গান গাইছেন ফারহিন খান জয়িতা
গান গাইছেন ফারহিন খান জয়িতা

জীবনে–গানে যখন যোগ

জয়িতাকে চিনি যখন থেকে সে পুরোপুরি কথা বলতে শেখেনি। আমারও তখন কিশোর বয়স। তার মা মানে ‘মিতা পিসি’, বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হক,  আমার মায়ের বন্ধু ছিলেন। সেই জয়িতাকে ছোটবেলার পরে অনেক বছর পার করে যখন আবার চিনলাম, তখন তিনি পূর্ণবয়স্ক; তরুণ এক শিল্পী। চিনতে গিয়ে বুঝলাম, বর্তমানে জয়িতা শুধু গান পরিবেশনই করেন না, গানকে ধারণও করেন। এই জয়িতাকে আমি শুধু ‘চিনি’–তে সীমাবদ্ধ না থেকে এখন খানিকটা জানিও, কিছু চিন্তার মিলের কারণে। এই মিলের অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা হলো, তিনি যে মা-বাবার সন্তান বা যে পরিবার থেকে এসেছেন, সেখানে শুধু গান নয়, সংস্কৃতির নানান শাখা অবাধে বিচরণ করে।

১৭ মে বনানীর ‘যাত্রাবিরতি’তে ‘টেগোরস টেলস’ শিরোনামে ফারহিন খান জয়িতা অ্যান্ড হার ব্যান্ড রবীন্দ্রসংগীত সন্ধ্যার আয়োজন করে। ‘আজ যেমন করে গাইছে আকাশ’ দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। প্রথম দু-তিনটা গান যন্ত্রানুষঙ্গের অসঙ্গতির কারণে ঠিক শ্রুতিমধুর হয়ে উঠতে পারেনি। সেই খামতি ঠিকঠাক করে ফেলার পর জয়িতার গলা এবং তার সঙ্গে সঙ্গত মিশে মন ছুঁয়ে যাচ্ছিল সবার। এর মাঝখানে ‘এসো শ্যামল সুন্দর’ গানটির সঙ্গে আনান সিদ্দিকার নাচ খানিকটা আরামের মতো লাগল।

তবে দর্শক-শ্রোতাকে যে ব্যাপারটা ভাবিয়েছে বলে মনে হয়, গান তো অনেকেই গাইছেন, কিন্তু কতজন নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বা অনুভূতিকে গানের মাধ্যমে ব্যক্ত করছেন? কোনো কোনো গান শুরুর আগে নিজের একান্ত কোনো গল্প, অনুভূতি বা অভিজ্ঞতা অল্প করে বলছিলেন জয়িতা। বলছিলেন, ঠিক কোন অনুভূতি বা অভিজ্ঞতা তাঁকে গানটি ভালোবাসতে ও গাইতে অনুপ্রাণিত করেছে।

জয়িতার বাবা অভিনেতা খালেদ খান যখন হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে, অভিনেতা আলী যাকের তখন তাঁকে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতবিতান পড়তে। এসব একান্ত কথায় জয়িতা তুলে ধরছিলেন গানের সঙ্গে তাঁর জীবনের যোগ। এভাবেই তিনি নিজের মতো করে আবিষ্কার করেছেন কিছু গান, যা মিশে গেছে তাঁর জীবনের সঙ্গে, ব্যক্ত করেছে তাঁর অনেক অব্যক্ত অনুভূতি।

জয়িতার এমন সব কথার সূত্র ধরে শোনা গেল ‘আমার খেলা যখন’ বা ‘তুমি কিছু দিয়ে যাও’-এর মতো সচরাচর না শোনা গানও। বাল্মীকি প্রতিভার দস্যুদের গান ‘কালী কালী বল রে আজ’ গানটি ছিল প্রাণবন্ত এক অভিজ্ঞতা।

যন্ত্রসঙ্গতে ছিলেন রোকন ইমন, আহনাফ খান অনিক, রাফিউল হক অন্তর ও আশীকুল আবীর।

শেষের দিকে শ্রোতাদের অনুরোধে সুনেত্রা ঘটকের ‘রচনার রবীন্দ্রনাথ’ আবৃত্তি করে বুঝিয়ে দিলেন, মা মিতা হকের সঙ্গে কীভাবে ওতপ্রোত হয়ে আছে জয়িতার শিল্পী হয়ে ওঠার গল্প।

ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়