মা-বাবা পুড়ে মারা গেছে, জানতে পারল তিন ভাইবোন। এতিম হয়ে গেল ওরা। দুঃস্বপ্নের সেই শুরু।
সবার বড় ভায়োলেটের বয়স ১৪। নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি বানাতে তার জুড়ি নেই। মেজ ক্লাউসের বয়স ১২। বুদ্ধিমান, বই পড়তে পছন্দ করে সে। সবার ছোট সানির বয়স দুইয়ের কোঠায়। চারটে তীক্ষ্ণ দাঁত আর শব্দভান্ডারে তিনখানা শব্দ—এই হলো সানি। ব্রাইনি বিচে রহস্যময় এক আগন্তুক যখন ওদের মা–বাবার মৃত্যুসংবাদ দিল, ছোট্ট সানি তখন চিৎকার করে বলে উঠল, ‘কন-আ!’ অর্থহীন এই শব্দের মধ্য দিয়ে সে হয়তো বলতে চাইল, পুরো পৃথিবী অর্থহীন হয়ে গেছে।
আসলেই তা–ই। আগুনে পুড়ে গেছে ওদের প্রাসাদোপম ভবনটি। তবু বদলেয়ার পরিবারের উত্তরসূরি হিসেবে সম্পদ ওদের যথেষ্টই রয়েছে। কিন্তু ভাইবোনদের কেউ যেহেতু প্রাপ্তবয়স্ক নয়, সেগুলো বুঝে নেওয়ারও তাই উপায় নেই। বড় কারও হাতে ওদের দায়িত্ব পড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। দুঃস্বপ্নের দ্বিতীয় পর্বের সূচনা এখানেই, যখন ওদের দায়িত্ব নিল কাউন্ট ওলাফ।
সত্যি সত্যি কাউন্ট নয় সে, পেশায় মঞ্চ অভিনেতা। পাড়ার থিয়েটারে নাটক করে। দায়িত্ব, বলা ভালো ওদের দত্তক নিয়েছে সম্পদগুলো হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। নিয়ম করে অত্যাচার করে সে, একের পর এক শয়তানি বুদ্ধি তার মাথায়। বাজে সব লোকজনের সঙ্গে তার কাজ-কারবার। সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে কি কূটবুদ্ধি এঁটেছে কাউন্ট? ভয়ংকর সেই বুদ্ধির মূলে রয়েছে কঠিন হুমকি। একটু এদিক-ওদিক করলেই ছোট্ট সানিকে ফেলে দেওয়া হবে বিশাল এক টাওয়ারের একদম ওপর থেকে! তিন বদলেয়ার ভাইবোনের কি মুক্তি মিলবে?
উত্তর রয়েছে খ্যাপাটে শয়তান-এর পাতায়।
কিশোর থ্রিলার, লেখা আছে মলাটেই। বয়সের কথা যদি ভাবি, ১৫-১৬ বছর বা এর কম বয়সী কিশোরদের জন্য দারুণ এক বই এটি। লেমোনি স্নিকেটের ‘আ সিরিজ অব আনফরচুনেট ইভেন্টস’ সিরিজের প্রথম বই দ্য ব্যাড বিগিনিং। বাংলা করলে দাঁড়ায়—গোড়ায় গন্ডগোল। নামটি যথার্থ। অনুবাদে অবশ্য শয়তান কাউন্ট ওলাফের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ঠিক ধরেছেন, এই সেই খ্যাপা শয়তান!
লেমোনি স্নিকেটের ‘আ সিরিজ অব আনফরচুনেট ইভেন্টস’ সিরিজের প্রথম বই দ্য ব্যাড বিগিনিং-এর অনুবাদ
খ্যাপাটে শয়তান
অনুবাদ: আবুল বাসার
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, প্রকাশকাল: আগস্ট ২০২৩, প্রচ্ছদ: আরাফাত করিম, ১০৩ পৃষ্ঠা, দাম: ২৭০ টাকা।
বইটি পাওয়া যাচ্ছে
prothoma.com এবং মানসম্মত বইয়ের দোকানে।
গল্পের পাতায় পাতায় একের পর এক সমস্যা, ছোট্ট কিশোর-কিশোরীর অত্যাচারের মুখোমুখি হওয়া, চুপসে যাওয়া ভয়ে কিংবা দুর্বার সাহস ও বুদ্ধিতে ভর করে ‘খ্যাপা শয়তান’-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা—আদর্শ এক কিশোর থ্রিলার বলা চলে। বইটি পড়তে পড়তে পাঠক বদলেয়ার ভাইবোনদের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করবেন, কষ্ট পাবেন ছোট্ট সানির কথা ভেবে। গা হিম হয়ে আসবে, কাউন্টের প্রতি তৈরি হবে ক্ষোভ। নেটফ্লিক্সে মূল বই–সিরিজের নামে একটা সিরিজও আছে। এ বই পড়ে সিরিজটা দেখলে আরও ভালো লাগবে কিশোরদের।
বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন লেখক ও অনুবাদক আবুল বাসার। বিজ্ঞানবিষয়ক লেখালেখি ও অনুবাদের জন্য তাঁর খ্যাতি রয়েছে। কিশোর থ্রিলার হলেও অনুবাদে একই রকম মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
তিন গোয়েন্দা বা অয়ন-জিমি যাদের ভালো লাগে, তারা বইটির বাংলা অনুবাদ হাতে তুলে নিতে পারে নির্দ্বিধায়।