনকি আমজনতা কথায় কথায় প্রসঙ্গটি টেনে বাংলাদেশের জনগণকে মনে করিয়ে দিতে চান যে এ কারণেই তাদের ভারতের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকা বাঞ্ছনীয়। মনে রাখা কর্তব্য, যুদ্ধ বা রাজনীতিতে কোনো রাষ্ট্রই পরার্থবাদী হয়ে কিছু করে না। ১৯৭১ সালে যে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে বেরিয়ে এল, আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতকে তা বিশেষভাবে সুবিধা দেয়। বাংলাদেশকে তিন দিক থেকে ঘিরে থাকা ভারত অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন থেকে শুরু করে রেল ট্রানজিট আদায়সহ সব ক্ষেত্রে অসম দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সুবিধা নেওয়ার পথ রচনা করে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত শেখ হাসিনার অনির্বাচিত স্বৈরশাসনকে টিকিয়ে রেখে এবং পতনের পর তাঁকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
পার্টিশন-অধ্যয়ন এখনো এক ভারতকেন্দ্রিক চর্চা—যা অপরাপর বিবিধ মানুষের, বিবিধ ভূখণ্ডের বৈচিত্র্যময়, বহুধাবিভক্ত, এমনকি বিপরীতমুখী অভিজ্ঞতাকে সচেতন বা অচেতনে আমলে আনে না।
এসব কারণে গত দেড় দশকে বাংলাদেশের মানুষের মনে ভারতবিরোধী মনোভাব তীব্র হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত যখন বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারে, তখন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বাঁধভাঙা উদ্যাপন দেখা যায়। এ ঘটনায় আবার ভারতীয় গণমাধ্যম-বিশ্লেষকেরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের ‘অকৃতজ্ঞতা’ দেখে তাঁরা বিস্মিত হন।
বাংলাদেশের মানুষের মনে এই যে ক্ষোভ, সেখান থেকেই এ দেশের মানুষ ভারতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে নিজেদের স্বাতন্ত্র্যকে স্পষ্ট করতে চান। দুই বাংলার ভিন্নতা ১৯৪৭ সালের বাংলাভাগকে পথ করে দিয়েছিল। সেই ভিন্নতা পরবর্তীকালে ইতিহাসের পৃথক যাত্রায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যকে ক্রমেই পোক্ত করেছে। আর তার মধ্য দিয়েই অভিন্ন বাঙালিত্বের প্রকল্প ক্রমেই অচল হয়ে পড়েছে।
* পার্টিশনের পরিভাষা হিসেবে ‘দেশভাগ’ বহুল ব্যবহৃত প্রত্যয় হলেও আমি সচেতনভাবে তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকি। কারণ, ভারতের জন্য ‘দেশভাগ’ প্রত্যয়টি যথাযথ হলেও পাকিস্তান এবং তার দুই টুকরোর জন্য এটি মোটেও প্রযোজ্য নয়। পাকিস্তানের কাছে পার্টিশন ছিল দেশ সৃষ্টি বা দেশ নির্মাণ।
সাঈদ ফেরদৌস: অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের; দেশভাগ বিষয়ক গবেষক।