যদি কখনো কালো মেঘ

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

তখন সকাল। সোনালি রোদের ডানা মেলে দিয়েছে সূর্য। আর তখনই ঘুরতে বেরিয়েছে ওরা দুজন।

মা মেঘ আর ছানা মেঘ।

‘মা, ঝিকমিকে ওটা কী?’

‘নদী। রোদে ঝিকমিক করছে।’

‘নদীর এপাশে সবুজ। ওগুলো কী?’

‘ধানখেত।’

‘আর নদীর ওপাশে?’

‘ওগুলোও ধানখেত।’

‘ওপাশেরগুলো হলুদ কেন?’

‘ওগুলো পাকা ধান। ধান পাকলে হলুদ হয়।’

হঠাৎ...

ঠিক ওদের গা ঘেঁষে কী যেন একটা চলে গেল। ভয় পেল ছানা মেঘ। ভয়ে কুঁকড়ে এইটুকুন হয়ে গেল। তারপর মায়ের কোলের ভেতর এসে ঢুকল। মা মেঘ হেসে বলল, ‘ভয় পেয়ো না।

ওটা পাখি।’

‘কী পাখি, মা?’

‘চিল।’

আবার নিচে তাকাল ছানা মেঘ। নদীর দুপারে কারা যেন চরে বেড়াচ্ছে। চারটা পা। লেজও আছে। একটু পরপর ডাকছে, হাম্বা-আ-আ-আ!

ছানা মেঘ জানতে চাইল, ‘ওগুলো কী, মা?’

নিচের দিকে তাকাল মা মেঘ। কিন্তু একি! নিচের সবকিছু ঝাপসা লাগছে কেন? রোদেরা কোথায়? পালিয়েছে নাকি?

হঠাৎ কারা যেন চেঁচিয়ে উঠল, ‘খবরদার! আমাদের কাছে আসবি না!’

এপাশে তাকাল মা মেঘ। একদল কালো মেঘ! তেড়েমেড়ে ওদের দিকে আসছে!

এবার ওপাশ থেকে কারা যেন চেঁচাল, ‘এই আসছি! দেখি, কী করতে পারিস!’

আরেক দল কালো মেঘ! ওরাও ওদের দিকে তেড়ে আসছে!

কী মুসিবত! দেরি করল না মা মেঘ। ছোঁ মেরে ছানা মেঘটাকে বুকে টেনে নিল। তারপর সাঁই করে ওপরে উঠতে লাগল। আর উঠতে উঠতে উঠতে, উঠে গেল অনেক ওপরে।

ওপরে উঠেই হাঁপাতে লাগল মা মেঘ। সকাল সকাল কী শুরু করল কালো মেঘগুলো!

আবার নিচে তাকাল ছানা মেঘ আর মা মেঘ। নিচে এখন শুধুই কালো মেঘেরা। দুদল কালো মেঘ মুখোমুখি। হঠাৎ দুই দলে ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে গেল। এই দল ঠেলছে ওই দলকে। আর ওই দল ঠেলছে এই দলকে। আর শুরু হলো আলোর ঝলকানি। তর্জনগর্জন। হুংকার!

আবারও ভয়ে কুঁকড়ে গেল ছানা মেঘ। আবারও মায়ের কোলের ভেতর ঢুকল।

মা মেঘ বলল, ‘ভয় পেয়ো না। ওরা এমনই।’

কিছু সময় পরে আর হইচই নেই।

ভয়ে ভয়ে উঁকি দিল ছানা মেঘ। এখন আর দুই দল মেঘ নেই। মিলেমিশে একদল হয়ে গেছে। আর কী অবাক! দেখতে দেখতে হঠাৎ উধাও হয়ে গেল মেঘেরা। একটু পর আর একটা মেঘও রইল না।

‘মা, মেঘগুলোকে দেখছি না।

কোথায় গেল?’

‘বৃষ্টি হয়ে চলে গেছে।’

‘কোথায় গেছে?’

নিচে তাকাল মা মেঘ। আবার রোদেরা ডানা মেলেছে। আবার ঝিকমিক করছে নদী।

গাছের পাতা থেকে তখনো পানি পড়ছিল। টুপ। টুপ। টুপ।

মা মেঘ বলল, ‘ওরা ওখানে গেছে।’

বলেই গাছ দেখাল মা মেঘ। মাঠ দেখাল। নদী দেখাল। নদীর পার দেখাল। দেখে ছানা মেঘের একটা শখ হলো।

‘মা, সারা দিন তো কেবল আকাশেই ভেসে বেড়াচ্ছি। আর ভালো লাগছে না। চলো আমরাও ওখানে যাই!’

‘আমরা যে ওখানে যেতে পারি না!’

‘কেন যেতে পারি না?’

মা মেঘ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ল। তারপর বলল, ‘কারণ, আমরা সাদা মেঘ। শুধু কালো মেঘেরাই ওখানে যেতে পারে!’

ছানা মেঘ কী বুঝল কে জানে। হঠাৎ নদীর পার থেকে ভেসে এল, হাম্বা-আ-আ...।

তাই তো! নদীর দুপারে ওরা কারা? চার পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। লেজ নাড়ছে। আর ডাকছে, হাম্বা-আ-আ...

জানতে চাইল ছানা মেঘ, ‘ওরা কারা, মা?’

মা মেঘ জবাব দিল না। মা মেঘ তখনো ভাবছিল। আহা! যদি কখনো কালো মেঘ হতে পারত! তাহলে...