শত শত গল্পের মধ্য থেকে সেরা গল্প বাছাই করা যে কত কঠিন একটা কাজ, সেটা যে না করেছে, তাকে বলে বোঝানো কঠিন। কঠিন সেই কাজই করে ফেলেছি আমরা। ‘এসো গল্প লিখি ২০২২’ প্রতিযোগিতার সেরা ১০টি গল্প আমরা পেয়ে গেছি। বিচিত্র স্বাদ আর ভাবনার গল্প পড়ে আমরা মুগ্ধ। সবাইকে ধন্যবাদ! এ সংখ্যায় ছাপানো হলো ক ও খ বিভাগে বিশেষ স্থানজয়ী চারটি গল্প। আগামী সংখ্যায় ছাপানো হবে দুই বিভাগের তৃতীয় স্থানজয়ী গল্প দুটি। একইভাবে পরবর্তী সংখ্যায় ছাপা হবে দ্বিতীয় ও প্রথম গল্পগুলো। মনে আছে নিশ্চয়ই, প্রথম পুরস্কার বিজয়ীরা পাবে ৫ হাজার টাকার বই, দ্বিতীয় পুরস্কার ৩ হাজার টাকার বই ও তৃতীয় পুরস্কার ২ হাজার টাকার বই। অতএব চোখ রাখো গোল্লাছুটে!
এক দেশে ছিল দুই ভূত—ভালো ভূত আর বদ ভূত। ওরা সমবয়সী। সব সময় একে অপরকে টেক্কা দিতে চায় দুই ভূত। কে সেরা হবে, তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা করে। তবে সব প্রতিযোগিতাতেই ভালো ভূতটাই জিতে যায়।
বদ ভূতটা একদিন দুষ্ট একটা ফন্দি আঁটল। ভালো ভূতকে গিয়ে বলল, ‘চলো, আমরা একটা মানুষের বাসায় ঢুকে পড়ি। সেখানে দুদিনের জন্য একটা প্রতিযোগিতা করব আমরা। প্রতিযোগিতা হলো, কে মানুষটাকে সারা দিন ঘুমিয়ে রাখতে পারে।’
বদ ভূতের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল ভালো ভূত। তবে যে মানুষটাকে ওরা ঠিক করল, তার হাতে অনেক কাজ। আর দিনের কাজ দিনের মধ্যেই তাকে শেষ করতে হতো। নইলে তার চাকরিই আর থাকবে না!
কিন্তু বদ ভূত এই তথ্যটা আর ভালো ভূতকে জানাল না। সে চায়, লোকটার চাকরি চলে যাক, সে কষ্ট পাক।
ভালো ভূত জিজ্ঞেস করল, ‘একটা প্রতিযোগিতার জন্য দুই দিন কেন লাগবে?’
বদ ভূত বলল, ‘প্রথম দিন তোমার পালা, দ্বিতীয় দিন আমার।’
সব সময় যেমন হয়, এবারও প্রতিযোগিতায় জিতে গেল ভালো ভূত। লোকটাকে সে সারা দিন ঘুম পাড়িয়ে রাখল। কিন্তু বদ ভূত লোকটাকে একটা মিনিটও ঘুমাতে দিল না। কিন্তু একটা দিন ঘুমিয়ে কাটানোর কারণে লোকটা অফিসের কাজ শেষ করতে পারল না। তাই তার চাকরিটাও গেল চলে! চাকরি হারিয়ে কাঁদতে লাগল লোকটা।
বদ ভূত তখন সেখানে ছিল না। আর ভালো ভূতও চলে গিয়েছিল। কিন্তু লোকটার কান্না শুনে ফিরে এল। ঘরে ঢুকেই বলল, ‘হাউ মাউ খাউ, মানুষের গন্ধ পাউ!’
লোকটা ভীষণ ভয় পেয়ে বলল, ‘আমাকে খেয়ো না, ভূত! আমাকে খেয়ে মজা পাবে না! আমার অনেক দুঃখ!’
‘কিসের দুঃখ?’ জানতে চাইল ভালো ভূত।
লোকটা তার দুঃখের কথা শোনাল। সব শুনে ভালো ভূত অভয় দিয়ে বলল, ‘আমি তোমাকে খেতে আসিনি। ঠিক আছে, আমি তোমাকে তোমার চাকরি ফিরিয়ে দেব।’
কিন্তু ভূতের কথায় লোকটা আশ্বস্ত হতে পারল না। হতাশ হয়ে বলল, ‘তুমি হয়তো খুব দয়ালু, কিন্তু আমার বস অত দয়ালু নন।’
ভালো ভূত বলল, ‘তোমার বস দয়ালু হোক বা না হোক, আমি তোমার চাকরি ফিরিয়ে দেবই দেব।’
তারপর ভালো ভূত উড়ে উড়ে চলে গেল লোকটার বসের কাছে। বসের ঘরে গিয়ে বলল, ‘হাউ মাউ খাউ, মানুষের গন্ধ পাউ!’
ভূতের কথা শুনেই বস ভীষণ ভয় পেয়ে বলল, ‘আমাকে খেয়ো না, ভূত! আমাকে খেয়ো না!’
ভালো ভূত বলল, ‘আমার হাত থেকে বাঁচার একটাই উপায় আছে।’
‘কী উপায়?’
‘তোমার অফিসের এক লোকের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে।’
ভূতের ভয়ে তখনই লোকটার চাকরি ফিরিয়ে দিল অফিসের বস।
চাকরি ফিরে পেয়ে লোকটার আনন্দ আর ধরে না। ভালো ভূতকে ধন্যবাদ দিয়ে বলল, ‘আমি তো চাকরি ফিরে পেলাম, কিন্তু তোমার তো দুর্নাম হয়ে যাবে!’
ভালো ভূত বলল, ‘দুর্নাম হলে হোক। ভালো কাজ করে দুর্নাম হলে দুর্নামই ভালো!’